বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমা:শুক্রবার দিবাগত রাতে চন্দ্র পৃষ্ঠে ভারতের পাঠানো চন্দ্রযান-২ নামাতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছে দেশটির মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো। চাঁদে অবতরণের খুব কাছে গিয়ে সংযোগ হারিয়ে ফেলে চন্দ্রযান-২।
তবে এখনও আশা ছাড়েননি ভারতীয় মহাকাশ গবেষকরা। আবারও সিগনাল পাঠাতে পারে ল্যান্ডার বিক্রম। ঘটনাটি আজ রবিবারও ঘটতে পারে।
এ বিষয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় পত্রিকা ‘আনন্দবাজার’ একটি বিশেষ প্রতিবেদন ছাপিয়েছে।
বিশেষ এ প্রতিবেদনটি লিখেছেন কলকাতার ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজিক্সের প্রধান কর্মকর্তা ও ভারতের বিশিষ্ট জ্যোতির্বিজ্ঞানী সন্দীপ চক্রবর্তী।
এতে বলা হয়েছে, ল্যান্ডার ‘বিক্রম’ সিগন্যাল পাঠিয়ে ‘চন্দ্রযান-২’-এর অরবিটারকে জানিয়ে দিতেই পারে, চাঁদের দক্ষিণ মেরুর ঠিক কোন জায়গাটায় সে পা ছুঁইয়েছে! এও জানাতে পারে, তার শরীর থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সে রোভার প্রজ্ঞানের সামনে ছোট্ট দরজাটা খুলে দিয়েছিল কি না।
মনটা খারাপই হয়ে রয়েছে। যেহেতু শুক্রবার গভীর রাতে চাঁদের পিঠে নেমেছে কি না, নামলে কোথায় নেমেছে, প্রায় একটা দিন বয়ে যেতে চলল, তার কোনও সিগন্যালই যে বিক্রম এখনও অরবিটারকে পাঠায়নি। পাঠায়নি বলে অরবিটারও বেঙ্গালুরুতে ইসরোর গ্রাউন্ড কন্ট্রোল রুমকে দিতে পারেনি চাঁদের পিঠে বিক্রমের ‘পৌঁছার সংবাদ’।
যে সংবাদটা পাওয়ার আশা ইসরো শুক্রবার করেছিল, আগামী ১৪ দিন সেই আশাটা ইসরো ছাড়বে বলে আমার মনে হয় না। মানে, ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। কারণ, চাঁদের যে জায়গায় বিক্রম নেমেছে, ওই দিন পর্যন্তই, সেখানে সূর্যের আলো এসে পড়বে। তার পর ১৪ দিন ধরে সেখানে সূর্যের আলো পড়বে না। রাত নেমে আসবে চাঁদের সেই অংশে। চাঁদের রাতে হাড়জমানো ঠান্ডায় বিক্রমের সিগন্যাল পাঠানোর ব্যবস্থা কাজ করবে, এমন আশা করাটা কিছুটা বাতুলতাই।
তার মানে, শুধু আজ রবিবারই নয়, ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিক্রমের পাঠানো সিগন্যালের হদিশ পাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাবে ইসরো।
এত দিন অপেক্ষা করতে না-ও হতে পারে। হয়তো আজ রবিবারই ইসরো পেয়ে গেল বিক্রমের ‘পৌঁছার সংবাদ’। আজকের তিথিটা দশমী। চাঁদের মাটিতে বিক্রমের পা ছোঁয়ানোর জন্য ইসরো বেছেছিল যে সময়টা, ভারতীয় সময়ে শুক্রবার, রাত ১টা ৫২ মিনিট ৫৪ সেকেন্ডে। সেই তিথিটা আদতে অষ্টমী।
দিন বাছতে গিয়েই ভুল করেছিল ইসরো?
আমার মনে হয়, ইসরো এই দিনটি বাছতে গিয়েই বোধহয় ভুল করেছিল। ইসরো যদি অষ্টমীর তিথিটি না বেছে তার দিন দু’য়েক পর দশমী (আজ রবিবার) তিথিটি বেছে নিত, তা হলে হয়তো ইসরোকে শনিবার রাত থেকে এতটা উদ্বেগে কাটাতে হত না।
কেন অষ্টমীকে বেছেছিল ইসরো?
তার কারণ, চাঁদের যে অংশে নামার কথা বিক্রমের, ওই দিনটি থেকেই সেখানে সূর্যের আলো ফোটার কথা। ইসরো ভেবেছিল, ভোরের আলো ফুটতেই চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে বিক্রমকে নামিয়ে দেওয়া যাবে। তাতে পুরো ১৪টি সূর্যালোকিত পৃথিবীর দিন ধরে চাঁদে গবেষণা চালাতে পারবে বিক্রম ও রোভার ‘প্রজ্ঞান’। তার সুবিধাটা কী? যেহেতু বিক্রম ও প্রজ্ঞান চলবে
সৌরবিদ্যুৎশক্তিতে, তাই গবেষণা, অনুসন্ধান, পরীক্ষানিরীক্ষার জন্য চাঁদের ওই অংশে সূর্যের আলোকে পুরোপুরি ব্যবহার করতে পারবে ল্যান্ডার ও রোভার।
আমার মনে হয়, এইখানেই হয়তো ভুল করেছিল ইসরো। বিক্রমকে চাঁদের ওই অংশে নামানোর জন্য আর দু’-একটা দিন (নবমী বা শনিবার অথবা দশমী বা রবিবার) অপেক্ষা করা যেত।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ হারুন-অর-রশিদ
বার্তা সম্পাদকঃ আশিক সরকার
Copyright © 2025 Bporikromanewsbd.com. All rights reserved.