Home জাতীয় প্রশাসনের লৌহমানব মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী

প্রশাসনের লৌহমানব মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী


রূপকথার কাহিনী বা অলৌকিক কোনো ঘটনা নয়, অতিবাস্তব সব ঘটনা। একজন সরকারি কর্মকর্তা কিভাবে সততা ও সাহসে অপরিমেয় শক্তিমান দেশের স্বার্থে বীরত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারেন, তার অনন্য দৃষ্টান্ত একজন মুনীর চৌধুরী। আইন প্রয়োগে কঠোর ও সিদ্ধহস্ত, ন্যায়নিষ্ঠ এবং সততার অনন্য দৃষ্টান্ত মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী। সাহস ও সততায় পর্বতপ্রমাণ উচ্চতায় পৌঁছে যাওয়ায় মুনীর চৌধুরী জনপ্রশাসনে এখন এক প্রতিষ্ঠান। নিভৃতচারী এ কর্মবীর মিডিয়ার পর্দায় আসতে চান না। দুর্নীতিবাজ ও পরাক্রমশালী অপরাধীদের জন্য আতংক। রাঘব বোয়ালদের ধরেছেন, চুনোপুটিদের স্পর্শ করেননি। চট্টগ্রামসহ সারাদেশে ‘ম্যাজিস্ট্রেট মুনীর’ নামে খুব জনপ্রিয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পরিমান জরিমানা আদায়, সর্বোচ্চ সংখ্যক অপরাধীকে দণ্ড প্রদান এবং সর্বোচ্চ পরিমাণ পণ্য জব্দকরণে তাঁর রেকর্ড শীর্ষে। সব সরকারের আমলে তিনি ক্ষমতাসীনদের ভিত কাঁপিয়েছেন। ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে ১৩টি সেক্টরে তাঁর বিরামহীন অভিযানে কঠোর অনুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। তাঁর ম্যাজিস্ট্রেসি ছিল সাধারণ মানুষের দৃষ্টিতে ম্যাজিক ম্যাজিস্ট্রেসি। কারণ, মুহূর্তেই সাগর কিংবা নদীতে অভিযান চালিয়ে জাহাজ আটক, মুহূর্তেই বুলডোজার দিয়ে ভূমি দস্যুদের অবৈধ স্থাপনা ভেঙে দেয়া, মুহূর্তেই মাটি খুঁড়ে গ্যাস ও পানি চুরির ঘটনা উদঘাটন করা এবং গভীর রাতে গোডাউন ভেঙে টনে টনে পণ্য জব্দ করা ছিল তাঁর প্রাত্যহিক অভিযানের অংশ। জামাত, জাতীয় পার্টি, বিএনপি, আওয়ামী লীগের মন্ত্রী, এমপি ও শীর্ষ নেতাদের দণ্ডিত করে তিনি আমলাতন্ত্রে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। প্রলোভন, চাপ, রক্তচক্ষু এবং মৃত্যু ঝুঁকি উপেক্ষা করে তিনি রাঘব বোয়াল ও গডফাদারদের বিরুদ্ধে দৃঢ়চিত্তে লড়াই করেছেন। যেখানেই হাত দিয়েছেন, উপরের বেআইনি হস্তক্ষেপ কখনোই মেনে নেননি। ফেনী, হবিগঞ্জ, চাঁদপুর, বান্দরবান ও বগুড়ার ভূমি প্রশাসনকে দুর্নীতিমুক্ত করার মধ্য দিয়ে মানুষের মনের গভীরে স্থান করে নিয়েছেন।
বাংলাদেশের সিভিল সার্ভিসের তিনি ধ্রুবতারা, সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য তিনি আলোকবর্তিকা। তাঁর দায়িত্ব পালন ও দিকনির্দেশনা এবং বক্তৃতা ও বচন দারুণভাবে প্রভাব ফেলে সবার মনে। তিনি পথ প্রদর্শক। সারা জীবন অবিচল ও অনড়। কোনো চাপ, প্রলোভন, হুমকি তাঁর অবস্থান থেকে তাঁকে টলাতে পারেনি। সময়ের সাথে মানুষ বদলে যায়, আমলারা বদলে যায়। বৈষয়িকতার কাছে আত্মসমর্পণ করে। পদ, পদবি বা চেয়ার রক্ষার জন্য আপস করে বসে। তাঁর কথা, কাজ ও আচরণে অসাধারণ বলিষ্ঠতা ও সততা। কর্তব্য পালনে অসাধারণ নিষ্ঠা। তাঁর বিশ্লেষণধর্মী লেখা তরুণ কর্মকর্তাদের কাছে প্রেরণা। তাঁর জীবন-যাপন সাদামাঠা। অসম্ভব স্বাধীনচেতা ও প্রতিবাদী এবং প্রচণ্ড প্রাণচঞ্চল ও কর্মচঞ্চল এ ব্যক্তিত্ব হলেন প্রশাসনের কিংবদন্তী মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী।
দেশের বিভিন্ন জেলা প্রশাসনে, চট্টগ্রাম বন্দরে, সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরে, পরিবেশ অধিদপ্তরে, ওয়াসা, মিল্ক ভিটা, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) এবং সর্বশেষ দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) কর্মরত বাংলাদেশ সরকারের প্রশাসন ক্যাডারের আলোকিত, আলোচিত- সর্বত্র আলোড়ন ফেলা সাহসী এই ব্যক্তিত্ব। এ ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে পাঠকদের সামনে তুলে ধরেছেন বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমার প্রধান প্রতিবেদক মহিউদ্দিন তুষার।
১৯৯৪ সাল। পাবনার তরুণ ম্যাজিস্ট্রেট মুনীর চৌধুরী। সরকারি আইন কলেজে আকস্মিক অভিযান চালিয়ে দুর্নীতির দায়ে সব পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করেন। এসব পরীক্ষার্থীর মধ্যে ছিল জেলা শহরের অনেক এলিট ও প্রভাবশালী পরিবারের সন্তানরা। রাজনৈতিক চাপে জেলা প্রশাসক তাঁকে পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেন, কিন্তু তিনি অনমনীয়। পরীক্ষাকেন্দ্র দুর্নীতিমুক্ত করেই ফিরে আসেন। পাবনা জেলা বিএনপি সভাপতি ও জেলা জিপির দুর্নীতিও উদঘাটন করে তার ভুয়া বিল আটকে দেন। এ অন্যায় বিল পরিশোধের জন্য চাপও আসে প্রচণ্ড। এ নিয়ে জিপিসহ আইনজীবীরা তাঁর কোর্ট বর্জন করেন। চাকুরীর সূচনাতেই জেলায় ভূমির রেকর্ড জালিয়াতি হাতেনাতে ধরে অর্থ আত্মসাতের বিরাট ঘটনা উদঘাটন করেন।
