বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমা ডেস্ক : দেশে বর্তমানে যে অর্থনৈতিক সক্ষমতা, তাতে বছরে ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি জাকাত আদায় করা সম্ভব বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলেছেন, দেশে দারিদ্র্য বিমোচন ও আয়বৈষম্য নিরসনে করের চেয়ে জাকাত অধিকতর কার্যকর পন্থা হতে পারে।
জাকাতের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন ও আয়বৈষম্য নিরসন টেকসই হবে বলেও মনে করেন তাঁরা। গতকাল শনিবার সকালে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে সেন্টার ফর জাকাত ম্যানেজমেন্ট আয়োজিত এক সেমিনারে তাঁরা এসব মতামত দেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলামের সভাপতিত্বে সপ্তম জাকাত মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি আব্দুর রউফ, সাবেক মন্ত্রী লে. জেনারেল (অব.) নুর উদ্দিন খান। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ।
মূল প্রবন্ধে তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশে প্রতিবছর ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি জাকাত ওঠানোর সক্ষমতা থাকলেও সরকারি সংস্থা জাকাত বোর্ড আদায় করছে মাত্র কয়েক কোটি টাকা। এ ছাড়া ব্যক্তি বা করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো বিচ্ছিন্নভাবে জাকাতের অর্থ বিতরণ করছে। বিচ্ছিন্নভাবে জাকাত বিতরণ হওয়ার কারণে দারিদ্র্য বিমোচন ও আয়বৈষম্য কমাতে জাকাত উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারছে না। এ অবস্থায় জাকাতের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের আহ্বান জানান তিনি।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, জাকাতের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন করা সম্ভব। কিন্তু বিশাল একটা অংশ জাকাতের বিষয়ে সচেতন নয়। বলা হচ্ছে, বাংলাদেশে দ্রুত ধনীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটা একদিকে ভালো। অন্যদিকে চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে আয়বৈষম্য বৃদ্ধি। এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় জাকাতের বাইরে আরো বেশি অর্থ সহায়তা নিয়ে ধনীদের এগিয়ে আসতে হবে।
মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে আয়বৈষম্য ও দারিদ্র্য এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা। এ ক্ষেত্রে জাকাতের ভূমিকা খুব নগণ্য। ব্যক্তিগতভাবে এবং ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো এককভাবে জাকাত দিচ্ছে। এতে সাময়িকভাবে দরিদ্র মানুষের উপকার হয়। কিন্তু টেকসই দারিদ্র্য বিমোচন হচ্ছে না। অথচ প্রাতিষ্ঠানিকভাবে জাকাত সংগ্রহ করে আয়বর্ধক কাজে দরিদ্র মানুষকে যুক্ত করা গেলে দারিদ্র্য বিমোচন সহজ হতো।
সাবেক মন্ত্রী নূর উদ্দিন খান বলেন, ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে দারিদ্র্য দূর করা কঠিন। ক্ষুদ্রঋণের কারণে মানুষ দারিদ্র্যের জালে আটকা পড়ছে। এ ক্ষেত্রে জাকাতের অর্থ দারিদ্র্য বিমোচনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। এ ছাড়া বাংলাদেশকে সুদমুক্ত করতে জাকাতের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
আয়বৈষম্য নিরসনে কর আর জাকাতের তুলনামূলক অবদান তুলে ধরে সাবেক সচিব এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, কর ধনী-গরিব সবার কাছ থেকেই আদায় করা হয়। কিন্তু সুফল সবাই সমানভাবে পায় না। বিশেষ করে দরিদ্র মানুষ এর সুফল থেকে বঞ্চিত হয়। জাকাত ধনীরা দেয়, আর গরিবরা তার সুফল পায়। তাই দারিদ্র্য বিমোচনে করের চেয়ে জাকাতকে অধিকতর কার্যকর পন্থা বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বিচারপতি আব্দুর রউফ বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান কর ব্যবস্থাপনায় দরিদ্র মানুষকে অনেক বেশি পরোক্ষ কর দিতে হচ্ছে। এ কারণে কর ব্যবস্থাপনা আরো আধুনিকায়ন করা প্রয়োজন। আধুনিক কর ব্যবস্থাপনা এবং জাকাতের সমন্বয়ে সফলভাবে দারিদ্র্য দূর করা সম্ভব হবে।
ইসলামী ব্যাংক কনসালটেটিভ ফোরামের ভাইস চেয়ারম্যান এ কে এম নুরুল ফজল বুলবুল বলেন, বাংলাদেশের ২৫ শতাংশ মানুষ জাকাত দিতে পারে। করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো জাকাত দিচ্ছে। এক্সিম ব্যাংক প্রতিবছর ৩০ কোটি টাকা জাকাত দিচ্ছে। ইসলামী ব্যাংক দিচ্ছে ১০০ কোটি টাকা। কিন্তু বাংলাদেশে এখনো কেন্দ্রীয়ভাবে জাকাত ব্যবস্থাপনা গড়ে ওঠেনি। জাকাতের অর্থ সঠিকভাবে এবং আয়বর্ধক প্রকল্পে ব্যবহার করতে হলে কেন্দ্রীয়ভাবে জাকাত ব্যবস্থাপনা জরুরি হয়ে পড়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ হারুন-অর-রশিদ
বার্তা সম্পাদকঃ আশিক সরকার
Copyright © 2025 Bporikromanewsbd.com. All rights reserved.