মহিউদ্দিন তুষার : ফজরের নামাজ শেষে শারীরিক ব্যায়াম তারপর পূর্ব নির্ধারিত সংগঠনের কাজে না হয় মন্ত্রী পরিষদের কাজে চলে যাওয়া। নিজের পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না হয় সংসদ ভবনে বসে নিজ এলাকাসহ উপস্থিত বাংলাদেশের প্রতিটি জেলার লোকদের সাথে বসে তাদের ভালো-মন্দ কথা শোনা এবং তাদের পরামর্শ দেয়া। সকাল ১০ বা ১১টা বেজে গেলে চলে যান সচিবালয়ে তার দপ্তরে কিংবা সংগঠনের বিভিন্ন কাজে। কখনও অফিসে আবার কখনও চট্টগ্রামে আবার কখনও নিজ জেলা শরীয়তপুরে। কোথায় কোন কর্মীর সমস্যা হয়েছে কিনা তাদের সমস্যা থাকলে অতিদ্রুত সমাধানের চেষ্টা করা। বিকেল হতেই সময় কাটে রাজনৈতিক কার্যালয়ে। যার শেষটা হয়তো নির্দিষ্ট করে কারোরই জানা নেই। এভাবেই দিন কেটে যায় তার। রাতে আবার সময় পেলে সংগঠনের উচ্চ পদস্থ নেতাদের সাথে সংগঠন নিয়ে কথা বলেন। বলছিলাম উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীমের কথা। যিনি ইতোমধ্যেই ছাত্র নেতাদের প্রিয় নেতা হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশের পরিশ্রমী সাংগঠনিক ও জনপ্রিয় ছাত্রনেতা কে? এ প্রশ্ন যদি তরুণদের করা হয় তারা অকপটে তার নামটি বলে দিবে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম। ছাত্র রাজনীতি থেকে জাতীয় রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ স্থানে জায়গা করে নিয়েছেন নিজের কর্মদক্ষতা ও সুদৃঢ় নেতৃত্বের মাধ্যমে। ছাত্র জীবনেই এনামুল হক শামীমের নেতৃত্বের বিকাশ ঘটে। ঐতিহাসিক ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। এনামুল হক শামীমের সাংগঠনিক দক্ষতা আর ক্যারিশমার কারণেই সে সময়ে সারা দেশে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সংগঠন ছাত্রলীগ হয়ে উঠে জনপ্রিয় সংগঠনে। একসময়ে অভিষিক্ত হন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে। দলীয় কর্মীদের এমনই মন্তব্য এনামুল হক শামীম সম্পর্কে। দেশের অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ এনামুল হক শামীম ছাত্রনেতা থেকে গণমানুষের নন্দিত নেতায় পরিণত হয়েছেন দীর্ঘ ত্যাগ আর কর্মীদের ভালোবাসার কারণেই। আওয়ামী লীগের দুর্দিনে, দুঃসময়ে রাজপথ কাঁপানো নেতা এনামুল হক শামীম বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি কখনো। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে কখনো পিছপা হননি তিনি। বাংলাদেশ ছাত্রলীগে তিনি নিজ অবস্থান তৈরি করেছেন অসাধারণ সাংগঠনিক দক্ষতা আর শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি অবিচল থেকে। দলের যে কোনো দুর্যোগ আর সংকটে এনামুল হক শামীম নিজেকে প্রকাশ করেছেন আপসহীন চেতনায়। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম এনামুল হক শামীম ১৯৬৫ সালের ২৯ মার্চ শরীয়তপুর জেলার সখিপুর থানার সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে পাইকবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা প্রকৌশলী আলহাজ্ব আবুল হাশেম মিয়া ও মাতা রত্মগর্ভা মা বেগম আশরাফুন্নেছা। এনামুল হক শামীমের দাদা আলহাজ্ব রওশন আলী ছিলেন একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এবং নানা আব্দুল জলিল মুন্সী ছিলেন স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব। বলা যায় ছোটবেলা থেকেই রাজনৈতিক আবহে বড় হয়েছেন তিনি।
এনামুল হক শামীম ছাত্রজীবনে মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন সর্বত্র। স্কুল জীবন থেকেই তার ছাত্র রাজনীতির হাতেখড়ি শুরু হয়। ১৯৭৯ সালে নোয়াখালীর এএম উচ্চ বিদ্যালয়ে পাঠরত অবস্থায় তিনি স্কুল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে নির্বাচিত হন। ঢাকার রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে এইচএসসি পাস করার পর উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরু থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে আরও বেশি নিবিড়ভাবে জড়িয়ে পড়েন তিনি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের বিপুল ভোটে ১৯৮৯ সালে তিনি জাকসুর ভিপি নির্বাচিত হন। এছাড়া তিনি সিনেট সিন্ডিকেটের সদস্য ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতির পাশাপাশি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় পর্যায়েও তার ছিল সদর্প বিচরণ। ১৯৯০ সালে তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। সততা, আন্তরিকতা, কঠোর পরিশ্রম আওয়ামী লীগ সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি বিশ্বস্ততার পরম পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে তিনি ধীরে ধীরে উঠে আসেন ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বে।