সন্ত্রাসের জনপদ ফেনী, ১৯৯৫ সাল। চলছে জয়নাল হাজারির দুর্দান্ত ত্রাস, ক্যাডারদের চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজি আর পরীক্ষায় বেপরোয়া নকল। রাতের পর রাত মুনীর চৌধুরীর নেতৃত্বে অভিযানে আটক হয় কয়েকজন দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা কেন্দ্রে কলেজের তালাবদ্ধ কক্ষ ভেঙে সন্ত্রাসীদের নকলরত অবস্থায় জাপটে ধরে ফেলেন। হামলার শিকার হন মুনীর চৌধুরী, তাঁর জীপ এবং বাসভবনে। নিরাপত্তার স্বার্থে জেলা প্রশাসক তাঁকে সরিয়ে ফেনী সার্কিট হাউজে নিরাপদ আবাসনের ব্যবস্থা করলে মুনীর তা’ প্রত্যাখ্যান করে উপজেলা ডাকবাংলোয় অবস্থান করেন। উচ্চকন্ঠে ডিসিকে বলেছেন, ‘মৃত্যু যদি হয়, ফেনীতেই হবে; কিন্তু পালিয়ে যাবো না।’ এখানেও প্রভাবশালী ব্যবসায়ী আব্দুল আউয়াল মিন্টুর কব্জা থেকে উদ্ধার করেন তাঁর মালিকানাধীন কটন মিলের অবৈধ দখলকৃত সরকারি জমি। মিন্টুর পিতা উপজেলা চেয়ারম্যানের ইট ভাটায় অভিযান চালান, পিস্তল দিয়ে গুলি করার হুমকি আসে।
১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন। চাঁদপুর সদর এবং ফরিদগঞ্জ এলাকার প্রার্থী হন যুদ্ধাপরাধী মাওলানা এম. এ. মান্নান। তার হুংকারে ও অর্থের দাপটে এলাকা কাঁপছে। নির্বাচনে কারচুপির ছক এঁকে মাওলানা মান্নান প্রশাসন এবং পুলিশকে কিনে ফেলেছেন, কিন্তু কিনতে পারেননি নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুনীর চৌধুরীকে। মাওলানার নির্দেশ আসে তাঁরই সংগঠন জমিয়তুল মুর্দারেসিনের অন্তর্ভুক্ত সব মাদ্রাসা শিক্ষককে নির্বাচনী দায়িত্ব প্রদানের। এ বেআইনি নির্দেশ অমান্য করে সরকারি কর্মকর্তা এবং স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের পোলিং অফিসারের দায়িত্ব প্রদান করেন মুনীর চৌধুরী। এতে ক্ষিপ্ত মাওলানা মান্নান প্রধান নির্বাচন কমিশনার আবু হেনার কাছে মুনীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে নির্বাচন বয়কটের হুমকি দেন। তার আগে মাওলানা মান্নান মুনীর চৌধুরীকে ডেকে পাঠান। দাবি করেন তিনি আইয়ুব, জিয়া এবং এরশাদ আমলের মন্ত্রী। কিন্তু মাওলানার সাথে সাক্ষাৎ না করে উল্টো মাওলানাকে তলব করেন মুনীর। অপমানে আহত মাওলানার চাপে মুনীরকে নির্বাচনী এলাকা সরিয়ে দেওয়া হয়। মাওলানার তাতে রক্ষা হয়নি। কারচুপির সকল পরিকল্পনা নস্যাৎ করে মাত্র ২৬ হাজার ভোট পেয়ে পরাজিত হন। রাতের আঁধারে মাওলানা মান্নান পালিয়ে যান চাঁদপুর থেকে।
১৯৯৭ সাল। চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে এক প্রভাবশালী রাজনীতিবিদের অবৈধ দখলে ডাকাতিয়া নদীর ১১১ একর। উদ্ধার করা যাচ্ছে না পুলিশ ও প্রশাসনের অসহযোগিতায়। এ দুঃসহ পরিস্থিতিতে মুনীর চৌধুরী জনগণকে সাথে নিয়ে দুটি বিশাল বাঁধ ভেঙে উদ্ধার করেন ১১১ একর নদী, ফিরিয়ে দেন এর স্রোতধারা।
১৯৯৮ সাল। বান্দরবানে ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে এক মামলার রায়ের তারিখ ধার্য করেন বিচারক মুনীর চৌধুরী। আগের দিনেই জেলা প্রশাসক মুনীরকে নির্দেশ দিলেন রায় স্থগিত রাখতে, নির্দেশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর। যথারীতি আদালতে হাজির ম্যাজিস্ট্রেট মুনীর। আসামিদের গাছাড়া ভাব, কারণ রায়ই হবে না। তদানীন্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশ আসে রায় স্থগিত রাখার। মন্ত্রীর নির্দেশ উপেক্ষা করে রায় দেন মুনীর। ছাত্রলীগের ৯ নেতাকর্মীকে ২ বছরের সাজা এবং জরিমানা দিয়ে জেলে পাঠিয়ে দেন। এ নিয়ে সৃষ্টি হয় শহরে উত্তপ্ত অবস্থা। জেলা প্রশাসক পড়েন বিপাকে।
২০০১ সালে চট্টগ্রাম ইপিজেডের অদূরে ম্যাজিস্ট্রেট মুনীর ভেঙে দেন ডক শ্রমিক নেতা সিরাজের বিশাল অপরাধ সাম্রাজ্য, উচ্ছেদ করেন প্রভাবশালী ডক শ্রমিক নেতা জাহাঙ্গীরের চোরাচালান এবং মাদক ব্যবসার বিশাল ভবন। চট্টগ্রাম বিমান বন্দরের অদূরে লালদিয়ার চরে ৪৪ বছরের অবৈধ দখল থেকে মুক্ত করেন প্রায় ১০০ কোটি টাকা মূল্যের ২২ একর জমি । প্রায় ৫ হাজার দখলদারের আক্রমণের মুখে পুলিশ হটে গেলে মাত্র ১১ জন আনসারের সহায়তায় ১৩২ রাউন্ড গুলি চালিয়ে জমিটি উদ্ধার করেন। বারিক বিল্ডিং মোড়ে ইস্পাহানি, কেএসআরএম সহ শীর্ষ ব্যবসায়ীদের দখলে থাকা বিশাল বিশাল স্থাপনা ও ভবন ভেঙে ফেলেন। তখন র‌্যাব ছিল না। কখনো পুলিশ, কখনো পুলিশ ছাড়াই মুনীর চৌধুরী নেমে যেতেন অভিযানে। জীবনকে হাতের মুঠোয় নিয়ে ঘাম ঝরিয়ে একের পর এক অভিযানে বন্দরকে ফিরিয়ে দেন দেড় হাজার কোটি টাকা মূল্যের ভূসম্পত্তি। বন্দর কর্মকর্তারা বলেন, আজ নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনালসহ বন্দরের যত সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন এবং বন্দরের ভূমি ও স্থাপনা কেন্দ্রিক বিপুল রাজস্ব আদায়ের যে সফলতা, তার পশ্চাতে একক অবদান মুনীর চৌধুরীর।
