বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমা ডেস্ক : টি এন শেষনই ভারতের নির্বাচন কমিশনকে বলতে গেলে তার সংবিধান স্বীকৃত স্থানে বসিয়ে গেছেন। এখন যে ভারতের নির্বাচন কমিশন ভোটের ব্যাপারে যে কোনও সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে, তা শেষনের আমল থেকেই শুরু হয়। একদিকে ভোটের প্রতিটা বিষয়ের ওপরে নজরদারী চলতে থাকে, আর ব্যবস্থা হয় শাস্তিরও।
টি এন শেষন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার হিসাবে যতদিন কাজ করেছেন, সেই সময়ে এমন কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিল না বোধহয়, যার সঙ্গে তার বিরোধ বাঁধেনি!
রাজনৈতিক দলগুলো বা সংবাদমাধ্যম তার নাম দিয়েছিল 'টাইট নাট শেষন' - তিনি সবাইকে 'টাইট' দিতেন বলে। এই তালিকায় প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাও যেমন ছিলেন, তেমনই ছিলেন হিমাচল প্রদেশের রাজ্যপাল গুলশের আহমেদ বা বিহারের মুখ্যমন্ত্রী লালু প্রসাদ যাদব।
শেষনই প্রথমবার বিহারে চার দফায় নির্বাচন করার কথা ঘোষণা করেন। আর প্রতিটা দফার তারিখ বদলাতে থাকেন।
এম এস গিল, যিনি পরে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার হয়েছিলেন, তিনি বলছেন, শেষনের সব থেকে বড় অবদান এটাই যে তিনি নির্বাচন কমিশনকে 'সবার কেন্দ্রবিন্দুতে' নিয়ে এসেছিলেন। তার আগে কেউ তো মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের নামই জানত না। আর প্রত্যেকেই নির্বাচন কমিশনকে হেলাফেলা করে চলতো।
১৯৯৩ সালের ২ আগস্ট টি এন শেষন একটা ১৭ পাতার নির্দেশ জারি করেন। লেখা হয়, যতদিন না নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতাকে সরকার না মানছে, ততদিন দেশে কোনও নির্বাচন হবে না।
ওই আদেশে শেষন লিখেছিলেন, ভারত সরকারের নিজেই এমন কিছু প্রথা সৃষ্টি করেছে, যার ফলে নির্বাচন কমিশন তার নিজের সাংবিধানিক কর্তব্য পালন করতে অসমর্থ হচ্ছে। তাই নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কমিশনের অধীনে যত নির্বাচন হওয়ার কথা, সেই সব ভোট প্রক্রিয়া বন্ধ থাকবে পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত।
১৯৯২ সালের গোঁড়ার দিক থেকেই ভুল করলেই সরকারি অফিসারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করেন তিনি। এদের মধ্যে যেমন কেন্দ্রীয় সরকারের সচিবরা ছিলেন, তেমনই ছিলেন নানা রাজ্যের মুখ্য সচিবরাও।
একবার নগর উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব কে ধর্মরাজনকে ত্রিপুরা নির্বাচনে পর্যবেক্ষক হিসাবে নিয়োগ করা হয়েছিল। তিনি আগরতলা না গিয়ে দপ্তরের অন্য কোনও কাজে থাইল্যান্ড চলে গিয়েছিলেন। শেষন দ্রুত আদেশ জারি করেন, তিনি যদি মনে করে থাকেন ভোটের কাজের থেকে বিদেশে যাওয়া বেশি জরুরী, এই ভুল ধারণাটা ভেঙ্গে দেওয়ার দরকার আছে। এর জন্য ধর্মরাজনকে কড়া শাস্তি দেওয়াটাই উচিত ছিল। কিন্তু নির্বাচন কমিশন সেই রাস্তায় না হেঁটে তার চাকরিজীবনের অতি গুরুত্বপূর্ণ নথি - কনফিডেন্সিয়াল রিপোর্টে এই গুরুতর বিষয়টির উল্লেখ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কনফিডেন্সিয়াল রিপোর্ট একজন সরকারি চাকুরের কাছে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ নথি, যা দিয়ে তাদের পদোন্নতি নির্ভর করে।
রাজীব গান্ধী নিহত হওয়ার পরেই সরকারের সঙ্গে কোনও আলোচনা না করেই তিনি লোকসভা নির্বাচন বন্ধ করে দিয়েছিলেন টি এন শেষন। সূত্র: বিবিসি বাংলা
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ হারুন-অর-রশিদ
বার্তা সম্পাদকঃ আশিক সরকার
Copyright © 2025 Bporikromanewsbd.com. All rights reserved.