Home ব্রেকিং আমার লক্ষ্য মতলবে ভালো খেলোয়াড় তৈরি করা……ইব্রাহীম সুমন

আমার লক্ষ্য মতলবে ভালো খেলোয়াড় তৈরি করা……ইব্রাহীম সুমন


শামসুজ্জামান ডলার  :  উপজেলা পর্যায়ে নিজের বাসস্থান হলেও বেশ কয়েক বছর ধরে জেলা পর্যায়ের ক্রিকেটের সাথে জড়িত রয়েছেন। জেলা ক্রিকেট দলের হয়ে বেশ কয়েকটি ম্যাচেও অংশ নিয়েছেন। ছোটকাল থেকেই খেলাধুলার সাথে জড়িত থাকার কারণে নিয়মিত নিজের খেলার পাশাপাশি ছোটদের খেলা শেখানোর ব্যাপারে প্রায়ই মাঠে থাকতে হয়। একজন ক্রিকেট খেলোয়াড় হিসেবে জেলা ও উপজেলার সকল ক্রীড়া সংগঠনসহ সংগঠকদের কাছে পরিচিতি অর্জন করেছেন। পড়াশোনার মাঝেই ক্রীড়ার সাথে জড়িত রয়েছেন। তিনি হলেন চাঁদপুর জেলা ক্রিকেট দলের খেলোয়াড় ও মতলব দক্ষিণ উপজেলার মতলব ক্রিকেট একাডেমীর সহকারী কোচ ইব্রাহীম সুমন। বাবার নাম খলিলুর রহমান ও মায়ের নাম সামছুন্নাহার। ২ ভাই ও ৩ বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। বর্তমানে পড়াশোনা করছেন মতলব সরকারি ডিগ্রি কলেজে। তিনি মতলব মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাইমারি শিক্ষা জীবন শেষ করে মতলব সরকারি জেবি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও মতলব সরকারি ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে বর্তমানে একই কলেজে বিএসএস-এ পড়াশোনা করছেন। মতলব দক্ষিণের নিউ কলেজ হোস্টেল মাঠে মতলব ক্রিকেট একাডেমীর অনুশীলন চলাকালে ক্রীড়াকণ্ঠের পক্ষ থেকে ডানহাতি ব্যাটসম্যান ও উইকেট রক্ষক সুমনের সাথে খেলাধুলাসহ কোচিংয়ের ব্যাপারে আলাপচারিতা হয়। পাঠকদের জন্যে তা তুলে ধরা হলো।

টুয়েন্টিফোর : আস্সালামুআলাইকুম। কেমন আছেন ?

ইব্রাহীম সুমন : জ্বি, ওয়ালাইকুম আস্সালাম। আপনাদের দোয়া সহ সকলের দোয়ায় ভালো আছি।

টুয়েন্টিফোর: খেলাধুলা শুরু করেন কবে থেকে ?

ইব্রাহীম সুমন : আমি আপনাদের দোয়ায় প্রাইমারি স্কুলে পড়া অবস্থায়ই খেলাধুলা শুরু করি। তৃতীয় শ্রেণীতে পড়া অবস্থায়ই প্রাইমারি স্কুল ক্রিকেটে দলের পক্ষে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করি। প্রাইমারি স্কুল জীবন থেকেই আমার শ্রদ্ধেয় কোচ কাজল নন্দীর মাধ্যমে আমার ক্রিকেটর হাতেখড়ি হয়। মতলব নিউ হোস্টেল মাঠে মোহনপুর প্রাইমারি স্কুলের সাথে খেলে চ্যাম্পিয়ন হই। স্যার বর্তমানে নাউরি কলেজে শিক্ষকতা করছেন।

টুয়েন্টিফোর : আপনি হাইস্কুল ও কলেজ পর্যায়ে কোথায় কোথায় খেলেছেন?