২০০১ সাল। মুনীর চৌধুরী কর্ণফুলী নদীতে আটক করেন এক এমপি’র মালিকানাধীন অয়েল ট্যাংকার। এ জাহাজ থেকে বন্দরের ৯ বছরে পাওনা ছিল ৩৪ লক্ষ টাকা। জাহাজটি ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য চাপ দেন প্রভাবশালী দুই জন মন্ত্রী এবং ঐ সময়ের প্রধানমন্ত্রীর পিএস। উপরের নির্দেশ উপেক্ষা করে ৪১ দিন আটকে রাখেন। তাৎক্ষণিক তাঁকে সিলেটের জৈন্তাপুরে বদলি করা হয়।
২০০৩ সালে চট্টগ্রামে এক শীর্ষ ব্যবসায়ীর কর্ণফুলী নদী দখল করা এক বিশাল জেটি ভাঙার নোটিশ দেন মুনীর চৌধুরী। হুমকি আসে কর্ণফুলী সেতু অবরোধ করে মুনীর চৌধুরীকে অভিযানে বাধা দেওয়া হবে। কৌশলী মুনীর ভাসমান এক বার্জে ক্রেন তুলে রওনা দেন নদী পথে। প্রবল বৃষ্টির মধ্যে জেটিটি ভেঙে দখলমুক্ত করেন কর্ণফুলী নদী। রীতিমত গা শিউরে ওঠা অভিযান। বন্দরে জামাতে ইসলামীর শ্রমিক নেতারা ১০০ বিঘা জমিতে গড়ে তোলেন বিশাল স্থাপনা, চলে অবৈধ বাণিজ্য। আকস্মিক উচ্ছেদ অভিযানে জামাতের অবৈধ দখলমুক্ত করেন বন্দরের ১০০ বিঘা জমি।
২০০৩ সাল। নৌ সেক্টরে চরম অরাজকতা। একের পর এক ডুবছে লঞ্চ, মরছে যাত্রীরা। নৌমন্ত্রী কর্নেল আকবরের নির্দেশে চট্টগ্রাম থেকে বদলি করে ঢাকায় আনা হয় মুনীর চৌধুরীকে। মেরিন ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পান মুনীর। নির্দেশ আসে প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের মালিকানাধীন ‘কোকো’ জাহাজ আটক না করতে। কিন্তু মন্ত্রীর নির্দেশ অমান্য করে মুনীর চৌধুরী আটক করেন কোকো ২, ৩, ৪ ও ৫ নামক প্রধানমন্ত্রীর মালিকানাধীন যাত্রীবাহী জাহাজ এবং জরিমানাও করেন। প্রধানমন্ত্রীর পুত্র তারেক জিয়ার নির্দেশে মুনীর চৌধুরীর অপসারণের দাবিতে শুরু হয় দেশব্যাপী নৌ-ধর্মঘট। ‘কোকো’ ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ আসে, কিন্তু অদম্য মুনীর চৌধুরী প্রায় ৩০ ঘন্টা আটকে রাখেন মুন্সীগঞ্জে ‘কোকো’ জাহাজকে। তবে লঞ্চ মালিকরা দাবি করেন, মুনীর চৌধুরীর ৮ মাসের অভিযানে নৌযান মালিক ও চালকরা শৃংখলার যে দীক্ষা পেয়েছে, তা ইতোপূর্বে আর কখনো পায়নি। তাঁর অভিযানের প্রভাবে দীর্ঘ কয়েক বছর নৌ সেক্টরে অভূতপূর্ব শৃংখলা বজায় থাকে। এমনকি তাঁর অভিযান থেকে রেহাই পায়নি তাঁর নিকট আত্মীয় লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতির রাজকীয় নৌযান ‘সুরভী’, ধর্মমন্ত্রীর জাহাজ, মন্ত্রী নাজিউর রহমান মঞ্জুর লঞ্চ।
২০০৪ সাল। চট্টগ্রাম বন্দরে ফিরে আসেন মুনীর চৌধুরী। যুদ্ধাপরাধী সাকা চৌধুরী তখন প্রধানমন্ত্রীর সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা। গাড়িতে জাতীয় পতাকা, তটস্থ সরকারি কর্মকর্তারা। চট্টগ্রাম বন্দরে সাকা চৌধুরীর জাহাজ কোনো আইন পরোয়া করে না। মুনীর চৌধুরী বন্দর আইন লংঘনের অপরাধে আটক করেন তার মালিকানাধীন ‘কিউসি স্টার’, ‘কিউসি অনার’ এবং ‘কিউসি পিন্টেল’সহ আরো কয়েকটি জাহাজ। প্রবল হুংকার সাকা চৌধুরীর। সদরঘাট ও হালিশহরে সাকার দখল থেকে উদ্ধার করেন নদীর তীরভূমিসহ ৫০ কোটি টাকার জমি। অভিযান চালিয়ে বন্ধ করেন সাকার মালিকানাধীন ত্রুটিপূর্ণ পেট্রোল পাম্প। ক্ষুব্ধ সাকার হুমকিতেও থমকে যাননি মুনীর।
২০০৪ সাল। চট্টগ্রামে মুনীর চৌধুরী শুরু করেন দেশের প্রথম ভেজালবিরোধী অভিযান। ২০০৫ সালে শুরু হয় ঢাকায় রোকনোদ্দৌলার নেতৃত্বে। বড় বড় আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা প্রবল আতংকে, তাদের রাতের ঘুম হারাম। মুনীর চৌধুরী অভিযান চালিয়ে আবুল খায়ের গ্রুপের কারখানা থেকে আটক করেন ৪০০ টন নিম্নমানের দুধ, বন্দরে অভিযান চালিয়ে আটক করেন ১১ হাজার মেট্র্রিক টন পঁচা গম বোঝাই জাহাজ। চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে রাতের পর রাত অভিযান চালিয়ে ভেঙে ফেলেন বহু গোডাউন এবং ভেজাল কারখানা। ৮০ জন বড় বড় ভেজাল ব্যবসায়ীকে জেলে পাঠিয়ে দেন। সিটি কর্পোরেশনের ডাম্পিং ইয়ার্ডে ধ্বংস করা হয় শত শত টন ভেজাল খাদ্য। বেসামরিক সরকারের আমলে এ এক নজিরবিহীন ঘটনা।
