ধানমন্ডি ২৭ নম্বরের ডব্লিউভিএ ভবনের গলির মুখের চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে তিন জন চা খাচ্ছে। কেউ পানের জন্য হাত বাড়িয়ে রেখেছে। একজন নারী বিক্রেতা পিঠা ভাজবেন বলে কেবল চুলায় কড়াইটা বসিয়েছেন। হঠাৎ সাদা পাজামা পাঞ্জাবি পরা দোকানের মালিক এসে ‘এই বন্ধ করে দে দোকান, আর খোলা রাখার দরকার নেই’ বলতে বলতেই পিছনে পুলিশের টহল গাড়ি দেখা গেলো।
ততক্ষণে চায়ের কেটলি লুকিয়ে ফেলা হয়েছে। দোকানের ওপর পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। সামনে পুরি-চপ বানানোর দোকানও প্রায় ফাঁকা। মোহাম্মদপুর থানার তিন পুলিশ সদস্য গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়িয়ে থাকা রিকশা ও দোকানের কর্মচারীদের দোকান বন্ধ করতে নির্দেশ দিচ্ছিলেন। এ সময় দশটিরও বেশি পুলিশের গাড়ি সারিবেঁধে চলে গেলো ধানমন্ডি ২৭ নম্বরের রাস্তা ধরে। এতক্ষণ হম্বিতম্বি করা পুলিশ সদস্য স্যালুট জানিয়ে অপেক্ষা করলেন তাদের চলে যাওয়ার। গাড়িবহর চলে যাওয়ার পরে তার কণ্ঠ নরম হলো। তিনি কিছুক্ষণ সেখানে অপেক্ষা করে চলে যেতেই আবারও সব দোকানের জিনিসপত্র জায়গা মতো রাখা হলো। যাওয়ার সময় পুরি চপের দোকানিকে বলে গেলেন, ‘কাউকে যদি বসে খাওয়াইতে দেখসি, দোকান বন্ধ।’
করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে জারি করা সাত দিনের লকডাউনের প্রথম দিন সারাদিন কেটেছে চোর-পুলিশ খেলা। রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোর দোকান বন্ধ থাকলেও গলি বা পাড়ার ভেতরের দোকানপাট সারাদিন খোলা ও বন্ধের মধ্যেই ছিল।
পিঠা ভাজতে বসা নারীকে লকডাউনে বের হলেন কেন প্রশ্ন করা হলে হাসতে হাসতেই বলেন, বের না হলে খাবো কী? কিছু পিঠা বানায়ে বিক্রি যদি হয়, একদিনের সদাই হয়। অথচ কথা বলে জানা গেলো, তিনি এই এলাকায় ঝাড়ুদার হিসেবে কাজও করেন। তিনি বলেন, ‘সারাদিন কি বাড়িত থাকা যায়? এই জন্যই বাইর হই। তবে অনেকে সত্যি খাবার পায় না বলেও বাইর হয়।’
চা খাচ্ছিলেন সারোয়ার। বাড়িতে চা না খেয়ে দোকানে চা কেন খাচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি একটু বিরক্ত হন। এরপর বলেন, ‘বাসায় সিগারেট খাওয়া যায় না। সিগারেট খেতে এসে চা খাচ্ছি। আমি তো গাড়ি নিয়ে বের হইনি। হেঁটে বের হয়েছি’। এ ধরনের যুক্তি না দিয়ে সাতদিন ঘরে থাকলে সবার জীবন বাঁচতো বলে মনে করেন কিনা প্রশ্ন এড়িয়ে পুলিশ আসতে দেখে হন হন করে হেঁটে চলে যান বাসার দিকে।
শ্যাওড়াপাড়ার শামীম সরণির দোকানগুলো সবই আধাখোলা। দোকান খোলা রাখা যাবে না? আধা খোলা রাখা যাবে? প্রশ্ন করা হলে দোকানিরা বলেন, ‘একটু পর পর পুলিশ আসে, আমরা ঝাপ নামায়ে ভেতরে থাকি বা বাইরে বসি। চলে গেলে আধা খুলে রাখি। আমাদের কিছু বিক্রি হয়, লোকজনেরও উপকার হয়।’
এই চোর-পুলিশ খেলায় পুলিশের সেটিং আছে বলছেন অনেক দোকানি। মোহাম্মদপুর থানার টহল দলের কাছে জানতে চাইলে মো. আলতাফ বলেন, এরা কথা শুনতে চায় না। সকালে বন্ধ করে দিয়ে গেছি। এখন দুপুরে তারা আবার খুলে বসছে। আমাদের তো ঘুরে ঘুরে কাজটা করতে হচ্ছে। এ সময় এ ধরনের অভিযোগ দিয়ে তারা আসলে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে চায়। বারবার বুঝিয়ে বলার পরও সব দোকান বন্ধ রাখা সম্ভব হচ্ছে না।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ হারুন-অর-রশিদ
বার্তা সম্পাদকঃ আশিক সরকার
Copyright © 2025 Bporikromanewsbd.com. All rights reserved.