২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার জাতীয় বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। এ বাজেট এমন এক সময়ে দেয়া হচ্ছে, যখন করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ব্যাপক অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঘটেছে। বিপর্যস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারের পরিকল্পনা কী, সেদিকে আজ দৃষ্টি ছিল অনেকেরই।
করোনাভাইরাস মহামারি শুরু হওয়ার পর দেশের অর্থনীতিতে এর কী প্রভাব সে নিয়ে এর আগে সরকারি কোনো হিসাব জানা যায়নি। কিন্তু আজ ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ঘোষিত বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল স্বীকার করেছেন, মহামারির কারণে বছরের শেষ কোয়ার্টারে এসে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করতে হয়েছে।
বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮.১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে, চলতি অর্থবছরের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের গতিও ভালোই ছিল।
‘কিন্তু কোভিড-১৯ এর প্রভাবে বিশ্বব্যাপী দীর্ঘ সময় ধরে চলা লকডাউনের কারণে রপ্তানি কমায় এবং প্রবাসী আয়ে কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জিত না হওয়ায় চলতি অর্থবছরে (২০১৯-২০) জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার সংশোধন করে ৫.২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।’
এর বাইরে করোনার প্রভাবে দেশে ১৪ লাখের মতো মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ার আশঙ্কা করেছেন অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এডিবি'র সাময়িক হিসাবের তথ্য তুলে ধরে তিনি এ কথা বলেন।
মহামারির কারণে গত কয়েক মাসে এ সময় অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ হারিয়েছে বহু মানুষ, উৎপাদন কমেছে কৃষি ও শিল্প খাতে, সেবা খাতে বহু প্রতিষ্ঠান আয় হারিয়েছে।
বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন, এসব ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্য সরকার বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ বাড়িয়েছে এবং কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, মহামারি মোকাবিলায় ১০ হাজার কোটি টাকা 'থোক বরাদ্দ' প্রস্তাব করা হয়েছে।
এছাড়া মহামারির প্রভাব মোকাবেলায় সরকার যে কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করেছে, তার মধ্যে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, মুদ্রা সরবরাহ বাড়ানো, বৈদেশিক কর্মসংস্থান থেকে আয় বাড়ানো এবং আত্ম-কর্মসংস্থানের জন্য দুই হাজার কোটি টাকা ঋণ দেবার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এছাড়া, বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন মহামারির ক্ষতি মোকাবেলায় সরকার ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে তৈরি পোশাকসহ রপ্তানিমুখী শিল্পের শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দেয়ার লক্ষ্যে পাঁচ হাজার কোটি টাকার একটি ঋণ তহবিল, ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সেবা খাতের জন্য ৩০ হাজার কোটি টাকার এবং এসএমই প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার দুটি আলাদা স্বল্প সুদের ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল ঋণ সুবিধা রয়েছে।
কৃষি খাতে সরকার প্রায় সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। অন্যদিকে, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির বরাদ্দ বাড়িয়ে করা হয়েছে ৯৫ হাজার কোটি টাকার বেশি।
কিন্তু এসব পরিকল্পনাকে প্রয়োজনের তুলনায় 'অপ্রতুল' মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সায়মা হক। তিনি বলেন, ‘সামাজিক সুরক্ষা খাতে যে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়েছে, সেটা ভালো। তবে, সামাজিক সুরক্ষা খাতের বরাদ্দের একটি বড় অংশ পেনশন এবং স্কুলের বৃত্তিতে যায়। তারপরেও জিডিপির তিন শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কিন্তু করোনার কারণে যে বিশালসংখ্যক জনগোষ্ঠী দারিদ্রসীমার নিচে চলে গেছে, তাদের জন্য কী ব্যবস্থা, বিশেষ করে নগর অঞ্চলের দরিদ্রদের জন্য? এই জনগোষ্ঠীকে কীভাবে সামাজিক সুরক্ষা খাতের আওতায় আনা যায়, কীভাবে তাদের খাদ্য ও নগদ সহায়তা দেওয়া যাবে তা নিয়ে কোনো স্পষ্ট প্রতিশ্রুতি আমরা দেখিনি।’
প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা 'উচ্চাভিলাসী'
বাংলাদেশে আজ এমন এক সময়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেছেন, যখন করোনাভাইরাস মহামারির কারণে দেশের স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক খাত বেশ বিপর্যস্ত। আর ঘুরেফিরে বারবারই সে বিষয়টির প্রতিফলন দেখা গেছে বাজেট বক্তৃতায়।
অর্থমন্ত্রী বলেছেন, পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার এই বাজেটে স্বাস্থ্য খাতকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। বাজেট বক্তৃতায় সে কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে মার্চের ২৬ তারিখ থেকে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে, বন্ধ হয়ে যায় পরিবহন খাতসহ সব ধরনের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, যা চলে ৬৬দিন পর্যন্ত।
এ সময়ে বহু মানুষ কর্মহীন হয়, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা নেমে আসে।
যে কারণে চলতি অর্থবছরের শেষে এসে প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করতে হয় সরকারকে। কিন্তু এমন প্রেক্ষাপটেও চলতি অর্থবছরের চেয়ে ১৩ শতাংশ বড় বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য। প্রবৃদ্ধির হার ধরা হয়েছে, ৮.২ শতাংশ।
নতুন এই লক্ষ্যমাত্রাকে 'উচ্চাভিলাসী' ও 'বাস্তবসম্মত' নয় বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ও বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক এমকে মুজেরি। তিনি বলেন, ‘এখন প্রেক্ষাপটটাই আলাদা। তাছাড়া জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ইতিমধ্যে দেশীয়-আন্তর্জাতিক সংস্থা অনেক কম হবে এমন প্রেডিকশন দিয়েছে। কিন্তু সরকারের প্রাক্কলন তার চেয়ে বেশি। এটা অনেক উচ্চাভিলাসী। এখন এটা কতটা অর্জনযোগ্য সেটা দেখার বিষয়।’ –বিবিসি বাংলা
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ হারুন-অর-রশিদ
বার্তা সম্পাদকঃ আশিক সরকার
Copyright © 2025 Bporikromanewsbd.com. All rights reserved.