১৯৯২ সালে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সহ-সভাপতি এবং ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। শিক্ষা, শান্তি ও প্রগতির বার্তা নিয়ে তিনি ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত ছুটে বেড়িয়েছেন দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। তার নেতৃত্বের গুণেই সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের জয় জয়কার। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ইতিহাসে এনামুল হক শামীমের নাম এক এবং অনন্য। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি থাকাকালে ১৯৯৫ সালের ১২ ডিসেম্বর জননেত্রী শেখ হাসিনা এনামুল হক শামীমের হাতে বই, খাতা কলম তুলে দিয়েছিলেন। ’৯০ এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন এবং ’৯৬ এর বিএনপি-জামায়াত বিরোধী জনতার মঞ্চ’ এর অন্যতম সংগঠক ছিলেন এনামুল হক শামীম। প্রগতিশীল রাজনীতির ধারক বাহক এনামুল হক শামীম বারবার প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ২০০১-২০০৬ সালে তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামে সারাদেশের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংগঠিত করতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। যার ফলে তার উপর নেমে আসে অত্যাচারের খড়গহস্ত। শতাধিক মামলার আসামী করা হয় তাকে, একাধিক বার কারাবরণ করেন তিনি। ২০০৪ সালের গ্রেনেড হামলায় মারাত্মকভাবে আহত হয়ে মৃত্যুর লড়াই থেকে ফিরে আসেন শামীম। এখনো শরীরে গ্রেনেডের আঘাতের চিহ্ন ও স্পিন্টার বয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। ১/১১ তে জননেত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে জোরালো ভূমিকা রাখেন এনামুল হক শামীম।
একেএম এনামুল হক শামীম ২০০২ সাল থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অবজারভার মেম্বার হিসেবে দায়িত্ব পালন করার পর ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারীতে প্রথমবারের মতো এবং ২০১২ সালের ডিসেম্বরের কেন্দ্রীয় সম্মেলনে দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সদস্য মনোনীত হন। আওয়ামী লীগের ২০তম সম্মেলন অধিবেশনে এনামুল হক শামীমকে সাংগঠনিক সম্পাদক হিসাবে নির্বাচিত করা হয়। সাংগঠনিক দায়িত্ব পাওয়ার পর বিভাগ চট্টগ্রামের সাংগঠনিক দায়িত্ব দেয়া হয় তাকে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শরীয়তপুর-২ আসন থেকে জনগণের দেয়া বিপুল ভোটে জয়ী হন শামীম। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবার পর পরই তিনি মন্ত্রী পরিষদের সদস্য হবার গৌরব অর্জন করেন। এনামুল হক শামীম আমেরিকা, ইতালি, জার্মানি, ভারত, সুইজারল্যান্ড, চীন, সৌদি আরব ও দুবাই সহ বিভিন্ন দেশ সফর করেন। শামীম চরভাগা বঙ্গবন্ধু আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা, আমেনা রওশন হাফেজিয়া মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা এবং হাজী শরীয়তউল্লাহ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের গভর্নিং বডির সম্মানিত প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সচিব ছিলেন বর্তমানে তিনি সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। এনামুল হক শামীম পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। আলোচিত এই ব্যক্তির সাথে সমসায়য়িক রাজনীতি নিয়ে আলোচনা হয় বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমার প্রধান প্রতিবেদক মহিউদ্দিন তুষারের সাথে। পাঠকদের সামনে তুলে ধরা হলো।
বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমা : এবারই প্রথমবারের মতো আপনি জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেন। এরপর আবার মন্ত্রীও হয়েছেন। এ দুই অর্জনকে কীভাবে দেখেন?