ইব্রাহীম সুমন : মতলব জেবি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় চাঁদপুর স্টেডিয়ামে বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে খেলায় অংশ নেই। প্রথম ম্যাচে আমি ১৩ রান করি। আমি দশম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় জেলা ক্রিকেট দলের হয়ে লক্ষ্মীপুরে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব ১৮ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় অংশ নেই। ওই সময়ে চাঁদপুরের ক্রিকেটার মেহেদী, হীরা ঢালী, পলাশ, ইমাম, শোয়েব ও রিপনের সাথে বেশ কিছু ম্যাচও খেলি। এর আগে এলাকার ফ্রেন্ডস্ ক্লাব ও সূর্য তরুণ ক্লাবের হয়ে টেপটেনিস খেলায় বেশ কিছু টুর্নামেন্ট ও লীগের খেলায় অংশ নেই।

টুয়েন্টিফোর: চাঁদপুর স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় ও প্রথম বিভাগে খেলেছেন?

ইব্রাহীম সুমন : হ্যাঁ, আমি কলেজে পড়া অবস্থায় মতলব সূর্য তরুণ ক্লাবের হয়ে চাঁদপুর স্টেডিয়ামে ২য় বিভাগ ক্রিকেট লীগে অংশগ্রহণ করি। ক্লাবের হয়ে ক্লেমন টি-২০তে প্রফেসর পাড়া ক্রীড়া চক্রের সাথে ম্যাচে খেলতে নামি। আর আমি জেলার ক্রিকেট কোচ ও ক্রিকেটের কর্ণধার শামিম স্যারের মাধ্যমে চাঁদপুর ক্রিকেট একাডেমীর হয়ে প্রথম বিভাগ ক্রিকেটে নির্ঝর স্পোর্টিং ক্লাব, আবাহনী ক্রীড়া চক্র ও নিতাইগঞ্জ ক্রীড়া চক্রের সাথে ম্যাচে অংশ নেই।

টুয়েন্টিফোর : চাঁদপুর প্রিমিয়ার ক্রিকেটে?

ইব্রাহীম সুমন : হ্যাঁ, আমি চাঁদপুর প্রিমিয়ার ক্রিকেটে আবাহনী ক্রীড়া চক্রের হয়ে অংশ নেই। আমি সেই সময় নিতাইগঞ্জ ক্রীড়া চক্র, উদয়ন একাডেমী ও শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের সাথে খেলায় অংশগ্রহণ করি। আমি ২০০৭ সালে মতলবের ক্রিকেটার ও ফুটবলার এবং ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে পরিচিত মুদাচ্ছেরের মাধ্যমে শামিম স্যারের সাথে পরিচিত হই এবং তার কাছে দীর্ঘদিন অনুশীলন করি। আমি ২০১৪ সালে ও ২০১৭ সাথে জেলা ক্রিকেট দলের সাথে কঙ্বাজার ও পিরোজপুরে খেলতে যাই। আমি চাঁদপুরের শামিম স্যারের অনেক সহযোগিতা পেয়েছি ক্রিকেট খেলতে গিয়ে।

টুয়েন্টিফোর : চাঁদপুর জেলা দলের বাইরে কোনো ক্লাবে খেলেছেন?

ইব্রাহীম সুমন : আমি ঢাকাতে খেলার সুযোগ পাই মুদাচ্ছেরের কারণে। প্রথমে আমি ফ্রেন্ডস্ সোস্যাল এসোসিয়েশনের পক্ষ হয়ে ৩য় বিভাগ ক্রিকেট লীগ খেলি । ২০১১ সালের পুরো বছরটিই ঢাকাতে খেলাধুলার সাথে ছিলাম। ওই সময় সিটি ক্লাবের ও ওয়ারীর হয়ে দ্বিতীয় বিভাগ ক্রিকেট লীগে অংশগ্রহণ করি। ২০১৭ সালে ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে খেলার সুযোগ পাই। আর মতলব ক্রিকেট একাডেমীর হয়ে নোয়াখালী, কুমিল্লা, কঙ্বাজার, মুন্সিগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ একাডেমীর সাথে বিভিন্ন ভেন্যুতে খেলতে নামি।

টুয়েন্টিফোর : খেলাধুলার ক্ষেত্রে কোন্ কোন্ কোচের সহযোগিতা পেয়েছেন?

