বছরের মাঝামাঝি সময়ে জেলা প্রশাসকদের সম্মেলন হওয়াটা বরাবরের রীতি হয়ে আছে। তবে চলতি বছরে এই সম্মেলন হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে এবার সম্মেলন হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন না মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
মাঠ প্রশাসনে নেতৃত্বদানকারী ৬৪ জেলার ডিসি, ৮০ জনের মতো সচিব এবং সব মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রীরা ডিসি সম্মেলনে অংশ নিয়ে থাকেন। তিন থেকে পাঁচ দিনব্যাপী এই সম্মেলন সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবছর জুলাই মাসে ডিসি সম্মেলন হয়ে থাকে। এবার করোনার কারণে জুলাই মাসে তা অনুষ্ঠিত হয়নি।
ডিসি সম্মেলনে মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারকদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রস্তাব, আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়। প্রশাসনে এটি বড় একটি অনুষ্ঠান হিসেবে পরিগণিত। এ সময় সব জেলার ডিসিরা ঢাকায় অবস্থান করেন। প্রতিদিন সকাল থেকে প্রায় সন্ধ্যা পর্যন্ত টানা বৈঠক হয় সচিবালয়ের মন্ত্রিসভা কক্ষে। এসব বৈঠকে ৫৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মন্ত্রী ও সচিবরা পর্যায়ক্রমে উপস্থিত থাকেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো এবং ডিসিরা বিদ্যমান কার্যক্রমের বিষয়ে কী ধরনের সমস্যা বা সুবিধা হচ্ছে, প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে আরো কী করা যায় সেসব বিষয়ে দুই পক্ষের মতামত নিয়ে আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
জানা গেছে, আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরের দিকে ডিসি সম্মেলন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা ছিল সরকারের। বর্তমান পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া সব কিছু স্বাভাবিক চলাচলের অনুমতিও দেওয়া হয়েছে, কিন্তু করোনায় মৃত্যুর হার নিয়ে উদ্বেগ আছে। সম্মেলনের মূল বৈঠকগুলো হয় সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মন্ত্রিসভা কক্ষে। কক্ষটিতে প্রতিটি সেশনে গাদাগাদি অবস্থায় সবাইকে বসতে হয়। তাই করোনাকালে এখানে সম্মেলন অনুষ্ঠান সম্ভব নয়। অন্যদিকে সচিবালয়ের পাশে থাকা এম এ জি ওসমানী মিলনায়তনে সম্মেলন অনুষ্ঠান আয়োজনের আলোচনাও ছিল, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এত কর্মকর্তাদের সারা দেশ থেকে একযোগে ঢাকায় আসা ও থাকার জন্য এই সময়টা উপযুক্ত মনে করছেন না সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, করোনাভাইরাসের গতি-প্রকৃতি এখনো পরিষ্কার নয়। সরকার মনে করছে, নভেম্বর-ডিসেম্বরের দিকে করোনার দ্বিতীয় দফা সংক্রমণের ধাক্কা আসতে পারে। তাই ওই সময়টা ডিসি সম্মেলনের জন্য উপযুক্ত নয়। তা ছাড়া এক বছর ডিসি সম্মেলন না হলে বড় কোনো ক্ষতির আশঙ্কা নেই।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্মেলন উপলক্ষে সারা দেশ থেকে ডিসিরা নিজ নিজ প্রস্তাব পাঠিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সেসব বাছাই করে মন্ত্রণালয়ভিত্তিক সমন্বয় বৈঠক করছে। এসব বৈঠকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় প্রস্তাবগুলো যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত করছে। ডিজিটাল পদ্ধতিতে ডিসি সম্মেলন করা যায় কি না, সে বিষয়েও আলোচনা আছে। তবে এখন পর্যন্ত সম্মেলন অনুষ্ঠানের জন্য যে ধরনের প্রস্তুতি থাকা দরকার তা নেই।
প্রতিবছর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ডিসি সম্মেলনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। সম্মেলনের শেষ দিনে রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণে নৈশ ভোজে যোগ দেন ডিসিরা। এ ছাড়া জাতীয় সংসদের স্পিকার, দেশের প্রধান বিচারপতির সঙ্গেও সৌজন্য বৈঠক করেন ডিসিরা। দেশে করোনা সংক্রমণ শুরুর পর থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদ অধিবেশন ছাড়া গণভবন থেকে বের হননি। বঙ্গভবনেও কোনো অনুষ্ঠান আয়োজন করছেন না রাষ্ট্রপতি। তাই সব দিক মিলিয়ে এবারের ডিসি সম্মেলন হচ্ছে না, এমনটাই ধরে নেওয়া যায়।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘করোনার কারণে পুরো বছরের সব শিডিউলে পরিবর্তন এসেছে। এখন পর্যন্ত দেশের যা অবস্থা তাতে ডিসি সম্মেলন অনুষ্ঠান করা ঠিক হবে কি না, তা নিয়ে আমরা ভাবছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘সম্মেলন বাতিলের আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। তাই সম্মেলন হচ্ছে না, এমনটা এখনই বলা যাচ্ছে না।’
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ হারুন-অর-রশিদ
বার্তা সম্পাদকঃ আশিক সরকার
Copyright © 2025 Bporikromanewsbd.com. All rights reserved.