Home অন্যান্য কিস্তি দিতে না পারায় মাসহ কারাগারে কোলের শিশু

কিস্তি দিতে না পারায় মাসহ কারাগারে কোলের শিশু


বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমা ডেক্স: রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলায় করোনা মহামারির কারণে ঋণের কিস্তির টাকা সময় মতো শোধ দিতে না পারায় ঋণগ্রহীতা মাসহ তার দুধের শিশুকে কারাগারে পাঠিয়েছে বীজ নামের একটি এনজিওর কর্তৃপক্ষ। সূত্র মতে, রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার মাড়িয়া গ্রামের আব্দুস সালাম তার স্ত্রী নিলুফা খাতুনের নামে বেসরকারি ঋণ দান সংস্থা ‘বীজ’ এনজিও থেকে গত বছর এক লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। বৈশ্বিক মহামারী করোনাকালীন সময়ে কাজ না থাকায় আব্দুস সালামের সংসারে অভাব অনটন দেখা দেয়। এ কারণে কিস্তির টাকা বকেয়া পড়ে যায় এনজিওর কাছে। সরকারের তরফ থেকে করোনাকালীন সময়ে কিস্তির টাকা আদায়ে বিরত থাকার জন্য এনজিও গুলোকে নির্দেশ দিলেও সরকারের সেই নির্দেশনা মোটেও আমলে নেয়নি এনজিও বীজ। খেলাপি দেখিয়ে আব্দুস সালামের স্ত্রীর নামে মামলা দায়ের করে এনজিওটি।

ওই মামলায় আদালত আব্দুস সালামের স্ত্রীর নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। রবিবার (২৪ জানুয়ারি) রাতে দুর্গাপুর থানার পুলিশ আব্দুস সালামের স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায়। সাথে এক বছর বয়সী শিশু কন্যাও বাদ যাননি। পুলিশ কোলের শিশুকেও সাথে করে থানায় নিয়ে যায়। মাত্র এক বছর বয়সে অবুঝ শিশুকে কারাগারে যেতে হবে তা হয়তো কখনোই ভাবেননি শিশুটির মা-বাবা। এ নিয়ে সোমবার (২৫ জানুয়ারি) দিনভর দুর্গাপুর সদরে চলে নানা আলোচনা সমালোচনা। এনজিওর মানবিকতা নিয়ে এলাকাবাসীর মাঝেও তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃত নিলুফা বেগমের স্বামী আব্দুস সালাম জানান, সাংসারিক নানা দায় দেনার কারণে প্রায় দুই বছর পূর্বে দুর্গাপুর উপজেলা থেকে পরিচালিত ‘বীজ’ নামক এনজিও থেকে স্ত্রী নিলুফা বেগমের নামে জনতা ব্যাংক দুর্গাপুর শাখায় থাকা একাউন্টের চেক জমা দিয়ে এনজিও থেকে মাসিক কিস্তিতে একলক্ষ টাকা ঋণ নেন। ঋণ নেওয়ার পর থেকে নিয়মিত ভাবে এনজিওর মাষ্টারের মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা মাসিক কিস্তি পরিশোধ করতে থাকেন।

সহায় সম্বলহীন হত দরিদ্র আব্দুস সালাম দিনমজুরি করে একদিকে পরিবার পরিজনদের দিনে দু’ মুঠো ডাল ভাত, পরিধেয় বস্ত্র এবং চিকিৎসার খরচ অন্যদিকে এনজিওর কিস্তির টাকার জোগাড় করতে অতিরিক্ত পরিশ্রম ও মানসিক টেনশনের ফলে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন।

হাসপাতালে প্রায় দেড় মাস চিকিৎসাধীন থাকেন আব্দুস সালাম। জমানো কিছু টাকা সেই সাথে ধার-কর্য ও প্রতিবেশীদের কাছ থেকে সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে চিকিৎসার খরচ ব্যবস্থা করে সুস্থ হয়ে বাড়ী ফেরেন।

আব্দুস সালাম আরও জানান, বাড়ীতে ফেরা মাত্রই এনজিওর কর্মী ও ম্যানেজার মহিরুল ইসলাম এসে কিস্তির টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করে এবং বলে দ্রুত টাকা পরিশোধ না করলে মামলা করে জেলের ভাত খাওয়াবে। এনজিওর চাপের মুখে মামলার ভয়ে এলাকার সুদখোর মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা নিয়ে এনজিওর ম্যানেজারকে আরেকটি কিস্তি দেন।

পরের মাসে সুদখোর মহাজনের চাপে সুদের টাকা দেওয়ায় এনজিওর কিস্তি দিতে অপারগতা প্রকাশ করে আব্দুস সালাম। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ‘বীজ’ এনজিওর দুর্গাপুর শাখার ব্যবস্থাপক মহিরুল ইসলাম আব্দুস সালামের স্ত্রী নিলুফার বেগমের জমা রাখা জনতা ব্যাংকের চেক ডিজনার করে নিলুফা বেগমকে আসামী করে রাজশাহী চিফ জুডিশিয়াল আদালতে মামলা করে।

এরপর দেশে মহামারী করোনা ভাইরাসের প্রভাব আসলে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি আব্দুস সালাম দিশেহারা হয়ে পড়ে। টাকার অভাবে শহরে গিয়ে আদালতে হাজিরা দিতে না পারায় বিজ্ঞ আদালত হত দরিদ্র দিনমজুর আব্দুস সালামের স্ত্রী নিলুফা বেগমের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।

এতে গত ২৪ জানুয়ারি রবিবার আনুমানিক রাত ১২ টার দিকে দুর্গাপুর থানা পুলিশ মাড়িয়া গ্রামের নিজ বাড়ী থেকে আব্দুস সালামের স্ত্রী নিলুফাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়।

এক বছরের দুধের বাচ্চা সানিয়াকে নিয়ে অসহায় মা নিলুফা বেগম থানায় রাতভর আটক থাকার পর ২৫ জানুয়ারি সকালে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করে দুর্গাপুর থানা পুলিশ।

এনজিওর ঋণের কিস্তির টাকা দিতে না পারায় এক বছরের দুধের বাচ্চা সহ মাকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠানোর বিষয়টি এলাকাবাসী মেনে নিতে পারেনি। ফলে এলাকায় চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।

এনজিওর কর্মী ও শাখা ব্যবস্থাপকের ওপর এলাকাবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে আছে। যে কোন সময় কোন ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশংকা করছেন অনেকেই।

এ বিষয়ে দুর্গাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) হাশমত আলী বলেন, আদালত থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আসায় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে আসামীর এক বছরের দুধের শিশু সাথে থাকায় পুলিশ আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে শিশুটিসহ আসামী নিলুফা বেগমকে থানা হাজতে না রেখে রাতে অফিসারদের ডিউটি কক্ষে রাখা হয়। সকালে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে ‘বীজ’ এনজিওর দুর্গাপুর শাখার ব্যবস্থাপক মহিরুল ইসলামের সাথে তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।