Home ধর্ম ফেরেশতারা যাদের জন্য নিয়মিত দোয়া করেন

ফেরেশতারা যাদের জন্য নিয়মিত দোয়া করেন


এক হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তাদের প্রতি রহমত বর্ষণ করেন এবং ফেরেশতারা রহমতের দোয়া করেন, যারা মানুষকে কল্যাণকর বিষয় (দ্বীনি জ্ঞান) শেখায়। এমনকি গর্তের পিপীলিকা ও সাগরের মাছ তাদের জন্য রহমত ও মাগফিরাতের দোয়া করে।’ সুনানে তিরমিজি : ২৬৮৫

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট দুই ব্যক্তির কথা উল্লেখ করা হলো, একজন আবেদ (খুব বুজুর্গ ও আমলকারী) অপরজন আলেম। তখন হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘একজন আবেদের ওপর একজন আলেমের ফজিলত। তোমাদের মধ্যে নিকৃষ্টতম ব্যক্তির তুলনায় আমার ফজিলতের ন্যায়।’

এরপর নবী করিম (সা.) এই হাদিসটি বর্ণনা করেন। এই হাদিস প্রসঙ্গে ইমাম তিরমিজি (রহ.) বলেন, আবু আম্মার হুসায়ন ইবন হুরায়ছ খুযাঈ (রহ.)-কে বলতে শুনেছি, ফুযায়াল ইবন ইয়ায বলেছেন, ‘একজন আমলদার শিক্ষক আলেমকে আকাশ রাজ্যে ‘মহান’ বলে আখ্যায়িত করা হয়।

ফেরেশতারা আল্লাহতায়ালার বিস্ময়কর সৃষ্টি। তারা নিষ্পাপ ও আল্লাহর নিকবর্তী। তারা পূত-পবিত্র, তারা সর্বদা আল্লাহতায়ালার তাসবিহ ও ইবাদত-বন্দেগিতে মগ্ন থাকেন। তাদের দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। মানুষের জন্য ফেরেশতাদের দোয়া করার বিষয়টি কোরআন ও সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত।

উপরোল্লিখিত আমলের (দ্বীন শেখানো) ন্যায় আরও এমন কিছু আমল আছে, যেগুলোর মাধ্যমে ফেরেশতাদের দোয়া পাওয়া যায়। ফেরেশতারা যাদের জন্য দোয়া ও ইস্তেগফার করেন তারা নিশ্চয়ই অনেক সৌভাগ্যবান।

অজু করে ঘুমানো : হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি অজু করে রাতযাপন করেন তার শিয়রে একজন ফেরেশতা রাতযাপন করেন। তিনি যখন ঘুম থেকে জাগ্রত হন (কোনো কোনো বর্ণনা মতে, যতবার ঘুমের ভেতর নড়াচড়া করেন) তখন ওই ফেরেশতা বলতে থাকেন, হে আল্লাহ! অমুককে মাফ করে দিন। কেননা তিনি পবিত্র অবস্থায় রাতযাপন করেছেন।’ ইবনে হিব্বান : ১০৫১

মসজিদে প্রথম কাতারে নামাজ আদায় : হজরত বারা বিন আজেব (রা.) বলেন, আমি হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রথম কাতারে নামাজ আদায়কারীর প্রতি রহমত বর্ষণ করেন এবং ফেরেশতারা রহমতের দোয়া করেন।’ ইবনে মাজাহ : ৯৮৭

কাতারের ডানদিকে নামাজ পড়া : হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ সেসব মানুষের প্রতি রহমত বর্ষণ করেন এবং ফেরেশতারা রহমতের দোয়া করেন, যারা কাতারের ডান পাশে নামাজ আদায় করে।’ সুনানে আবু দাউদ : ৫৭৮

কাতারের মাঝখানে খালি জায়গা পূরণ করা : নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদের প্রতি রহমত বর্ষণ করেন এবং ফেরেশতারা রহমতের দোয়া করেন, যারা কাতারের সঙ্গে মিলিত হয়ে নামাজ আদায় করে। আর যে ব্যক্তি কাতারের ফাঁকা জায়গা পূরণ করে, আল্লাহ এর কারণে তার মর্যাদা বৃদ্ধি করেন।’ ইবনে মাজাহ : ৯৮৫

