বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমা ডেস্ক : মরণঘাতী করোনাভাইরাস নিয়ে দেশে আতঙ্কের মধ্যেই এডিশ মশাবাহিত ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও বাড়তে শুরু করেছে বাংলাদেশে। বিশ্ববাসী এখন শুধু করোনাভাইরাস আতঙ্কে থাকলেও বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাবাসী আছে করোনার সাথে ডেঙ্গু আতঙ্কের মাঝে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো তিনজনে। আর নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ছয়জন। এদের মধ্যে তিনজন নারী ও তিনজন পুরুষ। দেশে এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩৩।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কড়া নিদের্শ থাকলে এখন পর্যন্ত নেই কোনো কার্যকারী ব্যবস্থা। বর্ষা আসতে আরও মাস দুয়েকের বেশি বাকি। এরই মধ্যে গত বছরের এমন সময়ের তুলনায় প্রায় চারগুণ বেশি ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের থেকে সম্প্রতি পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সোমবার (১৬মার্চ) পর্যন্ত সারা দেশে ২৬৩ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। গত বছর জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত এই সংখ্যা ছিল মাত্র ৭৩ জন।
বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, গত বছর দেশে সবচেয়ে খারাপ ডেঙ্গু পরিস্থিতি ছিল। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত এ বছরও এমন ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব এড়াতে অনতিবিলম্বে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া।
অধিদপ্তরের তথ্য মতে, গত বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিলেন মোট এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন। যাদের মধ্যে ৪৯ হাজার ৫৪৪ জন ছিলেন ঢাকার বাইরে। আক্রান্তদের মধ্যে ১৭৯ জন মারা যান বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোলরুম বলছে, জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত রাজধানীসহ সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতলে ডেঙ্গু ও সন্দেহজনক ডেঙ্গু নিয়ে ২৬২ জন ভর্তি হয়েছেন। এরমধ্যে ছাড়পত্র নিয়ে চলে গেছেন ২৫৪ জন।
মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক আয়শা আক্তার বলেন, ঢাকার সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু ও সন্দেহজনক ডেঙ্গু নিয়ে আটজন রোগী ভর্তি আছেন। এছাড়া দেশের অন্যান্য বিভাগে ডেঙ্গুর কোনো রোগী ভর্তি নেই। গত বছর দেশে ডেঙ্গু জ্বরের ভয়াবহ প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে জানা গেছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ২৩৬ জন। ছাড়পত্র নিয়েছেন ২৩৫ জন। হাসপাতালে ভর্তি আছেন একজন। ভর্তি হওয়া ২৩৬ জনের মধ্যে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫০ জন, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২১ জন, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১১ জন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১০ জন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন দুইজন করে। মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন চার জন, বিজিবি হাসপাতালে তিন জন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ১০ জন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৪ জন। অপরদিকে, ঢাকার বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন ৪৯ জন। রাজধানী ঢাকা ছাড়া ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল, খুলনা আর রংপুর বিভাগের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন ৬০ জন ডেঙ্গু রোগী।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন থেকেই মশা নিধন কার্যক্রম চালাতে হবে। শুধু রাজধানী নয়, ঢাকার বাইরেও কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরুর পর কার্যক্রম হাতে নিলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে।
বছরের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার কার্যালয়ে ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নব-নির্বাচিত মেয়র এবং কাউন্সিলরদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে বর্ষা মওসুম শুরুর আগেই ডেঙ্গু রোগ সৃষ্টিকারী এডিস মশা নির্মূলে আগাম কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রাজধানীর উত্তর ও দক্ষিণের নব-নির্বাচিত মেয়র এবং কাউন্সিলরদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ডেঙ্গু একটি সমস্যা আকারেই দেখা দিয়েছে। কাজেই এখন থেকেই নব-নির্বাচিত মেয়র এবং কাউন্সিলরদের এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ওষুধের কার্যকর প্রয়োগের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন,মশা আপনার ভোট যেন খেয়ে না ফেলে সেটা নিশ্চয়ই আপনাকে দেখতে হবে। মশা ক্ষুদ্র হলেও অনেক শক্তিশালী। এটা মাথায় রাখতে হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ হারুন-অর-রশিদ
বার্তা সম্পাদকঃ আশিক সরকার
Copyright © 2025 Bporikromanewsbd.com. All rights reserved.