আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, কুষ্টিয়া সদর থেকে নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য মাহবুব-উল আলম হানিফ এখন কানাডায়। সম্প্রতি তিনি কাতার এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে কানাডায় ছুটে যান একান্তই পরিবারের টানে। করোনাকালীন সময়ে কানাডা যাওয়া সম্পর্কে নিজের অবস্থান তুলে ধরেছেন মাহবুব-উল আলম হানিফ।
শনিবার (২৭ জুন) রাতে বাংলাদেশের একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে যোগ দিয়ে কানাডা যাওয়ার বিষয়টি পরিষ্কার করেন তিনি।
হানিফ বলেন, আমি আসলে অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবী এখন করোনায় বিধ্বস্ত, বিপর্যস্ত, বিপন্ন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আপ্রাণ চেষ্টা করা হচ্ছে আমাদের সীমিত সম্পদ নিয়েই এ বিপর্যয় মোকাবিলা করে কীভাবে সংকট থেকে বেরিয়ে আসা যায়।
তিনি বলেন, শুরু থেকেই আমি নিজে ওখানে ছিলাম, আমার নিজ এলাকায় গিয়েছি একাধিকবার। করোনা যখন বাংলাদেশে আক্রান্ত হলো তখন নিজ জেলা কুষ্টিয়া আমি গিয়েছি। সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, চিকিৎসকদের নিয়ে মিটিং করেছি। হাসপাতালে পিসিআর ল্যাব ছিল না, একটা পিসিআর ল্যাবের ব্যবস্থা করেছি সাতদিনের মধ্যে।
সংসদ সদস্য বলেন, আমি করোনাকালীন সময় সেখানে চারবার গিয়েছি। এলাকার মানুষের পাশে যতটুকু দাঁড়ানো যায় একজন সংসদ সদস্য হিসেবে আমরা চেষ্টা করেছি। আমরা পার্টি অফিসে বসে দলীয় নেতাদেরসহ বিভিন্ন জেলা পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, মনিটরিং করেছি যাতে করোনাকালীন দায়িত্বটা কীভাবে তারা পালন করতে পারেন কীভাবে করবেন আমরা সবসময় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, মনিটরিং করেছি।
তিনি বলেন, আমার বাচ্চারা, তারা লেখাপড়া করে এখানে (কানাডা)। ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরুর পর যখন সারাদেশে তাণ্ডব শুরু হলো। সেই সময়ে কিন্তু আমার উপরে একাধিকবার বোমা হামলা হয়েছে। কারণ আমি সেখানে ছিলাম খুব সোচ্চার, খুব ভোকাল হিসেবে যুদ্ধাপরাধী বিএনপি-জামায়াতের তাণ্ডবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলাম। সেই সময়ে তারা হুমকি-ধামকি বোমাবাজি করেও যখন আমাকে বিরত রাখতে ব্যর্থ হলো তখন টেলিফোনে হুমকি দেয়া হয়েছিল আমার বড় ছেলে তখন স্কলাস্টিকায় পড়তো তাকে ওখান থেকে কিডন্যাপ করা হবে।
আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, সেই সময় আমাদের পারিবারিক সিদ্ধান্তে যেহেতু আমার ভাই এবং দুই বোন থাকেন কানাডায়। আমার বড় ভাই থাকেন সিক্টিইজ থেকে আর আমার দুই বোন থাকেন প্রায় ৩০ বছরের উপরে। তাই তখন বলেছিলেন পরিবারকে এখানে পাঠিয়ে দিতে কারণ বাচ্চাদেরকে এ রকম ঝুঁকির মুখে রাখা ঠিক হবে না। তখন আমার বাচ্চাদেরকে আমি এখানে (কানাডা) পাঠিয়ে দিই, এখানকার স্কুলে ভর্তি হয়। স্কুল থেকে আমার বড় ছেলে গ্রাজুয়েশন শেষ করে এখন সে জবে আছে। আগামী বছর থেকে আবার মাস্টার্সে ভর্তি হবে।
তিনি বলেন, আমার স্ত্রী এখানে আসে আমার সন্তানদের দেখার জন্য। এর মধ্যেই এবার আসার পরে সে আটকা পড়ে। আমার স্ত্রী বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ। তাকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে গিয়েছিলাম। থাইরয়েডের সমস্যা বেড়ে যাচ্ছে। এখানে চিকি দেখার পরে আগামী ২৯ জুন তাকে আবার সময় দিয়েছে।
মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, আমি এবং আমার পরিবারের কেউই কিন্তু কখনও কানাডার নাগরিকের জন্য আবেদন করিনি। আপনারা দেখেছেন এখানে একটা ক্লজ যে শেষের দিকে ছিল যেখানে কানাডিয়ান সরকার উল্লেখ করেছেন মাইনর যাদের আছে, তাদের যারা গার্ডিয়ান আছে তারা কিন্তু আসতে পারবে। যেহেতু সংসদ সদস্য হিসেবে আমি ডিপ্লোমেটিক পাসপোর্ট হোল্ডার এবং আমার বাচ্চারা এখানে থাকে। তারা মাইনর হিসেবে অ্যাপ্লাই করেছিল তারা এখানে থাকে তাই আমরা আসি। তখন কানাডিয়ান গর্ভমেন্ট থেকেই আমাকে এপ্রুভাল দিয়েছিল আসার জন্য।
তিনি বলেন, আমরা আওয়ামী লীগের বিশেষ করে কেন্দ্রীয় নেতা যারা আছি তারা দেশের বাইরে যাওয়ার বিষয়ে দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে অবশ্যই অনুমতি নিয়ে আসতে হয়। আমি রাজনীতি করি বলে আমার স্ত্রী-সন্তানদের প্রতি আমার কোনও দায়িত্ব থাকবে না এটা তো হতে পারে না।
তিনি বলেন, আমার তিন সন্তান এখানে থাকে তাদের বললেই যাওয়া যাবে না। কারণ তাদের এখানে অনলাইনে ক্লাস হয়। তাদের পরীক্ষা হয়, তাদের টেস্ট হয়েছে। তাদের আবার সেমিস্টার শুরু হচ্ছে।
এই জনপ্রতিনিধি বলেন, আমার এলাকা, আমার দেশের জনগণের প্রতি অবশ্যই আমার দায়িত্ব আছে। আমি কিন্তু আসার আগে আমার প্রত্যেকটা কাজ গুছিয়ে দিয়ে এসেছি। আমার যে দায়িত্ব আছে রাজনৈতিকভাবে সেটাও আমি আমার সাংগঠনিক সম্পাদকদের বুঝিয়ে দিয়ে এসেছি।
তিনি বলেন, আপনারা খোঁজ নিলে দেখতে পারবেন করোনাকালীন সময়ে সারাদেশে যে দুই চারজন রাজনৈতিক নেতা সংসদ সদস্যরা জনগণের পাশে থেকে কাজ করেছেন আপনি খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন তার মধ্যে হয়তো আমাকেও একজন পাবেন
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ হারুন-অর-রশিদ
বার্তা সম্পাদকঃ আশিক সরকার
Copyright © 2025 Bporikromanewsbd.com. All rights reserved.