Home কুমিল্লা ক্যাম্পাস গবেষণার মাধ্যমে নতুন জ্ঞানের সৃষ্টি ও ভৌত অবকাঠামোর সুষম উন্নয়নের মাধ্যমে অগ্রসর...

গবেষণার মাধ্যমে নতুন জ্ঞানের সৃষ্টি ও ভৌত অবকাঠামোর সুষম উন্নয়নের মাধ্যমে অগ্রসর হচ্ছে নোবিপ্রবি : উপাচার্য

প্রফেসর ড. মো: দিদার উল আলম উপাচ‍ার্য, নোবিপ্রবি

পরিক্রমা ডেস্ক : “বিশ্ববিদ্যালয়ের এগিয়ে যাওয়া শুধু প্রচলিত পাঠদানে সীমাবদ্ধ নয় বরং শিক্ষক—শিক্ষার্থীদের মাঝে নতুন
জ্ঞানের সঞ্চার ও গবেষণার উন্নয়নের মাধ্যমে একটি উন্নত জাতি ও আত্মমর্যাদাশীল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন পূরণ করা যায়। দেশ বরেণ্য শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. মোঃ দিদার উল আলম নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক।

তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগ থেকে ১৯৭৫ সালে স্নাতক ও ১৯৭৬ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন এবং স্কটল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব অ্যাবারডিন থেকে ১৯৯০ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। কর্মজীবনে তিনি বিভাগীয় প্রধানসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে সফলতার সহিত দায়িত্ব পালন করেছেন। অধ্যাপনা ও প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ক্রীড়া ক্ষেত্রে উন্নয়নে রয়েছে তাঁর বিশেষ অবদান। তিনি জাতীয় ও আন্তজার্তিক একাধিক ক্লাবের ক্রিকেটার ছিলেন। দায়িত্ব পালন করেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট কন্টে্রাল বোর্ডের গ্রাউন্ড কমিটির সদস্য হিসেবে। তিনি বাংলাদেশ মৃত্তিকা বিজ্ঞান সমিতি, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ফর অ্যাডভান্সমেন্ট অব সায়েন্স, বাংলাদেশ ন্যাচারাল সায়েন্স সোসাইটি, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি ও বাংলা একাডেমিসহ স্বনামধন্য বিভিন্ন গবেষণাধর্মী ও পেশাজীবী সংগঠনের সদস্য। করোনার কারণে উচ্চশিক্ষা কার্যক্রমকে প্রসারিত করার কাজটি সততা, মেধা ও নিষ্ঠার সঙ্গে যিনি পরিচালনা করছেন, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ দিদার উল আলম।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নানাবিধ বিষয় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমার সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমা : আপনি কেমন আছেন? করোনা মহাদুর্যোগে আপনাদের প্রতিষ্ঠান কিভাবে পরিচালনা করেছেন—এ বিষয়ে বলবেন কি?

প্রফেসর ড. মোঃ দিদার উল আলম : মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো আছি। করোনার বিরূপ প্রভাবে শুধু বাংলাদশে নয়, এর প্রভাবে সমগ্র বিশ্বের শিক্ষা কার্যক্রম থমকে গেছে।
স্বশরীরে শিক্ষক—শিক্ষার্থী মুখোমুখি হয়ে শ্রেণী কক্ষে পাঠদান করা আর অনলাইনে শিক্ষা গ্রহণের পদ্ধতি এক নয়; কিছুটা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কারণ শিক্ষার্থীদের সাথে ‘আই কনট্যাক্ট’ ও বডি ‘ল্যাংগুয়েজ’ শিক্ষার একটি বড় মাধ্যম। তবে করোনা মহামারির মধ্যেও অনলাইনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম চালিয়ে নেয়া আমাদের ব্রত ছিল। তদুপরি করোনায় সবখানে প্রায় একই রকম গেছে; তবে আমাদের প্রচেষ্টা ছিল মহামারির মধ্যে স্তিমিত না থেকে এগিয়ে যাওয়ার। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আগে আমরা অনলাইনে পরীক্ষা এবং ক্লাস পরিচালনা করেছি। এখন আমরা সেশনজট অনেক কমিয়ে এনেছি। নতুন যারা ভর্তি হয়েছে তাদেরও ক্লাস শুরু হয়ে গেছে। এবছরেই আমরা পরবর্তী শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। এছাড়া অন্যন্য সকল কর্মকান্ড— যেমন বিভাগসমূহে বিভিন্ন সেশনে ক্লাস, পরীক্ষাসমূহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা খুবই সুন্দরভাবে সম্পন্ন করেছে। আমি মনে করি, বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমরা বেশ ভালো অবস্থানে আছি।

বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমা : করোনাকালে জনস্বার্থে কাজ করেছে নোবিপ্রবি করোনা ল্যাব। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ল্যাব প্রতিষ্ঠায় কি কি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছিলেন আপনারা?
প্রফেসর ড. মো: দিদার উল আলম : বাংলাদেশে প্রথম করোনা সূত্রপাত হয় ২০২০ সালের মার্চ মাসে। সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ দেশবাসী করোনা মহামারি ছড়িয়ে পড়া নিয়ে চরম অস্বস্তিতে ছিল। ঠিক তখনি দেশের স্বার্থে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও দেশবরেণ্য বিজ্ঞানী, গবেষকদের সাথে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের করোনা টেস্ট করার সক্ষমতা নিয়ে আলোচনা করি। তারপর মাত্র সল্প সময়ের মধ্যে সরকারের অনুমতি, সকল প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ ও মেশিনের ব্যবস্থা করা ও টেস্টিং উপযোগী নেগেটিভ ও পজিটিভ প্রেসার সুবিধাদিসহ ল্যাবরেটরি প্রস্তুত করা বিশাল চ্যালেঞ্জ ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডঃ নেওয়াজ মোঃ বাহাদুরের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধানে এবং বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ও গবেষক অধ্যাপক ডঃ ফিরোজ আহমেদ এর পরিচালনায় করোনা টেস্টিং ল্যাব চালু করা সম্ভব হয়েছে। ল্যাবরেটরি পরিচালনার সকল ব্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অর্থায়নে পরিচালিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকবার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়, সংস্থায় করোনা টেস্টিং ল্যাবরেটরির বাজেট চেয়ে পত্র প্রদান করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের করোনা টেস্টিং ল্যাবরেটরি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে পরিচালিত হচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষের জীবন ও দেশমাতৃকাকে রক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয়েরে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিনা পারিশ্রমিকে নিজের জীবনকে চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রেখে স্বেচ্ছাসেবকের দ্বায়িত্ব পালন করার অনন্য নজির স্থাপন করেছে যা প্রশংসার দাবিদার।

বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমা : নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আন্তজার্তিক পরিসরে কেমন অবস্থানে আছে? পাঠদানে দক্ষতার ঘাটতি, কারিকুলাম, শিক্ষার্থীদের জ্ঞানগত সমস্যা কোন সীমাবদ্ধতা কি আছে?

