নারায়নগঞ্জ প্রতিনিধি : সবসময় আলোচনায় থাকতে পছন্দ করেন নারায়নগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ শামীম ওসমান। তাঁর 'খেলা হবে' শ্লোগান দেশেতো বটেই, দেশের সীমানা ছাড়িয়ে এখন তা এখন পশ্চিম বঙ্গেও বেশ জনপ্রিয়। বিএনপি-জামাত জোটকে তিনি প্রায় সব বক্তৃতায় খেলতে আহ্বান জানালেও এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আসলে তিনি খেলতে চান যাবতীয় অনিয়ম, দূর্নীতি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। মুখরোচক মাঠ গরম করা বক্তব্যে তিনি সবসময় অগ্রগামী। তাঁর সর্বশেষ কীর্তি হলো বিএনপির মিছিলের পেছনে অবস্থান নেওয়া। গত ২৪ ডিসেম্বর,২০২২ তারিখ বিকেল ৪টায় স্থানীয় বিএনপির নেতৃবৃন্দ তাদের নেতাদের মুক্তির দাবিতে একটি মিছিল বের করে। মিছিলের খবর শুনে শামীম ওসমান চাষাড়াস্থ রনি ফার্মার সামনে অবস্থান নেন্। তখন তাকে বেশ হাসিখুশি দেখাচ্ছিল। বিষয়টি সদা-সতর্ক স্থানীয় সংবাদ কর্মীদের ফাঁকি দিতে পারে নাই। মূহুর্তেই তিনি তাদের ক্যামেরাবন্দি হয়ে যান। সেসময় বিএনপির মিছিলের পেছনে একাকী অবস্থান নেওয়ার কারণ জিজ্ঞাসিত হলে তিনি বলেন, বিএনপি ইদানীং মিছিল মিটিং-এ খুবই উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করছে। নোংরা ভাষায় কথা বলে, পুলিশের উপর হামলা চালায় ইতিপূর্বে একজন মানুষ মারা গেছে। ফলে তাদের সাথে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা উল্টাপাল্টা কিছু করতে না পারে সেজন্য তিনি দাড়িয়ে ছিলেন। তাই বলে একাকী? তার সোজাসাপটা সহজসরল উত্তরে মানুষ মনে করছে বিএনপি যাতে নির্বিঘ্নে তাদের কর্মসূচি চালিয়ে যেতে পারে সেবিষয়ে তিনি এখন বেশ আন্তরিক।
কিন্তু তিনি কখন যে কি বলেন তার হিসেব রাখতে গিয়ে অনেকেই খেই হারিয়ে ফেলেন। গত ১৩ অক্টোবর,২০২২ তারিখের দৈনিক যুগান্তরের রিপোর্টে জানা যায়--তিনি বিএনপিকে ঢাকায় সমাবেশ না করে নারায়ণগঞ্জে সমাবেশ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তার মতে চট্টগ্রামে বিএনপির মিটিং মাত্র ৫-১০ হাজার লোক সমাগম হয়েছিল। নারায়ণগঞ্জে যদি বিএনপি সমাবেশ করে তাহলে অন্য কোন পাশে স্থানীয় ছাত্রলীগ সমাবেশ করবে। সেখানে ছাত্রলীগের সমাবেশে বিএনপির চাইতেও বেশ লোক উপস্থিত হবে মর্মে তিনি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে মারেন। আবার তিনি এও বলেন আওয়ামী লীগে সবাই ভালো এমনটা দাবি করছেন না। ভালো খারাপ সব জায়গায় আছে। তিনি বক্তৃতা দিতে দাঁড়ালেই নিজের বাহাদুরি দেখাতে প্রায়শই বলেন, জিয়াউর রহমানের গাড়ি তিনি আটকিয়ে ছিলেন। এই প্রতিবেদক বিষয়টির সত্যতা যাচাইয়ে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতি সচেন অনেকের সাথে কথা বলেছেন। যা জানা গেল তা বেশ কৌতুহল উদ্দীপক। আসলে তৎকালে জিয়াউর রহমানের গাড়ি আটকিয়ে ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সিনিয়র সহ-সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম। অন্যের কর্মের কৃতিত্ব নিজের ঝুলিতে পুরতে শামীম ওসমানের জুড়ি মেলা ভার।
