বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমা ডেক্স: মহামারি করোনাভাইরাসের বিস্তাররোধে দেশজুড়ে কোভিড-১৯ টিকা প্রদান কার্যক্রম আজ রোববার (৭ ফেব্রুয়ারি) শুরু হবে। ইতোমধ্যে সরকার দেশের সব জেলায় টিকার ডোজ পাঠিয়েছে এবং কর্মসূচি পরিচালনার জন্য সরঞ্জাম ও বুথের ব্যবস্থাসহ সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। টিকা প্রদানে প্রস্তুত রয়েছেন স্বাস্থ্যকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকরা। তাদেরকে সব ধরনের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
বর্তমানে বাংলাদেশে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিড-১৯ টিকার ৭০ লাখ ডোজ রয়েছে এবং করোনার টিকা নিতে চাইলে www.surokkha.gov.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। সরকারের লক্ষ্য ছিল প্রতিদিন গড়ে ২ লাখ ৬০ হাজার মানুষকে টিকা দেয়া। তবে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত গত ৯ দিনে মাত্র দেড় লাখ মানুষ অনলাইনে নিবন্ধন করেছেন।
এমন পরিস্থিতিতে প্রথম মাসে ৬০ লাখেরও বেশি মানুষকে টিকা দেয়ার সিদ্ধান্তের পরিবর্তে ৩৫ লাখ লোককে টিকা দেয়া হবে।
গত ২৭ জানুয়ারি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতিতে পাঁচজনকে টিকা দেয়া হয়। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তাকে টিকা দেয়ার মধ্য দিয়ে এই কর্মসূচি শুরু হয়।
কোভিড-১৯ টিকার ডোজ প্রাপ্ত অন্য চারজন হলেন-হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. আহমেদ লুৎফুল মোবেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অ্যাডমিন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা, ট্রাফিক পুলিশের সদস্য (মতিঝিল অঞ্চল) দিদারুল ইসলাম এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম ইমরান হামিদ। পরেরদিন মন্ত্রিসভার প্রথম কোনো সদস্য হিসেবে করোনার টিকা গ্রহণ করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
এদিকে ২৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আহসানুল ইসলাম টিটুর (টাঙ্গাইল-৬) এক প্রশ্নের জবাবে অগ্রাধিকারী ভিত্তিতে কাদের কী পরিমাণ কোভিড-১৯ টিকা দেয়া হবে তা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সম্ভাব্য টিকা গ্রহণকারীরা হলেন ৪ লাখ ৫২ হাজার ২৭ জন সরকারি স্বাস্থ্য কর্মীর সবাই এবং ৬ লাখ বেসরকারি স্বাস্থ্য কর্মী (অনুমোদিত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের), যারা সরাসরি কোভিড-১৯ স্বাস্থ্যসেবায় নিযুক্ত আছেন।
সেই সাথে অগ্রাধিকারের তালিকায় ২ লাখ ১০ হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৫ লাখ ৪৬ হাজার ৬২০ জন সদস্য, সামরিক ও বেসামরিক প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৩ লাখ ৬০ হাজার ৯১৩ জন সদস্য, রাষ্ট্র পরিচালনায় অপরিহার্য্য ৫০ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী, ৫০ হাজার গণমাধ্যম কর্মী, ১ লাখ ৭৮ হাজার ২৯৮ জন জনপ্রতিনিধি, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার দেড় লাখ কর্মচারী, ৫ লাখ ৪১ হাজার ধর্মীয় প্রতিনিধি, মৃতদেহ সৎকারে নিয়োজিত ৭৫ হাজার ব্যক্তি এবং জরুরি সেবার (পানি, গ্যাস, পয়ঃনিষ্কাশন, বিদ্যুৎ, ফায়ার সার্ভিস ও পরিবহন) ৪ লাখ কর্মী রয়েছেন।
এছাড়া স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরের দেড় লাখ কর্মী, ১ লাখ ২০ হাজার প্রবাসী অদক্ষ শ্রমিক, জেলা ও উপজেলায় কর্মরত ৪ লাখ জরুরি সেবার সরকারি কর্মচারী, ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬২১ জন ব্যাংক কর্মকর্তা ও কর্মচারী, দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার (যক্ষ্মা, এইডস, ক্যান্সার) ৬ লাখ ২৫ হাজার জনগোষ্ঠী, ৬৪ থেকে ৭৯ বছর বয়সী ১ কোটি ৩ লাখ ২৬ হাজার ৬৫৮ জন্য ব্যক্তি, ৮০ বছর ও তদূর্ধ্ব ১৩ লাখ ১২ হাজার ৯৭৩ জন জনগোষ্ঠী, জাতীয় দলের খেলোয়াড় ২১ হাজার ৮৬৩ জন এবং বাফার, ইমার্জেন্সি ও প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় ১ লাখ ৭০ হাজার নিয়োজিতের জন্য টিকা সংরক্ষণ করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভ্যাক্স সুবিধা থেকে বাংলাদেশ তার জনসংখ্যার ৩ কোটি ৪০ লাখ লোকের বা ২০ শতাংশের জন্য ৬ কোটি ৮০ লাখ টিকা পাবে।
তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা গ্রুপের (এসএজিই) নির্দেশিকা এবং দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে টিকা গ্রহণকারী অগ্রাধিকার গোষ্ঠীগুলোর তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, প্রথম পর্যায়ে টিকা বিতরণে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে দেশের মোট ১ কোটি ৫০ লাখ লোক (জনসংখ্যার ৮ দশমিক ৮৬ শতাংশ) দুই ডোজ টিকা পাবেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই টিকাগুলো দেশের ৬৪ জেলা ইপিআই স্টোর এবং ৪৮৩টি ইপিআই স্টোরে সংরক্ষণ করা হবে।
ভারতের উপহার হিসেবে সেরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের ২০ লাখ ডোজ গত ২১ জানুয়ারি বাংলাদেশে এসে পৌঁছে। এরপর ২৫ জানুয়ারি ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে বাংলাদেশের ক্রয় করা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি কোভিড-১৯ টিকা ‘কোভিশিল্ড’-এর প্রথম চালানের ৫০ লাখ ডোজ নিরাপদে ঢাকায় এসে পৌঁছে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ হারুন-অর-রশিদ
বার্তা সম্পাদকঃ আশিক সরকার
Copyright © 2024 Bporikromanewsbd.com. All rights reserved.