২০০৫ সাল। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান যমুনা অয়েল কোম্পানি গভীর রাতে কর্ণফুলীতে ছেড়ে দেয় জ্বালানি তেল মিশ্রিত বিষাক্ত পানি। কর্ণফুলীর বিস্তীর্ণ এলাকা তেল দূষণের কবলে পড়ে। তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে মুনীর চৌধুরী আটক করেন প্রতিষ্ঠানের জিএমকে। আদায় করেন বিপুল অঙ্কের জরিমানা। বাধ্য করেন বর্জ্য পরিশোধন স্থাপনা তৈরিতে। এভাবে নৌ-বাহিনীর জাহাজগুলো তাঁর অভিযানের আওতায় আসে, ভয়ে তটস্থ থাকতো। এভাবে মেরিন ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে মুনীর চৌধুরীর অভিযানে দণ্ডিত ও আটক হয় প্রায় সাত হাজার দেশি-বিদেশি জাহাজ, যেগুলোকে কঠোর হাতে দূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং নিরাপদ নৌ চলাচলে বাধ্য করা হয়েছিল।
২০০৫ সাল। পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী ও বাণিজ্যমন্ত্রী মেজর (অব.) হাফিজের জাহাজ আটক করেন দূষণের দায়ে। বন্দরের রাজস্ব ভাণ্ডার স্ফীত হয় কোটি কোটি টাকা বকেয়া ও জরিমানা আদায়ে। দেশি-বিদেশি জাহাজ চলাচলে অভূতপূর্ব নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হয় বন্দর জলসীমায়। যে বিদেশি জাহাজগুলো বন্দরে দোর্দণ্ড প্রতাপে দূষণ ঘটাতো, বন্দরের ১২১ বছরে ইতিহাসে সেসব জাহাজ সর্বপ্রথম আটক ও দণ্ডিত করেন মুনীর।
প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা আক্তারুজ্জামান বাবুর ফৌজদারহাটে কারখানায় অভিযান চালান মুনীর। উদঘাটন করেন বিশাল দুর্নীতি, জরিমানা করেন ১৮ লাখ টাকা।
২০০৭ সাল। ১/১১ এর শাসন চলছে। বন্দর নিয়ন্ত্রণ করছে বিশেষ বাহিনী। নির্দেশ আসে যে কোনো অভিযান চালাতে হলে সেনা কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগবে এবং তাদের কাছে অভিযানের রিপোর্ট দিতে হবে। তাছাড়া জরিমানার অঙ্ক তাদের অভিপ্রায় অনুযায়ী করতে হবে। সেসব নির্দেশ একেবারেই মানেননি মুনীর, বলেছেন বেআইনি। ক্ষুব্ধ হয় উচ্চাভিলাষী কিছু সামরিক কর্মকর্তা। এর মাঝে এক ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তার প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে সিলগালা করেন, জরিমানাও আদায় করেন। ক্ষুদ্ধ হয় তারা। উপরের চাপ আসে জরিমানার অর্থ ফিরিয়ে প্রতিষ্ঠান খুলে দিতে। সে আদেশও মানেননি। ঐ সময়কার অত্যন্ত প্রভাবশালী ডিজিএফআইএর কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার বারীর নির্দেশ আসে মুনীর চৌধুরীকে গ্রেফতার করতে। তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ এনে গোয়েন্দা রিপোর্ট পাঠানো হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে। কিন্তু মাথা নত করেননি মুনীর চৌধুরী। অসীম সাহসিকতায় মোকাবিলা করেন চ্যালেঞ্জ। হঠাৎ বদলি করে দেওয়া হয় তাঁকে বগুড়ায়।
২০০৮ সাল। বগুড়ায় এডিসি মুনীর চৌধুরী শুরু করেন ‘অপারেশন ক্লিন ল্যান্ড এডমিনিস্ট্রেশন’। পুরো জেলায় অভিযান চালিয়ে রাজস্ব আদায় দ্বিগুণ করেন, জনগণের কাছে সেবার দ্বার খুলে দেন, অসহায় ভূমি মালিকদের যুগ যুগ ধরে চলে আসা জটিল ভূমি মালিকানার সমাধান দেন। দু’বছরে দুর্নীতি ও হয়রানিমুক্তভাবে ৫৫ হাজার নামজারী মামলার নিষ্পত্তি করেন, বিনা ঘুষে ভূমি অধিগ্রহণের ৩১ কোটি টাকা দরিদ্র ও অসহায় ভূমি মালিকদের হাতে হাতে পৌঁছে দেন। দুর্নীতিবাজদের হাতেনাতে ধরেন, বরখাস্ত করেন ১৬ জন ভূমি কর্মকর্তা-কর্মচারী। তাঁর সময়কালে পুরো জেলায় এক ইঞ্চি সরকারি-বেসরকারি জমি বর্তমান ক্ষমতাসীন কিংবা প্রভাবশালীদের জবরদখল করার সুযোগ দেননি। দোর্দণ্ড প্রতাপশালী বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতিকে কোণঠাসা করে রাখেন মুনীর চৌধুরী। এভাবে চিরাচরিত দুর্নীতিগ্রস্ত এক ভূমি প্রশাসনের চিত্র পাল্টে ফেলে বগুড়া জেলার লক্ষ লক্ষ মানুষের ভালোবাসার পাত্র হন তিনি।
২০১০ সালে প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনে অভিযান চালিয়ে ভেঙে দেয়া হয় উচ্চাভিলাষী সামরিক-বেসামরিক ব্যক্তিদের বেআইনি আবাসন প্রকল্প। জরিমানাও করেন বহু সামরিক কর্মকর্তাকে, যা এক নজিরবিহীন ঘটনা। এছাড়া প্রচণ্ড চাপ উপেক্ষা করে কক্সবাজারে ঝিলংজায় ৯৯ একর পাহাড় ধ্বংস করে প্রভাবশালীদের গড়ে তোলা বেআইনি আবাসন প্রকল্প ধুলিসাৎ করেন মুনীর চৌধুরী, এ প্রকল্পে জড়িত ছিল অনেক রাঘব বোয়াল।