চোখের পানি ফেলা তার জন্য কেন বিষয় নয়। গত ১০ অক্টোবর ২০২২ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা শীতলক্ষ্যা নদীর উপর নির্মিত নাসিম ওসমান সেতুর উদ্বোধন করেন। সেসময় শামীম ওসমান-কে আবেগে আপ্লূত হয়ে কেঁদে বুক ভাসাতে দেখা গেছে। কিন্তু bandarpress.com এবং BP News পরিবেশিত সংবাদ মোতাবেক জানা যায়, নাসিম ওসমান সেতু উদ্বোধন অনুষ্ঠানে নাসিম ওসমানের স্ত্রী পারভীন ওসমান কেন নিমন্ত্রণ পেলেন না--সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জেলা প্রশাসককে দায়ী করেন। এসময় বেশ হাসিখুশি ভাবে বলেন-আমিও দাওয়াত পাই নাই, চন্দনও সঠিক ভাবে দাওয়াত পায় নাই। তবে জনশ্রুতি রয়েছে যে, ওসমান পরিবারের আভ্যন্তরীন কোন্দলের কারণে পারভীন ওসমান নিমন্ত্রণ পান নাই। এক প্রশ্নের জবাবে পারভীন ওসমান বলেন, আমি বলতে চাই না-- কেন আমি দাওয়াত পাই নাই। তবে জনগন অনেক সচেতন। তারা ঠিকই বুঝে গিয়েছে কেন আমি দাওয়াত পাই নাই। অবশ্য সংশ্লিষ্ট বিষয়ে শামীম ওসমানের বড় ভাই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের জাতীয় পার্টির সাংসদ সেলিম ওসমান অনেকটা অনুজের সুরেই কথা বলেছেন। গত ৩ জানুয়ারি ২০২৩ এক কর্মী সমাবেশে তিনি বলেন, বর্তমানে কিছু উচ্ছৃঙ্খল পোলাপানের জন্ম হয়েছে এই নারায়ণগঞ্জে। সেখানে আবার নেতৃত্ব দেওয়া হয়। সেই নেত্রী হলেন "হাম্মাজান", আরেকটা আছে "ভাইজান" গ্রুপ। হাতের ৫টা আঙ্গুল সমান না। ওসমান পরিবারেও ৫টা আঙ্গুল আলাদা আলাদা রকমের আছে। তার এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে নারায়নগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক শাহীন মাহমুদ বলেন, সেলিম ওসমান "হাম্মাজান" বলতে প্রয়াত নাসিম ওসমানের স্ত্রী পারভীন ওসমানকে এবং "ভাইজান" বলতে প্রয়াতের পুত্র আজমেরি ওসমানকে বুঝিয়েছেন। তার এই বক্তব্য সামনের নির্বাচনকে সামনে রেখে তাদের রাজনৈতিক খেলা বলে মনে করতে চান অনেকেই। তবে এটা সত্য যে নারায়ণগঞ্জের শীর্ষ স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ওসমান পরিবারের লালিত একাধিক বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ। একদিকে "বড় ভাতিজা" অর্থাৎ আজমেরি ওসমান অপরদিকে "ছোট ভাতিজা" শামীম ওসমান পুত্র অয়ন ওসমান। এ ছাড়া আছে ছোট ভাই, শালা, ভাইয়ের যুবলীগ, ভাইয়ের ছাত্র লীগ, ইত্যাকার নামে ওসমান পরিবারের বিবিধ বাহিনী, যাদের অত্যাচারে ব্যবসায়ী মহলের জান ওষ্ঠাগত। নারায়নগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি মাহবুবুর রহমান মাসুম বলেন, ওসমান পরিবারের ছত্রছায়ায় এখানে সব সন্ত্রাসী গোষ্ঠী গড়ে উঠেছে। সামনে নির্বাচন, সেলিম ওসমান এখন পারভীন ওসমান-কে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবছেন। পারভীন ওসমানও সবদিক গুছিয়ে নিচ্ছেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে।
