ইসলামি বক্তা আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনানের নিখোঁজ রহস্য উদঘাটনে তিন প্রশ্নের উত্তর খুঁছে পুলিশ। এগুলো হলো-গন্তব্যে পৌঁছানোর ১৮ মিনিটের পথ বাকি থাকতে স্ত্রীর ফোন কলের পর কী ঘটেছিল? কোনো পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে গা-ঢাকা দিয়েছেন কি না? না তার প্রতিপক্ষ ইসলামিক দলের কেউ তাকে অপহরণ করেছে কি না? সরকারের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কোনো ইউনিট তাকে তুলে নিয়ে গেছে-এই বিষয়টি মানতে নারাজ রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
আদনানের মা আজেদা বেগম জানিয়েছেন, নিখোঁজ হওয়ার দু’দিন আগে থেকেই ত্ব-হা বলে আসছিল, তাকে দু’জন লোক কিছুদিন ধরে অনুসরণ করছে। বিষয়টি নিয়ে সে উদ্বিগ্ন। তবে তারা কে বা কোনো ক্ষতি করতে পারে-সে বিষয়ে কিছু জানায়নি। ঢাকায় গেলে সে নিরাপদে থাকতে পারে বলে আশা করেছিল। তিনি আরও জানান, ঢাকায় যাবার সময় হঠাৎ তাকে বুকে জড়িয়ে খুব কাঁদছিল। নামাজে সেজদায় পড়ে তার নিরাপত্তা ও নিরাপদে ফিরে আসার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়াও করতে বলেছিল। কিন্তু ওই রাত থেকেই সে তিন অনুসারীসহ নিখোঁজ।
আজেদা বেগম জানান, আমার ছেলের একটি মোবাইল নম্বর দীর্ঘদিন থেকে বন্ধ ছিল। হঠাৎ শুক্রবার (১১ জুন) বিকালে সেই ফোন নম্বর থেকে কল আসে। আমার সঙ্গে মেহেদী হাসান পরিচয়ে এক ব্যক্তি কথা বলে। এরপর তারা একটি ইমো আইডি খুলতে বললে আমার মেয়ে সেই আইডি খোলে। এর শনিবার আবার সেই ফোন নম্বর থেকে কল আসে। এরপর আমার ছেলে এবং তার তিন সঙ্গী ভালো আছে বলে জানায়। কিন্তু আমি জানতে চাই, সে কোথায় আছে এবং আমার ছেলেকে ফোন দাও আমি কথা বলব। তখন তারা টাকা চায়। তখন আমরা ইমো আইডিটি বন্ধ করে দেই। আমার প্রশ্ন, আমার ছেলের বন্ধ নম্বর তারা পেল কী করে? আসলে তারা কারা? আমাদের পরিচিত কেউ কি না?
মেহেদি হাসানের পরিচয় জানাতে পারেনি কেউ। পুলিশও তা অনুসন্ধান করছে। পুলিশের কাছে তথ্য রয়েছে আদনান আহলে হাদিস মতাদর্শের অনুসারী, তার নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল ও অনলাইনে ইসলাম ধর্ম নিয়ে দেওয়া বিভিন্ন বক্তব্য নিয়ে নানা বিতর্ক ছিল।
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম-অপস্) আবু মারুফ হোসেন জানান, পুলিশের তদন্ত দল তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে জেনেছে ঢাকায় পৌঁছানোর পর ত্ব-হা যখন মিরপুরে অবস্থান করছিল তখন রাত ২টা ৩৭ মিনিট। সর্বশেষ কথা হয়েছিল তার দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিকুন নাহার সারার সঙ্গে। সর্বশেষ মোবাইলে কথা বলার ঘটনাস্থল থেকে দ্বিতীয় স্ত্রীর বাসায় মিরপুর যেতে গুগল ম্যাপে দেখা গেছে ওই পথের দূরত্ব ছিল ৬ দশমিক ৪ কিলোমিটার। সেখানে পৌঁছাতে সময় লাগত ১৮ মিনিট।
পুলিশ জানিয়েছে, ত্ব-হার সঙ্গে নিখোঁজ অপর তিন ব্যক্তি হলেন আব্দুল মুহিত, মোহাম্মদ ফিরোজ ও গাড়িচালক আমির হোসেন ফয়েজ। তারা সবাই আদনানের অনুসারী। ওই রাত থেকে তাদের সবার মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে।
সূত্র জানায়, ত্ব-হার খোঁজ পেতে রংপুর মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানার ওসি (তদন্ত) রাজিবুজ্জামানের নেতৃত্বে চার সদ্যের একটি চৌকস টিম গঠন করা হয়েছে। তারা মাঠে কাজ করছেন। সীমান্তের থানা ও ব্যক্তিগত সোর্সে তার ছবি দেওয়া হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে নজরদারিও।
এদিকে বুধবার বিকালে নগরীর ২৫ নম্বর ওয়ার্ডবাসীর ব্যানারে প্রেস ক্লাব চত্বরে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
আদনান রংপুর নগরীর সেন্ট্রাল রোডের আহলে হাদিস মসজিদ এলাকায়। তবে তিনি প্রথম স্ত্রী হাবিবা নূর, দেড় মাসের ছেলে ও তিন বছরের মেয়েকে নিয়ে শালবন মিস্ত্রীপাড়ায় চেয়ারম্যান গলিতে ভাড়া বাসায় থাকেন। দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিকুন নাহার সারা মিরপুর আল ইদফান ইসলামী গার্লস মাদ্রাসার পরিচালক ও শিক্ষক। তিন মাস আগে তাদের বিয়ে হয়েছিল। সুত্র: যুগান্তর।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ হারুন-অর-রশিদ
বার্তা সম্পাদকঃ আশিক সরকার
Copyright © 2025 Bporikromanewsbd.com. All rights reserved.