ইব্রাহীম সুমন : মতলবের কাজল দা, মুদাচ্ছের, মোস্তাফিজ, মনির, চাঁদপুরের শামিম স্যার, সোহাগ, সোলায়মান ও মুরাদ ভাই এবং ঢাকাতে ইস্টার্ন ক্লাবের মনির ভাই, ওয়ান্ডারার্সের মিন্টু ভাই, ঢাকা ওয়ারীর ট্ররি স্যার আমাকে ক্রিকেট খেলা সম্বন্ধে বিভিন্ন কিছু শিখিয়েছেন।

টুয়েন্টিফোর : খেলাধুলার সাথে জড়িত থাকার কারণ?

ইব্রাহীম সুমন : ছোটকাল থেকেই তো খেলাধুলার সাথে জড়িয়ে পড়ি। এজন্যে অনেক সময় পরিবারের পক্ষ থেকে বকাও খেতে হয়েছে। ইচ্ছে ছিলো ভালো পর্যায়ের একজন ক্রিকেটার হওয়া। উপজেলা পর্যায়ে থাকার কারণে তেমন সুযোগ পাই নি। ফুটবলার মুকুল মামাসহ মতলব ফুটবল ও ক্রিকেট একাডেমীর কারণে এখনও আমাদের উপজেলায় খেলাধুলা টিকে আছে। অনেকেই খেলাধুলার কারণে উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন পদ নিয়ে আছেন, মাঠের ব্যাপারে কিংবা খেলাধুলার ব্যাপারে তাদের তেমন আগ্রহ নেই।

টুয়েন্টিফোর : উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা থেকে কী ধরনের সহযোগিতা পেয়ে থাকেন?

ইব্রাহীম সুমন : চাঁদপুরের অন্যান্য উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা থেকে মনে হয় আমাদের উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্মকা- অনেক দুর্বল। এখানে মনে হয় নামে মাত্রই উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা রয়েছে। বাজারের মধ্যেই অবস্থিত একটি খেলার মাঠ, সেই মাঠটির অবস্থাও নাজুক, এই ব্যাপারে তো ক্রীড়াসংস্থার কাউকে দেখাই যায় না। মাঝে মাঝে আমাদের পৌরসভার মেয়র শ্রদ্ধেয় আওলাদ হোসেন লিটন খেলাধুলার ব্যাপারে একটু খোঁজখবর নেন। বর্তমানে আমাদের দুটি উপজেলা নিয়ে একটি সংসদীয় আসন। কিন্তু আমরা এ পর্যন্ত মাননীয় সাংসদেরও খেলাধুলার ব্যাপারে সহযোগিতা পাই না। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা লাগোয়া একটি উপজেলা ও আরেকটি উপজেলা চাঁদপুর শহরের প্রায় কাছাকাছি মনে করি আমরা। আমাদের এই উপজেলাগুলোতে অনেক বিত্তবান লোকের বসবাস। অনেকেই বড় বড় ব্যবসা ও ক্রীড়া সংগঠনসহ রাজনীতিতে ভালো অবস্থানে রয়েছেন। তারা যদি ক্রীড়াক্ষেত্রে উপজেলা পর্যায়ের উঠতি বয়সী বিভিন্ন ক্যাটাগরির খেলাধুলা কিংবা খেলোয়াড়দেরকে সহযোগিতা করেন তাহলে এ উপজেলা থেকে অনেক ভালোমানের ক্রিকেটারসহ বিভিন্ন ইভেন্টের অনেক খেলোয়াড় সৃষ্টি হবে। আমরা আমাদের মাননীয় সাংসদ অ্যাডঃ নুরুল আমিন রুহুল সহ জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খান, পুলিশ সুপার মোঃ জিহাদুল কবির স্যারসহ চাঁদপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাথে যে সকল বিত্তবান ক্রীড়া সংগঠকরা রয়েছেন তাদের সহযোগিতা এবং খেলাধুলা ও খেলোয়াড়দের ক্ষেত্রে সকল ধরনের পরামর্শ কামনা করি।

টুয়েন্টিফোর : মতলব ক্রিকেট একাডেমীর সাথে কবে থেকে জড়িত?