একেএম এনামুল হক শামীম : আপনারা জানেন আমি স্কুল জীবন থেকেই ছাত্র রাজনীতি করি। স্কুল জীবনে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, সাধারণ সম্পাদক এবং সভাপতিসহ জাকসুর ভিপি ছিলাম। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হই। অর্থাৎ ছোট বেলা থেকেই ছাত্রলীগ করার মাধ্যমে রাজনীতি করতে করতেই আমি বড় হয়েছি। আমি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলাম কয়েকবার, বর্তমানে সাংগঠনিকের মত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে আসছি। সত্যি কথা বলতে কি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে বাংলাদেশে আসার পর থেকে একেবারে তার হাতে গড়ে আমাকে বড় করেছেন। সকল কিছুই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার স্নেহে, নির্দেশনায় বর্তমান অবস্থায় এসে পৌছেছি। এর জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আজীবনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। এই প্রথম শরীয়তপুর-২ আসন থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হয়েছি। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে আমাকে উপমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব দিয়েছেন। পানিসম্পদ উন্নয়নমূলক মন্ত্রণালয়। এ মন্ত্রণালয়কে মানবতার মন্ত্রণালয় হিসাবেই দেখছি। কারণ এখানে বেড়িবাঁধ নির্মাণ, জলাবদ্ধতা, নদী ভাঙ্গন এই মন্ত্রণালয়ে মানুষের জন্য কাজ করার সুযোগ রয়েছে। মাদার অব হিউম্যানিটি মানবতার মা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা অভিজ্ঞতায় সেরা প্রধানমন্ত্রী। তিনি শুধু বাংলাদেশ নয় বিশ্ব পরিচালনা করার যোগ্যতা অর্জন করেছেন। বিশ্ব নেতৃবৃন্দ তার সম্পর্কে বলেন, যোগ্যতা, দক্ষতা, অভিজ্ঞতায় শেখ হাসিনা শুধু বাংলাদেশ কিংবা উপমহাদেশ নয় তিনি সারা বিশ্বকে নেতৃত্ব দিতে পারেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদে সদস্য হিসাবে প্রথম নির্বাচিত হওয়ার পরপরই আমাকে মন্ত্রী সভার সদস্য নির্বাচিত করেছেন তাই শরীয়তপুরবাসীর পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে আবারও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলতে চাই সততা এবং বিশ্বস্ততার সাথে দায়িত্ব পালন করবো ইনশাআল্লাহ।
বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমা : পানিসম্পদ উপমন্ত্রী হিসেবে এরইমধ্যে আপনি দেশের বিভিন্ন জায়গা পরিদর্শন করেছেন। আপনি কী কোনো চ্যালেঞ্জ অনুভব করছেন?