২০১১ সাল। পরিবেশ অধিদপ্তরের এনফোর্সমেন্টের দায়িত্বে মুনীর চৌধুরী। দেশের ৩২ জেলায় চলছে কৃষি জমি ধ্বংস, নদী দখল ও দূষণ এবং পাহাড়-টিলা ধ্বংসের বিরুদ্ধে অভিযান। পরিবেশ আইন এই প্রথম আলোর মুখ দেখতে পায় তাঁর অভিযানের বদৌলতে। দালাল ও দুর্নীতিবাজদের কবল থেকে মুক্ত করেন পরিবেশ অধিদপ্তরকে। এমপি হাজী সেলিম, এমপি আসলামুল হক, মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফ, এমপি মোস্তফা কামাল, ছাত্রলীগ নেতা মাহমুদ হাসান রিপন, বিএনপি নেতা জয়নাল আবেদিন ফারুক, গিয়াস উদ্দিন আল-মামুনসহ আরো অনেক মন্ত্রী, এমপি এবং আকিজ গ্রুপ, আবুল খায়ের গ্রুপ, ইবনে সিনা, ওরিয়ন, মেঘনা, পার্টেক্স, হামিম, এনভয়, ইউনিক, আমিন মোহাম্মদ, কেয়ারি, রূপায়ন, যমুনা, প্রাণ, বেক্সিমকো, হলমার্ক, নাভানা, কনকর্ড, রহিমআফরোজ, র‌্যাংকস, ব্র্যাক, স্কয়ার, মাইডাস, অপসোনিন, আব্দুল মোমেনসহ দেশের প্রভাবশালী কর্পোরেট গ্রুপগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চালান, আইনি ব্যবস্থা নেন এবং বিপুল অঙ্কের জরিমানা করেন। মুনীর চৌধুরী উদ্ধার করেন প্রায় ৭০০ একর পাহাড়, নদী, সবুজ কৃষি জমি। জব্দ করেন সাড়ে ৪ হাজার মেট্রিক টন পরিবেশ ধ্বংস ও দূষণে জড়িত সামগ্রী, আদায় করেন ৭৩ কোটি টাকা জরিমানা। পরিবেশ অধিদপ্তরের রাজস্ব আয় বেড়ে দাঁড়ায় ১২৩ কোটি টাকায়। মুনীরের অভিযানে দেশের ৭০% শিল্প কারখানায় বর্জ্য পরিশোধন প্লান্ট স্থাপন হয়।
২০১১ সাল। আসিয়ান সিটির ভূমি দস্যুতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন মুনীর চৌধুরী। প্রায় ২৫০ একর জমি দখলের ভয়ংকর সন্ত্রাসে রাজউক অসহায় পড়ে। উঁচু মহলের রক্তচক্ষু ও বাধা সত্ত্বেও সাত ঘন্টা সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে ভেঙে দেন আসিয়ান সিটির বেআইনি প্রকল্প, জব্দ করেন বুলডোজার ও যন্ত্রপাতিসহ বিপুল সামগ্রী। গ্রেফতার করেন আসিয়ান সিটির প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলীকে, জরিমানা করেন ৫০ লাখ টাকা। তাঁর অভিযানের পর পরিবেশবাদীরা আইনি লড়াইয়ে নামে। এরই ধারাবাহিকতায় উচ্চ আদালত সম্প্রতি প্রকল্পটি বেআইনি ঘোষণা করেন। ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি মালিকরা এ সাফল্যকে মুনীর চৌধুরীর একক অবদানের ফসল হিসেবে এখনো শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।
২০১৩ সাল। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান মিল্ক ভিটার এমডির দায়িত্ব পেয়ে মুনীর চৌধুরী প্রথমেই সিবিএ নেতাদর দুর্নীতি ও অনৈতিক প্রভাব বন্ধ করেন। মিল্ক ভিটার চেয়ারম্যানসহ দুর্নীতিবাজদের দুর্গে আঘাত হানেন। ভেজাল দুধের বাণিজ্য এবং দুধের বিপণনে দুর্নীতির সিন্ডিকেট ভেঙে দেন। সংস্কার ও উন্নয়নের পথে এগোতে থাকে মিল্কভিটা। ৩৬৮ কোটি টাকার বিক্রয় বৃদ্ধি পেয়ে উন্নীত হয় ৪৩২ কোটি টাকায়। দুধে ভেজাল বন্ধ করতে চালু করেন সুইডিশ মিল্ক স্কানারের আধুনিক প্রযুক্তি। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বরখাস্ত করেন এবং আদায় করেন শাস্তিমূলক জরিমানা। অপচয়, দুর্নীতি ও বিশৃঙ্খলার মাত্রা বহুলাংশে কমিয়ে মুনীর চৌধুরী মিল্কভিটায় প্রতিষ্ঠা করেন কর্পোরেট সুশাসন। এই প্রথম মিল্কভিটা দেশের শ্রেষ্ঠ ও নির্ভেজাল দুধ হিসেবে ‘মিলওয়ার্ড ব্রাউন’ খ্যাত আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করে ভোক্তাদের আস্থা অর্জন করে। কিন্তু নেপথ্যে চলতে থাকে নানা ষড়যন্ত্র ও দুরভিসন্ধি। বেশি দূর এগোতে পারেননি মুনীর। তাঁকে জামাত-বিএনপির সহযোগী অপবাদ দিয়ে ১৮ মাসের মাথায় কম গুরুত্বপূর্ণ পদ ‘ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী’ (ডিপিডিসি)’র সচিব পদে বদলি করা হয়। থামিয়ে দেওয়া হয় তাঁর সকল কর্মতৎপরতা। কিন্তু এখানে মুনীর চৌধুরী দেড় মাসের মাথায় ‘স্পেশাল টাস্ক ফোর্স’ গঠন করে বিদ্যুৎ সেক্টরকে দুর্নীতিমুক্ত করতে নামেন নতুন এক দুঃসাহসী অভিযানে। পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়াই অসীম সাহসিকতায় ধরে ফেলেন একের পর এক বিদ্যুৎ চুরি ও রাজস্ব ফাঁকিতে জড়িত রাঘব-বোয়ালদের। মন্ত্রী, এমপি, আমলাসহ প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের কারখানা ও আবাসিক স্থাপনায় অভিযান চালানোর ফলে ডিপিডিসির ২০%-৩০% এর সিস্টেম লস নেমে আসে ২%-১.৮% এ। এই অভিযানের ফলে ডিপিডিসির তহবিলে জরিমানা ও বকেয়াসহ জমা হয় ১২০০ কোটি টাকার অতিরিক্ত রাজস্ব। এ এক অবিশ্বাস্য ঘটনা। মুনীর চৌধুরীর টাস্ক ফোর্সের ঝড়ে সামুদ্রিক জোয়ারের মতো রাজস্বের প্লাবন বয়ে যায় এ বিদ্যুৎ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানে।
বিরল আর্থিক সততা
