বিশ্ববিদ্যায়ল পরিক্রমা ডেস্ক : মুন্সীগঞ্জ সদরের রামপাল ইউনিয়নের বল্লালবাড়ি এলাকায় রাজা বল্লাল সেনের রাজ প্রাসাদের নিদর্শন পাওয়া গেছে।
চীন ও বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিকদের যৌথ উদ্যোগে সোমবার জেলার বিক্রমপুরের বল্লাল সেনের বাড়িতে খননকাজ শুরু হয়।
খননকালে সেখান থেকে ইট, ইটের টুকরো, মৃৎ পাথরের টুকরো ও কাঠ-কয়লা বেরিয়ে আসছে। এ আলামত আমেরিকান ল্যাবরেটরি ‘বেটা’তে পাঠানো হবে। সেখান থেকে কার্বন পরীক্ষার ফল পাওয়ার পর সংগ্রহ করা নমুনা কত বছর আগের তা জানা যাবে।
বল্লাল সেনের যেহেতু ইতিহাসে একটি তারিখ আছে এর সঙ্গে মিলিয়ে অসাধারণ একটি তথ্য ইতিহাসে যোগ হতে পারে। খনন কাজে অংশ নেন বাংলাদেশের ঐতিহ্য অন্বেষণের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান ও চীনের অধ্যাপক চাই হোয়াংবোর নেতৃত্বে একটি দল।
অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ধারণা করা হচ্ছে- বল্লাল বাড়িটিই রাজা বল্লাল সেনের রাজ প্রাসাদ ছিল। সেন বংশের রাজা বল্লাল সেন ছিলেন লক্ষণ সেনের বাবা। সেন বংশের রাজধানী ছিল বিক্রমপুর। আর বিক্রমপুরেই অবস্থিত বল্লাল বাড়ি। বাড়ির চারদিকে একটি পরিখা আছে। প্রাসাদের নিরাপত্তায় কৃত্রিমভাবে এটি করা হয়েছে বলে ধারণা আমাদের।
পরিখার ওপর দিয়ে রাস্তা ও ভবন নির্মাণ হয়েছে। কিন্তু রামপাল কলেজের পেছন থেকে পরিখা স্পষ্ট দেখা যায়। অনেক বছর পেরিয়ে গেলেও পরিখা নির্দেশ করে, ওই রাজার প্রাসাদ একটি নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে ছিল।
অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, ইতিমধ্যে সন্ধান করে জানা গেছে- বল্লাল বাড়িটি একটি দুর্গ। দুর্গটি এখনও বর্গাকার। প্রত্যেক বাহুর দৈর্ঘ্য ২৭২ মিটার। দুর্গের চারদিকে যে পরিখা ছিল তা প্রায় ৬০ মিটার প্রস্থ ছিল। এই প্রত্বতাত্তিক বলেন, পাল বংশ ৭০০ থেকে ১২০০ শতাব্দী পর্যন্ত বাংলায় রাজত্ব করেছে। কিন্তু তাদের রাজধানীর সন্ধান পাওয়া যায়নি।
তবে বল্লাল সেনের এ বাড়িটি একটি রাজবাড়ি। সোমবার খনন কাজ শুরু করার মাধ্যেমে সেই চিহ্ন পাওয়া যাচ্ছে। মূল মাটির ২-৩ ফুট নিচে প্রাচীন ইট, ইটের টুকরো, মাটির পাত্রের টুকরো, কাঠ-কয়লা পাওয়া যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বিস্তৃত আকারে খনন করা হলে এখানে দেয়াল বেরিয়ে আসে। যেমনটা পার্শ্ববর্তী রঘুরামপুরে ও টঙ্গিবাড়ি উপজেলার নাটেশ্বরে পাওয়া গেছে। খনন কাজ চালিয়ে যেতে পারলে, বল্লাল সেনের রাজ প্রাসাদ, মন্দির, রাস্তা-ঘাট সব কিছু পাওয়া যাবে।
তবে প্রয়োজন সবার সহযোগিতা। জায়গাটি এখন ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে পরিণত হয়েছে। এর মালিকদের অনুমতি নিয়ে ২০১১ সাল থেকে খননকাজ এগিয়ে নিতে চেষ্টা করে যাচ্ছি আমরা।
খননের মধ্য দিয়ে সেন বংশের ইতিহাস ও তৎকালীন বাংলার রাজধানী বিক্রমপুরের ইতিহাস বৈজ্ঞানিকভাবে বের হয়ে আসে। বিক্রমপুর তথা বাংলাদেশের ইতিহাসকে আরও সমৃদ্ধ করবে এবং বিক্রমপুরের ইতিহাস সমৃদ্ধ ছাড়াও প্রত্নতত্ত্বনগরী মুন্সীগঞ্জে আরও বেশি আকৃষ্ট করবে পর্যটকদের।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ হারুন-অর-রশিদ
বার্তা সম্পাদকঃ আশিক সরকার
Copyright © 2025 Bporikromanewsbd.com. All rights reserved.