একেএম এনামুল হক শামীম : পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর থেকেই আমরা বাংলাদেশের প্রবল নদী ভাঙ্গন এলাকা চিহ্নিত করেছি। ৫০-৫৫টা এলাকা চিহ্নিত হয়েছে যা ৫০০ যায়গার মত হবে। বাংলাদেশের এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে নদী ভাঙ্গন বা জলাবদ্ধতা নেই। বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক। মহান মুক্তিযুদ্ধেও স্লোগান ছিলÑ তোমার আমার ঠিকানা পদ্মা-মেঘনা-যমুনা। নদীকেন্দ্রীক আমাদের এই দেশ। সেই কারণেই গুরুত্বপূর্ণ যায়গাগুলো চিহ্নিত করে আমি ২১টি জায়গা এখন পর্যন্ত নদী ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। গত মার্চ মাসের মাঝে হাওর ও ফেনী এলাকা ভিজিট করেছি। রাজবাড়ী হাতিয়ার মতো এলাকাতেও আমরা গিয়েছি। এছাড়া বেশ কয়েকটা জেলা পরিদর্শন করার পরিকল্পনা আমার রয়েছে। নদী ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করার পর আমরা সর্বপ্রথম যে জায়গাগুলোতে সমস্যা রয়েছে তা দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করছি। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রথম টার্গেট হচ্ছে বর্ষা শুরু হবার পূর্বেই যে সকল এলাকা বেশি সমস্যার সম্মুখীন রয়েছে তা দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া। যেমন আমার নির্বাচিত শরীয়তপুরের নড়িয়া এলাকা প্রবল নদী ভাঙ্গন এলাকা। আমি সেখানে তিন মাসে প্রায় ১০ বার গিয়েছি এবং বর্তমানে সেখানে কাজের গতি অনেকগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। নারায়ণগঞ্জের ডিএনডি বাঁধ আমি সেখানেও গিয়েছি। সুনামগঞ্জের হাওর হালদা নদী পরিদর্শন করেছি। মিরপুরের যে জলাবদ্ধতা রয়েছে এইগুলোও আমরা পরিদর্শন করেছি। মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীসহ সব কর্মকর্তাগণ সব জায়গায় যাচ্ছেন। অর্থাৎ বর্ষাকে সামনে রেখে নদী ভাঙ্গন কবলিত এলাকাগুলো ভাঙ্গনের হাত থেকে কীভাবে রক্ষা করা যায় সেই লক্ষে আমরা কাজ করছি। নদী ভাঙ্গন এলাকাগুলোতে যে কর্মকর্তা রয়েছে তাদের সংখ্যা বাড়িয়ে দিয়েছি। এই বর্ষায় সকলের ছুটিও আমরা বাতিল করে দিয়েছি। যেখানে স্টাফ ছিল ৫ জন সেখানে আমরা ৭ জন করেছি। যেখানে যা দরকার তাই করছি। আমরা কাজ যেহেতু বাড়িয়েছি কাজের গতির সাথে সমন্বয় করে স্টাফদের সংখ্যাও বাড়িয়েছি। নদী ভাঙ্গন একটি প্রাকৃতিক বিষয়। এখানে কারো হাত নেই। এটা অবশ্যই চ্যালেঞ্জ। তবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য আমরা সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছি। আশা করি পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে এবার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার ক্ষেত্রে কোন ঘাটতি নাই। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে প্রার্থনা করিÑ মহান রাব্বুল আলামিন যেন বাংলাদেশের মানুষকে নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা করেন।
বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমা : আপনি শরীয়তপুর-২ আসনের সাংসদ। মন্ত্রী হওয়ার কারণে পুরো শরীয়তপুরবাসীর চাওয়া-পাওয়া আপনার কাছে অনেক বেশি। শরীয়তপুরকে আরও সমৃদ্ধ করতে আপনার পরিকল্পনা কী?
