বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে গোটা পৃথিবী কার্যত অবরুদ্ধ। অনেক দেশ মুক্ত বাতাসে বেরুতে শুরু করলেও বাংলাদেশ এখনো অনিশ্চয়তায়।
ভাইরাসটির কারণে গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে দেশজুড়ে চলছে পরিবার-পরিজন হারানোর আতঙ্ক। এরই মধ্যে স্বজন হারিয়েছেন অনেকেই। মার্চের শুরুতে প্রাদুর্ভাব শুরুর পর ২৬ মার্চ থেকে চলা অঘোষিত লকডাউনে গোটা দেশ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
সারা দেশে অসহায় হয়ে পড়েছে হতদরিদ্র, ছিন্নমূল, দিনমজুর ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ। এসব অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে যেন আরেক মানবিক বাংলাদেশ। সরকারের পাশাপাশি রাজনৈতিক দল, সামাজিক, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, এমনকি ব্যক্তি উদ্যোগে অসহায়দের সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে প্রতিটি নির্বাচনি এলাকায় অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে সংসদ সদস্যরা। অসহায় ও কর্মহীন হয়ে মানুষের পাশে খাদ্যসামগ্রী, সুরক্ষাসামগ্রী বিতরণের পাশাপাশি জনসচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করছে প্রত্যেক সংসদ সদস্যই। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেকেই মাঠে কাজ করছেন মানবতার কল্যাণে।
ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন কেউ কেউ। রাজশাহী বিভাগের ৮টি জেলায় (রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া ও জয়পুরহাট) সংসদীয় আসন রয়েছে ৩৯টি। এর মধ্যে ৩ জন সংসদ সদস্য সাম্প্রতিক সময়ে মৃত্যুবরণ করেছেন।
করোনাকালীন সময়ে নেয়া উদ্যোগসহ সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে দৈনিক আমার সংবাদের সঙ্গে কথা বলেছেন ২৭ জন সংসদ সদস্য। বাকি ৮ জন সংসদ সদস্যের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। পাঠকদের জন্য সংক্ষিপ্ত আকারে আসনভিত্তিক তুলে ধরা হলো। প্রতিবেদনটি লিখেছেন আসাদুজ্জামান আজম, বেলাল হোসেন ও রফিকুল ইসলাম
আলহাজ ওমর ফারুক চৌধুরী, রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী এবং তানোর): করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পরপরই নির্বাচনি এলাকার মানুষের চিকিৎসা ও খাদ্যসামগ্রী নিশ্চিতে স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বয়ে হট লাইন চালু করেন ওমর ফারুক চৌধুরী। হটলাইনে নিজের নাম্বারও দেন এ সাংসদ।
সরকারি সহায়তার পাশাপাশি নিজস্ব অর্থায়নে হতদরিদ্রদের যারা প্রকাশ্যে সাহায্য নেননি, তাদের সহায়তা করেছেন এবং অব্যাহত আছে। চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিতদের এবং দলীয় স্বেচ্ছাসেবকদের সুরক্ষাসামগ্রী বিতরণ করেছেন।
ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক, রাজশাহী-৪ (বাগমারা): বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে চিকিৎসসেবা নিশ্চিত করেছেন রাজশাহী-৪ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক।
এছাড়াও কারোনায় কর্মহীন ও দুস্থদের খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন তিনি। জানতে চাইলে এনামুল হক আমার সংবাদকে বলেন, সাধারণ মানুষকে করোনা সংক্রমণ থেকে রক্ষা করাই আমার প্রথম দায়িত্ব ছিলো। সেজন্য বিভিন্ন ধরনের প্রচার-প্রচারণা করেছি।
মো. মনসুর রহমান, রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া ও দুর্গাপুর): প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা বাস্তবায়ন এবং নিজ নির্বাচনি এলাকার মানুষকে বৈশ্বিক মহামারি থেকে রক্ষা করতে এখনো কাজ করে যাচ্ছেন রাজশাহী-৫ আসনের সংসদ সদস্য মো. মনসুর রহমান। তিনি বলেন, করোনায় দুস্থ মানুষের জন্য সরকার যেসব উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। তা সফলভাবেই বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