সততার দৃষ্টান্তে মুনীর চৌধুরীকে দেশখ্যাত অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মইনুল ইসলাম নাম দিয়েছেন ‘বিরল প্রজাতির আমলা’। সরকারি বা বেসরকারি উৎসের চাঁদার অর্থে আপ্যায়ন ও অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ কিংবা উপঢৌকন নেওয়া তাঁর দৃষ্টিতে গর্হিত অপরাধ। প্রতিটি অনিয়ম, দুর্নীতি এবং অপচয়ের প্রবল বিরোধিতা করেছেন এবং তাঁর ক্ষমতার বলয়ে বন্ধও করেছেন। কর্মজীবনে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দাপ্তরিক পরিদর্শনকালে আপ্যায়ন প্রথা বন্ধ করেছেন। ক্ষেত্র বিশেষে সরকারি অনুষ্ঠানে আপ্যায়ন খরচের অর্থ তিনি ব্যক্তিগতভাবে পরিশোধও করেছেন। এমনকি অফিসে কোনো প্রয়োজনে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করা কাগজ-কলম ও কালির অর্থও সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন মুনীর। প্রতিবছর বিশ্ব পরিবেশ দিবসের অনুষ্ঠানে প্রথাগতভাবে শিল্পপতিদের কাছ চাঁদা তুলে অনুষ্ঠানের আয়োজন বন্ধ করেন মুনীর চৌধুরী। সরকারি অর্থ অপচয় করে রাজসিক আপ্যায়ন এবং কর্মকর্তাদের অফিস সাজ-সজ্জার প্রচণ্ড বিরোধী তিনি। যানবাহনের অবৈধ ব্যবহারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে ছিলেন। ব্যক্তিগত যানবাহন ব্যবহারের অর্থও জমা দিয়েছেন পাই পাই। মানবিকতায়ও অনন্য দৃষ্টান্ত মুনীর চৌধুরীর। ডিপিডিসির বার্ষিক সভায় ভিআইপি থেকে শুরু করে পিয়ন, পিএ ও গাড়ি চালকদের জন্য একই মানের ও দামের খাবারের আয়োজন করায় বিস্মিত হন নিম্নস্তরের কর্মচারীরা। ব্যক্তিগত জীবনে শুধু সততার অনুশীলন নয়, সহকর্মী এবং সিভিল সার্ভিসের অফিসারদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কোর্সে খাদ্য নিরাপত্তা, সুশাসন ও নৈতিকতা, প্রকল্প ব্যবস্থাপনা, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, পরিবেশ ও জলবায়ু রক্ষা ইত্যাদি বিষয়ে মুনীর চৌধুরী এক অনলবর্ষী বক্তা। বিভিন্ন সংবাদপত্রে জনপ্রশাসন, পরিবেশ ও দুর্নীতিবিরোধী তাঁর ক্ষুরধার লেখনী জনগণকে অনুপ্রাণিত করে। মানুষকে সম্মোহিত করার অপরিমেয় শক্তি মুনীর চৌধুরীর। সারাদেশে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা মোবাইল কোর্ট নিয়ে সমস্যা ও সংকটে পড়লে তাৎক্ষণিক সমাধান ও দিকনির্দেশনা পান তাঁরা তাঁর কাছ থেকে।
তবে মুনীর চৌধুরীকে নিয়ে সহকর্মীদের তীব্র সমালোচনা, ‘তিনি অতিমাত্রায় কঠোর এবং স্বাধীনচেতা, আইন প্রয়োগে বিন্দুমাত্র হস্তক্ষেপ মানতে চান না’। আমলাতন্ত্রে তাঁর পরিচিতি কট্টরপন্থী হিসেবে, কিন্তু মাঠ পর্যায়ে সাধারণ জনগণের কাছে তিনি প্রিয়পাত্র। তরুণ কর্মকর্তারা কর্মবীর মুনীর চৌধুরীকে মালয়েশিয়ার মাহাথীর মোহাম্মদ কিংবা সিঙ্গাপুরের লি’কুয়ানের অবস্থানে দেখতে চায়। তাঁর কঠোর পরিশ্রম, বিরল সততা, দেশপ্রেম, কর্মনিষ্ঠা এবং অসীম সাহসিকতা কিংবদন্তীর মতো। প্রশাসনে ক্যারিশম্যাটিক ব্যক্তিত্ব মুনীর চৌধুরী জনমানুষের কাছে এক অনুসরণীয় প্রতিষ্ঠান।
দুদকে মুনীর চৌধুরী
দুদকে মহাপরিচালক পদে মুনীর চৌধুরীর আকস্মিক নিয়োগ অনেকটা বজ্রপাতের মতই। এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ওঠে এক প্রবল ঝড়। কীভাবে এ কট্টরপন্থী আমলা দুদকে নিয়োগ পেল, সে প্রশ্নও তোলা হয়। কিন্তু সরকারকে অভিনন্দিত করে সাধারণ মানুষ। তরুণ প্রজন্মের প্রচণ্ড আশাবাদ, মুনীরের স্পর্শে দুদক শক্তিশালী হবে। দুর্বল এ প্রতিষ্ঠানে মুনীর চৌধুরীকে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের ভূমিকায় দেখতে চায় দুর্নীতির শিকার সাধারণ মানুষ, সে অপেক্ষায় সবাই।
মুনীর চৌধুরীকে নিয়ে বিভিন্নজনের মন্তব্যে:
‘মুনীর চৌধুরী দেশ ও জনগণের সম্পদ’ এমন মন্তব্য করেন, চট্টগ্রাম বন্দরের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী ড. শাখাওয়াত হোসেন খান। তিনি বলেন, মুনীর চৌধুরীর লেখা আমি পড়ি। বিখ্যাত মনীষীদের নামে নাম রাখলে তার কোনো ছায়াপথ মানুষের জীবনে হয় কিনা, আমি জানি না। তবে আমার দূর থেকে চেনা ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক মুনির চৌধুরী স্যারকে চিনি রক্তাক্ত প্রান্তরের স্বাধীনতা সংগ্রামে। আর এই মুনীর চৌধুরীকে চিনি আমার কর্মস্থলে। চট্টগ্রাম বন্দরে আমি যখন প্রধান প্রকৌশলী ছিলাম, ওই সময় তিনি ছিলেন বন্দরে ম্যাজিস্ট্রেট। আমার দৃষ্টিতে অত্যন্ত নিষ্ঠাবান, সৎ, হাতেগোনা সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে অন্যতম তিনি। কর্মে অবিচল, দৃঢ়তা, ন্যায়পরায়ণতা, সততা ও সচেতনতার দিকপাল মুনীর চৌধুরী। চট্টগ্রাম বন্দরে তাঁর দৃঢ় ভূমিকায় বন্দরের হারানো সব জমিজমা অবৈধ দখলমুক্ত করা হয়। তাঁর সাথে কাজ করে আনন্দ পেতাম। মুনীর চৌধুরীকে চিনতে প্রশাসন কেন এত সময় নিয়েছে, এটা অনভিপ্রেত। মুনীর চৌধুরী একটা সম্পদ, তাঁকে যথাযথভাবে ব্যবহার করতে পারলে দেশ ও জাতির অগ্রগতি হবে। এমন মুনীর চৌধুরী আরও অনেক প্রয়োজন। প্রশাসন, প্রকৌশল, চিকিৎসা, শিক্ষা, কৃষি ও অন্যান্য সকল গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তরগুলোতে অনেক অনেক মুনীর চৌধুরী আত্মপ্রকাশ করুক, এটাই আমার কামনা।