বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমা ডেস্ক : একটি প্রকল্পের জন্য প্রতি বটি ১০ হাজার টাকা ও ৫০ হাজার টাকা দামের চেয়ার কিনতে চায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এছাড়াও প্রকল্পটির খাবার প্লেট, প্লাস্টিকের বাটি, চামচ ও চালের ড্রামের মতো ছোটখাট পণ্যেও অস্বাভাবিক বেশি দাম ধরা হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ শীর্ষক প্রকল্পের প্রস্তাবনায় (ডিপিপি) এ সব বিষয় উঠে এসেছে। ৩ হাজার ২০ কোটি টাকা ব্যয় ধরে প্রকল্পটি সম্প্রতি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) অনুমোদন পেয়েছে।
প্রকল্পের আওতায় অর্ধেক ভর্তুকি মূল্যে ৫১ হাজার ৩০০টি কৃষি যন্ত্রপাতি বিতরণ করা হবে। এর ফলে চাষাবাদে ৫০ শতাংশ সময় ও ২০ শতাংশ অর্থ সাশ্রয় হবে। ফসলের অপচয় কমবে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ।
প্রকল্পে সবজি কাটার একটি বটির দাম ধরা হয়েছে ১০ হাজার টাকা। এই দামে ৩৬টি বটি কেনা হবে। এক কেজি ধারণ ক্ষমতার প্রতিটি মসলা পাত্রের দাম ২ হাজার টাকা। ৯০টি মসলার পাত্র কিনতে মোট ব্যয় হবে ১.৮ লাখ টাকা।
প্রকল্পটির আওতায় ৯০টি অ্যালুমিনিয়ামের চামচ কেনা হবে ৯০ হাজার টাকায়। প্রতিটির দাম এক হাজার টাকা। মাঝারী আকারের প্রতিটি চামচ ৫০০ টাকায় ও চা চামচ কিনতে ১০০ টাকা ব্যয় হবে।
বাজারে সর্বোচ্চ ৩০ টাকায় চা চামচ, ১৫০ টাকায় মাঝারী চামচ ও আড়াইশ টাকায় বড় চামচ বিক্রি হতে দেখা গেছে। এ হিসাবে চামচে বরাদ্দ অর্থের দুই তৃতীয়াংশ থেকে তিন চতুর্থাংশ দুর্নীতির আশঙ্কা রয়েছে।
প্রকল্পের আওতায় ট্রেনিং সেন্টারের ৭২০ টি প্লেট কেনায় ৭.২ লাখ টাকা বরাদ্দ ধরা হয়েছে। প্রতিটির দাম পড়বে হাজার টাকা। আর হাফপ্লেটের দাম ধরা হয়েছে ৫০০ টাকা করে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রকল্প প্রস্তাবে ২০০ লিটারের পানির প্লাস্টিকের ড্রামের (চাউলসহ) দাম ধরা হয়েছে একেকটি ১০ হাজার টাকা। এরকম ৩৬টির জন্য বরাদ্দ তিন লাখ ৬০ হাজার টাকা।
নতুন এ প্রকল্পে একই দামের চেয়ার কেনা হবে ৭২টি। আর এ জন্যে বরাদ্দ দেয়া হবে ৩৬ লাখ টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নে ইন্টেল কোর আই-৫ প্রসেসর সমৃদ্ধ ১৪ ইঞ্চি মনিটরের পাঁচটি ল্যাপটপ কিনতে প্রতিটিতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১.৩০ লাখ টাকা।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রতিটি সাদাকালো প্রিন্টারের দাম ধরা হয়েছে ২০ হাজার টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে জেনারেল ইলেক্ট্রনিক্স কোম্পানীর দেড় থেকে দুই টন ক্ষমতার ১০ টি এসির দাম ধরা হয়েছে ২০ লাখ টাকা। এ হিসাবে প্রতিটি এসির দাম পড়বে ২ লাখ টাকা।
পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষে প্রকল্পটির মূল্যায়নসহ অনুমোদনের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছে কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগ। বিভাগের সদস্য (সচিব) মোঃ জাকির হোসেন আকন্দ বলেন, কশিনের পক্ষ থেকে সাধারণত প্রকল্পের নীতিগত বিষয়গুলো দেখা হয়ে থাকে। কোন পণ্য কিনতে কত ব্যয় ধরা হয় তা দেখার দায়িত্ব পরিকল্পনা কমিশনের নয়। সংশ্লিষ্ট অধিদফতর ও মন্ত্রনালয়ের পক্ষ থেকে পণ্যের দাম নির্ধারণ হয়। তবে উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে অধিকাংশ পণ্য ও সেবা কেনাকাটায় করায় প্রতিযোগিতার কারণে বাড়তি দামের সমন্বয় হবে বলেও তিনি মনে করেন।
অস্বাভাবিক দামের বিষয়টি পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান জেনে বিস্ময় প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এই তথ্য যদি সত্যি হয় তাহলে বলতে হবে প্রকল্পে তৈজসপত্রের যে দাম উল্লেখ করা হয়েছে, তা অস্বাভাবিক রকমের বেশি। আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি। কখনো কখনো প্রকল্প অনুমোদন হয়ে গেলে বিষয়গুলো ঠিক করা সম্ভব হয় না। তবে এক্ষেত্রে জিনিসপত্রের অস্বাভাবিক দামের বিষয়টি যদি প্রমাণিত হয়, তাহলে বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী ঠিক করে নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নাসিরুজ্জামান বলেন, এটা অবশ্যই অন্যায় কাজ। দায়ীদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে। বিষয়টি নজরে আসায় আজ (সোমবার) কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবদুর রউফকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। একটি বঁটির দাম ৩-৫ হাজার টাকার বেশি হতে পারে না। ড্রামের দাম এত বেশি হবে কীভাবে? সাত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাছাড়া বাস্তবায়ন পর্যায়ে প্রকল্পটি সংশোধন করে অতিরিক্ত দাম সংশোধন করা হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ হারুন-অর-রশিদ
বার্তা সম্পাদকঃ আশিক সরকার
Copyright © 2025 Bporikromanewsbd.com. All rights reserved.