একেএম এনামুল হক শামীম : মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা যখনই প্রধানমন্ত্রী হন তখনই শরীয়তপুরের উন্নয়ন হয়। গত ১০ বছরে এবং ১৯৯৬ সালে শরীয়তপুরে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। স্বপ্নের পদ্মা সেতু হয়ে যাচ্ছে ইনশাআল্লাহ। আগামী ২/১ বছরের মধ্যে পদ্মা সেতু হয়ে গেলে শরীয়তপুর হবে বাংলাদেশের প্রথম ১০টি জেলার মধ্যে একটি। পদ্মা সেতু থেকে ফোর লেন রাস্তা শরীয়তপুরের সদর দিয়ে ভেদরগঞ্জ-সখিপুর হয়ে চাঁদপুরের সেই ফেরিঘাট পর্যন্ত ইতোমধ্যে ৮শ ৫৯ কোটি টাকার অনুমোদন হয়েছে আর বাকি অংশটুকু প্রক্রিয়াধীনের মধ্যে রয়েছে। শরীয়তপুর জেলাকে রেললাইনে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ডিউ লেটার দিয়েছি রেলমন্ত্রীর কাছে। আশা করি এটা হবে। শরীয়তপুরে একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় করার জন্য শেখ হাসিনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় করার জন্যও ডিউ লেটার দিয়েছি। আশা করি এটাও হবে। শরীয়তপুরের প্রত্যেক থানা এবং উপজেলার রাস্তাঘাট স্কুল-কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসার ব্যাপক উন্নয়ন করার জন্য পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। জাজিরাতে তাঁত শিল্প নগরী হচ্ছে। নড়িয়ার ৪টি দুর্গম চরে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ যাবে যা এপ্রিল মাসের ২২ তারিখে উদ্বোধন করেছি। সেখানেই বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে। চরাঞ্চলের বিদ্যুতের চাহিদা মিটিয়ে মুন্সীগঞ্জ, মতলব ও জাজিরার কুন্ডের চর এবং নড়িয়ার একটা অংশ এখান থেকে আমরা বিদ্যুৎ সাপ্লাই দিব। এগুলো ছিল শরীয়তপুরবাসীর জন্য স্বপ্ন কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার বদৌলতে তা আজ বাস্তবে রূপান্তরিত হচ্ছে। দুর্গম চরের মধ্যে বিদ্যুৎ যাবে এটা কেউ কল্পনাও করতে পারেনি। যেখানে কেরসিন দিয়ে কুপি জ্বলতো সেখানে বিদ্যুতের আলো জ্বলবে। এটা কল্পনা না বাস্তব। শরীয়তপুরের অন্যান্য সংসদ সদস্য ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে সকল ব্যাপারে পরিকল্পনা করে শরীয়তপুরকে বাংলাদেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ জেলা হিসাবে তৈরি করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। পরিকল্পনা আছে এই বছরের এই মেয়াদে মেঘনা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবো ইনশাআল্লাহ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে।
বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমা : আমাদের দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের নদী ও খাল দখল করে স্থানীয় প্রভাবশালী অনেকেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ঘর-বাড়ি নির্মাণ করেছে। এগুলো দখলমুক্ত করার ব্যাপারে আরও জোরালো উদ্যোগ নেবেন কি?
একেএম এনামুল হক শামীম : নৌ-পরিবহন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে বুড়িগঙ্গা নদী থেকে শুরু করে অন্যান্য নদী রক্ষায় আমরা সাঁড়াশি অভিযান চালিয়েছি। স্থানীয় ব্যক্তিদের সহযোগিতা পাচ্ছি, সাংবাদিকরা আমাদের সহযোগিতা করছেন। নদী দখলকারীদের ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে কারো ছাড় নেই সে যে দলেরই হোক। নদী দূষণ রোধ এবং মানুষের জীবনযাত্রার মান স্বাভাবিক রাখার জন্য যা যা দরকার আমরা সেই পরিকল্পনাই করবো। নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে কাজ করছে আমরাও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সমন্বয় করে নদী থেকে দখলমুক্ত ও নদী দূষণ মুক্ত করার জন্য কাজ করবো। ডিএনডিতে দখল ছিল কিন্তু বর্তমানে হাতিরঝিল থেকে চমৎকার প্রজেক্ট হচ্ছে এখন ডিএনডি। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ওখানে কাজ হচ্ছে। এখানে বড় বড় বাড়ি, বিল্ডিং ছিল এগুলো দখল মুক্ত করে, খাল পুনরায় খনন করে কাজ করা হচ্ছে। আমরা যে সকল জায়গা দখলমুক্ত করেছি সেগুলো এখনও আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে বাংলাদেশের প্রত্যেক জেলা প্রশাসকের কাছে এবং জেলায় যারা নির্বাহী প্রকৌশলী আছেন তাদের কাছে থেকে লিস্ট চেয়েছি কোন কোন সরকারি জায়গা মানুষের দখলে রয়েছে। সে সকল জায়গা নিহিত করে জেলা প্রশাসককে প্রধান করে কমিটি করে দিয়েছি। আমরা আশা করি সকল বেদখল জায়গা দখলমুক্ত হয়ে যাবে।
বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমা : বাংলাদেশের মানুষের বহুল আকাক্সিক্ষত তিস্তা চুক্তির অগ্রগতি সম্পর্কে আপনার কাছে কিছু জানতে চাই।
একেএম এনামুল হক শামীম : তিস্তা চুক্তির বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা নিজেই দেখছেন। আশা করি বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষা করেই যেমন করে গঙ্গা চুক্তি হয়েছে তিস্তারও চুক্তি হবে। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকলেই বাংলাদেশের স্বার্থ সংরক্ষিত হয়। বেগম খালেদা জিয়ারা ভারতে গিয়ে গঙ্গার পানির কথা ভুলে যান। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধু গঙ্গা চুক্তি, তিস্তা চুক্তিই নয় মীয়ানমারের কাছ থেকে সমুদ্র জয় করেছেন। যা আরেকটা বাংলাদেশের থেকেও বড়। সকল দিক থেকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বার্থ সংরক্ষণ করা একমাত্র বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার দ্বারাই সম্ভব। এরশাদ বলেন, খালেদা জিয়া বলেন, জিয়া বলেন কারো পক্ষে সম্ভব হয়নি। তারা করেও নাই উদ্যোগও নেয়নি শুধু মুখে মুখে লম্বা লম্বা কথা বলেছেন; কিন্তু বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য, পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার জন্য, বাংলাদেশের মানুষকে উন্নত জাতি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগেও উদ্যোগ নিয়েছেন, চতুর্থ বার প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নির্বাচিত হয়ে এবারও উদ্যোগ নিচ্ছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমা : বিএনপি’র রাজনীতি সম্পর্কে কিছু বলবেন?
একেএম এনামুল হক শামীম : বিএনপির রাজনীতি হচ্ছে ভুলের রাজনীতি। বিএনপি কোনো রাজনৈতিক দল না। বিএনপির জন্ম হয়েছে ক্যান্টনমেন্টে। বিএনপি লুটেপুটে খাওয়ার রাজনীতি করে। বিএনপি পানি খায় তবে ঘোলা করেই খায়। তারা নানা শর্ত দিলেও পরে সব মেনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। তাদের কথায় কাজে কোনো মিল নাই। বিএনপির রাজনীতি হচ্ছে হাওয়া ভবন তৈরি করা, আগুন সন্ত্রাস করা, সাধারণ মানুষকে পুড়িয়ে মারা, নির্বাচনকে বয়কট করা। এগুলোই হচ্ছে বিএনপির রাজনীতি। বিএনপি কোন গণতান্ত্রিক দল না। এই আগুন সন্ত্রাসী দল কলমের খোঁচায় সচিব, মহা-সচিব পরিবর্তন করে দেয়। বিএনপির সম্মেলন হয় না কখনও। আর আওয়ামী লীগের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায়Ñ আওয়ামী লীগ কত গণতান্ত্রিক দল। তিন বছর পর পর জাতীয় সম্মেলন হচ্ছে, জেলা সম্মেলন হচ্ছে। রাজনীতির দল হিসাবে বলতে গেলে বিএনপিকে কখনও রাজনৈতিক দল বলা যাবে না। আওয়ামী লীগ হচ্ছে উপমহাদেশের একটি রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক দল। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশেই এদেশের মানুষ দেশকে স্বাধীন করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছে। সুতরাং আওয়ামী লীগের সাথে কখনও বিএনপির তুলনা চলে না।
বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমা : এবার মন্ত্রিসভা গঠন করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চমক দেখিয়েছেন। মন্ত্রীরা তাদের কাজ দিয়ে জনগণকে কতটা চমক দেখাতে পারবেন বলে আপনার মনে হয়?