করোনায় আক্রান্ত মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার পাশাপাশি অসহায়, দরিদ্র এবং শ্রমজীবী মানুষের খাদ্যসামগ্রী নিশ্চিত করা হয়েছে। এজন্য সরকারের সাথে সাথে দলীয় নেতাকর্মী মাঠে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন। এ ধারাবাহিকতা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে।
আদিবা আনজুম মিতা, রাজশাহী সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য: রাজশাহী সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য হয়েও নিজ এলাকার করোনায় অসহায়, দরিদ্র, শ্রমজীবী, নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষের মাঝে, চাল, ডাল, তেল, লবণসহ বিভিন্ন ধরনের খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছেন অ্যাডভোকেট আদিবা আনজুম মিতা।
জানতে চাইলে তিনি বলেন, গ্রামাঞ্চলে অনেক মানুষ রয়েছেন যাদের অধিকাংশই সহজ-সরল। তারা করোনায় অভাবে থাকলেও মানুষের কাছে হাত পাততে চান না।
দুস্থসহ এই শ্রেণির মানুষের তালিকা তৈরি করে বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিয়েছি। তিনি আরও বলেন, কুরবানির ঈদকে সামনে রেখে কাজ করছি। করোনাকালে সবাই যেন একসাথে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিতে পারি।
ডা. হাবিবে মিল্লাত মুন্না, সিরাজগঞ্জ-২ (সদর ও কামারখন্দ উপজেলা): করোনায় মানুষের বাড়ি বাড়ি ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছেন সিরাজগঞ্জ সদর আসনের এমপি ডা. হাবিবে মিল্লাত মুন্না। তিনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, জেলা প্রশাসন ও দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে দুস্থদের পাশে ছিলেন করোনা সংক্রমণের প্রথম থেকেই।
অসহায় ও দুস্থদের মধ্যে খাদ্য ও সুরক্ষাসামগ্রী এবং চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নিয়েছেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, করোনায় একটি মানুষও যেন না খেয়ে থাকে, সেই বিষয়গুলোকে মাথায় রেখে করোনার প্রথম থেকেই কাজ করা হয়েছে এবং বর্তমানে হচ্ছে। দেশের অবস্থা স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এই কাজের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।
ডা. মো. আব্দুল আজিজ, সিরাজগঞ্জ-৩ (তাড়াশ ও রায়গঞ্জ উপজেলা): সিরাজগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ডা. মো. আব্দুল আজিজ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার পর থেকেই নিজ নির্বাচনি এলাকায় সাধারণ মানুষের খোঁজখবর নিয়ে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছেন তিনি।
দেশে অঘোষিত লকডাউনের সময় তার ব্যতিক্রমী উদ্যোগ ’হ্যালো আমি এমপি আজিজ বলছি’ স্লোগানটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা তৈরি হয়।
জানতে চাইলে তিনি আমার সংবাদকে বলেন, আমার নির্বাচনি এলাকায় একটি মানুষও না খেয়ে থাকবে না। এ বিষয়ে স্থানীয় দায়িত্বশীল নেতা ও প্রশাসনকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
তানভির ইমাম, সিরাজগঞ্জ-৪ ((উল্লাপাড়া উপজেলা): করোনাকালে নিজ নির্বাচনি এলাকার জন্য ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলেন সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ তানভির ইমাম।
তিনি অসহায়, দরিদ্র, শ্রমজীবী, নিম্ন এবং মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষের ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছেন। করোনার সম্মুখযোদ্ধা চিকিৎসক ও নার্সদের সুরক্ষায়ও নিয়েছেন পদক্ষেপ।
আবদুল মমিন মন্ডল, সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি, চৌহালি): জেলার অন্য আসনের ন্যায় সিরাজগঞ্জ-৫ আসনের সাংসদ আবদুল মমিন মন্ডলও করোনা সংকটে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। অসহায় ও কর্মহীন মানুষের জন্য নির্বাচনি এলাকায় ব্যাপক কর্মসূচি পালন করেছেন। বিশেষ করে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের জন্য প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিয়েছেন। ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন প্রতিটি ওয়ার্ডপর্যায়ে।
