Home স্বাক্ষাৎকার টার্গেট নেত্রীর মাই ম্যান তৈরি, নিজেদের মাই ম্যান তৈরিতে লাভ নেই

টার্গেট নেত্রীর মাই ম্যান তৈরি, নিজেদের মাই ম্যান তৈরিতে লাভ নেই


ঢাকা: এস এম কামাল হোসেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক। জন্ম গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী থানার জোনাসুরে, ১৯৬০ সালের ৩১ জানুয়ারি। কৈশোর থেকেই ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত। স্কুল-কলেজ ছাড়াও জেলা ছাত্রলীগের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। খুলনা মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। এরপর ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সাধারণ সম্পাদক হন

১৯৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের অন্যতম নেতা ছিলেন তিনি। এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য ছিলেন।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এই নেতা খোলামেলা মতামত ব্যক্ত করেন সারাবাংলা’র সঙ্গে। এই কথোপকথনে সারাবাংলার পক্ষে অংশ নেন সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট নৃপেন রায়। দুজনের কথোপকথনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো তুলে ধরা হলো

বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমা :  সামনে জেলা এবং উপজেলা সম্মেলনগুলোতে নেতৃত্ব নির্বাচন বা মূল্যায়নের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নির্দেশনার আলোকে কোনো ক্রাইটেরিয়া বা বিশেষ দিকগুলো মূল্যায়ন করা হবে বলে আপনি মনে করছেন?

এস এম কামাল: জননেত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আমাদের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহীর কমিটির মিটিং (৩ অক্টোবর) হয় স্বল্প পরিসরে। ওই মিটিংয়ের সিদ্ধান্তের আলোকে জননেত্রী শেখ হাসিনার দিক-নির্দেশনা মেনে আমাদের দলের সাধারণ সম্পাদক সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সমস্ত তৃণমূলের কমিটি গঠন করার ব্যাপারে সাংগঠনিক তৎপরতা জোরদার করার জন্য উনি নির্দেশ দিয়েছেন। সেই নির্দেশনার আলোকে (রাজশাহী বিভাগ) ওই বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক হিসাবে আমি ইতোমধ্যে জেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলি। আমি উপজেলা সম্মেলনগুলো ইউনিয়ন সম্মেলনগুলো শেষ করে উপজেলা সম্মেলন করার জন্য দিক-নির্দেশনা দিয়েছি। সেই আলোকে ইতোমধ্যে সিরাজগঞ্জের রায়গঘঞ্জ উপজেলা সম্মেলন হয়েছে (২৯ অক্টোবর) এবং ১৪ নভেম্বর রাজশাহীর বাগমারা, ১৫ নভেম্বর জয়পুরহাটের কালাই, আর পাবনার চাটখিলের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করেছি। আরও কয়েকটি উপজেলার সম্মেলনের তারিখ ইতোমধ্যে আলোচনা হচ্ছে। নভেম্বর মাসে বেশকিছু উপজেলার সম্মেলন আমাদের যে বিভাগীয় টিম আছে, সেই টিমকে সঙ্গে নিয়ে আমরা সম্মেলন করার চিন্তাভাবনা করছি। সংগঠনকে গতিশীল করার জন্য। এরইমধ্যে ২৯ নভেম্বর থেকে আমাদের কর্মকাণ্ড শুরু হয়ে গেছে।

‘আমরা মনে করি জননেত্রী শেখ হাসিনা যে দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন, যে তৃণমূলকে ঢেলে সাজানোর জন্য এবং সেই ক্ষেত্রে যার গ্রহণযোগ্যতা আছে, সামাজিকভাবে মানুষ যাদেরকে পছন্দ করে, যাদেরকে দলের দায়িত্ব দিলে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে না, দলের ভাবমূর্তি বৃদ্ধি পাবে, দল এগিয়ে যাবে, দল গতিশীল হবে সেই ধরনের নেতৃত্বকেই খুঁজে বের করার জন্য আমরা তৃণমূল পর্যায়ে উপজেলার নেতৃবৃন্দকে আমরা অনুরোধ করবো এবং দিক নির্দেশনা দেব।’

বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমা :: আলোচনা-সমালোচনা আছে, গুঞ্জন উঠে থাকে উপজেলা এবং জেলা সম্মেলনগুলোতে নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতারা প্রভাব বিস্তার করে? সেক্ষেত্রে তৃণমূলের নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় টিম হিসাবে আপনাদের ভূমিকা কী হবে?