একেএম এনামুল হক শামীম : মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিবেচনায় যাদেরকে যোগ্য মনে করেছেন তাদেরকেই মন্ত্রিসভায় সদস্য করেছেন। আমি আমার অবস্থান থেকে বলতে পারি। সততা এবং কাজ দিয়ে আমরা মন্ত্রিসভার প্রত্যেক সদস্য চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ আমাদের উপর আস্থা রেখে যে গুরুদায়িত্ব দিয়েছেন তা শতভাগ পূরণ করার জন্য।
বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমা : এবার একটু অন্য প্রসঙ্গে আসি। আপনি একসময় সুনামের সাথে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। সাম্প্রতিককালে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের কিছু কিছু কর্মকাণ্ড দেশ-বিদেশে সমালোচিত হয়েছে। সাবেক সভাপতি হিসেবে ছাত্রলীগের এই কর্মকাণ্ডগুলোকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
একেএম এনামুল হক শামীম : আওয়ামী লীগের আগে ছাত্রলীগের জন্ম। ছাত্রলীগের অনেক গৌরবের অর্জন রয়েছে। বঙ্গবন্ধু উপলব্ধি করেছিলেন ছাত্রদের দিয়েই সকল কর্মকাণ্ড পরিচালিত করতে হবে। তাঁর হাত দিয়েই ছাত্রলীগ গড়ে ওঠা। এমন কোন ইতিহাস নাই যে ছাত্রলীগের অংশগ্রহণ নাই। ১৯৫২, ৬২, ৬৬, ৬৯, ৭০ ও ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ সব জায়গায় ছাত্রলীগের অংশগ্রহণ এবং সাফল্য রয়েছে। আমি যখন ছাত্রলীগের ৫ বছর সভাপতি ছিলামÑ আড়াই বছর বিরোধী দলে, ২ বছর সরকারি দলে। ১৯৯৮ সালের বন্যায় সাংবাদিকরাই পত্রিকায় শিরোনাম করেছিলেন ‘কলম ছেড়ে বেলুন দিয়ে রুটি বানিয়ে সারা বাংলাদেশে বন্যার্ত মানুষের পাশে ছাত্রলীগ’। ছাত্রলীগের ঐতিহ্য অনেক, ছাত্রলীগের প্রতি মানুষের আস্থাও অনেক। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মানুষ ভালোবাসে, ভয় পায় না। ছাত্র রাজনীতি হলো ছাত্রদের কল্যাণে রাজনীতি। ছাত্রদের সকল ধরনের সমস্যা নিয়ে কথা বলতে হবে। এই দিকগুলো নিয়েই ছাত্রলীগ। গত ১০ বছরে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১টা লাশও পড়েনি। তবে কিছুই হয়নি এটা বলা যাবে না। নিজেদের মধ্যে ছোট খাটো দুই একটা ভুল হয়েছে ছাত্রলীগের। তবে একটা কথাই বলবো চাঁদের স্নিগ্ধতায়ও কলঙ্ক আছে। তার পরেও কলঙ্কের চেয়ে স্নিগ্ধতাই চাঁদকে সর্বজন প্রিয় করে রেখেছে। তেমনি করে ছাত্রলীগের কেউ কেউ ছোটখাটো দোষত্রুটি করে। অনেক সময় আমরাও বিব্রত হই। তবে ছাত্রলীগ ছাত্রলীগই। যদি কোনো ঘটনা ঘটে তাৎক্ষণিক তাদের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়। সুতরাং ছাত্রলীগ হচ্ছে এই উপমহাদেশের একটি অন্যতম ছাত্র সংগঠন। মহান মুক্তিযুদ্ধে ১৯ হাজার নেতাকর্মী বুকের তাজা রক্ত ঢেলে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। ছাত্রলীগের কিছু কিছু নেতাকর্মীর কারণে অনেক সময় ছাত্রলীগের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। তার পরেও ছাত্রলীগ তাদের গৌরবকে ধরে রেখেছে। অতীতের ঐতিহ্যকে বুকে ধারন করে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে এটাই প্রত্যাশা করি।
বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমা : অতীতের ছাত্র আন্দোলন বরাবরই সফল হয়েছে কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে ছাত্ররা বিভিন্ন ইস্যুতে আন্দোলন করে উল্লেখ করার মতো কোনো সাফল্য তুলে আনতে পারেনি। আসলে তাদের দুর্বলতা কোথায়?
