কোভিড-১৯ এর কারণে দীর্ঘ পাঁচ মাস সকল স্তরের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় অনলাইন, টিভি, রেডিও এবং মোবাইলের মাধ্যমে দেশের ৬৫ হাজারেরও বেশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থা চালু রেখেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
তবে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ কমে গেলেও আগের পরিস্থিতি থাকবে না স্কুলগুলোতে। শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালিত হবে। করোনা পরিস্থিতিও কিছুটা স্থিতিশীল। কবে নাগাদ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবে তা এখনো নিশ্চিত নয়।
এ অবস্থায় যখনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হোক না কেন, শিক্ষার্থীদের সুরক্ষায় একটি গাইডলাইন তৈরি করছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেখানে একদিন অর্ধেক শিক্ষার্থী, আরেক দিন বাকি অর্ধেক শিক্ষার্থী নিয়ে ক্লাস পরিচালনার কথা ভাবা হচ্ছে।
শিশু শিক্ষার্থীদের সুরক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলার আগে শ্রেণিতে পাঠদান অবস্থায় নিরাপত্তা ও শিক্ষার্থীদের উপসর্গ বা আক্রান্ত হলে করণীয় কী— এসব উঠে এসেছে সেই গাইডলাইনে। এছাড়াও রয়েছে পাঠ পরিকল্পনার কথা। সার্বিক এসব বিষয় নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার সভা হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সূত্রে জানা গেছে, করোনাকালীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ইউনিসেফ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও), সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড সিভেনশন (সিডিসি) এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া স্বাস্থ্যবিধিগুলো অনুসরণ করে এসব নির্দেশনা (গাইডলাইন) তৈরি করা হয়েছে।
বিশেষ করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিরাপদে রেখে বিদ্যালয়ে পাঠদান পরিচালনায় করণীয় বিষয়ক নির্দেশনা তৈরি করা হচ্ছে। বিদ্যালয় খোলার আগে ও চলাকালীন সময়ে করণীয় বিষয়ক বিভিন্ন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এছাড়াও প্রতিদিন কিভাবে ক্লাস পরিচালনা করা হবে সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা নির্ধারণ করে আলাদাভাবে তিনটি ক্যাটাগরিতে প্রায় ৪০টিরও বেশি নির্দেশনা থাকবে।
জানা গেছে, গতকালের সভায় নির্দেশনাগুলো চূড়ান্ত করতে হয়েছে। এরপর সেখানে কিছু খসড়া সংযোগ-বিয়োজন করা হয়েছে। পরবর্তী আরেকটি সভা করে এটি চূড়ান্ত করা হবে। পরবর্তীতে মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর অনুমোদনের পর তা প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করে প্রচার-প্রচারণা শুরু করা হবে।
এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আকরাম আল হোসেন গতকাল আমার সংবাদকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর বিদ্যালয় খোলা হবে।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান পরিচালনা করা হবে। ডব্লিউএইচও, ইউনিসেফ, সিডিসি এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেয়া স্বাস্থ্য সুরক্ষা সংক্রান্ত বিষয়গুলো অনুসরণ করে আমরা কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে বিদ্যালয় পরিচালনায় একটা গাইডলাইন তৈরি করছি। সবাইকে এ গাইডলাইন মেনে চলতে হবে।
তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে আগের মতো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালিত হবে। বিদ্যালয় খোলার ১৫ দিন আগে থেকে স্বাস্থ্য সুরক্ষার প্রস্তুতি শুরু করা হবে। ক্লাস চলাকালীন সময়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের করণীয় ও প্রতিদিন কিভাবে ক্লাস পরিচালনা করা হবে সেসব বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হবে।
খসড়ার নির্দেশনা নিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিদ্যালয়) আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম বলেন, স্কুলে প্রবেশের আগে সাবান-পানি দিয়ে শিক্ষার্থীদের হাত ধোয়া বাধ্যতামূলক করার কথা বলা হয়েছে। আর মাস্ক ব্যবহার করলে একজন থেকে আরেকজনে ছড়াবে না, সেজন্য সবাইকে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
আর শিক্ষার্থীসহ সবার তাপমাত্রা মেপে স্কুলে ঢুকতে হবে। শিক্ষার্থীরা মাস্ক নিজের ব্যবস্থাপনায় এবং হাত ধোয়ার বিষয়টি স্কুলের বার্ষিক যে ৫০ হাজার টাকা দেয়া হয় সেখান থেকে ব্যয় করবে বলে জানান অতিরিক্ত সচিব।
তিনি বলেন, আমরা স্যানিটাইজার-গ্লাভসের কথাও বলছি, তবে তা বাধ্যতামূলক নয়। যাদের সামর্থ্য আছে তারা এসব ব্যবহার করতে পারে। এছাড়াও প্রতিদিন শিক্ষার্থীদের বসার বেঞ্চ পরিষ্কার করতে হবে। যেসব স্কুলে টিউবওয়েল বা পানির ব্যবস্থা নেই সেখানে সেই ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছ। স্থায়ীভাবে ব্যবস্থা না করতে পারলে অস্থায়ীভাবে ড্রাম বসানোর কথা বলেছি।
অতিরিক্ত সচিব মনসুর বলেন, ক্লাস নেয়ার বিভিন্ন ফরমেট দেয়া হয়েছে। হয়তো একদিন অর্ধেক আরেক দিন বাকি অর্ধেক শিক্ষার্থীর ক্লাস নিতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে তিন ফুট দূরত্বে বসা নিশ্চিত করে ক্লাস নেয়া হবে। এসব বিষয় স্কুল ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ঠিক করে নেবে।
তিনি বলেন, ক্লাসে বাচ্চা কম বেশি হলে কোন দিন কোন ক্লাস, কোন দিন কোন শ্রেণির ক্লাস— এসব তারাই ঠিক করবেন। তবে আমরা পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি, কারণ তারা পরের ক্লাসে উঠবে।
হঠাৎ উপসর্গ দেখা দিলে উল্লেখ করে তিনি আরও বরেন, স্কুলে থাকা শিক্ষার্থীর হঠাৎ করে করোনার উপসর্গ দেখা গেলে স্থানীয় প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ ব্যবস্থা নেবে জানিয়ে বিদ্যালয় শাখার অতিরিক্ত সচিব বলেন, পাশাপাশি জরুরি সেবার মোবাইল নম্বর ঝুলিয়ে রাখা হবে। উপজেলা পর্যায়ে ইনফরমেশন সেন্টারও থাকবে।
করোনা সংক্রমণের ওপর স্কুলে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা নির্ভর করবে। রেড জোনে স্কুল খুলবে না, স্কুল খোলা থাকা অবস্থায় রেড জোন ঘোষণা করা হলে স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হবে; সে কথাও উল্লেখ রয়েছে নির্দেশিকায় বলে জানান এ কর্মকর্তা।
স্কুল খোলার পর করণীয় বিষয়ে নির্দেশিকাটি প্রায় চূড়ান্ত হয়েছে জানিয়ে অতিরিক্ত সচিব বলেন, আর দু-একটি সভা করে একেবারে চূড়ান্ত করবো। এখনো যেহেতু স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি তাই বিস্তারিত প্রকাশ করছি না।
বিষয়গুলো বাস্তবায়নে মনিটরিংয়ের ওপর জোর দিয়েছি জানিয়ে তিনি বলেন, স্কুল ম্যানেজিং কমিটি, জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় প্রশাসন দেখবে। তবে স্কুল খোলার বিষয়টি চূড়ান্ত হলে নির্দেশিকাটি ফেসবুক, অনলাইন, ওয়েবসাইট, গণমাধ্যমসহ সকল মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হবে বলে জানান অতিরিক্ত সচিব মনসুর।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ হারুন-অর-রশিদ
বার্তা সম্পাদকঃ আশিক সরকার
Copyright © 2025 Bporikromanewsbd.com. All rights reserved.