বিশ্ববিদ্যায়ল পরিক্রমা ডেস্ক : হাজার হাজার, লাখ লাখ নয়; কোটির টাকার অধিক যার বাড়ির চালের ড্রাম, বালিশ আর লেপ-তোশকে পাওয়া গেছে, সে হতভাগ্যের মা ভিক্ষা করে জীবন ধারণ করতেন, কারো কি বিশ্বাস হবে? অথচ এ বাস্তবতা আমাদের দেশে ঘটেছে।আর হতভাগ্য সন্তানের কপালে জুটেছে ধিক্কার আর জেল-জরিমানা।মায়ের দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকলে এমন জিল্লতি হতো না বলে মনে করেন মা-অন্তপ্রাণ বিবেকবান মানুষরা।
বনের রাজা খ্যাত সাবেক প্রধান বন সংরক্ষক ওসমান গণির সাজা আপিল বিভাগেও বহাল রয়েছে। অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় ২০১৫ সালে ১২ বছরের সাজা হয়েছিল তার। জরিমানা হয় ১০ লাখ টাকা।একই মামলায় সহযোগিতায় দায়ে তার স্ত্রী মহসিন আরার তিন বছরের জেল হয়েছে।সঙ্গে জরিমানাও।
জানা গেছে, অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় প্রাক্তন প্রধান বন সংরক্ষক ওসমান গণিকে ১২ বছরের সাজা দিয়ে হাইকোর্টের রায় বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। ২২ জানুয়ারি আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলীর নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদালতে দুদকের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান।
২০১৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় সাবেক প্রধান বন সংরক্ষক ওসমান গণিকে ১২ বছরের সাজা দিয়ে দেওয়া নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখেন হাইকোর্ট। বিচারপতি রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় দেন। পরে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেন ওসমান গণি।
২০০৮ সালের ৫ জুন সংসদ ভবন এলাকায় স্থাপিত বিশেষ জজের আদালত সাবেক প্রধান বন সংরক্ষক ওসমান গণিকে দুর্নীতির দায়ে ১২ বছরের কারাদণ্ড, ১০ লাখ টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরো এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন। একই আদালত স্বামীকে দুর্নীতিতে সহযোগিতা করার অপরাধে ওসমান গণির স্ত্রী মহসিন আরা গণিকে তিন বছরের কারাদণ্ড, এক লাখ টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরো ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন। পরে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন ওসমানি গণি। কিন্তু ওসমান গণির স্ত্রী পলাতক থাকায় তিনি আপিল করেননি। ওসমান গণি বর্তমানে কারাগারে আছেন।
২০০৭ সালে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ওসমান গণির উত্তরার সরকারি বাসভবনে অভিযান চালিয়ে চালের ড্রাম, বালিশ ও তোশকের ভেতর থেকে এক কোটি ছয় লাখ ৮৪ হাজার ৬০০ টাকা উদ্ধার করেন। এর পরই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার এবং তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। তদন্ত শেষে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় জেল-জরিমানা হয়।
সাবেক বন সংরক্ষক ওসমান গণির বাসায় ড্রাম, বালিশ, লেপ-তোশকের ভেতর টাকা পাওয়ায় যায়, যার পরিমাণ কোটি টাকার ওপরে।নগদ যার এত টাকা, এর বাইরে কত টাকা আছে বা থাকতে পারে, তা সহজে আন্ধাজ করা যায়। বড় কথা হলো, যার টাকা এসব অকল্পনীয় জায়গায় ছিল, সে হতভাগার মা ভিক্ষা করে দুবেলা পেটের ভাত জোগাতেন!মায়ের দায়িত্ব পালনে যার সামান্যতম দরদ নেই, সে লোকটির নগদ শিক্ষার পর মায়ের দায়িত্ব পালনে আন্তরিকতা সৃষ্টি হবে কি?
গর্ভধারী মায়ের প্রতি সন্তানের অশেষ ঋণ রয়েছে। যে ঋণ সহজে পূরণ হবার নয়।গায়ের চামড়া দিয়ে জুতা বানিয়ে দেওয়ার মতো কাজ করার পরও মায়ের দায় নাকি শোধ করা সম্ভব নয়।মায়ের দায়িত্ব এবং মাকে সুখ-শান্তিতে রাখতে সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য অনেক। সে দায়িত্ব যারা পালন করেন না, শেষ বিচারের দিনের আগে দুনিয়ায় তাদের পরিণতি কেমন হতে পারে; বনের রাজা ওসমান গণির পরিণতি অকাট্য উদাহরণ।এ থেকে মা-বাবার দায়িত্ব পালনে অমননোযোগীদের শিক্ষা নেওয়ার আছে বৈকি।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ হারুন-অর-রশিদ
বার্তা সম্পাদকঃ আশিক সরকার
Copyright © 2025 Bporikromanewsbd.com. All rights reserved.