অ্যাক্ট লায়াবিলিটি ইন্সু্রেন্স বা তৃতীয় পক্ষের ঝুঁকি বীমা বর্তমানে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ এর জন্য বন্ধ রয়েছে। আপাত দৃষ্টিতে পরিবহন খাতের মালিকরা এতে লাভবান মনে করলেও প্রকৃতপক্ষে এর ক্ষতি সুদূরপ্রসারি। অ্যাক্ট লায়াবিলিটি ইন্সু্রেন্স বাতিল হওয়ায় একদিকে যেমন ক্ষতি হচ্ছে বীমা সেক্টরের, অন্যদিকে সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। পাশাপাশি জনগণের যে নিরাপত্তা ও আর্থিক ক্ষতি হয় তা পূরণের কোনো ব্যবস্থা থাকছে না। ইন্সু্যরেন্স না করার কারণে গাড়ির মালিকরাও আর্থিক ক্ষতি থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। আগে অ্যাক্ট লায়াবিলিটি ইন্সু্রেন্সে কোনো দূর্ঘটনায় মারা গেলে ২০ হাজার টাকা ও সম্পদের ক্ষতি হলে ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়া হতো, সেটা বর্তমান সময়ের তুলনায় খুবই নগণ্য। এই ইন্সু্রেন্স বন্ধ না করে সময়োপযোগী করা দরকার ছিল।

অ্যাক্ট লায়াবিলিটি ইন্সু্রেন্সের দাবী পাওয়ার জন্য সমস্ত কাগজপত্র নিয়ে এর ওপর ক্লেইম করলে ইন্সু্রেন্স কোম্পানী দাবী পরিশোধ করতো। দাবী পরিশোধ করা হচ্ছে না বলে যে অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছিল সেটা ভ্রান্ত ধারণা। পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই অ্যাক্ট লায়াবিলিটি ইন্সু্রেন্স প্রচলন আছে, এই ইন্সু্যরেন্স ছাড়া কোনো যানবাহন চলতে পারে না। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দূর্ঘটনায় যেভাবে যাত্রী, পথচারী মারা যায় এজন্য সরকার অনেক সময় ভতুর্কি দেয়। অথচ এটা দেয়ার কথা ছিল ইন্সু্রেন্স কোম্পানীগুলোর এবং ইন্সু্যরেন্সের আওতায় কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি তার ক্ষতিপূরণ পাবে সেটা আরও সহজতর করা প্রয়োজন ছিল।

অ্যাক্ট লায়াবিলিটি ইন্সু্রেন্সের পলিসিটি বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আধুনিকায়ন করে যদি পুনরায় বীমাখাতে নিয়ে আসা যায়, তাহলে বীমা খাতের পেনিট্রেশন বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। বিশ্বেও আমাদের বীমা পো্রডাক্ট নিয়ে ভালো ধারণার সৃষ্টি হবে। নতুবা আমাদের দেশের কোনো গাড়ি যদি ইন্ডিয়া যায়, তাহলে সেটা কি মোটরবীমা বা অ্যাক্ট লায়াবিলিটি ইন্সু্রেন্স ব্যতীত বর্ডার ক্রস করতে পারবে? আসলে এখানে অ্যাক্ট লায়াবিলিটি ইন্সু্রেন্সের প্রয়োজনীয়তা বুঝাতে কথাগুলো বলা হচ্ছে। আবার বাংলাদেশে নৌযান বা ফেরি দুর্ঘটনায় যে ক্ষতি হয় তা কিন্তু ইন্সু্রেন্সের মাধ্যমে কাভারেজ করা সম্ভব। মানুষের জীবন হয়তো আসবে না, কিন্তু কারো পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি মারা গেলে তার পরিবারের কি অবস্থা দাঁড়ায় ভুক্তভোগী ছাড়া সেটা কেউ বুঝতে পারবে না। ফলে এসব যানবাহন বীমার আওতায় থাকলে ক্ষতিগ্রস্তরা উপকৃত হবে। যে যানবাহনের মালিক ব্যবসার পুঁজি হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছে তারাও এর থেকে সফল পেতে পারে।

আরেকটি বিষয়, সামাজিক দায়বদ্ধতা থাকলে সমাজ সুন্দর হয়। সকলের মাঝে দায়িত্ববোধ থাকলে তখন অন্যরাও এতে উপকৃত হতে পারে। ইন্সু্রেন্সের উদ্দেশ্যও কিন্তু তাই। সেই লক্ষ্যেই ইন্সু্রেন্স কাজ করে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি তার সম্পদের ক্ষতিপূরণ পেলে সে আবার নতুন উৎসাহে কাজে আগ্রহী হতে পারে, তা না হলে সর্বস্বান্ত হয়ে নিজেকে শেষ করে দেয়ার ঘটনাও সমাজে প্রতিনিয়তই শোনা যায়।

সর্বশেষে আমি যে বিষয়টি নিয়ে বলতে চাই তা হচ্ছে, সরকার বীমা নীতি ২০১৪ বীমা খাতে জিডিপিতে অবদানের বিষয়ে যা বলেছে, তা বাস্তবায়ন করতে হলে মোটর বীমার পাশাপাশি জনগণের কল্যাণে আরও কয়েকটি বীমা প্রোডাক্ট বাধ্যতামূলক করা জরুরী। নতুবা বীমা খাত তার কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছতে ব্যর্থ হবে।

আহমেদ সাইফুদ্দীন চৌধুরী, মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা
বাংলাদেশ জেনারেল ইনসিওরেন্স কোম্পানী লি. (বিজিআইসি)