বিশ্ববিদ্যায়ল পরিক্রমা ডেস্ক : সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে স্বাধীনতার সূচকে বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১২১তম। ২০১৯ সালের এই তালিকায় ৫৫.৬ নম্বর পেয়ে বাংলাদেশে গতবারের চেয়ে ৭ ধাপ উন্নতি করেছে। তবে অর্থনৈতিক মুক্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থা ‘প্রায় না থাকার সমান’।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান হেরিটেজ ফাউন্ডেশন এই তালিকা প্রকাশ করেছে। ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এই গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি প্রতি বছর এই তালিকা প্রকাশ করে থাকে।
এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় ৪৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ২৭তম। যেখানে ভারতের অবস্থান ১২৯তম। পাকিস্তানের ১৩১তম। নেপাল আছে ১৩৬তম অবস্থানে। শ্রীলঙ্কার ১১৫তম। চীনের অবস্থান তালিকায় ১০০তম। প্রথম তিনে আছে যথাক্রমে হংকং, সিঙ্গাপুর ও নিউ জিল্যান্ড।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের জানিয়েছে, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর গড় নম্বর (৬০.৬) ও বৈশ্বিক গড় নম্বর (৬০.৮)। যার অর্থ, বাংলাদেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের স্বাধীনতা এখনও ‘প্রায় না থাকার সমান’ (মোস্টলি আনফ্রি)। তবে বাংলাদেশে মজুরি বৃদ্ধির তুলনায় বেড়েছে উৎপাদনশীলতা। ব্যবসা সংক্রান্ত নীতি নির্ধারণ আগের চেয়ে কিছুটা সরল হয়েছে। বিনিয়োগে আমলাতান্ত্রিক বাধা অপসারণে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
‘আইনের শাসন’ বিভাগের ‘সম্পত্তির মালিকানা’ সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনা শাখায় বাংলাদেশ ৩৬.১, ‘বিচার বিভাগের কার্যকারিতা’ শাখায় ৩৪.৫ ও ‘সরকারের নিষ্ঠা’ বিভাগে ২৪.৪ পয়েন্ট পেয়েছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নাম উল্লেখ্য করে ‘আইনের শাসন’ বিভাগের সবগুলো শাখায় বাংলাদেশ উন্নতি করলেও হেরিটেজ ফাউন্ডেশন লিখেছে, বাংলাদেশে সম্পত্তির মালিকানা সংক্রান্ত আইনগুলো সেকেলে। ভূমি নিয়ে বিরোধ খুব সাধারণ ঘটনা। বিচার বিভাগ শ্লথ এবং স্বাধীনতার অভাব রয়েছে। চুক্তি কার্যকর এবং মতবিরোধ নিরসনের প্রক্রিয়া অপর্যাপ্ত। দুর্নীতির মহামারি, অপরাধ প্রবণতা, দুর্বল আইনের শাসন এবং রাজনৈতিক মেরুকরণ সরকারের জবাবদিহিতাকে খর্ব করেছে। বড় আকারের দুর্নীতি খুবই সাধারণ ঘটনা। সম্প্রতি এমন দুইটি ঘটনায় নাম জড়িয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও সাবেক প্রধান বিচারপতির।
‘সরকারের আকার’ বিভাগে ‘করের বোঝা’ শাখায় বাংলাদেশ ৭২.৭, ‘সরকারি ব্যয়’ শাখায় ৯৪.৫ ও ‘রাজস্ব সক্ষমতা’ বিভাগে ৭৭.৬ পয়েন্ট পেয়েছে। হেরিটেজ ফাউন্ডেশন লিখেছে, বাংলাদেশে ব্যক্তিখাতে সর্বোচ্চ কর হার ২৫ শতাংশ এবং কর্পোরেট কর হার ৪৫ শতাংশ। এছাড়াও আছে মূল্য সংযোজন কর। কর থেকে আসা আয়ের প্রমাণ মোট দেশজ আয়ের ৮.৮ শতাংশের সমান। গত তিন বছরে সরকারি ব্যয় বেড়েছে জিডিপির ১৩.৬ শতাংশ। বাজেট ঘাটতির গড় হয়েছে জিডিপির ৩.৬ শতাংশ। সরকারের ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে জিডিপির ৩২.৪ শতাংশে।
‘নীতিনির্ধাণের কার্যকারিতা’ বিভাগের ‘ব্যাবসার স্বাধীনতা’ শাখায় বাংলাদেশ ৫০.৯, ‘শ্রমের স্বাধীনতা’ শাখায় ৬৮.২ ‘মুদ্রানীতি’ শাখায় ৬৯.৯ পয়েন্ট পেয়েছে। শ্রমের স্বাধীনতা শাখায় বাংলাদেশর নম্বর বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে বেশি।
হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের মতে, বাংলাদেশে ব্যবসা সংক্রান্ত নীতি নির্ধারণ আগের চেয়ে কিছুটা সরল হলেও এখনও প্রক্রিয়া অস্বচ্ছ। বেসরকারি খাতের জন্য দীর্ঘমেয়াদী কার্যকর প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা অনুপস্থিত। শ্রম বাজার এখনও অসংগঠিত। তবে উৎপাদনশীলতা মজুরির চেয়ে খানিকটা বৃদ্ধি পেয়েছে । সরকার খাদ্য, বিদ্যুৎ ও কৃষিতে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দেওয়া অব্যাহত রেখেছে।
মুক্ত বাজার বিভাগের বাণিজ্য স্বাধীনতা শাখায় বাংলাদেশ ৬৩.৩, বিনিয়োগ স্বাধীনতা শাখায় ৪৫ এবং আর্থিক স্বাধীনতা শাখায় ৩০ পয়েন্ট পেয়েছে। হেরিটেজ ফাউন্ডেশন লিখেছে, সরকার বিনিয়োগ তরান্বিত করতে আমলাতান্ত্রিক বাধা অপসারণের পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত পরিবর্তনের গতি খুব কম। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের উপস্থিতি এবং রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ এখনও আর্থিক খাতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে রয়ে গেছে। প্রাপ্তবয়স্ক বাংলাদেশিদের ৫৪ শতাংশেরই ব্যাংকিং খাতের প্রতিষ্ঠানে অ্যাকাউন্ট রয়েছে। বাণিজ্য স্বাধীনতা বিভাগে বাংলাদেশ আগের চেয়ে এগিয়েছে; বিনিয়োগ স্বাধীনতায় পিছিয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ হারুন-অর-রশিদ
বার্তা সম্পাদকঃ আশিক সরকার
Copyright © 2025 Bporikromanewsbd.com. All rights reserved.