হাসিবুর রহমান স্বপন, সিরাজগঞ্জ-৬ (শাহজাদপুর উপজেলা): নিজ নির্বাচনি এলাকার জন্য করোনা কালীন প্রসংশনীয় উদ্যোগ ও বাস্তবায়ন করেছেন সিরাজগঞ্জ-৬ এমপি হাসিবুর রহমান স্বপন।
জানতে চাইলে বলেন, করোনায় দীর্ঘদিন কর্মহীন থাকায় প্রায় সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ অর্ধাহারে-অনাহারে জীবনযাপন করেছেন। সেইসব মানুষের তালিকা তৈরি এবং ত্রাণ পৌঁছে দেয়াই ছিলো প্রধান টার্গেট। আমাদের সেই লক্ষ্য পূরণ করেছি। দুস্থ ও কর্মহীন মানুষের ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দিয়েছি।
শহিদুল ইসলাম বকুল, নাটোর-১ (লালপুর ও বাগাতিপাড়া): অসহায় দরিদ্র, শ্রমজীবী, দুস্থ, নিম্ন এবং মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষের জন্য করোনার শুরু থেকে নির্বাচনি এলাকায় কাজ করছেন নাটোর-১ আসনের এমপি শহিদুল ইসলাম বকুল।
জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়ে ছিলেন করোনাকালে দেশের একটি মানুষও না খেয়ে থাকবে না। নেত্রীর সেই সিদ্ধান্ত অক্ষরে অক্ষেরে পালন করা হয়েছে। এজন্য আমাদের প্রতিটি নেতাকর্মী ঐক্যবদ্ধ ছিলেন এবং আগামীতে থাকবেন।
শফিকুল ইসলাম শিমুল, নাটোর-২ (সদর-নলডাঙ্গা): দেশে অঘোষিত লকডাউনের প্রথম থেকেই সাধারণ মানুষের মাঝে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে কাজ করেছে নাটোর-২ আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল। করোনায় মানুষের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে পুরো এলাকায় মাইকিং করেছেন তিনি।
তিনি বলেন, বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাস থেকে প্রতিটি মানুষকে বাঁচাতে অসহায় ও দুস্থদের খাবার পৌঁছে দেয়ার পাশাপাশি পুরো এলাকাতে সচেতনতামূলক কার্যক্রম করা হয়েছে। এ কারণেই করোনা সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব হয়েছে।
জুনাইদ আহমেদ পলক, নাটোর-৩ (সিংড়া): করোনার কারণে বোরো মৌসুমে ধানকাটা নিয়ে বিপাকে পড়ে দেশের অধিকাংশ কৃষক। এ জন্য নিজ এলাকার কৃষকের জন্য ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহণ করে দেশের সাধারণ মানুষের কাছে প্রসংশা কুড়িয়ে ছিলেন নাটোর-৩ আসনের সাংসদ, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহম্মেদ পলক।
একই সাথে বাড়ি বাড়ি গিয়ে দুস্থদের খোঁজ-খবর নিয়ে সরকার এবং আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছেন তিনি। একই সাথে নিজের অর্থয়ানে খাবার পৌঁছে দিয়েছেন।
নির্বাচনি এলাকার বাইরেও সরকারের করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় একজন যোদ্ধা হিসেবে নিজেকে মেলে ধরেছেন তিনি। সরকারি কার্যক্রম সহজতর করতে অ্যাপের মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপনের ব্যবস্থা করে প্রসংশা কুড়িয়েছেন তিনি।
আব্দুল কুদ্দুস, নাটোর-৪ (গুরুদাসপুর ও বড়াইগ্রাম): বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় প্রথম থেকে নিজ নির্বাচনি এলাকায় কাজ করছেন নাটোর-৪ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল কুদ্দুস এমপি।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সাথে নিয়ে নিজ নির্বাচনি এলাকার মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য নানামুখী পরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করেছেন।
জানতে চাইলে তিনি বলেন, করোনায় অনেক মানুষ বেকার হয়েছে। অনেকেই কর্ম হারিয়েছে। সেসব বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়েই কাজ করে যাচ্ছি। এই ধারাবাহিকতা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে।