রোজার জন্য সাহরি খাওয়া : হজরত রাসুলে কারিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘সাহরি খাওয়া বরকতের বিষয়। তোমরা তা পরিত্যাগ করো না। এমনকি এক ঢোক পানি পান করে হলেও (সাহরি খাও)। কারণ যারা সাহরি খায় আল্লাহ তাদের প্রতি রহমত বর্ষণ করেন এবং ফেরেশতারা তাদের জন্য দোয়া করেন।’ মুসনাদ আহমদ : ১১৮৭

রোগীর সেবা-যতœ করা : হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘কোনো মুসলিম যদি অন্য কোনো মুসলিম রোগীর সেবা-যতœ করে তাহলে আল্লাহতায়ালা তার কাছে ৭০ হাজার ফেরেশতা প্রেরণ করেন। এসব ফেরেশতা তার জন্য দোয়া করতে থাকেন। সে ব্যক্তি দিনের যেকোনো সময় রোগীর পরিচর্যা করে, সন্ধ্যা পর্যন্ত ফেরেশতারা তার জন্য দোয়া করেন। অনুরূপ যে ব্যক্তি রাতের যেকোনো সময় রোগীর পরিচর্যা করে, সকাল পর্যন্ত তারা তার জন্য দোয়া করতে থাকেন।’ মুসতাদরাক হাকেম, ইবনে হিব্বান ও সহিহ তারগিব ওয়াত তারহিব : ৩/১৯৭

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ওপর দরুদ পড়া : হজরত আবদুল্লাহ বিন আমের বিন রাবিয়া তার পিতা (আমের) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে মিম্বারে বক্তব্য দিতে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি আমার প্রতি দরুদ পেশ করবে ফেরেশতারা তার জন্য দোয়া করবেন। তারা ততক্ষণ পর্যন্ত দোয়া করতে থাকবেন যতক্ষণ সে দরুদ পেশ করতে থাকে। সুতরাং কম হোক বেশি হোক যার ইচ্ছা সে দরুদ পড়তে পারে।’ সহিহুল জামে : ৫৭৪৪

মুসলিম ভাইয়ের জন্য দোয়া করা : হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কোনো মুসলিম তার অনুপস্থিত ভাইয়ের জন্য দোয়া করলে তা কবুল করা হয় এবং তার মাথার কাছে একজন ফেরেশতা নিযুক্ত থাকেন। যখন সে তার ভাইয়ের জন্য কল্যাণের দোয়া করে তখন নিযুক্ত ফেরেশতা বলেন, আমিন। অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ! কবুল করুন এবং তোমার জন্য অনুরূপ (তোমার ভাইয়ের জন্য যা চাইলে আল্লাহ তোমাকেও তা দান করুন)।’ সহিহ মুসলিম : ৮৮

প্রতিদিন দান করা : হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘প্রতি সকালে মানুষ যখন ঘুম থেকে ওঠে দুজন ফেরেশতা আসেন। তাদের একজন বলেন, ‘হে আল্লাহ! খরচকারীর ধন আরও বাড়িয়ে দিন।’ আর দ্বিতীয়জন বলেন, ‘হে আল্লাহ! কৃপণকে ধ্বংস করে দিন।’ মুসলিম : ২২২৬

সকাল-সন্ধ্যা সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াত পাঠ করা : হজরত মাকাল বিন ইয়াসার (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি সকালবেলা তিনবার পড়বে ‘আউজুবিল্লাহিস সামিয়িল আলিমি মিনাশ শাইতানির রাজিম।’ তারপর সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াত তেলাওয়াত করবে, তাহলে আল্লাহতায়ালা সে ব্যক্তির জন্য ৭০ হাজার ফেরেশতা নিযুক্ত করেন; যারা ওই ব্যক্তির জন্য মাগফিরাতের দোয়া করতে থাকেন সন্ধ্যা পর্যন্ত। আর এ সময়ের মধ্যে যদি লোকটি মারা যায়, তাহলে সে শহীদের মৃত্যু লাভ করে। আর যে ব্যক্তি এটি সন্ধ্যার সময় পড়বে, তাহলে তার একই মর্যাদা রয়েছে। (মাগরিব থেকে সকাল পর্যন্ত সময়ের জন্য ৭০ হাজার ফেরেশতা গোনাহ মাফের জন্য দোয়া করেন, আর সে সময়ে মারা গেলে শহীদের সওয়াব পাবে)। সুনানে তিরমিজি