Home ব্রেকিং অবকাঠামোর অভাব ও মুর্গি ফার্মের কারনে মতলবের ষাটনল পর্যটন কেন্দ্র হুমকির মুখে

অবকাঠামোর অভাব ও মুর্গি ফার্মের কারনে মতলবের ষাটনল পর্যটন কেন্দ্র হুমকির মুখে


শামসুজ্জামান ডলারঃ সারাবছর পর্যটকদের কমবেশী আনাগোনা থাকলেও শীত মৌসুমে প্রতিদিনই পর্যটকদের ভীর লেগে থাকতো। আর শুক্রবার বা সরকারী ছুটির দিন হলেতো আর কোন কথাই নেই। সামান্য অবকাঠামোর অভাব ও অবৈধভাবে গড়েউঠা ৪টি পোল্ট্রি খামারের কারনে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনলের জমজমাট পর্যটন কেন্দ্রটি আজ হুমকির মুখে।

২০০০ সালে সরকারি ভাবে এটিকে পর্যটনকেন্দ্র হিসাবে ঘোষনা করা হয়। পর্যটন কেন্দ্রটির অবকাঠামোর উন্নয়ন ও আধুনিকরণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। নদীমাতৃক এলাকা হওয়া সত্ত্বেও চাঁদপুর জেলায় চিত্তবিনোদনের জন্য তেমন কোনো জায়গা নেই। ফলে চিত্তবিনোদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এখানকার জনগণ। জেলাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে ও রাজধানীর কাছে বিবেচনায় ২০০০ সালের ২৩ এপ্রিল মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনলে পর্যটন কেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তÍর স্থাপন করা হয়। এই পর্যটন কেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তÍর স্থাপন করেন তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া (বীর বিক্রম) ষাটনলের মেঘনা নদীর পাড়ে প্রায় ১০০ একর সম্পত্তির ওপর পিকনিক স্পট নির্মাণ করার জন্যে চাঁদপুর জেলা পরিষদকে দায়িত্ব দেয়া হয়। জেলা পরিষদ গত ২০ বছরে ষাটনল পর্যটন কেন্দ্রে ১টি বিশ্রামাগার, ১টি রন্ধনশালা, ১টি ড্রেসিং ভবন, ১টি ডাইনিং ভবন নির্মাণ করে। এছাড়া কয়েকটি টয়েলেট নির্মাণ করা হয়। এখন প্রয়োজনীয় বরাদ্দ না পাওয়ায় ভূমি সমতল করার জন্যে মাটি ভরাট করার কাজ, বিদ্যুৎ ও পানি সংযোগ, প্রয়োজনীয় সীমানা প্রাচীর, লঞ্চঘাটের যাত্রীছাউনী ও পন্টুন স্থাপন, অভ্যন্তরীণ সড়ক সংযোগ, নিরাপত্তা শেড, ডাকবাংলোসহ অন্যান্য ভবন করা যাচ্ছে না। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুর থেকে অল্প সময়ের মধ্যে এ পর্যটন কেন্দ্রে আসা যায়। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে নৌ ও সড়ক পথে ষাটনল পর্যটন কেন্দ্রে আসা সম্ভব।

 

ষাটনল পর্যটন কেন্দ্রে লাগোয়া ২০১৬সালের শেষের দিকে ওখানে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে পোল্ট্রি খামার। বর্তমানে ওখানে গড়ে উঠেছে ৪টি মুরগীর খামার। এরমধ্যে ব্যবসায় লোকসানের কারনে সেখানে ২টি খামারে রয়েছে লেয়ার ও ব্রয়লার মুরগী। খামারের ৭হাজার মুরগীর বিষ্টা ফেলা হয় ওখানেই। ফলে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে আশেপাশের সাধারন মানুষের যাতায়াত প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এ কারনে জনপ্রিয় হয়ে উঠা ষাটনল পর্যটন থেকে পর্যটকরা এখন মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। মাত্রারিক্তভাবে কমেগেছে ষাটনল পর্যটন কেন্দ্রের পর্যটক সংখ্যা।