শামসুল হক টুকু, পাবনা-১ (সাঁথিয়া, বেড়া): করোনায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের শুরু থেকেই কাজ করছেন পাবনা-১ আসনের সংসদ সদস্য শামসুল হক টুকু।
জানতে চাইলে তিনি বলেন, করোনায় দেশ ও দেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেসব উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন মাঠপর্যায়ে সেইসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন করেছি। করোনায় সরকারের উদ্যোগ এবং তা বাস্তবায়নের কারণে দেশের প্রতিটি অঞ্চলের মানুষ সরকারের উপর আস্থা রাখতে পারে।
মকবুল হোসেন, পাবনা-৩ (চাটমোহর ভাঙ্গুরা ও ফরিদপুর উপজেলা): করোনায় নিজ নির্বাচনি এলাকার সমস্যা চিহ্নিত করার পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসনকে সাথে নিয়ে প্রথম থেকেই সাধারণ মানুষের পাশে ছিলেন পাবনা-৩ আসনের এমপি মকবুল হোসেন।
জানতে চাইলে তিনি বলেন, করোনায় অসহায়, দুস্থ, দরিদ্র, শ্রমজীবী, নিম্ন এবং মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুুষগুলো করোনার প্রথম থেকেই অনাহারে-অর্ধাহারে জীবনযাপন করে আসছিলেন। সেসব অসহায় মানুষের মরধ্যে সরকারি এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছি।
গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্স, পাবনা-৫ (সদর): বৈশ্বিক মহামারি করোনায় সাধারণ মানুষের কষ্ট দূর করতে জেলার অন্যান্য সংসদ সদস্যের মতোই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন পাবনা-৫ আসনের এমপি গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্স।
তিনি বলেন, করোনাকালে প্রতিটি মানুষের বাড়ি বাড়ি খাদ্য এবং ত্রাণসামগ্রী পৌঁছানোই ছিলো আমাদের জন্য করোনাকালীন চ্যালেঞ্জ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় সেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছি এবং সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করেছি।
শরিফুল ইমলাম জিন্নাহ, বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ উপজেলা): সংসদীয় আসন বগুড়া-২ আসনের সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির শরিফুল ইমলাম জিন্নাহ। করোনাকালীন এমপির নিজ সংসদীয় এলাকায় ত্রাণ তৎপরতা নিয়ে কথা হয় আমার সংবাদের সাথে। তিনি বলেন, করোনা আক্রান্তের শুরুর দিকে দুস্থ ও অসহায়দের মাঝে চাল, ডাল, তেল ও সাবান দিয়েছি।
এছাড়াও অনেককে মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়েছি। শরিফুল ইমলাম জিন্নাহ বলেন, আমার ব্যক্তিগত অর্থের মাধ্যমে সাহায্য-সহযোগিতা করেছি।
বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি অনেক ভয়াবহ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন জনগণকে ব্যাপক প্রচারণার মাধ্যমে সচেতন করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।
এছাড়াও এমপি নিজস্ব একটা গাড়ি দিয়েছেন, যেটাতে করে করোনা পজেটিভ রোগীদের সাহায্য করা হচ্ছে বলে জানান এ সংসদ সদস্য।
নুরুল ইসলাম তালুকদার, বগুড়া-৩ (দুপচাঁচিয়া ও আদমদীঘী): বগুড়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম তালুকদার। করোনাকালীন এমপির নিজ সংসদীয় এলাকায় ত্রাণ তৎপরতা নিয়ে কথা হয় আমার সংবাদের সাথে।
তিনি বলেন, আমরা রোজার আগে থেকে ত্রাণ দিয়ে আসছি। ব্যক্তিগত উদ্যোগে দুই উপজেলার কয়েক হাজার দুস্থ পরিবারের মাঝে চাল, ডাল, তেল ও সাবান বিতরণ করেছি।
নুরুল ইসলাম বলেন, গেলো রোজার ঈদে অনেক গরিব পরিবারের মাঝে সেমাই ও চিনি দিয়েছি। বর্তমান পরিস্থিতিতে জনগণকে সচেতনতার কাজ করছি। তিনি বলেন, আমাদের দুই উপজেলা প্রশাসন এ বিষয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
মোশারফ হোসেন, বগুড়া-৪ (কাহালু ও নন্দীগ্রাম): সংসদীয় আসন বগুড়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য বিএনপির মোশারফ হোসেন। করোনার প্রাদুর্ভাবের দিনগুলোতে ত্রাণ কার্যক্রম নিয়ে কথা হয় আমার সংবাদের সাথে।
