সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এককভাবে বাংলাদেশের রপ্তানির বৃহত্তম বাজার যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি কাঙ্ক্ষিত হারে না বাড়লেও গত পাঁচ মাসে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাস জুলাই থেকে নভেম্বরে দেশটিতে বাংলাদেশে রপ্তানি বেড়েছে ২১ শতাংশের উপরে। অথচ পূর্বের অর্থবছরের একই সময়ে এই বাজারে রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ছিল খুবই কম।
গত কয়েক মাসে বাংলাদেশের সার্বিক রপ্তানিতেই ভালো প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এই প্রবৃদ্ধি অপেক্ষাকৃত বেশি হারে হয়েছে। রপ্তানির প্রধান পণ্য তৈরি পোশাকে ভর করে এ বিশাল রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে বলে মনে করছেন রপ্তানিকারকরা। এজন্য সম্প্রতি চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধকে অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন তারা। উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা বাংলাদেশে ক্রয়াদেশ বাড়াতে শুরু করেন। এর ফলেই রপ্তানি বাড়তে শুরু করে দেশটিতে। অবশ্য সম্প্রতি উভয় দেশ তিন মাসের জন্য ওই যুদ্ধ স্থগিত করতে সম্মত হয়েছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো’র (ইপিবি) সর্বশেষ প্রকাশিত পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত পাঁচ মাসে দেশটিতে বাংলাদেশের রপ্তানি হয়েছে ২৮৩ কোটি ডলারের পণ্য। এর মধ্যে গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানির পরিমাণ ছিল ২৫৪ কোটি ডলার। আর গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের পাঁচ মাসে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ২৩৩ কোটি ডলারের সমপরিমাণ, যার মধ্যে গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানির পরিমাণ ছিল ২০৯ কোটি ডলারের সমপরিমাণ।
তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সিনিয়র সহ-সভাপতি ফারুক হাসানের প্রতিষ্ঠান জায়ান্ট গ্রুপ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে দেশের অন্যতম বড় রপ্তানিকারক। গত কয়েক মাসে এই প্রতিষ্ঠানও বাড়তি অর্ডার পেয়েছে। ইত্তেফাককে তিনি বলেন, চীন-যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য যুদ্ধের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বায়াররা বাংলাদেশে অর্ডার বাড়িয়েছেন। রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ গার্মেন্টস কারখানা ভবনের কাঠামো, অগ্নি ও বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়নের স্বার্থে অনেক কাজ করেছে। বিশাল বিনিয়োগ করতে হয়েছে। ফলে বিশ্বব্যাপী ক্রেতাদের আস্থা ফিরেছে। এর ফল পেতে শুরু করেছে বাংলাদেশ।
ইপিবি’র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত পাঁচ মাসে সবমিলিয়ে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি বেড়েছে ১৭ দশমিক ২৪ শতাংশ। আর পূর্বের অর্থবছরের একই সময়ের রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ছিল সাত শতাংশেরও কম। গত পাঁচ মাসে রপ্তানি হয়েছে ১ হাজার ৭০৭ কোটি ৩৮ লাখ ডলারের পণ্য। আর পূর্বের অর্থবছরের একই সময়ের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৪৫৬ কোটি ২৯ লাখ ডলার। আলোচ্য সময়ে রপ্তানি বেড়েছে গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২৫০ কোটি মার্কিন ডলার বা ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি।
গত কয়েক মাসে ইউরোপেও বাংলাদেশের রপ্তানিতে ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ইউরোপ ও আমেরিকা অঞ্চলের দেশগুলোর আমদানির চিত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত কয়েক মাসে সেখানে গড় আমদানির তুলনায় বাংলাদেশ থেকে আমদানি প্রবৃদ্ধি ছিল বেশি হারে। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে পোশাক আমদানির তথ্য সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান ইউরোস্ট্যাটের পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে সারা বিশ্ব থেকে ইউরোপের দেশগুলোর পোশাক আমদানি গড়ে ৭ দশমিক ২৩ শতাংশ বেড়েছে। সেখানে বাংলাদেশের বেড়েছে ১১ দশমিক ২৩ শতাংশ। অথচ গত ২০১৭ সালে সেখানে বাংলাদেশে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ছিল সোয়া চার শতাংশেরও কম। শুধু তাই নয়, আলোচ্য সময়ে ইউরোপের ২৮টি দেশে বিশ্বের শীর্ষ ১০টি রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে প্রবৃদ্ধির বিবেচনায় বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে। সেখানে রপ্তানিতে বাংলাদেশের ওপরে কেবল এশিয়ার দেশ কম্বোডিয়া।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ হারুন-অর-রশিদ
বার্তা সম্পাদকঃ আশিক সরকার
Copyright © 2025 Bporikromanewsbd.com. All rights reserved.