Home ক্যাম্পাস খবর জাতীয় সংসদের স্পিকার কর্তৃক উত্তরায় ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের মূল ক্যাম্পাসের শুভ...

জাতীয় সংসদের স্পিকার কর্তৃক উত্তরায় ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের মূল ক্যাম্পাসের শুভ উদ্বোধন


 

অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান: বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি রাজধানীর উত্তরায় ১৭ নং সেক্টরে গত ৬ মার্চ, বুধবার দুপুরে ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের মূল ক্যাম্পাস আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন ঘোষণা করেছেন। ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান চৌধুরীর সভাপতিত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এমপি।

উত্তরায় ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের মূল ক্যাম্পাস উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি বলেন, ‘শিক্ষা হচ্ছে জ্ঞান অর্জন ও নিজেকে গড়ে তোলার সর্বশ্রেষ্ঠ সময়। শিক্ষা অর্জনই সফলতার সিঁড়ি। বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে শিক্ষার সুযোগকে সবার কাছে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ আজ অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে শিক্ষা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনা সেই বিষয়টি অনুধাবন করেই ২০১০ সালে যুগোপযোগী শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেন। তাই তার নেতৃত্বে ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে সরকার কাজ করছে।’

জাতীয় সংসদের স্পিকার আশা প্রকাশ করে আরো বলেন, ‘ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের প্রতিটি শিক্ষার্থী নিজেদের মেধা ও যোগ্যতায় যারা স্থান করে নিয়েছে তাদের মেধার উৎকর্ষতার সাধনের মধ্য দিয়ে এই বিদ্যাপীঠের নাম সমগ্র বিশ্বে উজ্জ্বল করে তুলবে। দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ জ্ঞান বিতরণে আলোক বর্তিকা রূপে জাতি গঠনে এই বিশ্ববিদ্যালয় অনন্য অবদান রাখবে।’

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী মানসম্মত শিক্ষাদান প্রসঙ্গে বলেন, ‘তরুণ শিক্ষিত প্রজন্মই সমাজ পরিবর্তনের অগ্রদূত। তারাই ভবিষ্যতের বিশ্বকে গড়ে তুলবে। তীব্র প্রতিযোগিতামূলক এ তথ্য ও প্রযুক্তির যুগে নিজেকে বিশ্ব মানের নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলে ইতিবাচক বিশ্ব গড়ায় অংশ নিতে হবে। ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের এসব শিক্ষার্থীরাই মানসম্মত শিক্ষা সমাপন করে আগামী দিনে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবে।’

তরুণ প্রজন্মকে তথ্য-প্রযুক্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়তে সময়ের সর্বোচ্চ ব্যবহার করে সুযোগ-সুবিধাকে কাজে লাগাতে হবে।’ বিশ্ব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে তিনি শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘পরিবর্তিত সমাজ ও বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হলে বিশেষায়িত জ্ঞান অর্জন করতে হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষাকে এগিয়ে নিতে যুগান্তকারী ও কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছেন। বছরের শুরুতে বিনামূল্যে বই বিতরণ, দরিদ্র অসহায় ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি, প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা তহবিল থেকে অনুদান প্রদান, প্রতিটি জেলায় একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।’

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এমপি বলেন, ‘জ্ঞাননির্ভর সমাজ বিনির্মাণ ও মানসম্মত শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। উপযুক্ত শিক্ষা লাভ করলে কোনো গ্র্যাজুয়েটকে বেকার থাকতে হবে না, কর্মসংস্থান হবেই। ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা সত্যিকার অর্থে নিজেকে গড়ে তুললে কর্মই আপনাকে খোঁজে নেবে, কর্ম খুঁজতে হবে না।’

ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী বলেন, ‘একটি স্বপ্ন ছিল নিজস্ব ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়টি গড়ে তুলবো। সেই স্বপ্নটা আজ বাস্তবে রূপায়িত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় মানেই হলো ছাত্র এবং শিক্ষক। ভালো শিক্ষক থাকলে গাছ তলায় শিক্ষা দিয়েও ছাত্রদের উন্নতমানের শিক্ষা দেয়া সম্ভব। সেই কাজটুকু আমি করে যাবো। শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী যারা রয়েছেন তাদের সবার পরিচর্যা করবো। আমি ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশকে এক নম্বর বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তুলবো।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান প্রথিতযশা আদর্শ শিক্ষক ও স্বনামধন্য অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী আবেগপ্রবণ হয়ে বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইস্তফা দিয়ে ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের উপাচার্যের দায়িত্ব গ্রহণ করেছি এটা আমার জীবনে সবচেয়ে বড় ত্যাগ বলে আমি মনে করি। মানুষ যত ছোটই হোক না কেন সে স্বপ্ন দেখে অনেক বড়। মানুষ যদি তার স্বপ্নের মতো কর্ম প্রক্রিয়া করে আর যদি সে তার সহকর্মীদের মধ্যে এই স্বপ্নটা বিক্রি করতে পারে তাহলে অনেক কিছুই অর্জন করা সম্ভব।’

উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমি ছোটবেলাই স্বপ্ন দেখতাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হবো, আমি হয়েছি। ছোটবেলায় বঙ্গবন্ধুর সহচার্যে আসার পর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করেছি। ছয় দফা, এগারো দফার আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের পক্ষ থেকে স্বাধীনতার প্রস্তাবটি আমিই উত্থাপন করেছিলাম। মুক্তিযুদ্ধে প্রশিক্ষণ নিয়ে গেরিলা যুদ্ধ পরিচালনা করেছি। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের পথে কিছু প্রতিবন্ধকতা ছিল সেগুলো উপড়ে ফেলার জন্য শহীদ জননী জাহানারা ইমাম এবং আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন। এজন্য তাদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।’

ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের মূল ক্যাম্পাস উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ কবির হোসেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সোহরাব হোসেন, বাংলাদেশ অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ড. মেসবাহউদ্দিন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত, বিমিষ্ট কলা লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ, গাজীপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান এবং ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম নুরুল ইসলাম প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের কোষাধ্যক্ষ মোর্শেদা চৌধুরী। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মুশফিক মান্নান চৌধুরী। পরে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী মুহুর্মুহু করতালির মধ্য দিয়ে ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের মূল ক্যাম্পাসের আনুষ্ঠানিক শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এ সময় ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের মূল ক্যাম্পাসের উন্নয়ন ও অগ্রগতি কামনা করে দু’হাত তুলে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা হয়।

উল্লেখ্য যে, আর্তমানবতার সেবায় নিবেদিত একুশ শতকের উপযোগী দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির লক্ষ্যে প্রথিতযশা শিক্ষাবিদদের সমন্ব^য়ে ১৯৯২ সালের বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট অনুযায়ী ২০০৩ সালে ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাকালীন অবকাঠামো, ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকতা-কর্মচারীর সংখ্যা যৎসামান্য থাকলেও বর্তমানে এর পরিধি ও ব্যাপ্তি বহুগুণ বেড়েছে। আদর্শ, দক্ষ ও যুগোপযোগী মানুষ গড়ার অন্যতম কারিগর এবং সৃষ্টিশীল তারুণ্যের ক্যাম্পাস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি দেশের বহু মেধাবী ও দরিদ্র ছাত্র-ছাত্রীকে বিনা বেতনে পড়াশোনার সুযোগসহ যোগ্য ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান করছে।

ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্র্সিটি অব বাংলাদেশে রয়েছে মানসম্মত ও যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক, যারা প্রতিনিয়তই ছাত্র-ছাত্রীদের আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। পড়ালেখার অসম্ভ¢ব চাপ থাকা সত্ত্বেও কো-কারিকুলাম কার্যক্রমে কোনো অংশ পিছিয়ে নেই ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির ছাত্র-ছাত্রীরা। এখানে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্র্ক অত্যন্ত গভীর, শিক্ষার্থীরা তাদের যে কোনো সমস্যা শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করে নেয়। বিশ^মানের কোর্স কারিকুলাম, শিক্ষা ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার কারণে ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে ছাত্র-ছাত্রীদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

গ্রন্থনা ও সম্পাদনা: অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান: বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক, প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক। প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, ইনস্টিটিউট অব ল্যাংগুয়েজ স্টাডিজ। উপদেষ্টা সম্পাদক, পায়রা.নিউজ, নীলরঙ্গ, শিক্ষাবার্তা ডট কম ও বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমা। উপদেষ্টা, তারা টিভি নিউজ। বাংলাদেশ বেতারের বহির্বিশ্ব কার্যক্রমের উপস্থাপক ও সংবাদ পাঠক এবং টেলিভিশন টকশো’র সঞ্চালক ও আলোচক।