তিনি বলেন, করোনা আক্রান্তের শুরুর দিকে অসহায়-দুস্থদের মাঝে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস বিতরণ করেছি। মোশারফ হোসেন বলেন, ১৪টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভার প্রায় ৫ হাজার দুস্থ পরিবারের মাঝে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত অর্থে মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, আমার সম্মানী ভাতার ১ লাখ ৭৩ হাজার টাকা এর সাথে আরও অতিরিক্ত ২ লাখ টাকা দিয়ে অনেক অসহায়কে নগদ অর্থ সহায়তা করেছি।
তিনি বলেন, ঈদ উদযাপনে বেশকিছু গরিব পরিবারকে দেড়-দুই হাজার টাকা করে দিয়েছি। আমার এলাকার বিএনপির অনেক নেতা-কর্মীও অর্থ সহায়তা করে সহযোগিতা করেছেন। এলাকার এতিমখানায় নগদ অর্থ দেয়ার কথাও জানান এ সংসদ সদস্য।
জিএম সিরাজ, বগুড়া-৬ (সদর): বগুড়া-৬ আসনের সংসদ সদস্য বিএনপির জিএম সিরাজ। তিনি আমার সংবাদকে বলেন, ব্যক্তিগত অর্থে এখন পর্যন্ত সাহায্য করে যাচ্ছি। রোজার ঈদে নেতা-কর্মীদের সাথে নিয়ে আমার নির্বাচনি এলাকার অসহায় পরিবারের মাঝে সেমাই-চিনি এবং নগদ অর্থ সহয়তা দিয়েছি বলে জানান সিরাজ এমপি।
তিনি বলেন, বগুড়ায় আক্রান্তের হার অনেক বেশি, এখন আমরা জনসচেতনতায় ব্যাপক জোর দিয়েছি। মাস্ক ব্যবহারের জন্য সবাইকে অনুরোধ করা হচ্ছে।
সাধন চন্দ্র মজুমদার, নওগাঁ-১ (পোরশা, সাপাহার ও নিয়ামতপুর): নওগাঁ-১ সংসদীয় আসনটি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এবং বর্তমান খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। করোনার প্রাদুর্ভাবের দিনগুলোতে ত্রাণ কার্যক্রম নিয়ে কথা হয় আমার সংবাদের সাথে।
তিনি বলেন, আমার নির্বাচনি এলাকায় ব্যক্তিগত অর্থে ১২ হাজার পরিবারকে ৫ কেজি চাল, ২ কেজি আলু, ১ কেজি লবণ, ১ লিটার তেল ও সাবান দিয়েছি।
এছাড়াও সাড়ে চার হাজার পরিবারকে সবজি বিতরণ করা হয়েছে। করোনা দুর্যোগের পরপরই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এ ত্রাণতৎপরতা চালিয়েছি।
তিনি বলেন, প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার মাস্ক বিতরণ করা হয়েছে। প্রত্যেক হাসপাতাল, ইউনিয়ন পরিষদ, ইউএনওর কাছে ২শ থার্মাল স্ক্যানার দেয়া হয়েছে। নওগাঁ সদরে পিসিআর ল্যাব স্থাপনের জন্য ইতোমধ্যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এটা তালিকাভুক্ত আছে। বর্তমানে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা জনসচেতনতায় ৩ লাখ লিফলেট বিতরণ করেছেন।
এছাড়াও এখন এলাকায় কড়া নির্দেশনা দেয়া হয়েছে কেউ যেনো মাস্ক ছাড়া বাইরে না যায়। এছাড়া সরকারি ১০ টাকা কেজি দরে চাল দেয়া হয়েছে বলে জানান এ সংসদ সদস্য।
শহীদুজ্জামান সরকার, নওগাঁ-২ (পত্নীতলা ও ধামইরহাট): সংসদীয় আসন নওগাঁ-২-এর সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের শহীদুজ্জামান সরকার। করোনাকালীন সময়ে কি কাজ করেছে তা নিয়ে কথা হয় আমার সংবাদের সাথে।
তিনি বলেন, সরকারের অংশ হিসেবে আমার এলাকার নেতা-কর্মীদের নিয়ে অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছি। এলাকায় সাধারণ মানুষের খোঁজ-খবর নিয়ে ত্রাণসামগ্রী দিয়েছি।
শহীদুজ্জামান বলেন, আমরা আর দশজনের মতো ছবি তুলে ত্রাণ দেইনি। ব্যক্তিগত উদ্যোগে যতটুকু সাধ্য হয়েছে সেটা দিয়ে সাহায্য করেছি। বর্তমানে এলাকায় ব্যাপক জনসচেতনতার মাধ্যমে সবাইকে করোনার ভয়াবহতা জানানো হচ্ছে। সবাইকে মাস্ক পরার জন্য বিশেষ করে বলা হচ্ছে।
মো. ছলিম উদ্দিন তরফদার, নওগাঁ-৩ (বদলগাছী ও মহাদেবপুর): নওগাঁ-৩ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মো. ছলিম উদ্দিন তরফদার। করোনায় ত্রাণ তৎপরতা নিয়ে তিনি বলেন, করোনা প্রাদুর্ভাবের সময় থকে সাহায্য-সহযোগিতা করে আসছেন।
গরিব ও অসহায়দের মাঝে নিত্য প্রয়োজনীয় চাল, ডাল, তেল, সাবান ও মাস্ক দিয়েছি। ছলিম উদ্দিন আরও বলেন, নিজ নির্বাচনি এলাকায় অসহায়দের সহযোগিতার জন্য ‘মানবতার ঘর’ তৈরি করেছেন।
