সহসাই কমছে না মূল্যস্ফীতির চাপ। আরও কিছুদিন দেশে পণ্য ও সেবা মূল্যে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা থাকবে। তবে কতদিন থাকবে বা মূল্যস্ফীতির হার কোন পর্যায়ে ঠেকবে তার পুরোটাই নির্ভর করছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতির ওপর।
রবিবার (২১ আগস্ট) অর্থনৈতিক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নতুন চ্যালেঞ্জ’ বিষয়ক এক আলোচনা সভায় সরকারের নীতিনির্ধারক, অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা এমন মতামত দিয়েছেন। তবে অনুষ্ঠানে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের অস্থিরতা, ব্যবসার বিধি-বিধানসহ সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচকদের মধ্যে মতপার্থক্যও দেখা গেছে।
রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইআরএফ কার্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি শারমিন রিনভী। ইআরএফের সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় সংগঠনের সিনিয়র সদস্যরা চলমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে মতামত তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম দেশের অর্থনীতিবিদদের ‘আশংকাবাদী’ উল্লেখ করে বলেন, অর্থনীতিবিদরা দেশের অর্থনীতির অর্জন ও সম্ভাবনা দেখতে পান না। কিন্তু বিদেশি গবেষণা সংস্থা বাংলাদেশের অর্থনীতির শক্তি ও সম্ভাবনা তুলে ধরছে। এদিকে ব্যবসায়ীরা ভবিষ্যতে দেশের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও ব্যবসার বিধি-বিধান সহজ করার সুপারিশ করেন।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি মূল্যস্ফীতিকে ইন্ধন দিচ্ছে। এ কারণে মানুষের কষ্ট হচ্ছে, কথা সত্য। দাম না বাড়িয়ে বিকল্প ছিল না। তবে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আশা করা হচ্ছে অক্টোবরের মধ্যে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে। তবে মূল্যস্ফীতির চাপ থাকবে।
তিনি বলেন, দেশে উন্নতমানের কয়লা মজুত আছে। এক সময় কথা উঠেছিল— উন্নতমানের কয়লা থাকতে আমদানি করা হচ্ছে। সেটা করা হয়েছে দেশের মানুষের প্রতিক্রিয়ার কারণে। কখনও কখনও অর্থনৈতিক বিবেচনার চেয়ে রাজনৈতিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব দিতে হয়। কয়লা উত্তোলনে কৃষি জমি দেবে যেতে পারে, ধ্বসে যেতে পারে এমন আশংকা প্রকাশ করা হয়েছে। যেখানে আমাদের জমির স্বল্পতা আছে, সেখানে এ ধরনের আশংকা থাকলে সেটা করা ঠিক না। অনেক দেশে কয়লার খনি এলাকা লেক হয়ে গেছে। বাংলাদেশ সেই ঝুঁকি নিতে চায়নি। এজন্য কয়লা আমদানির সিদ্ধান্ত।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতি কাজ করছে না। আগামীতে রফতানি ও রেমিট্যান্স আয় বাড়বে। আমদানি কিছুটা কমে আসবে। বৈদেশিক লেনদেনে যে ভারসাম্য দরকার তা মোটামুটি ঠিক হয়ে যাবে। সরকার সরবরাহ বাড়ানোর মাধ্যমে মূল্যস্ফীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার চেষ্টা করছে। চাল আমদানির অনুমোদন দেওয়া হলেও প্রয়োজনীয় আমদানি হয় নাই। তিনি বলেন, সরকার বাজেট ব্যবস্থাপনায় ভালো উদ্যোগ নিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. হাবিবুর রহমান বলেন, মূল্যস্ফীতির চাপ থাকবে। তবে এই মূল্যস্ফীতি পুরোটাই আমদানিজনিত। এরপরও বাংলাদেশ ব্যাংক মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হারে স্থিতিশীলতা সৃষ্টি, আর্থিক খাতে শৃংখলা নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। এজন্য সুদহার না বাড়িয়ে সরবরাহ ব্যবস্থা উন্নতির মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে ডলারের বিনিময় হার শিগগির কমে আসবে।
বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মো. হাতেম বলেন, রফতানি আদেশ কমছে। বড় বড় কারখানা উৎপাদন কমাতে বাধ্য হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে উৎপাদন খরচও বেড়ে গেছে।
মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এমসিসিআই) সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার নিহাদ কবির বলেন, দেশে কয়লার যথেষ্ট মজুত রয়েছে। নিজস্ব যে প্রাকৃতিক সম্পদ আছে তার সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে হবে। জ্বালানিতে আমদানিনির্ভরতা এমন পর্যায়ে গেছে যে এলএনজির দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এতে প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তিনি বলেন, চাল, মাছ, মুরগির দাম বাড়ায় সাধারণ মানুষের সমস্যা হচ্ছে। বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমে আসছে, সেটা সমন্বয় করতে হবে।
ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাশেম খান বলেন, জ্বালানি নিরাপত্তা খুবই জরুরি। অবশ্যই জ্বালানিতে বিপ্লব হয়েছে। দেশের অর্থনীতি যে গতি পেয়েছে সেখানে জ্বালানির ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু এখনকার জ্বালানি আমদানিনির্ভর। এ বিষয়টি পুনরায় চিন্তা করার সময় এসেছে। দেশে যে কয়লা ও গ্যাসের ব্যবহার করতে হবে
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ হারুন-অর-রশিদ
বার্তা সম্পাদকঃ আশিক সরকার
Copyright © 2025 Bporikromanewsbd.com. All rights reserved.