Home ক্যাম্পাস খবর নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভা

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভা


নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশে বেসরকারী পর্যায়ে উচ্চ শিক্ষার পথ প্রদর্শক এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে র‌্যাঙ্কিং এ প্রথম স্থান অধিকারী নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে বুধবার (১৮ আগস্ট) জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর ৪৬তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস ২০২১ উপলক্ষ্যে এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক আতিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে এ আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম. মোজাম্মেল হক, এমপি এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান আজিম উদ্দিন আহমেদ।

মূল বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার সভাপতি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য এম. এ. কাশেম, বেনজীর আহমেদ, মিজ রেহানা রহমান এবং আজিজ আল কায়সার।

অনুষ্ঠানের শুরুতে উপস্থিত সকলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে নিহত সকল শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া মাহফিলে অংশ নেন। দোয়া মাহফিল পরিচালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর ফারসি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো: আহসানুল হাদী।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম. মোজাম্মেল হক এমপি বলেন, বঙ্গবন্ধু ছাত্র জীবন থেকেই গনমানুষের কথা ভাবতেন। আমরা সর্ব ক্ষেত্রে বৈষম্য এবং শোষণের শিকার ছিলাম, এর থেকে বাঁচার জন্য বাঙ্গালির মুক্তির সনদ হিসেবে ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু ৬ দফা দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন পৃথিবী আজ দুই ভাগে বিভক্ত- একদিকে শোষক আর এক দিকে শোষিত, আমি শোষিতের পক্ষে। তিনি সারা বিশ্বের নেতাদের উদ্দেশে বলেছিলেন, অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করে সেই টাকা দিয়ে দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করুণ। আমি মনে করি, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এর যে হত্যাকাণ্ড এটি কোন ব্যক্তিকে হত্যা নয়, বা একটি পারিবারকে হত্যা নয়, মূলত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কে এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে হত্যা করার জন্যই সেই দিনের সেই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল। কিন্তু জীবিত বঙ্গবন্ধু থেকে মৃত বঙ্গবন্ধু অনেক বেশি শক্তিশালী। তার আদর্শ ও দর্শনের জন্য, শুধু বাংলাদেশের জন্য নয় পৃথিবীর সব খেটে খাওয়া নির্যাতিত শোষিত মানুষ তাদের মুক্তির সনদ হিসেবে বঙ্গবন্ধুর দর্শন বাস্তবায়িত হবে।

এ সময় তিনি নতুন প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানতে এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারণ করে দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে আহবান জানান। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আজিম উদ্দিন আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন দেখেছিল একটি ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বৈষম্যহীন সমাজ। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের মানুষের মাঝে মুক্তির যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তার সুযোগ্যা কন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যকে জয় করে বিশ্বসভায় একটি উন্নয়নশীল মর্যাদাবান জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সারা বিশ্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বাংলাদেশের জন্ম হতো না। একটি দেশ পরিচালনার সব দিক নির্দেশনা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান দিয়ে গিয়েছেন। আমাদের সবার বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারণ করে সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে সবাই একসাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে যেতে হবে।

এ সময় তিনি উল্লেখ করেন, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান জানাতে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি এ পর্যন্ত ১৩০০ এর অধিক মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের সম্পূর্ণ বিনা বেতনে অধ্যায়নের ব্যবস্থা করেছে। মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষ্যে এনএসইউ দেশি বিদেশী লেখকদের লেখা নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ প্রকাশ করেছে।

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার সভাপতি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের একটি ভিত্তি স্থাপন করে গেছেন যার উপরে আমাদের দেশ দাঁড়িয়ে আছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা গেলেও তার আদর্শ বেঁচে আছে আমাদের মাঝে। তিনি বলেছিলেন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগের মত উৎকৃষ্ট বিনিয়োগ আর হতে পারে না, তিনি প্রাথমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণ করেন এবং তিনি শিক্ষাকে সব থেকে বেশি গুরুত্ব প্রদান করেছেন। বৈষম্যহীন শিক্ষা প্রদানই ছিল তার লক্ষ্য।

পৃথিবীতে যে সকল দেশ শিক্ষায় এগিয়ে আছে অর্থনৈতিকভাবেও তারা এগিয়ে আছে। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন আমার যে যাত্রা তা হল অন্ধকার থেকে আলোর দিকে যাত্রা কিন্তু ঘাতকরা তাকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিয়েছিলেন। আমি নতুন প্রজন্মের উদ্দেশ্যে বলতে চাই তোমরা ববঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানো এবং বঙ্গবন্ধুর লেখা গ্রন্থগূলো পড় এবং আমি আশা করব নতুন প্রজন্ম বঙ্গবন্ধু কে জানবে। বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলা গড়তে চেয়েছিলেন, নতুন প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারণ করে সেই সোনার বাংলা গড়তে ভূমিকা রাখবে বলে আমি আশাবাদ ব্যক্ত করছি।

এম. এ. কাশেম বলেন, আগস্ট মাস জাতির জন্য শোকের মাস। এই মাসেই স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তিরা কেঁড়ে নিয়েছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কে। তিনি আমাদের দেশ পরিচালনার জন্য যে সব দিক নির্দেশনা প্রয়োজন তার সবই দিয়ে গিয়েছেন। তার জন্ম না হলে বাংলাদেশ নামের এই স্বাধীন দেশ এর জন্ম হত না।

এ সময় তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দেশ শিক্ষা, শিল্প, চিকিৎসা সহ সর্ব ক্ষেত্রে অসামান্য সাফল্য অর্জন করেছে। আমরা এনএসইউতে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ অনুসরণ করে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার কাজ করে যাচ্ছি। এসময় তিনি উল্লেখ করেন এনএসইউ এর বিরুদ্ধে একটি মহল ষড়যন্ত্র করে অপপ্রচার চালিয়ে সুনাম নষ্ট করার চেষ্টা করছে এ ব্যাপারে সঠিক তথ্য যেনে বিশ্ববিদ্যালয় এর উন্নয়নে সকলকে এগিয়ে আসতে আহবান জানান।

বেনজীর আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে এ দেশের জন্ম হত না। তারই বলিষ্ঠ নেতৃত্বে আমরা এ স্বাধীন দেশ উপহার পেয়েছি। তার সুযোগ্যা কন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে আমরা বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাড়াতে পেরেছি এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটা উন্নত দেশে পরিণত হতে পারব বলে আমি আশাবাদী।

অধ্যাপক আতিকুল ইসলাম বলেন, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান দেখিয়ে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের সম্পূর্ণ বিনা বেতনে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে অধ্যায়নের সুযোগ দেয়া হয়। আমরা এখানে নতুন প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা সম্পর্কে জানাতে সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।

অন্যান্যদের মধ্যে ভার্চুয়াল আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. ইসমাইল হোসেন, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক এ বি এম রাশেদুল হাসান, বিভিন্ন বিভাগীয় প্রধান, শিক্ষক, কর্মকর্তা এবং গণমাধ্যমের প্রতিনিধিসহ আরও অনেকে।