তিন লাখ টাকা চাঁদা না পেয়ে মিথ্যা মামলায় জড়ানোর অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পরও ব্যবস্থা নেয়া হয়নি ডিবির এক কর্মকর্তাসহ পুরো টিমের বিরুদ্ধে। পুলিশের নিজস্ব তদন্তে মিথ্যা মামলায় ভুয়া সাক্ষী, ভুয়া জবানবন্দির বিষয়টি উঠে আসা সত্ত্বেও অভিযুক্তদের বদলি আর পদোন্নতি হয়েছে পছন্দের জায়গায়। এমনকি ঐসব কর্মকর্তাদের অনেকে পেয়েছেন একাধিক সম্মানসূচক বিভাগীয় পুরস্কার। পুরো বিষয়টিকে চরম উদ্বেগজনক বলছেন অপরাধ বিশেষজ্ঞরা।
রাজধানীর পল্টন এলাকায় বন্ধু আবাসিক হোটেলে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে সাদা পোশাকের কয়েকজন রিসিপশন কাউন্টারে থাকা হোটেল ম্যানেজারের হাতে হাত কড়া পরাচ্ছেন। পুরো বিষয়টি ধরা পড়ে সিসি টিভি ক্যামেরায়। ঘটনা আঁচ করতে পেরে ক্যামেরা নষ্ট করে ফেলেন এক সদস্য। ম্যানেজারসহ দুজনকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় মিন্টু রোডে ডিবির কার্যালয়ে। ভুক্তভোগী হাসান মজুমদার আক্ষেপ নিয়ে বলেন, তাদের কেন শাস্তি হবে না? তারা বাইরে ঘুরে বেড়াবেন আর আমি আদালতের বারান্দায় বারান্দায় ঘুরবো, এটা কেন হবে? আইন তো সবার জন্য সমান।
হাসান জানান, সেখানে নিয়ে চাহিদা অনুযায়ী ৩ লাখ টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় জাল টাকার মামলায় রিমান্ডে নেয়া হয় তাকে। দেয়া হয় মামলা। সেটির এজাহারে বলা হয়, ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর বিকেলে মতিঝিলের ফকিরেরপুলে জাল টাকা বিক্রির সময় হাসানের হাতে থাকা ব্যাগে ২০ লাখ এবং সহযোগী সোহেল রানার কাছ থেকে ৫ লাখ টাকার জাল নোট উদ্ধার করা হয়। অভিযানের নেতৃত্ব দেয়া ডিবি ইনস্পেক্টর তপন কুমার ঢালি বাদী হয়ে মামলা করেন। প্রায় ৬ মাস কারাগারে থাকার পর জামিনে মুক্ত হয়ে বিভাগীয় তদন্তের আবেদন করেন ভুক্তভোগী। পরে পুলিশের তদন্তে ডিবি পুলিশের অসৎ উদ্দেশ্য পরিষ্কার হয়েছে বলে প্রতিবেদন দেয়া হয় আদালতে। তবে পুলিশ হেডকোয়ার্টার ও অন্যান্য অফিসের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও ন্যায় বিচার না পাওয়ার আক্ষেপ হাসানের।
প্রতিবেদনে উঠে আসে, ইনস্পেক্টর তপন কুমার ঢালির জোগাড় করা স্বাক্ষীরা এজহারের মতো করে হুবহু জবানবন্দি দিয়েছেন। এছাড়াও অভিযানে অংশ নেয়া প্রত্যেক কর্মকর্তা একাধিক বিভাগীয় পুরষ্কার পেয়েছেন। যার মধ্যে ভুয়া মামলার বাদী তপন কুমার পেয়েছেন ৭৬টি পুরষ্কার। সার্বিক বিষয় দেখে হতবাক টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। বললেন, এ ঘটনার ফলে পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থা প্রশ্নের মুখে পড়েছে।
এদিকে ভুয়া মামলা থেকে মুক্তি পেতে প্রধানমন্ত্রী, আইজিপি, ডিএমপি কমিশনারসহ বিভিন্ন জায়গায় আবেদন করেও সুরাহা পাচ্ছেন না ভুক্তভোগী হাসান মজুমদার।
তবে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়া সত্ত্বেও অভিযুক্তকে ছাড় দেয়া হয়েছে বা ধামাচাপা দেয়ার মতো কিছু ঘটতে পারে না বলেই ধারণা সাবেক আইজিপি কেএম শহীদুল হকের।
পুলিশের নিয়োগ জালিয়াতিসহ একের পর এক ফৌজদারি অপরাধ করা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বদলে ভালো পোস্টিং-পদোন্নতির বিষয়ে উদ্বিগ্ন টিআইবি। অভিযোগ আছে, পুলিশের অ্যাডমিন অ্যান্ড ডিসিপ্লিন শাখার প্রভাবশালী একটি চক্রকে ম্যানেজ করেই পার পাওয়ার চেষ্টা করছেন অভিযুক্তরা।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ হারুন-অর-রশিদ
বার্তা সম্পাদকঃ আশিক সরকার
Copyright © 2025 Bporikromanewsbd.com. All rights reserved.