জাবি প্রতিনিধি :
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়নে নেয়া মাস্টারপ্ল্যান বির্তকের ইস্যুতে চলমান আন্দোলনে রবিবার সরব ছিলো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। ছাত্র-শিক্ষকদের নানা মুখী আন্দোলন কর্মসূচি পালনের মধ্যদিয়ে অনেকটা উত্তাল ছিলো বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ।
দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তসহ তিন দফা দাবিতে কর্মবিরতি, পদযাত্রা ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে অর্ধশতাধিক শিক্ষক। একই দাবিসহ ছাত্র নিপীড়নের বিচার চেয়ে শিক্ষার্থীরাও কর্মসূচি পালন করেছে। অন্যদিকে পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে মাঠে নিজেদের অবস্থান জানান দিয়েছে ছাত্রলীগ।
পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে রবীন্দ্রনাথ হল-সংলগ্ন এলাকা থেকে নির্মাধীন হল অন্যত্র সরানো, মহাপরিকল্পনার পুনর্বিন্যাস এবং উপাচার্য ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে আনীত দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের দাবিতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর ব্যানারের শিক্ষকদের কর্মসূচি পালিত হয়। রবিবার সকাল ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করেন শিক্ষকরা। একই দাবিতে সকাল সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ও মানবিকী অনুষদের সামনে থেকে একটি পদযাত্রা বের করেন তারা। পদযাত্রাটি পুরাতন রেজিস্ট্রার ভবনেরমনে এসে শেষ হয়। সেখানে একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক রেজাউল করিম তালুকদারের সঞ্চলনায় সমাবেশে অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘মাস্টারপ্লানের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে বড় সম্ভাবনা তৈরি করার কথা ছিল। কিন্তু তার পরিবর্তে আমরা দেখছি এর মধ্য দিয়ে ক্যাম্পাসে ভীতির সৃষ্টি হচ্ছে। এই উন্নয়ন প্রকল্প অনিশ্চয়তা, সন্ত্রাসের আবহ তৈরি করছে। জানা গেছে প্রকল্পের কাজের শুরুতেই ২ কোটি টাকা ভাগাভাগি করা হয়েছে। এতে বুঝা যায়, পুরো প্রকল্পের কাজে কী পরিমাণ দুর্নীতি হতে পারে। বড় আকারের বরাদ্দের বিপত্তিও বড় হয়। একইভাবে এই মহাপরিকল্পনা সম্ভাবনার পরিবর্তে বিপত্তি তৈরি করছে।’
শিক্ষক-শিক্ষার্থী ঐক্যমঞ্চের মুখপাত্র অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের মহাপরিকল্পনাটি অসম্পূর্ণ। আমরা মহাপরিকল্পনা সংশোধন এবং দুর্নীতির সুুষ্ঠু তদন্তের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে যৌক্তিক দাবি জানিয়েছি। কিন্তু প্রশাসন এই দাবিসমূহ উপেক্ষা করছে। আর এর বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের মারধর করা হচ্ছে, কিন্তু এর বিচার করা হচ্ছে না।’
নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস বলেন, ‘পত্রপত্রিকায় ওঠা দুর্নীতির অভিযোগের বিরুদ্ধে উপাচার্য বা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোন প্রতিবাদ পাঠাননি। বরং এই তদন্তের দাবি তোলায় প্রশাসন ছাত্রলীগকে দিয়ে হুমকি দিচ্ছে। উপাচার্য তার সমর্থন গোষ্ঠীর মাধ্যমে পেশিশক্তি দেখাচ্ছেন। এসব করার মাধ্যমে অভিযোগ খারিজ হয়ে যায় না। যে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তার মধ্য দিয়ে পুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গায়ে কালিমালিপ্ত হয়েছে। আমরা দাবি জানাচ্ছি মহামান্য আচার্য ইউজিসিকে সম্পৃক্ত করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করবেন। তদন্তের মাধমে অভিযোগ খতিয়ে দেখা হউক। আমরা কালিমা থেকে মুক্তি চাই।’
‘উপাচার্য তার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন বিধায় তিনি কর্মচারীদের দিয়ে মানববন্ধন করিয়ে পেশীশক্তি দেখাচ্ছেন, আন্দোলনের সংগঠককে ছাত্রলীগ দিয়ে মার খাওয়াচ্ছেন’ বলে দাবি করেন দর্শন বিভাগের অধ্যাপক কামরুল আহসান।
নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা বলেন, ‘৭৩ এর অধ্যাদেশ মতে গণতান্ত্রিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় চলছে না। একাডেমিক কাউন্সিল নিয়মিত হচ্ছে না। যেখানে প্রভোস্ট হওয়ার কথা সিনিয়রদের সেখানে জুনিয়রদের দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে। প্রশংসা করাকে যোগ্যতার মাপকাঠি হিসেবে মাপা হচ্ছে। আসুন প্রতিবাদ করি। সাহস হারালে বিশ্ববিদ্যালয় তলানীতে এসে ঠেকবে।’
বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শামীমা সুলতানা বলেন, ‘স্বেচ্ছাচারিতা ও অরাজকতার বিরুদ্ধে আমরা এখানে এসে দাঁড়িয়েছি। একটি কু-পরিকল্পনার নামে বিশ্ববিদ্যালয়ে টাকা লুটপাট ও পরিবারতন্ত্র কায়েমের চেষ্টা চলছে।’
সমাবেশে সম্মিলিত শিক্ষক সমাজের আহ্বায়ক অধ্যাপক আবদুল জাব্বার হাওলাদার, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক খবির উদ্দীন, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ঐক্যমঞ্চের মুখপাত্র অধ্যাপক রায়হান রাইন, অধ্যাপক আনোয়ার উল্লাহ ভূইঁয়া, অধ্যাপক নুরুল ইসলাম, সহযোগী অধ্যাপক সায়মা খাতুন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। সেই সাথে সমাবেশে বিভিন্ন বিভাগের অর্ধশতাধিক শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।
হামলার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি :
মাস্টারপ্ল্যান বিরোধী আন্দোলন- ‘দুনীর্তির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ আন্দোলনের সংগঠক জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক সাইমুম ইসলাম ও ছাত্র ফ্রন্ট কর্মী সোহায়েব ইবনে মাসুদ উপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে একটি নন-ফিকশন নাটক মঞ্চত্ব করেছে আন্দোলনকারীরা। রবিবার দুপুর ১২ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের সামনে দুপুর ১২ টায় নাটকটি প্রদর্শিত হয়। নাটক শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থান প্রদক্ষিণ করে শিক্ষকদের সমাবেশে সংহতি প্রকাশ করে।
ছাত্রলীগের মিছিল:
এদিকে ‘কাল্পনিক তথ্য’ এর মাধ্যমে একটি মহল বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘অস্থিতিশীল’ করছে দাবি করে বিক্ষোভ মিছিল করেছে শাখা ছাত্রলীগ। মিছিল শেষে ছাত্রলীগ সভাপতি জুয়েল রানা বলেন, ‘ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে থাকা অবস্থায় উন্নয়ন কাজকে কেউ বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না।’
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ হারুন-অর-রশিদ
বার্তা সম্পাদকঃ আশিক সরকার
Copyright © 2025 Bporikromanewsbd.com. All rights reserved.