বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমা ডেস্ক : এখন সময়ের দাবী
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের চেয়ারম্যান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য
অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বিশ্ববিদ্যালয়কে অর্থনৈতিক স্বায়ত্তশাসন
প্রদানের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, এটি এখন সময়ের দাবী। আজ ২৬ জুন ২০১৯
বুধবার নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের
বার্ষিক অধিবেশনে সভাপতির অভিভাষণে তিনি এ কথা বলেন।
অধিবেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক
ড. মুহাম্মদ সামাদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো: কামাল উদ্দীনসহ সিনেট সদস্যগণ
উপস্থিত ছিলেন।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় সুশাসন ও
সুনীতিচর্চার মূল কেন্দ্র। আর্থিক খাতসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোন স্তরে
অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা বা দুর্নীতি বরদাস্ত করা হবে না। পাঠ্যপুস্তক ভিত্তিক শিক্ষা ও
শুধুমাত্র সনদ প্রদান বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল লক্ষ্য নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, মেধা বিকাশ,
মুক্ত চিন্তা-চেতনার উন্মেষ ও বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে নতুন জ্ঞান সৃষ্টি ও বিতরণ
বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল কাজ। এ লক্ষ্য অর্জনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কাজ করে
যাচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করার কাজে
এগিয়ে আসার জন্য তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানান। এ ক্ষেত্রে দলমত
নির্বিশেষে সকলের মতামত ও পরামর্শ বিবেচনা করা হবে বলে তিনি জানান। তিনি
বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার “উচ্চশিক্ষার্থে শিক্ষকদের বিদেশে প্রশিক্ষণ
বৃত্তি” শীর্ষক একটি প্রকল্প চালু করেছিল। পরবর্তী সরকার তা বন্ধ করে দেয়।
“বঙ্গবন্ধু ওভারসিস স্কলারশিপ” শিরোনামে বর্তমান সরকার পুনরায় সেটি চালু
করেছে। এটি শিক্ষকদের জন্য এক নতুন দিগন্তের সূচনা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
শিক্ষার মান ও আন্তর্জাতিক র্যাংকিং নিয়ে বিভিন্ন মহলের সমালোচনা প্রসঙ্গে
উপাচার্য বলেন, প্রকৃত তথ্য না জেনে অনেকে এ বিষয়ে ঢালাও মন্তব্য করেন, যা
হতাশাজনক। যুক্তরাজ্য ভিত্তিক সংস্থা কিউএস-এর সম্প্রতি প্রকাশিত র্যাংকিং-এ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে এশিয়ায় ১২৭তম এবং বিশ্বে ৮০১তম স্থানে রাখা হয়েছে
উল্লেখ করে তিনি বলেন, শিক্ষার মান সন্তোষজনক হলেও র্যাংকিংকারী সংস্থার কাছে
প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত না থাকায় বিশ্ব র্যাংকিং-এ আমাদের সেভাবে জায়গা
হচ্ছেনা। বিশ্ব র্যাংকিং এ সন্তোষজনক অবস্থান দখল করতে ৩০ জুনের মধ্যে
একাডেমিক ও গবেষণা কার্যক্রমের হালনাগাদ তথ্য ওয়েবসাইটে সন্নিবেশ করার
জন্য তিনি শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানান। শিক্ষাকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার
চতুর্থ সূচক হিসেবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নের লক্ষ্যে
ইতোমধ্যে ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি এ্যাসুরেন্স সেল, আইসিটি সেল,
ইনোভেশন, ক্রিয়েটিভিটি এন্ড অন্ট্রপ্রানারশিপ সেন্টার এবং সেন্টার অব এক্সিলেন্স
ইন টিচিং এন্ড লার্নিং প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। যৌথ গবেষণা ও একাডেমিক
কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের
মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অব্যাহত রয়েছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর
রহমানের জন্মশত বার্ষিকী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উদ্ধসঢ়;যাপনকে অর্থবহ
করার লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন,
বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ক্রয় ও নান্দনিক ক্যাম্পাস বিনির্মাণসহ একটি পূর্ণাঙ্গ
‘মাস্টার প্লান’ তৈরীর কাজ চলছে। একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজে গতি আনতে
‘সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা’ নীতি অনুসৃত হচ্ছে। অনেক প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা
করে প্রায় তিন দশক পর ‘ডাকসু ও হল সংসদ’ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ডাকসুর নির্বাচিত প্রতিনিধিরা শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার সংরক্ষণ এবং
শিক্ষা ও গবেষণার উন্নয়নে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সহযোগিতা করবেন বলে
তিনি আশা প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ডাকসু’র আজীবন
সদস্য পদ প্রদানের জন্য তিনি ডাকসু নেতৃবৃন্দকে ধন্যবাদ জানান।
উপাচার্যের অভিভাষণের পর ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের ৮১০ কোটি ৪২ লাখ টাকার
রাজস্ব ব্যয় সংবলিত প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করা হয়। প্রস্তাবিত বাজেটে
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন থেকে প্রাপ্য ৬৯৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকা এবং
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয় থেকে ৬৬ কোটি টাকা পাওয়া যাবে। ফলে এবছর
বাজেটে ৪৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ঘাটতি হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
অধিবেশনে ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরের ৭৬১ কোটি ৫৫ লাখ টাকার সংশোধিত
বাজেটও উপস্থাপন করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো: কামাল
উদ্দীন সংশোধিত ও প্রস্তাবিত বাজেটের সার-সংক্ষেপ উপস্থাপন করেন। পরে সিনেট
সদস্যগণ বক্তব্য রাখেন। আগামীকাল বৃহস্পতিবার বেলা ৩টা পর্যন্ত সিনেট
অধিবেশন মুলতবি করা হয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ হারুন-অর-রশিদ
বার্তা সম্পাদকঃ আশিক সরকার
Copyright © 2025 Bporikromanewsbd.com. All rights reserved.