সমাবেশে আগত কর্মী বৃন্দকে অনেকটা হতবাক করে দিয়ে সেলিম ওসমান হঠাৎ করে বলেন, কোন এক "খান সাহেব” বন্দর এলাকায় চাঁদাবাজি লুটতরাজ চালাচ্ছেন। আমি কোন দল বুঝি না, ইত্যাদি। এই প্রতিবেদক বন্দর এলাকার সংশ্লিষ্ট "খান সাহেব"-কে খুঁজতে গিয়ে বেশ মুসকিলে পড়েছিলেন। তিনি সেখানে চাঁদাবাজ কোন খান সাহেবকে খুঁজে পান নাই। তবে একজন খান সাহেবকে তিনি পেয়েছেন, যিনি অত্যন্ত ক্লিন ইমেজের রাজনৈতিক নেতা, আওয়ামী লীগ জাতীয় কমিটির সদস্য, নারায়নগঞ্জ বারের বহুবারের নির্বাচিত সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আনিসুর রহমান খান দীপু। বন্দর এলাকায় তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয় পরোপকারী ব্যক্তিত্ব হিসেবে দল-মত ধনী-গরীব নির্বিশেষে সকলের পছন্দের প্রিয়জন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব ক্লিন ইমেজের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে মনোনয়ন দিবেন মর্মে একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে বিবিধ সূত্র নিশ্চিত করেছে। সেই বিবেচনায় ক্লিন ইমেজের ব্যক্তিত্ব এডভোকেট আনিসুর রহমান খান দীপু নারায়নগঞ্জ-৪ আসনে দলীয় মনোনয়ন পাবেন মর্মে জোর গুঞ্জন রয়েছে। অতএব সেলিম ওসমান, শামীম ওসমান-সহ ওসমান পরিবার তার বিরুদ্ধে অযাচিত কথাবার্তা বলে বেড়াবেন এতে আশ্চর্য্য হওয়ার কিছু নাই। তাছাড়া আওয়ামী লীগের গবেষনা সেল বিবিধ তত্ত্ব উপাত্ত সংগ্রহ করে যে ১০০ জন দলীয় সাংসদকে লাল তালিকা ভুক্ত করেছে তার মধ্যে শামীম ওসমানের নামও থাকার কারণে নারায়নগঞ্জ-৪ আসনে শামীম ওসমানের বিকল্প প্রার্থী হিসেবে বর্তমান মেয়র ক্লিন ইমেজের রাজনৈতিক জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভির নামও উচ্চারিত হচ্ছে বিভিন্ন মহলে।
নারায়নগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ শামীম ওসমান সবসময় মুখরোচক কথাবার্তা বলে আলোচনায় থাকতে পছন্দ করেন। গত ৯ অক্টোবর ২০২২ চ্যানোল-আইতে জিল্লুর রহমানের উপস্থাপনায় টকশোতে তিনি বলেন, এবার যে খেলা হচ্ছে এই আল-জাজীরা বলেন এবারের খেলাটা সরকার পরিবর্তনের খেলা হচ্ছে না। বাংলাদেশটাকে আফগানিস্তান বানানোর চেষ্টা চলছে। চলছে তালেবানি রাষ্ট্র বানানোর চেষ্টা। তার মতে সুপার পাওয়ারগুলো এখানে খেলছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন দেশ প্রেমিক বাহিনীকে টার্গেট করা হচ্ছে। সবাইকে হতবাক করে দিয়ে তিনি আরো বলেন, বলা হচ্ছে আমি না-কি ভারত থেকে ৬ হাজার লোক এনে এখানে ট্রেনিং দিচ্ছি। আবার বলেন, করাপশন হবেই,এটা ঠেকানো যাবে না।অবশ্য নারায়নগঞ্জে কোন করাপশন চাঁদাবাজি লুটতরাজ ভূমি দস্যুতা হচ্ছে কি-না তার উল্লেখ করেন নাই তিনি।
গত ৭ অক্টোবর ২০২২ তিনি অপর এক সমাবেশে বলেন, কোন নেতা কোন সাংসদ কিংবা কোন মন্ত্রীর কারণে যদি কোন কর্মী মনে আঘাত পেয়ে থাকেন তাহলে নির্বাচনের স্বার্থে নয়, রাজনৈতিক স্বার্থে নয়, মানবতার স্বার্থে দ্রুত ক্ষমা চেয়ে নিন্। এতে নিজে ভালো থাকবেন, সম্মান শ্রদ্ধা পাবেন, আখেরাতে মাপ পেয় যাবেন। দুর্মুখেরা বলছেন, তাহলেতো তাকেই আগে ক্ষমা চাওয়া উচিত। আর কিছু না হোক, অন্তত গত জেলা আওয়ামী লীগ সম্মেলনে যোগ্য প্রার্থীদের উপযুক্ত মূল্যায়ন করে প্রাপ্য দলীয় পদ-পদবি হতে বঞ্চিত করার জন্য।
