ব্যবসায়ীদের খামখেয়ালিপনা এবং ভবন মালিকদের অতি মুনাফার মানসিকতা পুরান ঢাকাকে বারবার মৃত্যুকূপে পরিণত করছে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন। একই কারণে শুক্রবার ভোরে পুরান ঢাকার আরমানীটোলায় একটি রাসায়নিক গোডাউনে আগুন লেগে চারজন নিহত এবং ২১ জন আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করেন তিনি।
শুক্রবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমাকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন এসব কথা বলেন।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক বলেন, ‘বারবার এতো করে বলা হচ্ছে, বাসাবাড়িতে ক্যামিকেল গোডাউন করা যাবে না। আমরা মাঝে মাঝে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছি, জরিমানা করছি। তারপরেও কিন্তু লুকিয়ে ছাপিয়ে তারা এটা করছে। এর একটা কারণ হচ্ছে, যে বাসার নিচে ১০/১২টা দোকান আছে, সেখান থেকে আপনি মোটা অংকের ভাড়া পাবেন। বাসা বানিয়ে ভাড়া দিলে আপনি কত টাকা পাবেন? এখানে লোভ এবং টাকার একটা ব্যাপার আছে।’
করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে পুরান ঢাকা থেকে ক্যামিকেল গুদাম ও কারখানা সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ আরও পিছিয়ে যাচ্ছে বলে জানান তিনি। বলেন, ‘এই বছর জুন মাসে এটা সরিয়ে নেয়ার কথা। কিন্তু করোনার জন্য তো অনেক কিছুই পিছিয়ে গেল। সরকারের পক্ষ থেকে যে উদ্যোগ সেটা সরকার করছে। আমাদের জায়গা থেকে আমাদের যেটা করার কথা, আমরা কিন্তু এগোচ্ছি না।’
এত দুর্ঘটনার পরেও মানুষ সতর্ক হচ্ছে না। তাদের মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন বলে মনে করছেন ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক। তিনি বলেন, ‘মানুষকে সচেতন করা প্রয়োজন, এটা বলতে বলতে গলা শুকিয়ে ফেলছি। আমাদের মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে। আজ দুইটা ডেড বডি নিজে দেখে এলাম। ব্যক্তিগতভাবে খারাপ লেগেছে। মানুষ পুড়ে মারা যাচ্ছে, এটা কত বড় বেদনাদায়ক তা আমাদের নিজেদেরই অনুধাবন করতে হবে।’
ফায়ার সার্ভিস পুরান ঢাকার এসব গুদাম ও কারখানার বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে সংস্থাটির মহাপরিচালক বলেন, ‘নির্বাহী ক্ষমতা আমাদের কাছে নেই। আইন অনুযায়ী যেটা আছে, তাতে ফায়ার সার্ভিসের কী ক্ষমতা আছে? আসলে আমাদের নিজেদের সচেতন না হলে যা হবে আর কী! আমরা প্রায়ই এখানে মোবাইল কোর্ট করি, এখন তো করোনার জন্য মোবাইল কোর্টও বন্ধ আছে।‘
শুক্রবার ভোররাতে আরমানিটোলার যে ভবনে আগুন লাগে সে ভবনটির ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র ছিল না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, ‘দেশের জনগণই তো সরকার। জনগণ নিজেদের সচেতন হতে হবে। ফায়ার সার্ভিস লাইসেন্স দিল কি দিল না... ফায়ার সার্ভিস তো চুড়িহাট্টার পরে এখানে কোনো ধরনের লাইসেন্স দিচ্ছে না। লাইসেন্স দেয়াটা বন্ধ আছে। এটা যেহেতু সরে যাবে এখান থেকে, তাই আমরা এখানে ফায়ারের কোনো লাইসেন্স দিই না।‘
সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, ‘আপনার জীবনের জন্য আপনার মায়া থাকবে না... আমি কান্নাকাটি করলে তো লাভ হবে না। সরকারের পক্ষ থেকে যতটুকু প্রয়োজনীয় কার্যক্রম নেয়ার, সরকার কিন্তু সেটা নিচ্ছে। সরকার জায়গা করে দিচ্ছে, গোডাউনের জন্য জায়গা করে দিচ্ছে।‘
সরকার তার কাজ করছে জানিয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, ‘বিস্ফোরক অধিদপ্তরকে ঢেলে সাজানোর জন্য একটা কমিটি করা হয়েছে। সে কমিটির আমিও একজন সদস্য। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে যে সংস্কার ও সমন্বয় সচিব মহোদয়ের নেতৃত্ব একটা কমিটি করা হয়েছে, ওখানে বিভিন্ন ধরনের সুপারিশ করা হচ্ছে। বিস্ফোরক অধিদপ্তরকে ঢেলে সাজানোর জন্য। সরকার তার কাজটা করছে। কিন্তু আমরা আমাদের কাজটা করছি না।’
দুর্ঘটনার পর তদন্ত কমিটি সুপারিশসহ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। কিন্তু সে সুপারিশ কতটা কার্যকর হয়, এমন প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে তিনি বলেন,‘সে সুপারিশগুলোর আমি বলব বেশির ভাগই বাস্তবায়ন হয়। চুড়িহাট্টার ঘটনার সে সুপারিশ করা হয়েছিল তার বেশির ভাগই তো বাস্তবায়ন হয়েছে। সে সুপারিশটা বাস্তবায়ন হয় নাই, সেটা হচ্ছে ক্যামিকেল গোডাউন সরিয়ে নেয়া। নিজেদের নিরাপত্তার জন্য এটা নিজেরাই সরিয়ে নিতে হবে। সরকার উদ্যোগ নিয়েছে।’
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ হারুন-অর-রশিদ
বার্তা সম্পাদকঃ আশিক সরকার
Copyright © 2025 Bporikromanewsbd.com. All rights reserved.