ইব্রাহীম সুমন : আমি ২০১৩ সাল থেকে এ একাডেমীর সাথে জড়িত রয়েছি। সপ্তাহের ১ দিন বাদে প্রতিদিনই আমাদের এ একাডেমীর ক্রিকেট ও আমাদের মতলব ফুটবল একাডেমীর মাধ্যমে ফুটবলের অনুশীলন চলে। আমাদের এ একাডেমীর ক্রিকেটার ফয়সাল, জামিল, মাসুম, আরমান, আকাশ, আল-আমিন জেলা ক্রিকেট দলের বয়সভিত্তিক ক্রিকেট অনূর্ধ্ব ১৪ ও ১৬তে খেলার সুযোগ পেয়েছে। আমাদের একাডেমীর মাসুম বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে চট্টগ্রাম বিভাগের অধিনায়কেরও দায়িত্ব পালন করেছেন।

টুয়েন্টিফোর: আপনার লক্ষ্য কী?

ইব্রাহীম সুমন : ক্রীড়াক্ষেত্রে বিশেষ করে ক্রিকেটে উপজেলা পর্যায় থেকে ভালো মানের ক্রিকেটার তৈরি করা। উপজেলা পর্যায় থেকে যদি তারা ভালোভাবে খেলে জেলা, বিভাগীয় পর্যায় ও ঢাকাতে এবং জাতীয় দলের খেলোয়াড় হিসেবে সুযোগ পায় তাহলে আমাদের মতলব ক্রিকেট একাডেমীর সকল কিছুই সার্থক হবে। আমাদের এখানে যারা ক্রিকেটের সাথে জড়িত রয়েছেন তাদের মধ্যে বিভিন্ন একাডেমী, প্রাইমারি স্কুল, হাই স্কুল ও কলেজে পড়ুয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাই বেশি। একাডেমীতে অনুশীলনের জন্য আমাদের দু উপজেলার ২টি পৌরসভাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের অনেক অভিভাবকই তাদের সন্তানদের এনে ভর্তি করিয়ে দিয়ে যান। এখানকার অভিভাবকরা ছেলে-মেয়েদের খেলাধুলার প্রতি অনেক আন্তরিক রয়েছেন। তারা অনেক সময় মাঠে বসে থাকেন তাদের খেলা দেখার জন্য। এছাড়া স্কুল শেষে নিয়মিত একাডেমীর ছাত্ররা অনুশীলনে আসছে কিনা সেই ব্যাপারেও খোঁজ খবর নেন। আমি চাই নিয়মিত খেলাধুলার সাথে সকলেই জড়িত থাকুক। খেলাধুলা করলে ভালো লাগে এবং মনও ফ্রেশ থাকে। আমি বিশেষ করে বলবো, যারা একাডেমীতে কিংবা খেলাধুলার সাথে জড়িত রয়েছে তারা যেনো নিয়মিত অনুশীলন করে এবং সিনিয়রদেরকে সম্মান করে। যে পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলার সাথে নিয়মিত জড়িত থাকবে সে কক্ষণও খারাপ পথে পা বাড়াবে না। বর্তমানে খেলাধুলার কারণে বিশেষ করে ক্রিকেট খেলার কারণেই বিশ্বে বাংলাদেশ অনেক পরিচিত। খেলাধুলার সাথে জড়িত থাকলে সুশৃংখলভাবে জীবনযাপন সহ মানুষকে ভালো কাজে উৎসাহ দেয়া যায়। আমাদের যে একাডেমী রয়েছে সেই একাডেমীতে যদি ভালো মানের পৃষ্ঠপোষক সহ ক্রীড়া সংগঠকরা সহযোগিতা করে তাহলে অবশ্যই আমরা জেলা পর্যায়ে মতলব থেকে খেলাধুলায় ভালো কিছু উপহার দিতে পারবো।

 

টুয়েন্টিফোর : সময় দেয়ার জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ।

ইব্রাহীম সুমন : জ্বি, আপনাকেও আপনার পত্রিকা সহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সাবেক খেলোয়াড় ও ক্রীড়া সংঠকদের প্রতি রইলো আন্তরিক শুভেচ্ছা। আমাদের উপজেলার খেলাধুলার ব্যাপারে সবার সহযোগিতা থাকবে এই কামনা করি।