বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমা ডেস্ক : ফেনীতে অগ্নিদগ্ধ মাদরাসা শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফির ফুসফুসে মারাত্মক সংক্রমণ থাকায় তাকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারির বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক আবুল কালাম।
মঙ্গলবার সকালে তিনি জানান, সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকেরা মেয়েটিকে আকাশপথে পরিবহনে ঝুঁকি রয়েছে বলে জানিয়েছেন।
অগ্নিদগ্ধ মাদ্রাসাছাত্রীর চিকিৎসার ব্যাপারে সকালে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের।
কনফারেন্সের পর অধ্যাপক আবুল কালাম জানান, মেয়েটির ফুসফুসে মারাত্মক সংক্রমণ রয়েছে। সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকেরা বলছেন, ফুসফুসে সংক্রমণ থাকায় এ মুহূর্তে মেয়েটিকে আকাশ পথে পরিবহনে ঝুঁকি রয়েছে।
তিনি জানান, সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের সঙ্গে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) রয়েছে। তারা প্রতিদিন মেয়েটির চিকিৎসা নিয়ে আলোচনা করবেন। গতকাল সন্ধ্যায় মেয়েটির শারীরিক অবস্থার সমস্ত প্রতিবেদন সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়। এ ছাড়া তার শারীরিক পরিস্থিতি নিয়ে দুই দেশের চিকিৎসকদের সিদ্ধান্ত সময়ে সময়ে অবহিত করা হচ্ছে পরিবারের সদস্যদের।
এর আগে দেশের চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, অগ্নিদগ্ধ মেয়েটির বুক-পিঠ পুড়ে এমনভাবে ভেতরের দিকে ঢুকে গেছে যে ফুসফুস ওঠানামা করতে পারছে না। তারা দুই পাশে অস্ত্রোপচার করার একটা পরিকল্পনা করেছিলেন, যেন ফুসফুসটা ঠিকমতো কাজ করতে পারে। কিন্তু তার আগেই শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটে।
আজ অধ্যাপক আবুল কালাম জানান, ফুসফুস যেন ঠিকভাবে কাজ করতে পারে, সে লক্ষ্যে আজ অস্ত্রোপচারটি করা যেতে পারে।
অগ্নিদগ্ধ মাদ্রাসাছাত্রীর অবস্থা খুবই সংকটজনক। গতকাল সোমবার তাকে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস ব্যবস্থায় (লাইফ সাপোর্ট) রাখা হয়েছে।
এদিকে রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টার ঘটনায় তিন দিন পর থানায় অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আটক করা হয়েছে পাঁচজনকে।
পুলিশ ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২৭ মার্চ বুধবার সকাল ১০টায় মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা ওই ছাত্রীকে ডেকে তাঁর কক্ষে নিয়ে শ্লীলতাহানি করেন। ওই ঘটনায় ছাত্রী মা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন। ওই মামলায় তিনি এখন কারাগারে রয়েছেন। এর পর থেকে অধ্যক্ষের অনুগত একটি মহল মামলা তুলে নিতে ছাত্রীর পরিবারকে চাপ ও হুমকি দিতে থাকে। গত শনিবার ওই ছাত্রী পরীক্ষা দিতে মাদরাসায় এসে হলে তাঁর প্রবেশ পত্রসহ একটি ফাইল টেবিলের ওপর রেখে হলের বাইরে বারান্দায় এসে দাঁড়ায়। এ সময় একটি মেয়ে তাঁর বান্ধবীকে মারা হচ্ছে বলে তাকে ডেকে প্রশাসনিক ভবনের তৃতীয় তলার ছাদে নিয়ে যায়। সেখানে বোরকা, মুখোশ ও হাত মোজা পরা এবং মুখ ঢাকা চারজনকে দেখতে পায়। একপর্যায়ে ওই ছাত্রীকে তারা জোর করে পাশের টয়লেটে নিয়ে গিয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।
মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়, গত ২৭ মার্চ তারিখে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির মামলা করার পর থেকে নুর উদ্দিন, জাবেদ, শাহাদাত হোসেন শামীম, মহি উদ্দিন শাকিলসহ অজ্ঞাতনামা আরও অনেকে মামলা তুলে নিতে হুমকি দেয়।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ হারুন-অর-রশিদ
বার্তা সম্পাদকঃ আশিক সরকার
Copyright © 2025 Bporikromanewsbd.com. All rights reserved.