বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমা ডেস্ক : বলা বাহুল্য অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর ডেঙ্গুর প্রকোপ একটু বেশিই লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বর্তমানে ঘরে ঘরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এতে মারাও যাচ্ছেন অনেকে। ফলে আমাদের সবার মধ্যেই আতঙ্ক বিরাজ করছে।
বর্তমান পরিস্থিতি এমন হয়ে দাড়িয়েছে যে, হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাই সব থেকে বেশি দেখা যাচ্ছে। যা বর্তমানে ভয়াবহ দুশ্চিন্তার ব্যাপার।
গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৮৮৯ জন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
শনিবার (২৭ জুলাই) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশন সেন্টার এ তথ্য জানিয়েছে। সংস্থাটির মতে, বিগত ২৪ ঘণ্টায় যে সংখ্যক মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ।
সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়, বিগত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে ৬৮৩ এবং বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২০৬ জন।
এর মধ্যে শুধুমাত্র ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) বিগত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ২৩৩ জন। রাজধানীতে বেসরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৯ জন ভর্তি হয়েছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রায় দেড় যুগ আগে ২০০২ সালে দেশে সর্বোচ্চ ৬ হাজার ২৩২ জন আক্রান্ত হন। তবে ২০০০ সালে ৯৩ জনের মৃত্যুর রেকর্ডই ছিল সর্বাধিক। দীর্ঘ ১৬ বছর পর অর্থাৎ ২০১৮ সালে সর্বোচ্চ ১০ হাজার ১৪৮ জন আক্রান্ত হয়ে নতুন রেকর্ড করেছিল। মৃতের সংখ্যা ছিল ২৬।
চলতি বছরের সাত মাস শেষ হওয়ার আগেই ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা ১০ হাজার ৫২৮। ফলে ২০১৮ সালের রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড স্থাপিত হলো।
তবে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালের তথ্য অনুসারে, চলতি মাস পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা গত বছরের ২৬ জনের রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে।
এ বিষয়ে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইডিসিআর) পরিচালক মীর জাদি সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, বেসরকারি হিসাবে এর মৃত্যু সংখ্যা বলে কিছু নেই। সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালের কোন রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে এমন তথ্য পেলে আইডিসিআর এর ডেথ রিভিউ কমিটি সে তথ্য সঠিক কি না তা পর্যালোচনা করে। সত্যতা পেলে তবেই ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে বলে ঘোষণা দেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ জানান, চলতি মাসে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি হলেও আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। ইতোমধ্যে আক্রান্ত ১০ হাজার ৫২৮ ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৭ হাজার ৮৪৯। বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ২ হাজার ৬৭১। বাকি ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেল্থ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ৬৮৩ রোগী ভর্তি হয়েছেন।
তন্মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৩৩, মিটফোর্ডে ৭, শিশু হাসপাতালে ৯, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ৩৬, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ২২, বারডেম হাসপাতালে ১২, পুলিশ হাসপাতাল রাজারবাগে ২৪, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪৯ ও বিজিবি সদর হাসপাতালে ১৩, কুর্মিটোলায় ৩২ জন ভর্তি। বেসরকারি হাসপাতালে ২০৫, ঢাকাসহ বিভিন্ন বিভাগীয় হাসপাতালে ৪০ রোগী চিকিৎসাধীন।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, বছরওয়ারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০০০-২০১৮ সাল পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা যথাক্রমে ৫৫৫১, ২৪৩০, ৬২৩২, ৪৮৬, ৩৪৩৪, ১০৪৮, ২২০০, ৪৬৬, ১১৫৩, ৪৭৪, ৪০৯, ১৩৫৯, ৬৭১, ১৭৪৯, ৩৭৫, ৩১৬২, ৬০৬০, ২৭৬৯ ও ২০১৯ সালের (২৭ জুলাই পর্যন্ত) ১০ হাজার ৫৪৮ জন।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ হারুন-অর-রশিদ
বার্তা সম্পাদকঃ আশিক সরকার
Copyright © 2025 Bporikromanewsbd.com. All rights reserved.