গত ৭ অক্টোবর ২০২২ ডয়েচে বেলের সাংবাদিক খালেদ মহিউদ্দিনের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ২০০১ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই তিনি দেশত্যাগ করেছিলেন। সরকার পরিবর্তন ঘটলে আবারো দেশত্যাগ করবেন কি-না এমন প্রশ্নের সরসরি কোন উত্তর না দিয়ে তিনি বলেন, মানুষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায় না। দেশের উন্নয়ন চায়। তার নিকট সরকারের বিরুদ্ধে বলা মানে উন্নয়নের বিরুদ্ধে বলা।
নারায়নগঞ্জ বিএনপি-তে শামীম গ্রুপ বেশ সক্রিয় বলে অনেকেই বিশ্বাস করেন। কিছুদিন পূর্বে স্থানীয় জেলা কমিটির ৪১ সদস্যের মধ্যে ১৫ জনই পদত্যাগ করেন। জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে বাবু চন্দন শীলের আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রাপ্তিকে সঠিক বলে দাবি করেছিলেন বিএনপি নেতা এডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার। বিএনপি সবসময় তাদের প্রোগ্রাম চাষাড়া এলাকায় করলেও হটাৎ একটি রাজনৈতিক সমাবেশ মেয়র আইভির এলাকা হিসেবে পরিচিত চুনকা পাঠাগার এলাকায় সংগঠিত করে। সেখানে একজন বিএনপি কর্মী নিহত হয়। অনেকে মনে করেন খুনাখুনির দায় মেয়র আইভির ঘাড়ে বর্তানোর জন্য শামীম ওসমানের পরামর্শে বিএনপি তাদের সমাবেশ স্থল পরিবর্তন করে। অবশ্য মেয়র আইভির শুভাকাঙ্ক্ষী এডভোকেট আনিসুর রহমান খান দীপুর নেতৃত্ব ঐ এলাকায় একটি তাৎক্ষণিক মিছিল পরিচালিত হওয়ায় সে চেষ্টা বিফলে যায়।
গত ১১ অক্টোবর ২০২২ অপর এক সমাবেশে শামীম ওসমান বলেন, নতুন স্টেডিয়ামের নাম দাদা ওসমান আলীর নামে হয়েছে, ঢাকা নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের নাম বাবা সামসুজ্জোহার নামে হয়েছে, চাষাড়া থেকে আদমজী পর্যন্ত নির্মিতব্য রোডের নাম মাতা নাগিনা ওসমানের নামে হচ্ছে, শীতলক্ষ্যা নদীর উপরে নির্মিত ব্রীজের নাম ভাই নাসিম ওসমানের নামে হয়েছে, নারায়নগঞ্জ বার ভবনের নাম ভাই সেলিম ওসমানের নামে হয়েছে। এসব কারণে হয়তোবা দুঃখ করে নাসিক চেয়ারম্যান ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভি বলেছেন, নারায়নগঞ্জের নাম ওসমান নগর হলে উত্তম হতো। এবং এর রাজধানী কুমিল্লা হলে আরো ভালো হতো। দুর্মুখেরা অবশ্য বলছেন, "ওসমানী সালতানাত" প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নারায়নগঞ্জে। ইতোমধ্যে নারায়নগঞ্জ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে বার ভবনের নাম সেলিম ওসমান ভবন করার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের পূর্বে ২৩ অক্টোবর ২০২২ শামীম ওসমান এক সমাবেশে বলেন, কমিটি একটা হবে, তবে আমার চাওয়া-পাওয়ার কিছু নাই। আমি সাধারণ সদস্য হিসেবে আছি, সদস্য হিসেবেই থাকতে চাই। আসলে কি কথাটা সত্য? ক্লিন ইমেজের মেয়র আইভি গ্রুপের আরেক ক্লিন ইমেজের রাজনৈতিক নেতা এডভোকেট আনিসুর রহমান খান দীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কিংবা সাধারণ সম্পাদক পদ প্রাপ্তি ঠেকাতে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদ প্রার্থী হয়ে যান সবাইকে হতবাক করে দিয়ে।
