বছরজুড়ে নিজ বাড়িতে গৃহকর্মীকে ধর্ষণ করে আসা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আমজাদ মাহমুদ নিলয়কে (২১) তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার ভোলা জেলার বোরহানউদ্দিন থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হন তিনি। তবে তার বাবা আব্দুল মাজেদ এখনো পলাতক আছেন।
জানা গেছে, নিলয়কে চাঁদপুর আনার পর আজ বুধবার আদালতে তোলে পুলিশ। বিচারক তাকে নামঞ্জুরকৃত জামিনে জেল হাজতে পাঠান।
চাঁদপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবদুর রশিদ নিলয়কে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) কবির হোসেন আত্মগোপনে থাকা নিলয়কে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হন। তবে এখনো পলাতক রয়েছেন আরেক আসামি নিলয়ের বাবা আব্দুল মাজেদ। তাকেও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’
চাঁদপুর শহরের ওয়ারলেস এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ বরকন্দাজের বাড়িতে মা-বাবাসহ বসবাস করেন নিলয়। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে গত এক বছর ধরে বাড়িতেই অবস্থান করছিলেন তিনি। তার বাবা-মা দুজনই চাকরিজীবী। বাড়িতে তাদের না থাকার সুযোগ নিয়ে নিলয় তাদের বাসার কর্মীকে ধর্ষণ করে আসছিলেন। বেশ কয়েকবার নিলয়ের বাবা-মাকে এ ব্যাপারে জানিয়ে প্রতিকার চাইছিলেন ভুক্তভোগী। কিন্তু তারা নিশ্চুপ ছিলেন।
এক বছর ধরে চলা এ যন্ত্রণা থেকে নিস্তার পেতে গত শুক্রবার পালিয়ে এসে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন ভুক্তভোগী। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে প্রাণে রক্ষা পান তিনি। পরবর্তীতে এ ঘটনায় একটি মামলা হয়। সেটিতে আসামি করা হয় নিলয়, তার মা শাহনাজ বেগম ও বাবা আব্দুল মাজেদ। পুলিশ প্রথমে শাহনাজ বেগমকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হলেও নিলয় ও তার বাবা পলাতক ছিলেন।
নিলয়ের বাবা-মা ভোলা জেলার দৌলতখান উপজেলার চরশফী গ্রামের বাসিন্দা। অভিযোগ আছে, ধর্ষণের ঘটনা নিলয়ের বাবা-মাকে জানানো হলেও ভুক্তভোগী মারধরের শিকার হয়েছেন বারবার। চার বছর ধরে কাজ করলেও ভুক্তভোগীকে গৃহকর্তা কোনো টাকা-পয়সা দেননি। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনসহ বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি দেখিয়ে তাকে চুপ থাকতে বাধ্য করা হতো।
সর্বশেষ গত ২৪ আব্দুল মাজেদ দম্পতি অফিসে চলে গেলে সেই সুযোগে নিলয় তাদের গৃহকর্মীকে আবারও ধর্ষণ করে। ভুক্তভোগী ঘটনাটি আবারও আব্দুল মাজেদ দম্পতিকে জানিয়ে প্রতিকার চান। এতে রেগে গিয়ে মা-ছেলে মিলে তাকে নির্যাতন করে। এমন পরিস্থিতিতে নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে গত ৩০ এপ্রিল বাসা থেকে বের হয়ে সড়কে গিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন ওই যুবতী। এ সময় স্থানীয়রা তা দেখে ফেলায় এই যাত্রায় রক্ষা পান তিনি। এমন ঘটনার পর বিষয়টি চাঁদপুর জেলা পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদের নজরে পড়ে। পরে তিনি ঘটনার ভুক্তভোগী তরুণীকে উদ্ধার করে সদর মডেল থানা পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন।
এ বিষয়ে পুলিশ সুপার মো. মিলন মাহমুদ জানান, বিষয়টি তিনি জানতে পেরে তাৎক্ষণিক থানা পুলিশকে নির্দেশনা দেন। কিন্তু পুলিশ যাওয়ার আগেই অভিযুক্ত যুবক এবং তার বাবা পালিয়ে যায়। তবে তার মাকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ২২ ধারায় ভিকটিম ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছে। ঘটনা সত্য। বাড়ির আশপাশের লোকজনও জানিয়েছে মেয়েটিকে মাঝে মধ্যেই মারধর করতো তারা। বিষয়টি বাড়ির মালিককেও বিভিন্ন সময় জানানো হয়। ভুক্তভোগীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। রিপোর্ট পেলেই সবকিছু পরিস্কার হয়ে যাবে। ভুক্তভোগীকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে পাঠানোর কথাও জানান পুলিশ সুপার। তিনি এও বলেন, ‘ভুক্তভোগীকে তার অভিভাবক তাকে নিতে চাইলে নেবে। না হলে আমরা একটা ব্যবস্থা করব।’
এ বিষয়ে সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রশিদ জানান, এ ঘটনায় ভুক্তভোগী গৃহকর্মী তরুণীর কাছ থেকে বিস্তারিত শুনে ওই পরিবারের ৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণ করা হয়েছে। গত শনিবার চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে গৃহকর্মীর। এর আগে মামলার প্রেক্ষিতে শহরের ওয়ারলেস এলাকার বাসায় অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় নিলয়ের মা শাহনাজ বেগমকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ হারুন-অর-রশিদ
বার্তা সম্পাদকঃ আশিক সরকার
Copyright © 2025 Bporikromanewsbd.com. All rights reserved.