এসএম কামাল হোসেন: উপজেলা সম্মেলন তদারকি করবে জেলা কমিটি। অনুমোদন দেবে জেলা কমিটি। যখন জেলা কমিটি অনুমোদন দেয় জননেত্রী শেখ হাসিনা সেন্ট্রাল কমিটির সঙ্গে, কার্যনির্বাহী কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে, ওনার দায়িত্বে উনি দেখভাল করেন। সেই ক্ষেত্রে উপজেলা কমিটি অনুমোদন দেবে জেলা থেকে। সেইক্ষেত্রে আমরা তাদেরকে সাহায্য করি। একজন সাহায্যকারী হিসাবে আমরা কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে সাহায্য করি, যাতে সেখানে কোনো অনিয়ম না হয়। কোনো খারাপ লোক বা দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নকারী; এ ধরনের লোক যাতে নেতৃত্বে না আসে। নেতা নির্বাচন করে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা অথবা ওই জায়গায় স্থানীয় নেতৃবৃন্দ আলোচনা করে সর্বসম্মতিক্রমে উপজেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্য পদগুলো তারা নির্ধারণ করেন। এখানে কেন্দ্র থেকে কিছু চাপিয়ে দেওয়া হয় না। কাউকে নেতা নির্বাচিত করা হয় না। জেলা কমিটি-উপজেলা কমিটি আলোচনা করেন, যদি আলোচনা ফলপ্রসূ না হয়, আলোচনা ব্যর্থ হয়, একমত না হয়, তাহলে তৃণমূলের ভোটাভুটির ভিত্তিতেই আমরা নেতা নির্বাচন করার জন্য তাদেরকে বলি। এইখানে কেন্দ্রের থেকে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করা হয় না এবং হস্তক্ষেপ করা হবে না।

‘আমাদের কেন্দ্র থেকে কোনো নেতার কোনো চয়েজ নেই কে নেতা হবে? নেতা তৃণমূলের নেতাকর্মীরা করবে, সর্বোপরি ওইখানে আলোচনা করে তারা করতে পারেন। স্থানীয় নেতবৃন্দ আলোচনা করে যদি একমত হয়ে একটা কমিটি করে সেই ক্ষেত্রে আমরা তাদেরকে সহযোগিতা করব।’

কাউন্সিলরদের ভোটের মাধ্যমে হতে পারে অথবা আলোচনার মাধ্যমে হতে পারে। কাউন্সিলরদের মতামত নিয়ে স্থানীয় নেতৃবন্দ দায়িত্ব নিয়ে আলোচনা করে তারা যদি একমত হয় যে, আমরা অমুক দুইজন লোকের নাম ঠিক করব, সেক্ষেত্রে তারা সর্বসম্মতিক্রমে একমত হয় তাহলে অনেক সময় ভোট হয় না। আলোচনার ভিত্তিতেই নেতা নির্বাচিত হয়। আর যদি আলোচনায় একমত না হয় তাহলে আমরা কাউন্সিলর ভোটে নেতা নির্বাচিত করার জন্য তাদেরকে সহযোগিতা করি।

বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমা : সম্প্রতি জেলা পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন প্রক্রিয়ায় নেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ‘মাই ম্যান’ পরিহার করে কমিটি গঠনের নির্দেশনা কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে দিয়েছেন বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে? সেক্ষেত্রে এই আওয়ামী রাজনীতিতে কে কার ‘মাই ম্যান’? কারা কার মাই ম্যান, বিশেষ অর্থে কিভাবে আপনারা এই সমীকরণ মিলিয়ে তৃণমূলে নেতৃত্ব নির্বাচনে গুরুত্ব দেবেন বলে মনে করছেন?