২৯ অক্টোবর ২০২২ অপর সমাবেশে জেলা পুলিশ কর্মকর্তাবৃন্দকে হাত জোড় করে মাঠে নামতে অনুরোধ করে বলেন, ওসি সাহেব এসপি সাহেব সৃষ্টিকর্তা খুশি করার জন্য কাজ করুন। ইহকালে পরকালে শান্তি পাবেন।গরীব দুঃখরা জমি কিনে সেখানে অন্যজন গিয়ে সাইন বোর্ড লাগায়। মাদক নির্মূল করুন। কিন্তু এটা বলেন নাই যে এসব অপকর্মে যারা জড়িত তারা কার বা কাদের ছত্রছায়ায় অপরাধগুলো করে যাচ্ছে। আবার অনেকটা গর্বের সাথে বলেন, আমি এসপি ডিসির টেবিল ভেঙ্গেছি। তাদের কাছ থেকে টাকা খেয়েছি। নিজের লোকদের ছাড়াতে জামিন নিতাম না, জেল খানায় গিয়ে তাদের বের করে নিয়ে আসতাম। দুর্মুখেরা বলাবলি করছে যিনি নিজেই বিবিধ অপরাধ করেছেন বলছেন তিনিই আবার পুলিশ কর্মকর্তাদের বলছেন অপরাধ ঠেকানোর জন্য। কি বিচিত্র এই দেশ সেলুকাস!!!
গত ২১ নভেম্বর ডিবিসি নিউজ মারফত জানা যায়,তিনি বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে বলছেন, আপনারা লিখে রাখেন ক্ষমতার ধারে কাছেও আপনারা যেতে পারবেন না। এটা লিখে রাখেন কারণ আসরের পর আমি নাও থাকতে পারি। আপনারা আমাকে মেরে ফেলতে পারেন,আবার ভিতর থেকেও কেউ মারতে পারে। আপনারা শুধু তাওয়া গরম করছেন ক্ষমতায় আসবে অন্যরা। দেশের উপর সেনাবাহিনীর উপর সেংশন আসলে আপনারা খুশি হন্। আপনারা কি দেশের জন্য রাজনীতি করেন? ২৭ নভেম্বর আরেক বক্তব্যে তিনি উল্লেখ করেন, বিএনপি এখন ২ ভাগ। এক ভাগ আম্মা ভাগ, অন্যটা ভাইয়া ভাগ। ভাইয়া গ্রুপ ২০২৪ এর নির্বাচন নিয়ে চিন্তিত নয়। তারা ব্যস্ত ২০২৮ সালের নির্বাচন নিয়ে। ৩০ নভেম্বর টিভির এক টকশোতে মেজর অবঃ আখতারুজ্জামানকে বিএনপির দুই নম্বর ব্যক্তি হিসেবে দেখতে চান শামীম ওসমান।
অভিনয়ে শামীম ওসমানের জুড়ি মেলা ভার। ২ডিসেম্বর নারায়নগঞ্জ বার কাউন্সিল ভবন উদ্বোধন কালে হাত জোড় করে মাননীয় আইনমন্ত্রীর নিকট নারায়ণগঞ্জে একটি হৃদরোগ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার দাবি রাখেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রীকে বাদ দিয়ে আইনমন্ত্রীর কাছে হাসপাতালের আবদার স্থানীয় ভাবে বেশ হাস্যরসের জোগান দিয়েছিল ঐ সময়।
গত ৩০ নভেম্বর অপর এক বক্তব্যে তিনি বিএনপি নেতা জাকির খানকে উদ্দেশ্য করে বলেন, নারায়নগঞ্জে অনেক আস্ফালন দেখছি। আমি "ওয়ান মাস্টার ডগ" আমি দলীয় শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশ ছাড়া চলি না। ২৬ ডিসেম্বর এক বক্তব্যে তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলে আমি বিএনপি বিরুদ্ধে আগামী জানুয়ারিতে মাঠে নামবো। তারা ভাবতাছে তারা ক্ষমতায় আসবে। আসলে তারা জীবনেও ক্ষমতায় আসতে পারবে না। আমি মিথ্যা বলি না। আমি আল্লাহর উপর ভরসা করে রাজনীতি করি।
