Home অন্যান্য সহশিক্ষা বন্ধ করে নতুন নিয়ম ঘোষণা তালেবানের

সহশিক্ষা বন্ধ করে নতুন নিয়ম ঘোষণা তালেবানের


আফগানিস্তানে ক্ষমতা গ্রহণের পর নারীশিক্ষা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে তালেবানরা। কেউ কেউ ভাবতে শুরু করেছিলেন হয়তো চিরতরে শিক্ষার অধিকার হারাবে নারী। কিন্তু না, তালেবান সরকার তাদেরকে সে অধিকার থেকে বঞ্চিত করেনি বরং সহশিক্ষা বন্ধ করে কিভাবে তা এগিয়ে নেয়া যায় তার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে তারা।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রকাশিত খবরে দেখা যায়, তালেবান কাবুল দখলের তিন সপ্তাহ পরই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনেক ক্ষেত্রে শ্রেণিকক্ষের মাঝে পর্দা তুলে কিংবা বোর্ড বসিয়ে ছাত্র আর ছাত্রীদের আলাদা করে ক্লাস করানো হয়েছে। এখন থেকে সেই নিয়মের সঙ্গে আরও কিছু নতুন নিয়ম রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছেন তালেবানের উচ্চ শিক্ষামন্ত্রী আবদুল বাকি হাক্কানি ।

তিনি গণমাধ্যমকে জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীরা পড়তে পারবেন তবে পুরুষদের থেকে আলাদা হয়ে তাদের ক্লাস করতে হবে। নারীদের জন্য একটি নতুন ইসলামিক পোশাকও চালু করা হবে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব বিষয় পড়ানো হচ্ছে সেগুলোও পর্যালোচনা করা হবে। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সালের তালেবান শাসনামলে স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে নারীদের শিক্ষা নিষিদ্ধ ছিল।

গত শনিবার আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে পতাকা উড়িয়ে তালেবান তাদের প্রশাসনের যাত্রা শুরুর ইঙ্গিত দেওয়ার পর শিক্ষা নিয়ে নতুন এই নীতিমালা প্রকাশ করল।

ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি জানায়, তালেবানের এই নীতিমালা তাদের আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের আগের পরিস্থিতি থেকে অনেকটাই ভিন্ন। তালেবান গত ১৫ আগস্ট রাজধানী কাবুল দখলের আগে আফগানিস্তানের বিশ্ববিদ্যায়লগুলোতে ছেলে-মেয়ে একসঙ্গেই পড়াশোনা চলত। নারীদের আলাদা কোনো পোশাকও পরার নিয়ম ছিল না।

তবে সেই শিক্ষাব্যবস্থা তুলে দিয়ে মোটেও দুঃখিত নন তালেবান শিক্ষামন্ত্রী বাকি হাক্কানি। তিনি বলেন, সহশিক্ষার অবসানে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। মানুষজন সব মুসলমান। তারা এটা মেনে নেবে।

মন্ত্রী আরও জানান, প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক স্কুলগুলোতেও ছেলে-মেয়ে আলাদা ক্লাস করতে হবে। আফগানিস্তানে অবশ্য স্কুলগুলোতে এই নিয়মই চলে আসছে। এর সঙ্গে কেবল যুক্ত হচ্ছে মেয়েদের হিজাব পরার নিয়ম। তবে মুখ ঢাকা বাধ্যতামূলক কি না, তা সুনির্দিষ্ট করে বলেননি মন্ত্রী।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পাঠদানের বিষয়গুলো পর্যালোচনার নতুন আরেক নিয়মের বিষয়ে মন্ত্রী হাক্কানি সাংবাদিকদের জানান, তালেবান দেশের ইসলামিক, জাতীয় এবং ঐতিহাসিক মূল্যবোধ অনুযায়ী একটি যুক্তিসঙ্গত ইসলামিক পাঠ্যক্রম তৈরি করতে চায় এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পঠন-পাঠন বিশ্বের অন্যান্য দেশের কাতারে নিয়ে যেতে চায়।

তিনি বলেন, সদ্য ঘোষিত নতুন তালেবান সরকার দেশে আজ যাকিছু বিদ্যমান আছে, তা দিয়েই দেশ গঠনের কাজ শুরু করবে। তারা ২০ বছর আগের সেই সময়ে ফিরে যেতে চায় না বলে জানান হাক্কানি।

কেউ কেউ বলছেন, তালেবানের এই নতুন নিয়মে মেয়েদের অনেকেই শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবে। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আলাদা ক্লাস নেয়ার জন্য যথেষ্ট ব্যবস্থা নেই। তবে শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, মেয়েশিক্ষক যথেষ্টই আছে। তাছাড়া, মেয়ে শিক্ষকের ঘাটতি থাকলে বিকল্প হিসাবে পর্দার আড়াল থেকে পুরুষ শিক্ষক দিয়েও পড়া চালানো যেতে পারে কিংবা প্রযুক্তি ব্যবহার করা যেতে পারে।