একেএম এনামুল হক শামীম : খালেদা জিয়া, এরশাদ স্বৈরাচার ছিল। আর এখন বছরের প্রথম দিন জানুয়ারির ১ তারিখে সারা বাংলাদেশে ৩৮ কোটি বই চলে যায়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোনো সেশনজট নেই। আসলে ছাত্রদের আন্দোলন করার মতো তেমন কিছুই নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা হচ্ছেন শিক্ষাবান্ধব নেত্রী। তিনি প্রাইমারি, স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসছেন। ইস্যু না থাকলে তো কোনো আন্দোলন করা যায় না। আর অযৌক্তিক কোনো আন্দোলন হলে তা সফল হবার কথাও নয়। যৌক্তিক না হলে ছাত্র আন্দোলন কেন জাতীয় আন্দোলনও সফল হয় না। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার জন্য ঈদের পরে, চাঁদের পড়ে, অমাবস্যার পরে আন্দোলন করবে বলে বিএনপি বলেছে। আন্দোলনের কথা বলে বিএনপির কোনো নেতা-কর্মী মাঠে নামেনি। ইস্যু থাকতে হবে। কোনো ইস্যু না থাকলে আন্দোলন সফল হবে কিভাবে! আওয়ামী লীগের সু-শাসনে সারা দেশের মানুষ খুশি। ছাত্র, শিক্ষক, সাংবাদিক, সেনাবাহিনী, পুলিশ, কর্মচারী সবার জন্য তিনি কাজ করছেন। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু হচ্ছে। রাস্তাঘাট, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা তৈরি করছেন। উন্নয়নের মহাসড়কে আজকে বাংলাদেশ। বিশ্ব নেতৃবৃন্দ যেখানে প্রশংসা করে বলেÑ শেখ হাসিনা মেধা, সততা, যোগ্যতায়, কর্মে সবার সেরা। বাংলাদেশের মানুষ এখন শুধু মনেই করেন না বিশ্বাসও করেন। শেখ হাসিনার হাতে আর পিছাবে না বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ শেখ হাসিনার কাছেই নিরাপদ আর কারো কাছেই নিরাপদ না। সেই কারণে যৌক্তিক কোনো ইস্যু নেইÑ তাই আন্দোলন কিভাবে সফল হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমা : দীর্ঘ ২৮ বছর পর ডাকসুর নির্বাচন হলো। আপনি একসময় জাকসুর ভিপি ছিলেন। ডাকসুসহ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের এই নির্বাচনকে কীভাবে দেখছেন?
একেএম এনামুল হক শামীম : দীর্ঘ ২৮ বছর পর ডাকসুর নির্বাচন হয়েছে আমি এটাকে সাধুবাদ জানাই। কারণ সকল ছাত্র সংসদ নির্বাচনগুলো করলে যেমন ছাত্র নেতৃত্ব বেরিয়ে আসবে, পাশাপাশি নির্বাচনের পরিবেশও স্বাভাবিক থাকবে। যখন একজন ছাত্রনেতা মনে করে ভোটের জন্য ছাত্র/ছাত্রীদের কাছে যেতে হয়Ñ তখন তার ব্যবহারই অন্য রকম হয়ে যায়। ছাত্র/ছাত্রীদের সাথে সম্মানের সাথে কথা বলে। সবার স্বার্থ নিয়ে কাজ করা। ডাকসুর মাধ্যমে হল সংসদগুলো হলে সকল ক্ষেত্রে একটা আলাদা পরিবেশ তৈরি হয়। বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজগুলোতে ছাত্র সংসদ হওয়া দরকার। তাতে ছাত্র নেতৃত্বও তৈরি হয়, বিশ্ববিদ্যালয়েরর পরিবেশও স্বাভাবিক থাকে। নেতারা সাধারণ ছাত্র/ছাত্রীদের কাছে দায়বদ্ধ থাকে। কারণ সেখানে ভোটের জন্য যেতে হয়। রাজনৈতিক নেতারা যেমন জনগণের কাছে দায়বদ্ধ। তারাও তেমনি করে ছাত্র/ছাত্রীদের কাছে দায়বদ্ধ। এতে করে সকলের মধ্যে আচার-আচরণ সকল ধরনের আমূল পরিবর্তন আসে। তাই আমি মনে করি এটা একটি ভালো উদ্যোগ।
বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমা : আমাদের সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
একেএম এনামুল হক শামীম : আপনাদেরও ধন্যবাদ।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ হারুন-অর-রশিদ
বার্তা সম্পাদকঃ আশিক সরকার
Copyright © 2025 Bporikromanewsbd.com. All rights reserved.