বহুল আলোচিত শামীম ওসমান সম্পর্কে নারায়নগঞ্জ আওয়ামী মহিলা লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আছিয়া খানম সুমী গত ১৯অক্টোবর ২০২২ তারিখ এক সংবাদ সম্মলনে বলেন, আমাকে ২ ভাই শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমান হাতে ধরে জেলা পরিষদ নির্বাচনে পরাজিত করেছে। সারা দেশে শামীম ওসমান নাকি আইডল। তাহলে আমার মতো একজন সাধারণ নেত্রীর সাথে তিনি কেন তার চিরাচরিত খেলাটা খেললেন!! নির্বাচন নিয়ে এমনটা খেলবেন আগে বললে আমি নির্বাচন করতাম না। এখানে শুধু এখন "ওসমান লীগ"। ভোটার আমাকে জানিয়েছে তারা আমাকে ভোট দিয়েছেন, কিন্তু আমাকে ফেল করানো হলো। আমি তাদের মতো আল্লাহকে নিয়ে মিথ্যা বলি না, ৯০-১০০ রাকাত নামাজ পড়ি না, তাহাজ্জুদ ১২ রাকাআতই পড়ি। তিনি বেশ ক্ষোভের সাথে বললেন, ভবিষ্যতে যে কাউকে নির্বাচন করতে হলে ওসমান পরিবারের পূর্বানুমতি নিয়ে নির্বাচন করতে হবে, তাহলেই কেবল পাশ করা যাবে।
নারায়নগঞ্জ টুডের ১৯ অক্টোবরের নিউজ মোতাবেক মেয়র ডাঃ আইভি বলেন, কদম রসুল সেতু নির্মাণে একের পর এক বাঁধা দেওয়া হচ্ছে। তারা কোন গোষ্ঠী। সায়েস্তা খান রোড দখল হয়ে গেছে। সেখানে যে ছেলেটা চাঁদা তোলে সে বড় ভাইদের লোক। চারিদিকে এতো অত্যাচার করা হচ্ছে, বলার মতো নয়। দিনে দুপুরে মেয়রের উপর হামলা হয় অথচ কোন মামলা হয় না। মামলা করতে আমাদের বিভিন্ন দরবারে ধর্না দিতে হয়। নারায়ণগঞ্জের সব অর্গানাইজেশন এখন চুপ হয়ে গেছে। আমি একা হয়ে গেছি। যারা অবৈধ কাজ অবৈধ ব্যবসায় করছে তারা ভাইদের মাসোহারা দেয়। কিছু খুনের প্রতিবাদ করেছি এটা সত্য, কিন্তু নাগরিকদের যে সেবা দিতে চাই তা দিতে পারছি না।
৮ অক্টোবর ২০২২ যুগের চিন্তার রিপোর্ট মতে নারায়ণগঞ্জের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রাফিউর রাব্বি এক প্রতিবাদ সমাবেশে তকি হত্যার জন্য ওসমান পরিবারকে দায়ী করে বলেন, বারবার একটি ঘাতক পরিবারের পক্ষ নিচ্ছে সরকার। ওসমান পরিবার শুধু তকিকে হত্যা করে নাই বহু মানুষকে হত্যা করে শীতলক্ষ্যায় লাশ ফেলেছে। সাড়ে ৯ বছর যাবত আমরা এসব বিচার চেয়ে আসছি। আমাদের ন্যায্য দাবি, ওসমান পরিবারকে বিচারের আওতায় আনা হোক।
শামীম ওসমান এখন এক নতুন খেলা শুরু করেছেন। নাসিক ৮ নং ওয়ার্ড কমিশনার মেয়র ব্লকের রুহুল আমীন মোল্লা এবং নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে ভবিষ্যত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য আওয়ামী লীগের প্রার্থী আওয়ামী লীগ জাতীয় কমিটির সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ বার সমিতির বহুবারের নির্বাচিত সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আনিসুর রহমান খান দীপু-কে সাইজ করার লক্ষ্যে এডভোকেট দীপুর নিকটাত্মীয় প্রায়ত ভাষা সৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা