সরদার আনিসঃ মহাখালীস্থ ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড ইউনিভার্সিটি'র উপাচার্য্য অধ্যাপক আবদুল আওয়াল খান আগাগোড়া একজন আওয়ামী ক্যাডার। ঝালকাঠি জেলার রাজাপুরের বাসিন্দা আওয়াল খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে (১৯৬৯-৭০) ছাত্রলীগের ক্যাডার হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের আবাসিক ছাত্র জনাব খান তৎকালে সীট বাণিজ্যসহ বিবিধ অনিয়মের সাথে জড়িত ছিলেন বিধায় হল কর্তৃপক্ষ সেসময় তাকে বেশ কয়েকবার সতর্ক করেছিলো।
বরিশালের স্থানীয় একটি কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করার পর জনাব খান কিছুদিন পাকিস্তান আর্মিতে চাকরি করেন। কিন্তু অভ্যাসগত কারণে বিভিন্ন অনিয়মের সাথে জড়িয়ে পড়ায় সামরিক বাহিনীর চাকরি থেকে বহিস্কৃত হয়ে স্বল্প সময়ের মধ্যে তাকে গ্রামের বাড়িতে চলে আসতে হয়। পরে স্থানীয় একটি কলেজ থেকে ১৯৬৮ সালে বি এ (পাশ) ডিগ্রি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন্। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭০ সালে মাস্টার্স ডিগ্রি নিয়ে বেকার জীবন যাপন করছিলেন। সামরিক বাহিনীর ট্রেনিংসহ যাবতীয় যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও জনাব খান ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন্ নাই। কিন্তু দলীয় পরিচয় ব্যবহার করে ১৯৭৩ সালে ঠিকই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক পদে চাকরি বাগিয়ে নেন্। এরপর বঙ্গবন্ধু জাতীয় শিক্ষক পরিষদে যোগদানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের শিক্ষক রাজনীতিতে তার হাতেখড়ি হয়েছিল। সময়ের পরিক্রমায় তিনি এখন বঙ্গবন্ধু জাতীয় শিক্ষক পরিষদের সভাপতি। এর ফাঁকে কৌশলে পিএইচডি ডিগ্রিটাও বাগিয়ে নেন্ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। শিক্ষকতায় নিজ দায়িত্ব বাদ দিয়ে রাজনীতিতে বেশি সময় ব্যায় করতেন বিধায় সেখানকার চাকরি ১৯৯৬ সালে চলে যায়। পরবর্তীতে দলীয় প্রভাব ব্যাবহার করে ২০০৮ সালে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস ডিপার্টমেন্টে চাকরিতে যোগদান করেন জনাব খান। সেখানে কিছুদিন চাকরি করার পর অবসরে চলে আসেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে।
এরপর দীর্ঘদিন যাবৎ দেশের বিভিন্ন বি-গ্রেড, সি-গ্রেড বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করে জীবন যাপন করছেন এবং একই সাথে বঙ্গবন্ধু জাতীয় শিক্ষক পরিষদের দায়িত্ব পালনেও বেশ তৎপর আছেন।
দলীয় পরিচয় ব্যাবহার করে তিনি পরপর ২ বার স্ট্যান্ডার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদে নিয়োগ বাগিয়ে নিতে সক্ষম হন্। দ্বিতীয় মেয়াদে গত ১৬ এপ্রিল ২০২৪ নিয়োগ প্রাপ্তির অনতিবিলম্বে গত ১১ মে ২০২৪ (বিটিভি নিউজ) তারিখ সদলবলে টুঙ্গিপাড়ায় হাজির হয়ে যান শেখ মুজিবের কবর জেয়ারত করার জন্য।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায় তিনি স্ট্যান্ডার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামী ব্যাকগ্রাউন্ডের লোক ছাড়া কাউকে নিয়োগ দেন না। ভিন্ন মতাবলম্বী যারা সেখানে চাকরি করে আসছিলেন তাদের যথারীতি বিদায় করে দেন্। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির সদস্য নুরুল ইসলাম ঠান্ডুর আপন সহোদর ভাই জনৈক কাদের নেয়াজকে তিনি প্রতিষ্ঠানটিতে ট্রেজারার পদে নিয়োগ প্রাপ্তির ব্যাবস্থা করেন তাও দলীয় প্রভাব খাটিয়ে। কাদের নেয়াজ একজন আপাদমস্তক একজন গার্মেন্টস জুট ব্যাবসায়ী। শিক্ষকতা কাহাকে বলে জানেন না। কোয়ালিফিকেশন বি এ (পাশ) তৃতীয় শ্রেণি, নর্দার্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আওয়াল খান ও বড় ভাইর বদান্যতায় এমবিএ। কাদের নেয়াজের এমন নিয়োগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন -২০১০ এর মারাত্মক লঙ্ঘন। নাম প্রকাশ না করার সর্তে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে কর্মরত জনৈক আরবি শিক্ষিত কর্মকর্তা বলেন, জুলাই-আগষ্ট'২৪ বিপ্লবের পর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিতাড়িত আওয়ামী ক্যাডার অনেককে জনাব খান এখানে চাকরি দিয়েছেন দলীয় বিবেচনায়। তারা অত্যন্ত নিরবে নিবৃত্যে ক্লাস পরীক্ষা নিয়ে চলেছেন। নাম প্রকাশ না করার সর্তে জনৈক শিক্ষক বলেন, বিষয়টি যদি ছাত্র সমাজে প্রকাশ হয়ে পড়ে তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে টেকানো মুশকিল হয়ে পড়বে। এতদ বিষয়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ হারুন-অর-রশিদ
বার্তা সম্পাদকঃ আশিক সরকার
Copyright © 2025 Bporikromanewsbd.com. All rights reserved.