জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়ানোর সঙ্গে সমন্বয় করে ঢাকা মহানগরীসহ সারাদেশে গণ-পরিবহনের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। তবে গতকালও সড়কে বাড়েনি বাসের সংখ্যা। এতে শনিবারের মতো গতকাল রবিবারও কর্মব্যস্ত রাজধানীতে মানুষের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। সরকারিভাবে বাস ভাড়া বাড়ানোর পরও যানবাহন কম দেখা গেছে সড়কে। এর নেপথ্যের কারণ দুটি বলে বিভিন্ন ব্যক্তি ও বাস শ্রমিকদের সঙ্গে আলাপে জানা গেছে। গণ-পরিবহন ও দূরপাল্লার বাস ভাড়া বাড়ানোর পাশাপাশি শ্রমিকদের বেতনভাতা বাড়ানোর ইস্যুতে এ কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়েছে। এ দিকে ড্রাইভার ও কনডাকটারদের মজুরি না বৃদ্ধি করায় গতকাল অনেকেই কাজে যোগ দেননি।
সূত্র বলছে, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অর্থরিটির (বিআরটিএ) সঙ্গে ভাড়া সমন্বয় করতে শনিবার রাতে বৈঠকে বসেছিল সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির নেতা ও পরিবহন শ্রমিক সংগঠনের নেতারা। ওই বৈঠকেও বাসা ভাড়া বাড়ানো ও শ্রমিকদের বেতনভাতা সমন্বয় করতে বিতর্কে জড়ায় তারা। এই বিতর্কের বলি এখন সাধারণ মানুষ।
রবিবার (৭ আগস্ট) রাজধানীর মিরপুর, ফার্মগেট, শাহবাগ, বাসাবো, মুগদা ও মহাখালীসহ ব্যস্ত সড়কগুলোতে শনিবারের মতো গণ-পরিবহনের সংখ্যা ছিল অনেক কম। এ কারণে সরকার থেকে বর্ধিত ভাড়া নির্ধারণ করার পরও সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে ভোগান্তিতে পড়েছেন অফিসগামী যাত্রীসহ সাধারণ মানুষ। গণপরিবহনে বর্ধিত নতুন ভাড়া নিয়ে যাত্রী ও বাসকর্মীদের মধ্যে বাগবিতণ্ডার ঘটনা ঘটছে। নির্ধারিত ভাড়ার বেশি আদায়ের অভিযোগও করেছেন অনেক যাত্রী। রাজধানীতে আগের সর্বনিম্ন ভাড়া ছিল ১০ টাকা, জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়ানোর কারণে তা বাড়িয়ে ১৫ টাকা আদায় করছে বাস চালক ও বাস হেলপাররা। কিন্তু নতুন বর্ধিত ভাড়া অনুয়ায়ী এই ভাড়া হবে ১১ টাকা ৬০ পয়সা। মিরপুর-ফার্মগেট-শাহবাগ হয়ে মতিঝিল পর্যন্ত যে ভাড়া ছিল ৩০ টাকা। একই দূরত্বে ২০ টাকা বাড়িয়ে এ ভাড়া নেয়া হচ্ছে ৫০ টাকা। একজন যাত্রীর দৈনিক এ কারণে ব্যয় বেড়েছে ১০০ টাকার কাছাকাছি।
বাসযাত্রী আলিমুল্লাহ ফার্মগেটে এই প্রতিবেদককে বলেন ‘‘বাসের ভাড়া আদায়কারীরা সরকারের বেধে দেওয়া ভাড়ার রেট মানছেন না। তারা ইচ্ছামত ১০ টাকার ভাড়া বিশ টাকা এবং বিশ টাকার ভাড়া ৪০-৫০ টাকা আদায় করছে। এবং বেশি ভাড়া দিতে না চাইলে যাত্রীর অপমান করছে। বাস থেকে নামিয়ে দিচ্ছে।’’
গত শুক্রবার জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়ানো হয়। শনিবার রাজধানীতে সড়কে উল্লেখযোগ্য হারে কমেছিল গণপরিবহন। পরিবহন সংকটে চরম ভোগান্তিতে পড়েছিল সাধারণ মানুষ। এ দিন হাতে গোনা কিছু বাস চললেও বেশিরভাগই নামেনি সড়কে। বিআরটিএ ও পরিবহন মালিকদের বৈঠক থেকে ভাড়া বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয় শনিবার রাত সাড়ে ১০টায়। গতকাল রবিবার থেকে নতুন ভাড়া কার্যকর হয়েছে। বর্ধিত এই ভাড়া ঢাকায় ১৬ শতাংশ এবং দেশের অন্য স্থানে ২২ শতাংশ বাড়ানো হয় । এতেও খুশি নন বাস-ট্রামের মালিকরা। তারা এই দুমূল্যের বাজারে বাস ড্রাইভার ও কনডাকটরদের মজুরি বাড়াতে রাজি নন। এ কারণে গতকালও দুর্ভোগ পোহাতে হয়ে সাধারণ মানুষের।
এই দূর্ভোেগের বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েতুল্লাহ গণ-পরিবহনের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেন, কোথাও এ সংকট নেই। জ্বালানি তেলের উর্ধ্বগতির কারণে অনেক মালিক বাস নামায়নি। এ পেছনে অসৎ কোনো উদ্দেশ্যে নেই। দু-একদিন গেলেই এ সংকটও দূর হবে।
শ্রমিকদের বেতনভাতা বাড়ানো প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের মহাসচিব ওসমান আলী বলেন, বাস ভাড়া বাড়ালে শ্রমিকদের বেতনভাতার প্রসঙ্গটি আসে। অতত্রব সব ক্ষেত্রে সমন্বয় হওয়া জরুরি। এ নেতার সুরেই কথা বলেছেন, পরিবহন শ্রমিকরা। তারা জানিয়েছেন, বাস মালিকপক্ষের কাছ থেকে গতকাল পর্যন্ত বেতন বাড়ানোর কোনও আশ্বাস তারা পাননি। এ কারণে অনেক শ্রমিক কাজে যোগ দেয়নি। রাজধানীর সড়কে বাস ও যানবাহন কম থাকার এটাও একটা কারণ।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ হারুন-অর-রশিদ
বার্তা সম্পাদকঃ আশিক সরকার
Copyright © 2025 Bporikromanewsbd.com. All rights reserved.