ক্যাম্পাস প্রতিবেদক : যুক্তরাজ্য ভিত্তিক মর্যাদাপূর্ন সাময়িকী টাইমস্ হায়ার এডুকেশন গত ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ একটি ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র্যাংকিং-২০২৪ প্রকাশ করে। বিশ্বখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তালিকায় বাংলাদেশের ৪টি বিশ্ববিদ্যালয় বৈশ্বিক ভাবে ৮০১-১০০০ এর মধ্যে বৈশ্বিক ভাবে অবস্থান করতে সক্ষম হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, ঢাকা ইউনিভার্সিটি, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি এবং জাহাঙ্গীর নগর ইউনিভার্সিটি।
ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি'র প্রো ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক সৈয়দ মাহফুজুল আজিজের মতে, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি সামগ্রিক ভাবে বাংলাদেশি ইউনিভার্সিটিগুলোর মধ্যে শীর্ষ স্থান অর্জন করেছে যা আমাদের ইউনিভার্সিটির শিক্ষা, গবেষণা এবং ইতিবাচক গুন মানের সাক্ষ্য দেয়। গবেষণা মানের ক্ষেত্রে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি ৫৩৩তম অবস্থানে আছে এবং সাইটেশন ইমপেক্টে ৯৯.৮ স্কোর অর্জন করেছে।
কিন্তু এর বিপরীতে ভিন্ন মতও আছে। টাইমস্ হায়ার এডুকেশনের তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে 'দেশ সেরা ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি' এমন খবর চাউর হতে থাকে। তথ্য-উপাত্ত যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান রিউমার স্ক্যানার বাংলাদেশ'র তথ্য মতে দাবিটি বিভ্রান্তিকর। সংস্থাটির মতে ইংরেজি বর্ণমালার ক্রমানুসারে সাজানো হয়েছে বিধায় ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির নাম ১ নাম্বারে চলে এসেছে
টাইমস হায়ার এডুকেশন বিশ্বব্যাপী ইউনিভার্সিটিগুলোর র্যাংকিং করার ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো বিবেচনায় নেয় তাহলো, শিক্ষার মান, শিক্ষার্থী-শিক্ষক অনুপাত, গবেষণা/সাইটেশনের মান, আন্তর্জাতিক যোগাযোগ (শিক্ষার্থী), ইন্ডাস্ট্রি সংযুক্তিসহ বেশ কয়েকটি সূচক। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ক্ষেত্রে সূচকগুলো বিবেচনার দাবি রাখে। (১)
শিক্ষার মান-ভাড়া বাড়ির স্বল্প পরিসরে যেখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর জনপ্রতি প্রয়োজনীয় আন্তর্জাতিক মানের স্পেস দেওয়া আদৌ সম্ভব নয় সেখানে শিক্ষার আন্তর্জাতিক মান রক্ষা করা কতটুকু সম্ভব তা একটি প্রশ্নবোধক চিহ্ন বটে। (২) শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত-প্রতি সেমিস্টারে একজন শিক্ষার্থী সর্বনিম্ন ৪টি কোর্স নিতে পারেন। এটি সব ইউনিভার্সিটির জন্য চার মাসি সেমিস্টারের ক্ষেত্রে একই নিয়ম। শিক্ষার্থীর আর্থিক সামর্থ্য এবং মেধানুসারে বেশি কোর্স নেওয়ার সুযোগও আছে। ভাড়া বাড়ির স্বল্প পরিসর এবং পর্যাপ্ত শিক্ষকের অভাবে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির কোন কোন সাবজেক্টে শিক্ষার্থীরা ২-৩টির বেশি কোর্স নিতে পারে না।এটা দীর্ঘদিন যাবৎ চলে আসছে। (৩) গবেষণা/সাইটেশন-ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যদি বিশেষ কোন বুৎপত্তি অর্জন করে তবে তা তাদের নিজস্ব অর্জন। কারণ আবাসিক/কমার্শিয়াল ভবনে গবেষণা করার উপযোগী লোন স্পেস থাকার কথা নয়। (৪) আন্তর্জাতিক যোগাযোগ/শিক্ষার্থী-ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক যোগাযোগটি সম্পূর্ণ রূপে মূল অর্গানাইজেশন ব্র্যাক এনজিও এবং এর প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ-এর ব্যক্তিগত সুনামের উপর নির্ভরশীল। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষের অবদান এক্ষেত্রে সামান্য। (৫) ইন্ডাস্ট্রি সংযুক্তি-এক্ষেত্রেও ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি মূল অর্গানাইজেশন ব্র্যাক এনজিও'র উপর নির্ভরশীল। এসব বিবেচনায় বলা যায় ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ তালিকা প্রস্তুতকারী সংস্থাকে সঠিক তথ্য-উপাত্ত প্রদানে ব্যর্থ ছিলেন।