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, মুনীর চৌধুরী একজন ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তি। তিনি কখনো অন্যায়ের সাথে আপস করেন না, নিজের সিদ্ধান্তে তিনি অটুট থাকেন।
চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরের সাবেক চেয়ারম্যান কমোডর ফারুক হাসানের চোখে মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী একজন বিশাল মনের ও গুণের ব্যক্তিত্ব, যিনি কখনো নিজের সিদ্ধান্তের বাইরে কাজ করেন না, তাঁর প্রধান হাতিয়ার হলো সততা। তাঁকে কখনো ভীত হয়ে মিথ্যার আশ্রয় নিতে দেখিনি। তিনি মনে করেন, সরকারি বা বেসরকারি প্রতিটি প্রতিষ্ঠান প্রধান মুনীর চৌধুরীর মতো হলে দেশে কখনো ঘুষ-দুর্নীতি নামক শব্দটা থাকত না।
চট্রগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গর্বিত ফসল, অহংকারের প্রতীক এবং সমাজ ও রাষ্ট্রে ‘সততা-স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতার’ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত নক্ষত্র বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশনের সম্মানিত মহাপরিচালক মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী সম্পর্কে আমি কিছু বক্তব্য প্রদানের সুযোগ পেয়ে অত্যন্ত উচুঁ মার্গের সম্মান ও গৌরব বোধ করছি। আত্মশুদ্ধি-মানবতা প্রতিষ্ঠা, পরিবেশ সুরক্ষা, ভেজাল প্রতিরোধ, স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অনিয়ম প্রতিরোধ, রাষ্ট্রের বিভিন্ন উঁচু পর্যায়ে পদায়নরত ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানে বিরাজিত দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি-অনিয়ম, ক্ষমতার অপব্যবহার, রাষ্ট্রের সম্পদ ও অর্থের অপচয় ও আত্মসাৎ ইত্যাদির বিরুদ্ধে তাঁর কঠিন অঙ্গীকার ও নির্ভীক সাহসিকতায় সুসম্পন্ন দৃশ্যমান সকল কর্মযজ্ঞের জন্য শুধু দেশে নয় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও সমধিক প্রশংসিত ও সমাদৃত। জনাব মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী শুধু একজন ব্যক্তি নন, তাঁর এ অনবদ্য এবং অসাধারণ সাহসিকতাপূর্ণ কর্ম সম্পাদন বর্তমান ও আগামী প্রজন্মের জন্য দুর্নীতির বিরুদ্ধে সতর্ক বার্তা এবং দিক নির্দেশনা। আত্ম-প্রত্যয়ী এই ব্যক্তিত্ব সত্যনিষ্ঠ প্রতিষ্ঠান হিসেবে জনস্বীকৃত। আমি তাঁর সুস্বাস্থ্য, দীর্ঘায়ু, সার্বিক  মঙ্গল ও  কল্যাণ কামনা করছি।
বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান, কলাম লেখক এবং নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব:) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহীম, বীর প্রতীক মোহাম্মদ মুনির চৌধুরী সম্পর্কে বলেন, মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরীকে আমি প্রায় দেড় দশক ধরে চিনি। তিনি একজন অতি সচেতন সরকারি কর্মকর্তা, অতি সচেতন বাংলাদেশের নাগরিক, দায়িত্বপ্রবণ ব্যক্তিত্ব। আমার পর্যবেক্ষণে আমি তাকে সর্বদা পেয়েছি নিঃসন্দেহে অতি সর্ব প্রকারের সততায়। তিনি তার মেধা ও দেশপ্রেমকে যুগপদ ব্যবহার করে দেশের কল্যাণ করেছেন এবং করে যাচ্ছেন। চট্টগ্রাম বন্দরে সংশ্লিষ্ট থেকে দায়িত্ব পালন করার সময় অবৈধ ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে তিনি শত শত কোটি টাকার সম্পদ উদ্ধার করে দিয়েছেন। এটি একটি মাত্র উদারণ, এরূপ উদাহরণ আরও অনেক আছে। উত্তর বঙ্গে জেলা প্রশাসক হিসাবে চাকরি করার সময় তিনি অনুরূপ সাক্ষর রেখেছেন। আমি রাজনৈতিক কর্মী হিসাবে বিভিন্ন জায়গায় চলাচল করতে গিয়ে, ঐ এলাকায় মানুষের মুখে মুখে শুনেছি কোনো সরকারি কাজ তার কাছে কখনও পড়ে থাকেনি এবং অসমাপ্ত কাজগুলো দেখে দেখে সমাপ্ত করার ব্যবস্থা করতেন। এছাড়া তিনি সাধারণ মানুষের দরখাস্তগুলো বেশি গুরুত্ব দিতেন। তার কার্যকলাপের কারণে অলস প্রকৃতির ও দুর্নীতি পরায়ণ সরকারি কর্মকর্তাগণ সকল প্রকার অবৈধ কাজ করা থেকে বিরত থাকতেন। অত:পর তিনি পরিবেশ অধিদপ্তরে চাকরি করেন বলে আমি জানি। আমি কোনো দিনও তার কাজ দেখার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরে যাইনি। তবে পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পেরেছি। সেখানেও তিনি অতি সাহসিকতার মাধ্যমে কাজ করেছেন। আমি আরও জেনেছি কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষের কারনে সেখানে তিনি বেশিদিন থাকতে পারেননি। আমি মুনীর চৌধুরীর পেশাগত জীবনের সফলতা কামনা করি। আমি মুনীর চৌধুরীর সাহসের তারিফ করি এবং মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করি আল্লাহ যেন তাকে আরও সাহস দেন, আরও মেধা দেন এবং দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে কাজ করার আরও শক্তি দান করেন।
