
বিশ্ববিদ্যায়ল পরিক্রমা ডেস্ক: জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন মিডিয়ায় প্রকাশে্থে লিখিত এক বিবৃতিতে করেন, সংবিধান অনুযায়ী দেশের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ। রক্তের বিনিময়ে জনগণ এ ক্ষমতা অর্জন করেছে। জনগণ নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে সরকার গঠন করে এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় নিজেদের ক্ষমতা প্রয়োগ করে। এটা জনগণের সাংবিধানিক অধিকার। বাংলাদেশের জনগণ যে কোন নির্বাচনে ভোট প্রদানকে একটা উৎসব মনে করে। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর জনগণ এ ‘ভোট উৎসব’ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণ ‘ভোট-উৎসবে’ অংশ গ্রহনের প্রস্তুুতি গ্রহন করেছে।
নারী-পুরুষ, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ভোটারগণ যেন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট কেন্দ্রে যেতে পারে এবং পছন্দের মার্কায় ভোট দিয়ে বাড়ী ফিরতে পারে, তা নিশ্চিত করার মৌলিক দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান এবং নির্বাচনকালীন সময়ের জন্য সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নির্বাচনকালীন সরকার, জনপ্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনসহ সকল রাষ্ট্রীয় সংস্থা নির্বাচন কমিশনের আইনানুগ নির্দেশ পালনে বাধ্য। ফলে নির্বাচন কমিশনের আন্তরিকতা ও সদিচ্ছা থাকলে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব।
তফসিল ঘোষণার পর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা-কর্মীদের মিথ্যা ও গায়েবী মামলায় গ্রেফতার ও হয়রানী না করার কথা থাকলেও তা বন্ধ হয়নি। পুলিশের সাহায্যে নৌকার কর্মীরা ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী, নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের নির্বাচনী মাঠে নামতে, পোস্টার লাগাতে এবং লিফলেট বিতরন করতে দেয়নি। পুলিশের ছত্রছায়ায় নৌকার কর্মীরা প্রতি রাতে ধানের শীষ কর্মী-সমর্থকদের বাড়ীতে গিয়ে হানা দেয় এবং শারীরিক নির্যাতন করে তাদের পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পুলিশ মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে আর্থিকভাবে স্বচ্ছলদের ছেড়ে দেয় এবং বাকীদের আটক করে নিয়ে যায়। গত দুই দিনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব, গয়েশ্বর রায়, মেজর আকতার উজ জামান এবং শহিদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানীসহ বেশ কয়েকজন প্রার্থীকে শারীরিক ভাবে আক্রমন করে গুরুতর আহত করে। এ পর্যন্ত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীসহ প্রায় ১০ হাজার নেতাকর্মী কারাগারে আটক আছে। নৌকা মার্কায় ভোট না দিলে, ভোট কেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য নৌকার প্রার্থীরা একদিকে ভোটারদের হুমকি দিচ্ছে; অপরদিকে পুলিশ বিভিন্ন সভা-সমাবেশে দাঁড়িয়ে নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার জন্য প্রকাশ্যে জনগণকে হুমকি দিচ্ছে, যা নজিরবিহীন। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের এহেন আচরন কোন ভাবেই গ্রহনযোগ্য নয়। সরকারী মন্ত্রীরা নির্বাচনী কাজে সরকারী যানবাহন ব্যবহার ও জ্বালানী ব্যয় করে নির্বাচনী আচরণ-বিধি ও আইন ভঙ্গ করে চলছে। সংক্ষুদ্ধ ব্যক্তিগণ সংশি¬ষ্ট রিটার্নিং অফিসার ও নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পায়নি। নির্বাচনকালীন সময় সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী নির্বাচন কমিশন সরকারী দলের বেআইনী কর্মকান্ড ও তৎপরতা দেখেও না দেখার ভান করছে। এটা জাতির জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক।
নির্বাচনের বাকী আর ২ দিন। এখনও লেভেল পেলয়িং ফিল্ড দৃশ্যমান হয়নি। নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পর্যবেক্ষনের জন্য আমেরিকাসহ বিদেশী পর্যবেক্ষকদের অনুমতি দিলেও ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রে বিলম্ব-কৌশল গ্রহন করেছে। সরকারী নীলনকশা বাস্তবায়নের অপকৌশল হিসাবে নির্বাচন কমিশন সাংবাদিকদের উপর যাতায়াতসহ বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা জারী করেছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, নির্বাচন কমিশনের নির্লজ্জ পক্ষপাতিত্বের সুযোগ নিয়ে জনপ্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ সমগ্র রাষ্ট্রযন্ত্র একজোট হয়ে বাংলাদেশে কার্যকর গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার কাজে লিপ্ত। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা মানেই বাংলাদেশের অস্তিত্ব ও সংবিধানকে অস্বীকার করার সামিল। অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, প্রজাতন্ত্রের বেতনভূক কর্মচারীগণ জনগণের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে উপেক্ষা করছে এবং ত্রিশ লক্ষ শহীদ ও দুই লক্ষ মা-বোনের আত্মত্যাগকে উপহাস করছে। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের এ হেন আচরন কোন ভাবেই গ্রহনযোগ্য নয়।
জনগণের প্রত্যাশা ছিল দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের জন্য মাঠে নামলে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নত হবে। কিন্তু নির্বাচনে সেনাবাহিনীর ভূমিকা সম্পূর্ণরূপে নির্বাচন কমিশন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনের নির্লজ্জ পক্ষপাতমূলক আচরনের পর তাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনে সেনাবাহিনীর কার্যকর ভূমিকা আশা করাটা দুরূহ। তবুও আমরা আশা করব, ৩০ ডিসেম্বর দেশের মালিক জনগণ যেন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে, তা নির্বাচন কমিশনকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায়, সকল ব্যর্থতার দায়-দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনকে বহন করতে হবে এবং দেশের মালিক জনগণ একদিন অবশ্যই তাদের জবাবদিহিতা আদায় করবে।
আমরা আশা করি বাংলাদেশের ঐক্যবদ্ধ জনগণ সরকার ও নির্বাচন কমিশনের যে কোন গণবিরোধী নীলনকশাকে রুখে দিবে। জনগণের প্রতি আমাদের আহবান আগামী ৩০ ডিসেম্বর নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ভোট কেন্দ্রে যান; পছন্দের মার্কায় ভোট দিয়ে নিজেদের মালিকানা নিশ্চিত করুন এবং হারানো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করুন। জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল বলেই ’৭১ সালে দেশ স্বাধীন হয়েছে। জনগণ ঐক্যবদ্ধ থাকলে, অচিরেই বাংলাদেশে কার্যকর গণতন্ত্র ও আইনের শাসন নিশ্চিত হবে, ইনশাল্লাহ।