চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে নিকটতম প্রতিবেশী দেশ ভারতে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। গুরুত্বপূর্ণ এই সফরে অন্যান্যের সঙ্গে তার সঙ্গে রয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। ধারণা করা হচ্ছে, পররাষ্ট্র, বাণিজ্য ও রেলের সঙ্গে এবার ভারতের সঙ্গে প্রযুক্তি বিষয়েও বাংলাদেশের অংশীদারিত্ব ও সমঝোতায় নতুন মাত্রা যোগ হবে।
কেননা, এর আগে গত ২৭ এপ্রিলে নয়াদিল্লিতে অবস্থিত ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির ক্যাম্পাস এবং ল্যাব পরিদর্শন করেছিলেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী। তখন দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে আইআইটির সাথে যৌথভাবে এগিয়ে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকেপারস্পরিক সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে ৭টি প্রস্তাব দিয়েছিলেন তিনি। বৈঠকে আইটি সেক্টরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), রোবোটিক্স, সাইবার-সিকিউরিটি, সফটওয়্যার এবং হার্ডওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, ভিএলএসআই ইত্যাদি বিষয়ে ইকো-সিস্টেম তৈরি করে দুই দেশ একসঙ্গে কিভাবে স্বনির্ভরতা অর্জন করতে পারে সে বিষয়ে আলোচনা করেছিলেন। এরই অংশ হিসেবে সাইবার সুরক্ষা নিয়ে একটি চুক্তি সম্পাদিত হয়। এছাড়াও বাংলাদেশের হাইটেক পার্কে এড্যট্রেইনমেন্ট প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছে দিল্লী।
আশা করা হচ্ছে এবারে সফরে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বার্থে বাকি বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে টেবিলে থাকবে। এর মধ্যে প্রযুক্তি জ্ঞান ও দক্ষতা বিনিময়ের পাশাপাশি ই-কমার্সেও লাগতে পারে ক্রসবর্ডার সুবিধার হাওয়া।
অবশ্য এ সফরে ব্যবসা-বাণিজ্য, জ্বালানি, অভিন্ন নদ-নদীর পানি বণ্টন ও রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সহযোগিতার বিষয়গুলো আলোচনায় সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পাবে। এ সফরে দুই দেশের মধ্যে বেশ কয়েকটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে।
দিল্লির বাংলাদেশ হাইকমিশন সূত্র অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে সরকারী-বেসরকারী ব্যক্তিরা মিলিয়ে তার সফরসঙ্গী ছিলেন ১৭০ জন। তবে অসুস্থতার কারণে আজ এই সফেরে নেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। রয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর সফর সঙ্গী হিসেবে রয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক, বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি, রেল মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান এবং পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক।
সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ সময় দুপুর সাড়ে ১২টায় ভিভিআইপি চার্টার্ড ফ্লাইটটি নয়াদিল্লির পালাম বিমানবন্দরে অবতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে ভারতের রেল ও টেক্সটাইল প্রতিমন্ত্রী দর্শনা বিক্রম জারদোস ও ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মুহম্মদ ইমরান তাকে স্বাগত জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবারের নয়াদিল্লি সফরে ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং উপ-রাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন। একই দিনে ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তার দেখা করার কথা রয়েছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে অভ্যর্থনা জানাবেন এবং আনুষ্ঠানিক গার্ড অব অনার দেওয়া হবে।
দ্বিপাক্ষিক আলোচনার পর, দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বেশ কয়েকটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং পরে একটি প্রেস বিবৃতি জারি করা হবে। শেখ হাসিনা পরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক তার সম্মানে আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেবেন।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর আজই (সোমবার) বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের উন্নয়ন মন্ত্রী জি কিষান রেড্ডি এবং নোবেল বিজয়ী কৈলাশ সত্যার্থী ৭ সেপ্টেম্বর তার সঙ্গে পৃথকভাবে সাক্ষাৎ করবেন।
৭ সেপ্টেম্বর, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় শহীদ বা গুরুতর আহত ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর কর্মকর্তাদের বংশধরদের ‘মুজিব বৃত্তি’ দেওয়ার একটি অনুষ্ঠানে ভাষণ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী ৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় ফেরার আগে রাজস্থানের খাজা গরীব নওয়াজ দরগাহ শরীফ, আজমির (আজমির শরীফ দরগাহ) এবং ৫ সেপ্টেম্বর ভারত সফরের প্রথম দিনে আজ দিল্লিতে নিজামুদ্দিন আউলিয়ার দরগাহ পরিদর্শন করবেন।
কোভিড-১৯ মহামারির প্রাদুর্ভাবের আগে ২০১৯ সালে শেষবার সফর করার পর থেকে তিন বছর পর ভারত সফর করছেন শেখ হাসিনা।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ হারুন-অর-রশিদ
বার্তা সম্পাদকঃ আশিক সরকার
Copyright © 2025 Bporikromanewsbd.com. All rights reserved.