Home বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি বাহিনীর তাণ্ডব আহত ২০ শিক্ষার্থী

ভিসি বাহিনীর তাণ্ডব আহত ২০ শিক্ষার্থী


বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমা ডেস্ক : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে চলা আন্দোলনের তৃতীয় দিনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। বহিরাগতদের চালানো এ হামলায় ছাত্র-ছাত্রীসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে। গুরুতর আহত আট শিক্ষার্থীকে গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীরা গতকাল সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে প্রবেশের সময় বিভিন্ন স্থানে তাদের ওপর ওই হামলা হয়। প্রত্যক্ষদর্শী ও আহতরা জানিয়েছে, ভিসির অনুগত ক্যাডাররাই এ বর্বরোচিত হামলা চালিয়েছে।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আজ রবিবার থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে সকাল ১০টার মধ্যে সব শিক্ষার্থীকে হল ত্যাগের নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ, কিন্তু শিক্ষার্থীরা এই আদেশ অমান্য করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থার সৃষ্টি হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করার নির্দেশ দিয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। গতকাল শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই তথ্য জানিয়েছে।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মো. হুমায়ুন কবীর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগতদের হামলার প্রতিবাদে সহকারী প্রক্টর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগপত্রে তিনি লিখেছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের নৈতিক ও ন্যায্য দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের অনৈতিক কার্যকলাপের প্রতিবাদ জানিয়ে সহকারী প্রক্টর পদ থেকে পদত্যাগ করেছি।’

গতকালের হামলার ঘটনায় গুরুতর আহত তাওহীদ, কাউসার, শাহীন, জাহিদ হাসান, নিউটন বিশ্বাস, সৈকত, আশিককে গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তাওহীদ ফার্মেসি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। বাকিরা বিভিন্ন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। অন্য আহতরা টুঙ্গিপাড়া ও শহরের বিভিন্ন স্থানে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছে।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. নুরউদ্দিন আহমেদ স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণায় বলা হয়েছে, ‘উদ্ভূত জরুরি পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত রাখতে, বিবদমান গ্রুপগুলোর মধ্যকার মতানৈক্য নিরসনে এবং সম্ভাব্য অপ্রত্যাশিত ঘটনা এড়াতে রিজেন্ট বোর্ডের সদস্যদের মৌখিক অনুমতির পরিপ্রেক্ষিতে ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হলো। শিক্ষার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোর শিক্ষার্থীদের রবিবার সকাল ১০টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হলো।’

রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. নুরউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দিতে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ও শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছি।’

জানা গেছে, গতকাল সকাল থেকেই নবীনবাগ, হাসপাতাল, এলজিইডি অফিস মোড়, সোনাকুড়, নিলারমাঠ, সুবাহান সড়ক, বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকসহ বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে প্রবেশে বাধা দেওয়া হয় এবং হামলা চালানো হয়। শিক্ষার্থীদের ইজি বাইক, থ্রি হুইলার থেকে নামিয়ে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করা হয়।

হামলা প্রসঙ্গে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ড. মো. বশির উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা আমাদের সন্তানের মতো। তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো বিরোধ নেই। আমরা তাদের বুঝিয়ে আন্দোলন থেকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা ১৬ দফা দাবি দিয়েছিল। তাদের সব দাবিই মেনে নেওয়া হলেও কেন তারা আন্দোলন করছে তা আমার বোধগম্য নয়।’

গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. অসিত মল্লিক বলেছেন, ‘যারা আহত হয়েছে তাদের আমরা চিকিৎসা দিয়েছি। আহতদের উদ্ধার করে দ্রুত চিকিৎসা দেওয়ার জন্য আমরা ডাক্তার ও অ্যাম্বুল্যান্স প্রস্তুত রেখেছি। কোথাও কেউ আহত হওয়ার খবর পেলেই আমরা সেখানে গিয়ে চিকিৎসা দিয়েছি।’

গোপালগঞ্জ পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনে বহিরাগতরা যাতে হামলা করতে না পারে তার জন্য ক্যাম্পাসের বাইরে পুলিশ, র্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার থেকে উপাচার্য খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করাসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে তাঁর পদত্যাগের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে আসছেন শিক্ষার্থীরা। ওই দিন বিকেল থেকে শিক্ষার্থীরা আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন শুরু করেন। তাঁদের এই কর্মসূচি ও আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। প্রসঙ্গত, গত ১১ সেপ্টেম্বর আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস-সাংবাদিক ফাতেমা-তুজ-জিনিয়াকে সাময়িক বহিষ্কার করা হলে শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। গত বুধবার জিনিয়ার বহিষ্কারাদেশ তুলে নিলেও উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে অন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।

তদন্ত কমিটি হচ্ছে : গতকাল শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী গতকাল শনিবার মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সোহরাব হোসাইনকে গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করতে নির্দেশ দিয়েছেন। আগামীকাল (আজ রবিবার) এই কমিটি গঠন করা হবে। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে দ্রুত এ বিষয়ে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ভিসির পক্ষে ১০৭ শিক্ষকের বিবৃতি : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ভিসির পক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন ১০৭ জন শিক্ষক। গতকাল সন্ধ্যায় শিক্ষক ডরমিটরি ভবনের সামনে অন্তত ১৫ জন শিক্ষকের উপস্থিতিতে এ বিবৃতি দেওয়া হয়। লিখিত বিবৃতি পাঠ করেন কৃষিবিজ্ঞান অনুষদের প্রভাষক মো. গোলাম ফেরদৌস। এই বিবৃতিতে ১০৭ জন শিক্ষক সই করেছেন বলে জানান ওই শিক্ষক।