জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার খুব কাছের বন্ধু শাকিলের অমায়িক ব্যবহার এবং অনন্য গুনাবলীর কারণে যশোরের মানুষের প্রতি আমার দুর্বলতা সেই বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকে। আমার দুই রুমমেটের একজন ছিলো শাকিল।
বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যায়নরত অবস্থায় ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার কল্যাণে ১৯৯৮ সালের প্রথম দিকে আমার পরিচয় হয় টিপু ভাইয়ের সাথে। টিপু ভাই তখন শিক্ষাভিত্তিক মাসিক পত্রিকা 'বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস' এর নির্বাহী সম্পাদক। আমি তখন একুশে টেলিভিশন, দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার পাশাপাশি উক্ত পত্রিকার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করি।
সপ্তাহের প্রতি বৃহস্পতিবার আমি জাবি থেকে মতিঝিলের মর্ডান ম্যানশনের ১৫ তলায় অবস্থিত 'বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস' পত্রিকার কার্যালয়ে যেতাম সারা সপ্তাহের রিপোর্ট জমা দিতে। আমার বেশিরভাগ রিপোর্টের দেহে কাচি চালাতেন টিপু ভাই। তার এ কাচি চালানো দেখে একদিন তাকে সরাসরি প্রশ্নই করে বসলাম "ভাই আপনার এ কাঁটাছেড়া দেখে আমি নিজেইতো ক্ষত বিক্ষত হয়ে যাচ্ছি।"
উত্তরে টিপু ভাই হেসে বলেছিলেন-
"নিপু, আপনার লেখার হাত অনেক ভালো -সেই ভালোকে আমি একটু ভার্নিশ করে দিচ্ছি।"
বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ করে পেশা হিসেবে বেছে নিলাম সাংবাদিকতাকে। কিন্তু সেখানেও নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না বাবা মায়ের কারণে। নতুন কর্মক্ষেত্র হিসেবে বেছে নিলাম প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির জব। ভাগ্য আমার সহায় ছিলো, তাই মিডিয়া ছেড়ে আসলেও এখানেও আমার কাজ ছিলো মিডিয়া সংশ্লিষ্ট। আমি উক্ত ইউনিভার্সিটির হেড অব মিডিয়া এন্ড কমিউনিকেশন হিসেবে কাজ শুরু করলাম।
দীর্ঘ প্রায় দশ বছর বা তার বেশিও হতে পারে টিপু ভাইয়ের সাথে আমার যোগাযোগ ছিলো না বললেই চলে। তবে আমি জানতাম তিনি একটা বেসরকারি ব্যাংকের হেড অব মিডিয়া হিসেবে কর্মরত আছেন। বাংলাদেশ জনসংযোগ সমিতির প্রথম ফ্যামিলি ডে প্রোগ্রামের ঠিক আগে, খুব সম্ভবত অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময়ে একদিন টিপু ভাই আমাকে ফোন করেন। তিনি ফোন করে আমাকে কেমন আছি জিজ্ঞেস করার আগেই আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম -
টিপু ভাই আপনি কেমন আছেন?
টিপু ভাই আমার মুখে তার নাম শুনে এবং এতোবছর পরও তাকে যে আমি চিনতে পেরেছি, তাতে অবাক হয়ে যান। তিনি বিন্সয়ের সঙ্গে পাল্টা প্রশ্ন রেখে আমায় জিজ্ঞেস করেছিলেন,
'নিপু,
আপনি আমার কন্ঠ চিনলেন কি করে!!'
আমি সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিয়েছিলাম
আমি যে আপনার ভাই-
আমার হৃদয় কাটাছেঁড়া করা ভাইকে চিনতে আমার কোন কষ্ট হয়নি টিপু ভাই।'
এরপর অনেক কথা হলো। টিপু ভাইয়ের আগ্রহেই বিপিআরএ'র আজীবন সদস্য হলাম। এ পর্যন্ত বিপিআরএ'র যতগুলো ফ্যামিলি ডে প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হয়েছে, তার প্রতিটি প্রোগ্রামে দু'ভাই কাজ করেছি কাঁধে কাঁধ রেখে। এ সকল অনুষ্ঠানের যা কিছু অর্জন তার পুরো কৃতিত্ব টিপু ভাইয়ের। আমি তার ছোট ভাই হিসেবে পাশে থেকে চেষ্টা করেছি সহযোগিতা করার।
ব্যক্তিগতভাবে আমি বিশ্বাস করি, মহান সৃষ্টিকর্তা প্রতিটি মানুষের ভিতরে ভালো কিছু মানবিক গুনাবলী দিয়ে পৃথিবীতে প্রেরন করেন।
টিপু ভাইয়ের সবচেয়ে বড় গুন হলো তার ধৈয্য। তিনি সহজে কারো কথায় রেগে যান না।
তিনি বলেন কম- শোনেন বেশি, অপরের বিপদে দ্রুত সাড়া দেন, সর্বদা হাসিখুশি থাকেন, সিনিয়র-জুনিয়র সবাইকে নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করেন। এতো গুনসম্পন্ন মানুষটাও কিন্তু সমালোচনার উর্ধে নন। যারা কাজ করেন, তারা ভুল করবেন, এটাই বাস্তবতা। আজকের বাংলাদেশ জনসংযোগ সমিতির এ অগ্রযাত্রায় একজন টিপু ভাইয়ের অবদান যেমন গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক তেমনি তার অবদানকে আমরা কি অস্বীকার করতে পারি?
আর পারিনা বলেই আপনি ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন এবং বিপিআরএ পরিবারের উপর শান্তির ছায়া হয়ে বেঁচে থাকুন আজীবন টিপু ভাই ।
আপনার জন্মদিনে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে এ আমার চাওয়া।।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ হারুন-অর-রশিদ
বার্তা সম্পাদকঃ আশিক সরকার
Copyright © 2025 Bporikromanewsbd.com. All rights reserved.