সেপ্টেম্বর'এর শুরুর দিকে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ একটি অনলাইন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়, ফল সেমিস্টারে'২৩(সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর) ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি বাড্ডা,ঢাকাস্থ স্থায়ী ক্যাম্পাসে সিপ্ট করা হবে। ফলে এই সেমিস্টারের কিছুদিন মহাখালীস্থ অস্থায়ী ক্যাম্পাসে ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। বাকী দিনগুলোতে অন-লাইনে ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ঘোষণাটি শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবক মহলে বেশ আশার সঞ্চার করেছিল। তারা ভেবে ছিলেন ইউজিসি'র নির্দেশনা মোতাবেক নির্ধারিত সময়ের দ্বিগুণ সময়ের পরে হলেও ইউনিভার্সিটিটি প্রায় ৫০০ কোটি টাকা খরচ করে নির্মিত স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাচ্ছে। প্রচুর টাকা খরচ করে নির্মিত স্থায়ী ঠিকানার একটা গতি শেষমেশ হলো। কিন্তু অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে তারা খুব দ্রুতই আশাহত হচ্ছেন। কারণ, স্থায়ী ক্যাম্পাসে সিপ্ট করার কোন পদক্ষেপ এখনো দৃশ্যমান নয়। তার উপর একটি কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হয়েছে ইতিমধ্যে। সংখ্যায় কম কিছু শিক্ষক ইতিমধ্যে অন-লাইনে ক্লাস পরীক্ষা নিতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। তারা বিবিধ সীমাবদ্ধতার কথা জানাচ্ছেন। যদিও এরাই করোনাকালীন সময়ে অন-লাইনে ক্লাস পরীক্ষা সবই নিয়েছিলেন। ইউনিভার্সিটিটির সাথে বিভিন্ন ভাবে সংযুক্ত ব্যক্তিবর্গ মনে করছেন, এধরনের অযুহাত ইউনিভার্সিটিকে তার নিজস্ব ক্যাম্পাসে সিপ্ট করাকে বাধাগ্রস্ত করাই মূল উদ্দেশ্য। বাড়ি ভাড়াসহ বিবিধ খরচের কমিশন বাবদ প্রাপ্য অংশ থেকে নিজদের বঞ্চিত করতে বেনিফিশিয়ারী গ্রুপটি মোটেই রাজি নয়। তাছাড়া ইউনিভার্সিটির বিভিন্ন প্রশাসনিক বিভাগে অতিরিক্ত অপ্রয়োজনীয় অলস জনবল যারা স্থায়ী ক্যাম্পাসে নিজদের প্রয়োজনীয়তা প্রমাণ করতে নিশ্চিত ভাবে ব্যর্থ হবেন এই বাধাদান কার্যে তারাও বেশ তৎপর।
যুক্তরাজ্য ভিত্তিক টাইমস্ হায়ার এডুকেশন র্যাংকিং কর্তৃপক্ষ ভবিষ্যতে এধরণের র্যাংকিং করার ক্ষেত্রে (১) স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে কি-না, (২) শিক্ষার্থী বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক ব্যবস্থা আছে কি-না, (৩) ৪ বছরের প্রোগ্রাম সময়মতো শেষ করার ব্যবস্থা ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ করতে পারছে কি-না, (৪) নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিবেচনা করে বিকাল কিংবা সন্ধ্যায় ক্লাস পরীক্ষা নেওয়ার পরিবর্তে সকাল কিংবা দুপুরে নেওয়া হচ্ছে কি-না; এসব বিষয় বিবেচনায় নিবেন বিজ্ঞজনেরা এমনটা আশা করছেন।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি ক র্তৃপক্ষ ইউনিভার্সিটিটির নাম পরিবর্তনের আবেদন বাতিল করে দিয়ে যথেষ্ট পরিপক্বতার পরিচয় দিয়েছেন। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ যদি স্বদিচ্ছ থাকেন তাহলে ইউনিভার্সিটিটির সাভারস্থ আবাসিক ক্যাম্পসটির নাম 'স্যার ফজলে হাসান আবেদ রেসিডেন্সিয়াল ক্যাম্পাস' নামে নাম করণ করতে পারেন। ইউনিভার্সিটিটির শুভাকাঙ্ক্ষী মহল আশা করছেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ অপ্রয়োজনীয় বিষয়ে মাতামাতি না করে যতোদ্রুত সম্ভব ইউনিভার্সিটিটিকে তার স্থায়ী ক্যাম্পাসে সিপ্ট করে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। ইউনিভার্সিটি এবং এর প্রতিষ্ঠাতার সুনাম অক্ষুণ্ণ রাখবেন।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ হারুন-অর-রশিদ
বার্তা সম্পাদকঃ আশিক সরকার
Copyright © 2025 Bporikromanewsbd.com. All rights reserved.