বিশ্ববিদ্যায়ল পরিক্রমা ডেস্ক : প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বাংলাদেশী হত্যা থামছে না। আন্তর্জাতিক আইন ও রীতিনীতি উপেক্ষা করে সীমান্তের গুলি করে বাংলাদেশীদের হত্যা করা হচ্ছে।অথচ ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ ছাড়াও চীন, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমারের সীমান্ত রয়েছে। ওইসব সীমান্তে গত ১০ বছরে কোনো বেসামরিক ব্যক্তি নিহতের ঘটনা ঘটেনি।কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সম্পর্ণ উল্টোচিত্র।কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এমনটা আর কত?
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের দৈর্ঘ্য ৪ হাজার ১৫৬ কিলোমিটার। পরিসংখ্যানমতে, এটা বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তর সীমান্ত। দীর্ঘ এই সীমান্তে চোরাচালানসহ নানা ধরনের ঘটনা ঘটছে। বানের পানির মতো আসছে ফেনসিডিলসহ নানা ধরনের মাদক। অথচ গরু চোরাচালানকে কেন্দ্র করে প্রায়ই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হচ্ছে। কোনো রকম সতর্ক ছাড়াই সরাসরি গুলি করে বাংলাদেশীদের হত্যা করছে।
প্রায়ই বলা হয়, সীমান্তে মানুষ হত্যা শূন্যের কোটায় আনতে বিজিবি-বিএসএফ ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছে।সীমান্ত হত্যা নিয়ে অতীতে ঢাকা-দিল্লির শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা বহুবার বসেছেন। দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে অস্বস্তিও ছিল। মূলত দুই দেশের রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবেই সীমান্ত হত্যা কমছে না বলে মনে করছেন ঝানু কূটনীতিকরা।
সর্বশেষ গত ২২ জানুয়ারি ভোরে ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার মিনাপুর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশী গরু ব্যবসায়ী মো. জেনারুল নিহত হন। নিহত জেনারুল উপজেলার তালডাঙ্গি গ্রামের আবদুল তোয়াফের ছেলে। এর আগে ১৮ জানুয়ারি একই জেলার রানীশংকৈল উপজেলার ধর্মগড় সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে জাহাঙ্গীর আলম রাজু নামে এক বাংলাদেশী নিহত হয়। এক সপ্তাহের ব্যবধানে একই জেলার দুই বাংলাদেশীর মৃত্যুতে ওই এলাকার সীমান্তবাসীর মনে নতুন করে শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।
ভারতের সাথে আরো ৫টি দেশের সীমান্ত থাকলেও বেসামরিক ব্যক্তি নিহতের ঘটনা নেই। অথচ গত ১৭ বছরে বিএসএফ সহস্রাধিক নিরীহ বাংলাদেশীকে হত্যা করেছে। সীমান্তে কেউ কোনো ধরনের অপরাধ করলে তাদের আটক করে সংশ্লিষ্ট দেশের হস্তান্তর করা উত্তম। নিজেরাও আইনসম্মতভাবে ব্যবস্থা নিতে পারে। তা না করে সরাসরি গুলি করে হত্যাকাণ্ডের মতো বর্বর ঘটনা অব্যাহত থাকায় সচেতন জনগোষ্ঠীর মধ্যে নানা ধরনের প্রশ্ন উঠছে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্র এবং বিজিবির তথ্যমতে, ২০০১ থেকে ২০১৭ সালের ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিএসএফ ও ভারতীয় নাগরিকদের হাতে ১ হাজার ২২১ বাংলাদেশী নিহত হয়। এর মধ্যে ১৬৯ জন নিহত হন ভারতীয়দের নির্যাতনে।২০১৫ সালে এ সংখ্যা ছিল ৪৫ জন। ২০১৬ সালে ৩১ জন আর ২০১৭ সালে ২১ জন নিহত হন।
আশার কথা, ২০১৮ সালে সীমান্তে হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু ২০১৯ সালে নতুন করে সীমান্তে পরপর দুটি হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ায় জনমনে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, ভারতের সঙ্গে থাকা অন্য সীমান্তগুলোয় বেসামরিক নাগরিক হত্যা শূন্য হলেও বাংলাদেশের সীমান্তে অব্যাহত থাকায়।যদিও বিএসএফের কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত এলাকায় প্রাণঘাতী নয়- এমন অস্ত্রের ব্যবহার বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু চলতি মাসে সংঘটিত দুটি হত্যাকাণ্ড সে সত্য বহন করছে না।
মিডিয়ার কল্যাণে কেবল বাংলাদেশী নয়, বিশ্ববাসীও জানে সীমান্তে কাঁটাতারে ঝুলে থাকা কিশোরী ফেলানীর লাশের কথা।মানবাধিকারের এমন নির্মম পরিণতির পর থেকে সীমান্ত হত্যা বন্ধে নানা ধরনের প্রতিশ্রুতি ও আশ্বাসে জনমনে কিছুটা স্বস্তি ফিরে এলেও সেটা স্থায়ী হতে পারেনি। ঘুর-ফিরে সীমান্তে বাংলাদেশী বেসামরিক নাগরিকরা অকাতরে জীবন কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। সীমান্তে আর যেন একজন বাংলাদেশীরও জীবনহানি না ঘটে, সে ব্যাপারে প্রতিশ্রুতির শতভাগ বাস্তবায়ন দেখতে চায় সচেতন দেশবাসী।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ হারুন-অর-রশিদ
বার্তা সম্পাদকঃ আশিক সরকার
Copyright © 2025 Bporikromanewsbd.com. All rights reserved.