এখান থেকে প্রতিদিন ১০০-১৫০ দুস্থ পরিবারের মাঝে চাল, ডাল, তেল দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘মানবতার ঘরে’ প্রতিদিন এলাকার সার্মথ্যবান ও বিত্তশালীরা সহযোগিতা করতেন। এ অর্থ দিয়ে সাহায্য করা হয়।
মো. ইসরাফিল আলম, নওগাঁ-৬ (রানীনগর, আত্রাই): সংসদ সদস্য বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মো. ইসরাফিল আলম। করোনার শুরুর দিকে ত্রাণ দেয়ার কথা উল্লেখ করে আমার সংবাদকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুসারে আমার নির্বাচনি এলাকায় অসহায়দের মাঝে নিত্য প্রয়োজনীয় খাবার দিয়েছি। এলাকায় নেতা-কর্মীদের নিয়ে করোনা আক্রান্ত রোগীদের বিশেষ সহযোগিতা করেছি বলে জানান ইসরাফিল আলম। জনসাধারণের মাঝে মাস্ক ও সাবান বিতরণ করেছেন। সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে এসব কাজ করেছেন বলে জানান তিনি।
আবু সাইদ আল মাহমুদ স্বপন, জয়পুরহাট-২ (কালাই, আক্কেলপুর, ক্ষেতলাল): করোনার শুরু থেকেই অসহায় দরিদ্র ও শ্রমজীবী মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জয়পুরহাট-২ আসনের এমপি আবু সাইদ আল মাহমুদ স্বপন।
জানতে চাইলে তিনি আমার সংবাদকে বলেন, দেশের যেকোনো দুর্যোগে সাধারণ মানুষের জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সকল নেতাকর্মী ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করেছেন। সেই ধারাবাহিকতায় বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসেও কাজ করছেন। দেশে আগের যেকোনো দুর্যোগের চেয়ে করোনায় বেশি নিজ নির্বাচনি এলাকার দুস্থ ও অসহায় মানুষের জন্য কাজ করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ): করোনা সংকট শুরুর পরপরই একজন করোনা যোদ্ধা হিসেবে নির্বাচনি এলাকা শিবগঞ্জ উপজেলাবাসীর পাশে দাঁড়িয়েছেন ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল। সচেতনতা কার্যক্রম, সুরক্ষা ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছেন। চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে ছিলেন নিবেদিত।
জানতে চাইলে ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল বলেন, করোনা সংকটের শুরুতে সচেতনামূলক লিফলেট, মাইকিংসহ মাস্ক, স্যানিটাইজার বিতরণ করেছি। সাধারণ ছুটির কারণে অসহায় ও কর্মহীন মানুষের মধ্যে সরকারি ত্রাণ কার্যক্রমে শতভাগ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করেছি। নিজে উপস্থিত থেকে ইউনিয়ন ও চরাঞ্চলে ত্রাণ দিয়েছি। ব্যক্তিগতভাবেও ত্রাণ দিয়েছি।
আক্রান্তদের প্রত্যেকের বাড়ি গিয়ে খোঁজখবর নিয়েছি, চিকিৎসা নিশ্চিত করেছি। এখন যারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন তাদের প্রত্যেককে একটি করে সেলাই মেশিন দেবার উদ্যোগ নিয়েছি। একজনকে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে বাড়ি প্রদান করা হবে। এছাড়া নিজে রোগী দেখা এবং অপারেশনেও অংশ নিয়েছি। চিকিৎসক-নার্সদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করেছি।
হারুনুর রশিদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর): চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত। আসনটির বর্তমান সাংসদ বিএনপির হারুনুর রশিদ। করোনা পরিস্থিতির কার্যক্রম নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, করোনা সংকট শুরুর পর হতে সরকারি উদ্যোগ বাস্তবায়নে কাজ করে আসছি।
একইসঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে ত্রাণ কার্যক্রম চালিয়েছি। ঊর্ধ্বতন মহলে বারবার ধরনা দিয়েও জেলা সদর হাসপাতালে কোনো ল্যাব স্থাপন করতে পারিনি। কোনো করোনা ইউনিট নেই। আসলে চিকিৎসা নিয়ে আমরা খুব সংকটে আছি।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ হারুন-অর-রশিদ
বার্তা সম্পাদকঃ আশিক সরকার
Copyright © 2025 Bporikromanewsbd.com. All rights reserved.