এসএম কামাল হোসেন: রাজনীতিতে মাইম্যান বলতে কি ক্রাইটেরিয়া আমরা ধরে নেব? এখানে ধরেন, মাইম্যান বলতে আমি কিছু বুঝি না। ‘মাই ম্যান’ মানে নিজস্ব লোক। এখানে তো কোন কেন্দ্রীয় নেতা বা জেলার নেতার ‘মাই ম্যান’ তৈরি করে লাভ নেই। এখানে নেতা হচ্ছে একজন জননেত্রী শেখ হাসিনা। আমরা ওনাকে ঘিরেই রাজনীতি করি। ওনার যে আকাঙ্ক্ষা, সে আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্য রাজনীতি করি এবং দলকে ওনার আকাঙ্ক্ষা অনুসারে ঢেলে সাজানোর জন্য আমরা দলটাকে নতুন করে গোছানোর জন্য উনি আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন, সেখানে আমাদের কারও ব্যক্তিগত সম্পর্কটা কারো সঙ্গে থাকতে পারে, এর অর্থ এই না তাকে নেতা বানাতে হবে। নেতা বানাবে কাউন্সিলররা, নেতা বানাবে জেলার নেতৃবৃন্দ আলোচনা করে। কেন্দ্রের কোনো নেতা আমার মনে হয় না, তাদের কোনো ব্যক্তিগত চয়েস আছে বা চয়েস থাকলেও তারা সেটা প্রকাশ করবে, এটা আমার মনে হয় না। সেই ক্ষেত্রে মাই ম্যান বলতে আমি মনে করি, কোন কিছুই এখন আর দলের ভিতরে নেই। সবাই আমরা জননেত্রী শেখ হাসিনার লোক, বঙ্গবন্ধু আদর্শের কর্মী। আমরা শেখ হাসিনার কর্মী। তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত সবাই বিশ্বাস করে শেখ হাসিনাকে। তাদের আস্থা শেখ হাসিনা। তাদের স্বপ্ন শেখ হাসিনাকে ঘিরে। এই কারণে এইখানে মাই ম্যান সৃষ্টি করে ব্যক্তিগত লোক সৃষ্টি করে কোনো লাভ নেই।’

বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমা : তাহলে কী আপনাদের লক্ষ্য হচ্ছে দলকে তৃণমূল পর্যায় থেকে শক্তিশালী ও সুসংগঠিত করার লক্ষ্যে শেখ হাসিনার ‘মাই ম্যান’ তৈরি করা?

এসএম কামাল হোসেন: আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, আওয়ামী লীগের লোক তৈরি করা, জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি আস্থা-বিশ্বাস থাকবে সেই লোক তৈরি করা এবং সারাদেশের কর্মীরা জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আস্থাশীল। আমার প্রতি আস্থা আছে কি না এটা দেখার বিষয় না। দলের নীতি আদর্শের প্রতি আস্থা আছে কি না? দলের যে নীতি আদর্শ এবং জননেত্রী শেখ হাসিনা যে ধরনের কর্মী তৈরি করতে চান, যেভাবে দল গোছাতে চায়, সেই ধরনের কর্মী আমরা তৈরি করব, এটাই হচ্ছে আমাদের মূল লক্ষ্য। এখানে মাইম্যান আমরা তৈরি করব, যারা চিন্তা করে আমাদের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের ভিতরেও এই ধরনের কেউ প্রত্যাশা করে বলে আমার মনে হয় না।

বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমা : তৃণমূলে জেলা উপজেলার সম্মেলনের মিশন-ভিশন টার্গেট বা সেটআপ কি আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে লক্ষ্য করে নেতৃত্ব নির্বাচনের প্রক্রিয়াকে গুরুত্ব দেওয়া হবে কি না?

এসএম কামাল হোসেন: লক্ষ্য হচ্ছে দলকে শক্তিশালী করা। দল শক্তিশালী করলে যে কোনো ক্রাইসিস দল মোকাবিলা করতে পারবে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। সেই ক্ষেত্রে আমরা দলকে শক্তিশালি করতে চাচ্ছি। কারণ আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের নেত্রী যে উন্নয়ন করেছেন এবং আমাদের নেত্রীর যে জনপ্রিয়তা এবং দল যদি শক্তিশালী হয়, আমরা যে কোন ক্রাইসিস মোকাবিলা করতে পারব। আমার কাছে তিনটা জিনিস হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ-একটা হচ্ছে আমার নেত্রীর জনপ্রিয়তা। দুই হচ্ছে আমার নেত্রী যে উন্নয়নের কর্মকাণ্ড করেছেন, উন্নয়নের মহাযজ্ঞ করেছেন, মানুষের যে আস্থা আছে, সেই ক্ষেত্রে আমাদের দল যদি শক্তিশালী হয় জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা যে কোনো ক্রাইসিস মোকাবিলা করতে পারব। এই লক্ষ্য নিয়ে আমরা দলকে সুসংগঠিত করছি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে।

বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমা :: ধন্যবাদ আপনাকে

এসএম কামাল হোসেন: ধন্যবাদ বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমাকেও।