Home বরিশাল ক্যাম্পাস ববিতে বিজয় দিবস কর্মসূচি নিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া

ববিতে বিজয় দিবস কর্মসূচি নিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া


বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিজয় দিবসে র‌্যালি ছাড়া অন্য সব কর্মসূচি শিক্ষার্থীদের বঞ্চিত করে আয়োজন করা হয়েছে। মাছ ধরা উৎসব ও গার্ডেন পার্টির আয়োজন করেছে কর্তৃপক্ষ যেখানে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও রয়েছে।

কিন্তু আমন্ত্রিত অতিথি, শিক্ষক, কর্মকর্তা ছাড়া সাধারণ শিক্ষার্থীরা সেখানো কেউ অংশগ্রহণ করতে পারবে না। এ ব্যাপারে শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। রিডিং রুম, গ্রুপ স্টাডি, ক্লাস রুম, বন্ধুদের আড্ডায়, ক্যাম্পাসের সর্বত্র এখন এটিই আলোচনার কেন্দ্র বিন্দু হয়ে দাড়িয়েছে।

জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেসব কর্মসূচি নিয়েছে তার মধ্যে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে পতাকা উত্তোলন, সকাল ৯টায় বিজয় র‌্যালি ও বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলী, ১০টায় শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের মাছ ধরা উৎসব। এবং বিকাল সাড়ে তিনটায় আমন্ত্রিত অতিথি, শিক্ষক (সস্ত্রীক) এবং কর্মকর্তাদের (সস্ত্রীক) নিয়ে গার্ডেন পার্টির আয়োজন করা হয়েছে।

ক্যাম্পাসলাইভকে মার্কেটিং বিভাগের ২০১৩-১৪ সেশনের শিক্ষার্থী খান আকিব নাওয়াজ জানান “শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের সম্মিলিত আনন্দ আয়োজনের আবশ্যিকতা আছে। কিন্তু কথা হল তার জন্য আপনারা এই জাতীয় দিবসগুলাকে কেন বাছাই করেন। এটা বরিশাল ক্লাব বা অন্য কোন কমিউনিটি সেন্টারে হতে পারে। আর অবশ্যই এই প্রোগ্রামে স্টুডেন্টদের দিয়ে নিজেদের মনরঞ্জন না করাই ভাল।”

অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আহমেদ ক্যাম্পাসলাইভকে জানান, “গতবছর স্বাধীনতা দিবসের ন্যায় এ বছরও বিজয় দিবসে স্টুডেন্টদের ছাড়াই বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। নোটিশ বোর্ডের অনুষ্ঠানের তালিকায় স্টুডেন্টদের জন্য শুধু র‍্যালি রাখা হয়েছে।

যেখানে প্রতিবছর ভর্তির সময় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের নামে টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে, সেখানে ভার্সিটির এসব সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান স্টুডেন্টদের রেখে করা কতটা যৌক্তিক? যেহেতু বিজয় দিবস, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান তাদের সুতরাং র‍্যালিও তাদের। আমরা ১৬ ডিসেম্বরের র‍্যালি বয়কট করে প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আবু বকর সিদ্দিক ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান সকলের অধিকার, শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলছি সাধারণ শিক্ষার্থীদের বাদ দিয়ে যে বিজয় দিবস আপনারা পালন করতে যাচ্ছেন সে বিজয় কিন্তু এসেছে সাধারণের হাত ধরেই। এভাবে নিয়মিত বৈষম্য করতে থাকলে শ্রদ্ধার লেশ টুকুও অবশিষ্ট থাকবে না।

ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষা বর্ষের শিক্ষার্থী তারেক মাহামুদ ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন “স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরেও একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মত জায়গা থেকে আমাদের বৈষম্যের স্বীকার হতে হচ্ছে।

মহান বিজয় দিবসে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের জন্য কোন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেনি অথচ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য হরেক রকমের অনুষ্ঠান এর আয়োজন করা হয়েছে। একজন স্বাধীন দেশের নাগরিক হয়ে এহেন বৈষম্যমূলক কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাই।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, “ডিসেম্বর মাস বিজয়ের মাস। একাত্তরে যে বিজয়ের উল্লাসে প্লাবিত হয়েছিল প্রতিটি বাঙালির হৃদয় আজ বিজয়ের ৪৭ বছর পর এসে সে উল্লাস থেকে বঞ্চিত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

গত বছরের স্বাধীনতা দিবসের ন্যায় এবছরেও ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের জন্য জন্য কোন অনুষ্ঠানই থাকছেনা। দেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিজয় দিবস উদযাপিত হলেও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে এ সুযোগ শুধু শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে বিষয়টি আমাদের জন্য খুবই দু:খজনক।”

রসায়ন বিভাগের এক শিক্ষার্থী জানান, “১৬ তারিখ আমাদের ছাত্রদের অংশগ্রহণে তাদের মনোরঞ্জনের জন্য বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে।আর আমরা শিক্ষার্থীরা সেখানে অংশগ্রহণ করতে পারছিনা।”

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসলাইভকে জানান, “র‍্যালি বাদে স্টুডেন্টদের জন্য কোনো প্রোগ্রাম আছে?? প্রতিবার স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস শুধুমাত্র টিচাদের, কর্মচারীদের জন্য। আর সেই অনুষ্ঠানের টাকার উৎস কিন্তু আমরা স্টুডেন্টরাই। প্রতিবছর ভর্তি বাবদ আমরা যে টাকা দেই সেখানে অনেক খাতই শুধু প্রশাসনের নিজেদের কাজে ব্যায় করেন।”

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. এসএম ইমামুল হকের কাছে সার্বিক ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, “শিক্ষার্থীদের জন্য র‌্যালি আছে তারা সেখানে অংশগ্রহণ করবে। কালচারাল ছাত্ররা করবে, ভিসি এটা সবাইকে নিয়ে করতে পারে না।” গার্ডেন পার্টি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “গার্ডেন পার্টি শিক্ষকদের জন্য। হলের ছাত্রদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সবার জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা সম্ভব না।”