সাবেক বন ও পরিবেশ সচিব ড. মিহিরকান্তি মজুমদারের মতে, “মুনীর চৌধুরী অসাধারণ সৎ, নিষ্ঠাবান এবং কর্মে অবিচল ও দৃঢ়, সততায় অনন্য। সমাজে তাঁর মতো ব্যক্তি কমই আছে, যারা দেশ ও জনগণের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করতে পিছপা হয় না। কর্মক্ষেত্রে রয়েছে তাঁর বিশেষ সাফল্য, মুনীর চৌধুরী কখনই অসত্যের কাছে মাথা নত করেননি, কারও সাথে আপস করেননি। এক কথায়, তিনি একজন দেশপ্রেমিক।”
ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) সাবেক চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ নজরুল হাসান মুনীর চৌধুরী সম্পর্কে বলেন, আমি যখন ডিপিডিসির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলাম, সে সময় তিনি এ প্রতিষ্ঠানের সেক্রেটারি পদে যোগদান করেন। সেক্রেটারির কাজের পরিধি সাধারণ একটা ফ্রেমওয়ার্কের মধ্যে থাকে। আমি লক্ষ্য করলাম, সে ফ্রেমওয়ার্কের কাজের চেয়ে আরও জটিল কাজ করার সক্ষমতা তাঁর আছে, তখন তাঁকে আরও অতিরিক্ত অনেকগুলো দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। তাঁর হাতেই ডিপিডিসির রেকর্ড পরিমাণ জরিমানা ও অবৈধ অর্থ উদ্ধার হয়েছে। তাঁর ক্ষমতা দিয়ে খুব অল্প দিনে দীর্ঘ দিনের বকেয়া অর্থ আদায় করে রেকর্ড করেন। প্রতিটি কাজ তিনি নিজ উদ্যোগেই করতেন। কত ফোন ও হুমকি আসতো, কিন্তু কারো কাছে মাথা নত করেননি। মুনীর চৌধুরী সম্পর্কে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সবার শিক্ষণীয় আছে। তাঁর থেকে দেশ আরও অনেক কিছু আশা করতে পারে, কারণ সেই যোগ্যতা তাঁর আছে। হঠাৎ একদিন জানতে পারলাম, তাঁকে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমার কর্মস্থলে তাঁকে রাখার চেষ্টাও করেছিলাম। আমাকে বুঝানো হলো, মুনীর চৌধুরীর মতো সাহসী পুরুষ দুদকে থাকলে দেশেরই মঙ্গল হবে। পরে মেনে নিলাম। আমি দোয়া করি। তিনি যত দিন কর্মজীবনে আছেন, সততা ও সাহসিকতার সাথে কাজ করে যাবেন।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মনোয়ার ইসলাম, এনডিসি মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী সম্পর্কে বলেন, “মুনীর চৌধুরী অসাধারণ সৎ, দক্ষ, মেধাবী, ধার্মিক, দায়িত্বশীল ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ একজন কর্মকর্তা। প্রশাসনে সুশাসন নিশ্চিতকল্পে তিনি নীরবে, নিভৃতে ও নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের গৌরব। আমি তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করছি।”
মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরীকে নিয়ে কথা হয় সাবেক বন ও পরিবেশমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এমপি’র সাথে। তিনি মন্তব্য করেন, “মুনীর চৌধুরী একজন সৎ এবং নিষ্ঠাবান সরকারি কর্মকর্তা। তাঁর মতো সরকারি কর্মকর্তা দেশের জন্য সম্পদ। আমি যখন পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলাম, ঐ সময় তিনি বগুড়া জেলায় এডিসির দায়িত্বে ছিলেন। সেখান থেকে তাঁকে খুঁজে বের করে পরিবেশের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি যেভাবে সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করেছেন, সমস্ত ভয়ভীতি উপেক্ষা করে কাজ করেছেন, তা’ অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তাঁর সময় পরিবেশ ধ্বংসের জন্য যেসব রাঘববোয়াল জড়িত ছিল, তাদের বিরুদ্ধেও কঠিন থেকে কঠিনতর পদক্ষেপ নিয়েছেন। পরিবেশ ছাড়াও তিনি যেসব সেক্টরে কাজ করেছেন, সেখানেই সিংহের মতো তেজস্বী ভূমিকা রেখেছেন। কোনো অপশক্তির কাছে মাথা নত করেননি। মুনীর চৌধুরীর মতো যদি সরকারি কর্মকর্তা প্রতিটি সরকারি দপ্তরে থাকতো, তাহলে দেশের জন্য অনেক মঙ্গল হতো বলে আমি মনে করি। আমি বিশ্বাস করি, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি এভাবেই দেশ ও জাতির জন্য কাজ করে যাবেন। এটাই আমার কামনা।