Home ব্রেকিং রাজধানীর সুবিধা বঞ্চিত দক্ষিণ সিটির ৬২ নং ওয়ার্ড

রাজধানীর সুবিধা বঞ্চিত দক্ষিণ সিটির ৬২ নং ওয়ার্ড


খোদ রাজধানীর বাসিন্দা হয়ে ও বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৬২ নং ওয়ার্ডের মানুষ। গত তিন বছরেও যেখানে নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে পারেনি ঢাকা দক্ষিন সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)।

সরেজিমিনে গিয়ে দেখা যায়, বেহাল সড়ক, নেই ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও আবাসিক এলাকায় রাস্তার ওপর পড়ে থাকা ময়লা-আবর্জনাসহ নানা সমস্যায় কিনারা হয়নি এখানকার এলাকার উন্নয়ন। ফলে ডিএসসিসি ও ওয়ার্ড কাউন্সিলরের প্রচেষ্টা স্থানীয় নাগরিক মনে এখনো স্বস্তি আনতে পারেনি। উল্টো, ভোগান্তি থেকে আশু মুক্তির দাবি এখন এই এলাকার বাসিন্দাদের।

উল্লেখ্য যে, রাজধানীর যাত্রাবাড়ি থানার আওতাধীন উত্তর কুতুবখালী থেকে উত্তর রায়েরবাগ পর্যন্ত অবস্থিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৬২ নং ওয়ার্ড। প্রায় ৪ লক্ষ লোকের বসবাস এখানে। এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আলহাজ্ব মোস্তাক আহমেদ। যিনি ২০১৮ সাল থেকে নবগঠিত এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচিত হয়ে ২য় বার ক্ষমতায় আছেন। এক সময় এই এলাকা দনিয়া ও মাতুয়াইল ইউনিয়ন পরিষদে থাকলেও ২০১৮ সালে ৬২ নম্বর ওয়ার্ড হিসেবে যুক্ত হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে। কিন্তু তিন বছরের বেশি সময় পার হলেও এখনও আধুনিক নগরীর তেমন কোন সুবিধাই পান না এখানকার মানুষ।

৬২ নং ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, সুয়ারেজের বেহালদশা।তাছাড়া সম্প্রসারিত এসব এলাকায় নেই পানি সরবরাহ বা পয়নিষ্কাশনের যথাযথ ব্যবস্থা। মশা নিধন, নর্দমা পরিষ্কারের মতো সেবা কার্যক্রম এই ঋতুতে খুব নগন্য। তবুও এসব দেখার যেন কেউ নেই। জনসাধারণের চলাচলের প্রধান সড়ক শনি আখড়ার জিয়া স্বরণী রোডের অবস্থা দেখে বোঝা যায়, কতটা কষ্টে কাটছে জনজীবন। এখানকার আন্ডারপাস সংলগ্ন জীর্ন প্রায় রাস্তার পাশে কালভার্ট-রাস্তা সংস্কার না করায় প্রতি মাসে এখানে প্রায় ২০-৩০ টি গাড়ি দূর্ঘটনার স্বীকার হয় ও মানুষ খালে পড়ে যায়। এ নিয়ে এলাকার বিভিন্ন মহল ও সচেতন নাগরিক সমাজ আওয়াজ তুললেও, এখনো বেহাল অবস্থায় রয়েছে শনি আখড়ার শনির খাল খ্যাত এই যায়গাটি। বাসিন্দাদের অভিযোগ, সামান্য বৃষ্টিতেই এখানে ভোগান্তি বাড়ে শতগুণ। এছাড়া রাস্তাঘাট উন্নয়ন, পানি সরবরাহ, পয়ঃনিষ্কাশন, মশা নিয়ন্ত্রণসহ সিটি কর্পোরেশনের কোনো সুবিধা বা সেবাই পাচ্ছেন না বলে তাদের অভিযোগ।

তবে, নাগরিক সুবিধা নিশ্চিতে পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে জানিয়ে শিগগিরই কাজ শুরুর আশ্বাস দিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ৬২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও শেখদি আব্দুল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি আলহাজ্ব মোস্তাক আহমেদ। সমস্যার কথা স্বীকার করে, ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও রাস্তা-ঘাটসহ নাগরিক সুবিধা নিশ্চিতের আশ্বাসও দেন এই ওয়ার্ড কাউন্সিলর।

তিনি বলেন, এখানে একটি আধুনিক খেলার মাঠ, কমিউনিটি সেন্টার, শিশু পার্ক, ব্যায়ামাগার ও পাঠাগার, পানি সুয়ারেজ, রাস্তা প্রস্বস্তকরন, ড্রেনেজ ব্যবস্থা, বর্জ্য ট্রান্সফার স্টেশন, এস টি এস এর যায়গা নির্ধারন করা রয়েছে আমার পরিকল্পনায়।

তিনি আরও বলেন, আমাদের এটি নবগঠিত ওয়ার্ড। এখানকার যতভাগ রাস্তা হয়েছে, ততোভাগ ড্রেন, সুয়ারেজ ও এলইডি সহ বিদ্যুৎ স্থাপনা বসানো হয়েছে। আর পর্যাপ্ত যায়গা সংকটের কারনে অন্যান্য নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এলাকাবাসী। তবে নতুন মেয়র আসার পর তিনি আমার ওয়ার্ড নিয়ে যে পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে, তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে আমি আমার ওয়ার্ডকে নাগরিক সব সুবিধার শুধু প্রতিশ্রুতি নয়, বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।

এদিকে নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আয়তন দ্বিগুণ হলেও এখনও এই এলাকায় উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। সবকিছুই বেড়ে উঠেছে অপরিকল্পিতভাবে। এলাকার বাসিন্দাদের ঢাকার সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ থাকলেও বছরের পর বছর নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন তারা। এলাকাগুলোর রাস্তা-ঘাট, নর্দমা, ফুটপাত, ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ সিটি কর্পোরেশন উপযোগী অবকাঠামোগত ব্যবস্থা গড়ে উঠেনি। অপরিকল্পিতভাবে বিচ্ছিন্ন উন্নয়ন ও অব্যবস্থাপনায় এলাকাগুলোর এখনো বেহাল অবস্থা।
গোবিন্দপুরের বাসিন্দা মোঃ সোহান জানান, ওয়ার্ডে তিনি ২০ বছর ধরে বসবাস করছেন। সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তা তলিয়ে যায়। বছরজুড়ে খোঁড়াখুঁড়ি লেগেই থাকে। তিনি বলেন, এত গুরুত্বপূর্ণ ওয়ার্ড অথচ কমিউনিটি সেন্টার, নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র, পার্ক, খেলার মাঠ, ব্যায়ামাগার, গণশৌচাগার ও গ্রন্থাগার নেই। তবে, আশ্বাসের গন্ডি পেরিয়ে দ্রুত বাস্তবে রূপ নেবে সব পরিকল্পনা, এমনটাই আশা করেন এলাকাবাসী।

ডিএসসিসির কর্মকর্তারা জানান, এই এলাকাটি ২০১৭ সালে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সিটি কর্পোরেশনে অন্তর্ভুক্ত হয়। অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা ইউনিয়নগুলো থেকে রুপান্তরিত নবগঠিত ওয়ার্ড গুলো পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা সময়সাপেক্ষ।