রমিজউদ্দিন আহমেদ ভূঁইয়ার ২ পুত্র এনামুল হক ভূঁইয়া বাদল ও জাকির হোসেন ভূঁইয়ার সাথে বেশ দহরমমহরম সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। চেলা-চামুন্ডাসহ মাঝেমধ্যে তাদের বাড়িতে হাজির হচ্ছেন। মুরগি-মুসাল্লাম খাচ্ছেন। আর রমিজ উদ্দিন ভূইয়ার পুত্রদ্বয়ের পিঠ চাপড়ে বাহবা দিচ্ছেন। বড় পুত্র বাদল ভূঁইয়াকে তিনি 'মুক্তিযোদ্ধা সন্তান লীগ'-এর সভাপতি বানিয়েছেন। আবার নাসিক ৮ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতিও বানাবেন শুনা যায়। কিন্তু এসব ছোটখাটো পদ-পদবি দিয়ে মেইনস্ট্রিম রাজনীতিতে ইহজন্মে যে স্থান পাওয়া যাবে না, বিষয়টি উজ্জ্বল রাজনৈতিক ঐতিহ্যের ধারক মরহুম পিতার পুত্রদ্বয় বুঝতে পারছেন না। শামীম ওসমান যে তাদেরকে হাইকোর্ট দেখাচ্ছে বিষয়টি তারা বুঝতে অপারগ। তারা শুধু জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ যাদের সাথে আছে সেই আবু কালামদের বুঝাতে চাচ্ছেন--খবরদার বেশি বাড়াবাড়ি করবি না, এমপি সাবকে দিয়ে সাইজ করে ফেলবো। এতে আবু কালামরাও এখন সতর্কতার সাথে চুপচাপ আছে। কিছুদিন জাকির হোসেন ভূঁইয়ার নব নির্মিত প্রাসাদ প্রাঙ্গণে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের নেতা শামীম গ্রুপের খোকন সাহা শ্রমিক লীগের মিটিং করে গেলেন। তাকেও বাদল ভূঁইয়া মুরগী-মুসাল্লাম খাইয়ে বেশ আদর-আপ্যায়ন করেছেন মর্মে খবর স্থানীয় লোকজন এই রিপোর্টারকে জানিয়েছেন। কেউ কেউ বলছেন, শামীম ওসমানের সাথে বাদল ভূঁইয়ার নব দহরমমহরমকে ব্যবহারকরে প্রয়াত পিতার নামে কিছু স্থাপনার নামকরণ করে নিতে পারলে বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
তবে শেষ খেলায় মেয়র সেলিনা হায়াত আইভি বাজিমাত করে দিয়েছেন। বাংলা একাডেমি তাঁকে ২০২২ সালের জন্য সমাজসেবায় ফেলোশিপ দিয়েছে। এটা তার জন্মজন্মান্তরের প্রতিদ্বন্দ্বী ওসমান পরিবার তথা শামীম ওসমানের জন্য চপেটাঘাতের শামিল। গত ফেব্রুয়ারী মাসের বই মেলায় দেশের বিশিষ্ট লেখক-গবেষক ড. হাবিবুর রহমান খান-এর লেখা গবেষণা মূলক বই Corporate Social Responsibility : Its problems and practices in Bangladesh এসেছিল। বইটি বেশ পাঠক প্রিয়তা লাভ করে। বইটিতে লেখক কেস স্টাডি হিসেবে মেয়র ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভির বিবিধ সামাজিক কর্মকান্ড সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। বইটি বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ডাঃ আইভিকে ফেলোশিপ প্রদানে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে মর্মে এই প্রতিবেদক একাডেমি সূত্রে জানতে পেরেছেন। তাছাড়া ডাঃ আইভি দেশের ইন্টেলেকচুয়াল পরিমন্ডলেও তার নিজস্ব বলয় তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন ইতিমধ্যে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ হারুন-অর-রশিদ
বার্তা সম্পাদকঃ আশিক সরকার
Copyright © 2025 Bporikromanewsbd.com. All rights reserved.