Home ব্রেকিং ভারত ও চীনের সাথে কিভাবে ভারসাম্য রক্ষা করছে সরকার?

ভারত ও চীনের সাথে কিভাবে ভারসাম্য রক্ষা করছে সরকার?


বিশ্ববিদ্যায়ল পরিক্রমা ডেস্ক :   বাংলাদেশে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরদিন ভারতের পরেই চীন সরকার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে যেভাবে দ্রুত গতিতে অভিনন্দন জানিয়েছে তাতে অনেকে বেশ অবাক হয়েছে।

যদিও ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি বিতর্কিত এবং একতরফা নির্বাচনের এক সপ্তাহ পরে চীন শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছিল। খবর বিবিসির।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাসীন হবার পর থেকে ভারত এবং চীনের সাথে একটি ‘ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক’ বজায় রেখেছে শেখ হাসিনার সরকার।

চীন এবং ভারত পরস্পরের প্রতিন্দ্বন্দ্বি। এমন অবস্থায় শেখ হাসিনার সরকার কিভাবে দুই প্রতিন্দ্বন্দ্বি দেশের সাথে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখছে? এ প্রশ্ন অনেকের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে।

বাংলাদেশের কাছে ভারত এবং চীনের চাহিদা ভিন্ন-ভিন্ন। অর্থাৎ যার চাহিদা যেরকম ঠিক সেভাবেই বিষয়গুলোকে এগিয়ে নিয়েছে শেখ হাসিনার সরকার। এমন ধারণা রয়েছে।

রাজনীতি এবং কূটনীতিক বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, ভারতের সাথে শেখ হাসিনার সরকারের সম্পর্ক রাজনৈতিক এবং নিরাপত্তা ইস্যুর সাথে সম্পর্কিত।

অন্যদিকে চীনের সাথে সম্পর্কটি পুরোপুরি অর্থনৈতিক।

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমনের ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার সরকার ভারতকে অভূতপূর্ব সহায়তা করেছে। তাছাড়া বাংলাদেশ থেকে ইসলামি জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটে সেটি যাতে ভারতকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে না পারে সেজন্যও পদক্ষেপ নিয়েছে শেখ হাসিনার সরকার।

অন্যদিকে বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ককে চীন পুরোপুরি ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিবেচনা করছে বলে অনেক বিশ্লেষক মনে করেন।

সেজন্য যখন সে সরকার ক্ষমতায় থাকবে, চীন তাদের সাথেই কাজ করবে। এছাড়া যেহেতু আওয়ামী লীগ সরকার নানা ধরণের প্রকল্প হাতে নিয়েছে সেজন্য চীনও চাইছে শেখ হাসিনার সরকারই ক্ষমতায় থাকুক।

কারণ তাতে প্রকল্পগুলো চলমান থাকবে এবং তাতে চীনের লাভ হবে।

২০১৪ সালের নির্বাচনের পর শেখ হাসিনার চীন সফরের পর থেকে দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক ভিন্নমাত্রা নিয়েছে।

পরবর্তীতে ২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং বাংলাদেশ সফর করে।

সে সফরের সময় চীন এবং বাংলাদেশের মধ্যে ২৬টি নানা ধরণের চুক্তি এবং সমঝোতা হয়েছে।

দুদেশের কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী চীন বাংলাদেশকে ২৪ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের ঋণ দেবে বিভিন্ন খাতে। এর বেশিরভাগই অবকাঠামো খাতে।

বর্তমানে চীন বাংলাদেশে পদ্মা সেতুসহ নানা অবকাঠামো প্রকল্পের সাথে সরাসরি জড়িত।

এছাড়াও চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মাণ, একটি সার কারখানা, চট্টগ্রাম এবং খুলনায় দুটি বড় তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের সাথেও চীন সম্পৃক্ত আছে।

এছাড়া চীনের কাছ থেকে সাবমেরিনও ক্রয় করেছে বাংলাদেশ।

“বাংলাদেশের চীনের সাথে সম্পর্কটা এখনো পর্যন্ত সামরিক দিকের পাশাপাশি মূল বিষয়টা হচ্ছে অর্থনৈতিক। এ জায়গাটাকে দিল্লী উদ্বেগের সাথে দেখলেও শেষ পর্যন্ত কূটনীতিক আলাপ-আলোচনায় প্রিভেইল করাটা খুব ডিফিকাল্ট দিল্লীর জন্য,” বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন।

উভয় দেশের মধ্যে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কূটনীতি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন অধ্যাপক হোসেন।

বাংলাদেশের সোনাদিয়ায় একটি গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের ক্ষেত্রে ভারত এবং চীন উভয়ের আগ্রহ রয়েছে। কিন্তু একপক্ষকে একাজ দেয়া হলে অন্যপক্ষ অখুশি হতে পারে – এমন আশংকা থেকে কোন পক্ষকেই এ কাজ দেয়া হয়নি। এমনটা বলছেন অনেক বিশ্লেষক।

২০০৭ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত চীনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন মুন্সি ফয়েজ আহমদ।

তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এন্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ-এর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এবং নিরাপত্তা ইস্যুতে গবেষণার মাধ্যমে সরকারকে সহায়তা করে করে প্রতিষ্ঠানটি।

মি: আহমদ বলেন, “বাংলাদেশ যদি তার নিজের জাতীয় স্বার্থ খেয়াল রেখে কাজ করে, যার কাছ থেকে যে জিনিসটা ভালো পাওয়া যাবে – এগুলো করলে আমাদের যারা বন্ধু তারা কেউই বাঁধ সাধবে না। আমার ধারণা যে মোটামুটি সে জিনিসটাই সরকার করার চেষ্টা করছে। ”

মি: আহমেদ মনে করেন, ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক শুধুই রাজনৈতিক এবং নিরাপত্তা-জনিত বিষয় নয়। এখানে অর্থনৈতিক বিষয়ও জড়িত আছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, “চীন যদিও আমাদের ব্যবসায়িক সবচেয়ে বড় অংশীদার, কিন্তু ভারতের সাথেও আমাদের অর্থনৈতিক সম্পর্ক কম নয়।তবে চীনের সাথে ব্যবসার টোটাল সাইজটা ১৪-১৫ বিলিয়ন ডলারের মতো।”

অন্যদিকে ভারতের সাথে বাংলাদেশের ব্যবসা চীনের তুলনায় এক তৃতীয়াংশ বলে উল্লেখ করেন সাবেক এ রাষ্ট্রদূত।

তবে ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কের কথা উঠলেই নিরাপত্তার বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পায় – একথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ভারতের সাথে আমাদের যদি বৈরিতা থাকে তাহলে আমরা কোনভাবেই এগুতে পারবো না। “