ঢাকা-নারায়নগঞ্জ থেকে নৌ ও সড়ক পথে যাতায়াত সহজতর হওয়ায় শীত মৌসুমে শুক্রবারসহ সরকারী ছুটির দিনে প্রতিদিন পিকনিক পার্টী নিয়ে বড় আকৃতির ৪/৫টি লঞ্চ আসলেও গত ২বছর যাবৎ তা আর আগের মতো দেখা যাচ্ছে না। কেননা, পর্যটক বা পিকনিক পার্টীর বড় বড় গ্রুপ আসার ক্ষেত্রে তারা পর্যটনের পরিবেশ দেখার জন্য প্রথমে প্রতিনিধি পাঠায়। কিন্তু প্রতিনিধি পর্যটনে গড়েউঠা মুরগীর খামারের দুর্গন্ধ ও তেমন অবকাঠামো না থাকার কারনে তারা ষাটনল পর্যটন কেন্দ্র থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। পর্যটন সংলগ্ন ষাটনল লঞ্চঘাট এলাকার দোকানদারদের সাথে আলাপকালে তারা এমনটাই জানান।

এই পর্যটন কেন্দ্রে ২টি বসার সেট, ১টি রান্না ঘর, ২টি টয়লেটের ব্যবস্থা থাকলেও তদারকির অভাব ও স্থানীয়দের অপব্যবহারের কারনে এগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে।

কয়েকজন দোকানদার জানায়, পর্যটন কেন্দ্রে আগের মতো লোক না আসার কারনে তাদের ব্যবসা এখন খুবই মন্দা। সারা বছর কম-বেশী লোক আসলেও বর্তমানে পোল্ট্রি খামারের দুর্গন্ধ পর্যাপ্ত সুবিধাদির অভাবের কারনে পর্যটকদের বা পিকনিক পার্টীর ছোট ছোট দলগুলোও কম আসছে।

স্থানীয় লিয়াকত হোসেন, ইমাম হোসেন, ফজলুল হক, জহিরুল হাসান, শাকিল খান ও মিরন’রা জানায়, আমরা পর্যটন কেন্দ্রে ভ্রাম্যমানভাবে দোকনদারী করতাম। ডেকোরেটরের মালামাল ভাড়া দিতাম। খাবার-দাবার রান্নার অর্ডার পাইতাম। চকলেট, চুইমগাম, বোতলের খাবার পানি, সেভেনআপ, পেপসি, টাইগার, বুট-বাদামসহ এ জাতীয় জিনিসপত্র বেইচা বার্তি আয়-রোজগার করতাম। কিন্তু আগের মতন লোকজন না আসাতে অহন প্রায় সবই বন্ধ।

 

অভিযোগ রয়েছে, পোল্ট্রি খামার গড়তে হলে পরিবেশের ছাড়পত্রের প্রয়োজন হলেও এখানে গড়েউঠা ৪ পোল্ট্রি খামারের কারোরই পরিবেশের ছাড়পত্র নেই। নেই উপজেলা প্রানী সম্পদ অফিসের রেজিষ্ট্রশন নাম্বারও। এ ছাড়া মুরগীর বিষ্টা সংরক্ষনের ব্যাপারেও নেই কোন ধরনের ব্যবস্থা। তাই যেখানে সেখানে ফেলা হচ্ছে মুরগী খামারের বিষ্টা।

এ ব্যাপারে খামারী বুলবুলের সাথে কথা হলে সে জানায়, আমরা এখানে অনেক টাকা বিনিয়োগ করেছি এখন পোল্ট্রি খামার বন্ধ করেদিলে কি কাজ করবো ?

পোল্ট্রি খামার গড়ার ব্যপারে উপজেলা প্রানী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. ফারুক হোসেন বলেন, পরিবেশের ছাড়পত্রতো লাগবেই পাশাপাশি উপজেলা প্রানী সম্পদ দপ্তর থেকে রেজিষ্ট্রেশন নেয়া বাধ্যতামূলক হলেও ষাটনলের পোল্ট্রি খামার ৪টি এখনো রেজিষ্ট্রেশন করেনি। তবে, এ ব্যপারে আইনী ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ থাকলেও লোকবলের সল্পতার কারনে আমরা তা করতে পারছিনা।

 

পর্যটন কেন্দ্র লাগোয়া পোলট্রি খামার গড়ে উঠা ও অবকাঠামোর বিষয়ে মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্নেহাশিস দাশ জানান, ষাটনল পর্যটনকেন্দ্রকে আধুনিকায়ন ও যুগোপযোগী করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। অর্থ বরাদ্দ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আর পর্যটন কেন্দ্র ও পরিবেশের ক্ষতি করে এমন কোনো বিষয়ে ছাড় দেওয়া হবে না।