প্রফেসর ড. মো: দিদার উল আলম : ভৌগলিকগত অবস্থান ও পরিবেশগতভাবে বাঙ্গালী সাহসী মেধাসম্পন্ন জাতি। প্রয়োজন শুধু দৃঢ়তা, একাগ্রতা এবং মেধা চর্চার। আমাদের শিক্ষার্থীরা পৃথিবীর যেকোনো দেশের শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকার যোগ্যতা রাখে। তাদের মেধা, মনন এবং গ্রহণ করার যোগ্যতা অনন্য। নতুন বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে দেশের পুরাতন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তুলনায় অভিজ্ঞ শিক্ষকের ঘাটতি থাকলেও আমাদের রয়েছে বিশ্বমানের একঝাঁক তরুণ মেধাবী শিক্ষক। নোবিপ্রবি শিক্ষকরা নিরাসক্তভাবে সত্যের সন্ধানে ব্রতী হয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক নতুন নতুন গবেষণা ও অনুসন্ধান কার্যক্রমকে এগিয়ে নিচ্ছে। সম্প্রতি এখানকার ১১ শিক্ষক পেয়েছেন বিশ্বসেরা গবেষকের পুরস্কার। নোবিপ্রবি শিক্ষক—শিক্ষার্থীরা বিগত বছর প্রায় তিনশটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করে, বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্বের যেকোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে গবেষণাপত্র প্রকাশের মান বেড়েছে। যারা বিশ্ববিদ্যালয়কে শিক্ষা ও গবেষণায় এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। আমাদের কারিকুলামে কিছুটা ঘাটতি থাকলেও বর্তমানে কারিকুলাম বিশ্বমানের করার যথাযথ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। একজন শিক্ষক বা শিক্ষার্থী স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে না পারলে সৃষ্টিশীল হতে পারবেন না, এটা সত্য। তবে যে সকল প্রতিষ্ঠান জাতি গঠনে ভূমিকা রাখছে অন্তত সেসব প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখা উচিত। যদি একাডেমিক যোগ্যতা, গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ, মেধা, সততা ও একাগ্রতার মানদন্ড সামনে রেখে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় উপযুক্ত শিক্ষক নিয়োগ দেয়া যায়, তাহলে শিক্ষক শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে তাদের জায়গা করে নিবে তা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলা যায়।

বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমা : সরকার কারিগরি শিক্ষার ওপর জোর দিচ্ছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কারিগরি শিক্ষায় যুগপোযোগী জনশক্তি গড়ে তুলতে কতটা সক্ষম? এক্ষেত্রে আপনার বিশ্ববিদ্যালয় কী
ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে?
প্রফেসর ড. মো: দিদার উল আলম : কারিগরি শিক্ষার মূল বিষয় হলো মৌলিক জ্ঞান আহরণের মাধ্যমে দক্ষ জনসম্পদ প্রস্তুতকরন। এখানে দুইটি লক্ষ্য স্পষ্টত: একটি হচ্ছে দেশের চাহিদা মেটানো এবং অপরটি হলো বিদেশের জনশক্তির বাজার ধরা। বাংলাদেশ থেকে দক্ষ জনশক্তি বিদেশে রপ্তানি করতে পারলে, আমাদের রেমিটেন্স অনেক বেড়ে জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখবে। তাই কারিগরি শিক্ষার জন্য দেশের চাহিদা মিটিয়ে আন্তর্জাতিক চাহিদা সামনে রেখে শিক্ষা কাঠামো, কারিকুলাম ডিজাইন করতে হবে। কোন কোন ক্ষেত্রে আমরা জনশক্তির চাহিদা বেশি এবং রপ্তানি করছি, সেই ক্ষেত্রগুলোতে বিশ্বমানের কারিগরি শিক্ষা দিয়ে অধিক হারে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে হবে। এছাড়া অবকাঠামোগত নানাবিধ সীমাবদ্ধতার কারনে বিগত ১৫ বছর স্বতন্ত্রভাবে মৌলিক বিজ্ঞান বিষয়ক বিভাগ সমূহ ছিল না। যদিও দক্ষ জনশক্তি প্রস্তুতকরনের অন্যতম শর্ত মৌলিক বিষয়সমূহে জ্ঞান আহরণ। নোবিপ্রবিতে দায়িত্ব পাওয়ার পর আমি এটা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।
সাম্প্রতিক সময়ে ইউজিসি’র সাথে দ্বিপাক্ষিক সভার সিদ্ধান্তক্রমে এ বছর থেকে মৌলিক বিজ্ঞান (pure science) এবং প্রযুক্তি বিষয়গুলোর কার্যক্রম শুরু হবে। এছাড়া বৈশ্বিক শ্রম ও দক্ষ মানবসম্পদ বাজারের সাথে সমন্বয় রেখে আমরা মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং সহ কয়েকটি বিষয় চালুকরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি; যা চলতি এই ডিসেম্বর থেকে চালু করতে পারবো বলে আশা করছি।

বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমা : নোবিপ্রবির সাথে অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্থক্য কোথায়? গবেষণাসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান আপনি কিভাবে মুল্যায়ন করেন?
প্রফেসর ড. মো: দিদার উল আলম : নোবিপ্রবি বাংলাদেশের অন্যতম স্বনামধন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্বদ্যিালয়। যেহেতু নোবিপ্রবি একটি বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় সেহেতু অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। দেশের উন্নয়নে দক্ষ মানবসম্পদ গঠনে দেশের প্রতি এ বিশ্বদ্যিালয়ের দ্বায়বদ্ধতা অনেক বেশি। বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দক্ষ মানব সম্পদ বিনির্মাণে একাডেমিক গবেষণার মাধ্যমে নতুন জ্ঞান সৃষ্টি ও ভৌত অবকাঠামোর সুষম উন্নয়নের মাধ্যমে অগ্রসর হচ্ছে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি)। শিক্ষার্থীদের সুপ্ত প্রতিভা জাগিয়ে তাদের এমনভাবে গড়ে তোলা হচ্ছে, যাতে করে এখানকার শিক্ষার্থীরা সমাজ—রাষ্ট্রের প্রতিটি দিকে নেতৃত্ব দিতে পারে। নোবিপ্রবি শিক্ষকরা নিরাসক্তভাবে সত্যের সন্ধানে ব্রতী হয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক নতুন নতুন গবেষণা ও অনুসন্ধান কার্যক্রমকে এগিয়ে নিচ্ছে। এর স্বীকৃতিস্বরূপ দেশের গবেষণায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে চতুর্থ স্থান অর্জন করে নোবিপ্রবি। এছাড়া সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ১২তম অবস্থান নিয়ে উপকূলের এই বিশ্ববিদ্যালয়টি তার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে এগিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ০৭ জন শিক্ষক এবং ৯৭ জন শিক্ষার্থী জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ ২০২১—২২ এর জন্য মনোনীত হয়েছে। দেশে বিদেশের র‌্যাংকিংয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সূচক এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে নোবিপ্রবি প্রতিবছর গবেষণা ব্যয় বৃদ্ধি করছে এবং গবেষকদের উদ্বুদ্ধ করতে নিয়মিত গবেষণা জার্নাল প্রকাশ করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব জার্নালগুলোকে কীভাবে স্কোপাস ইনডেক্স জার্নালে উন্নীত করা যায়, সে বিষয়টির গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। শিক্ষক—শিক্ষার্থীদের একাডেমিক মানোন্নয়নে বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর সঙ্গেও এর শিক্ষা সমন্বয় কার্যক্রম এগিয়ে নেয়া হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমা : গবেষণার পাশাপাশি ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়নে কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন?
প্রফেসর ড. মো: দিদার উল আলম : উচ্চশিক্ষা ও আধুনিক জ্ঞানচর্চার সম্প্রসারণে ভৌত অবকাঠামোর উন্নয়ন অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। বিদ্যমান একাডেমিক ও বিভিন্ন ভবন সমূহে ৩০ টি বিভাগের শিক্ষা কার্যক্রম চলছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্তই অপ্রতুল। এছাড়া নানাবিধ সীমাবদ্ধতা থাকা সত্বেও গবেষণার পাশাপাশি ল্যাবসহ পাঠদানের অন্যান্য সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ভৌত উন্নয়ন কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রতি আমাদের বিশেষ মনোনিবেশ রয়েছে। ইতোমধ্যে একাডেমিক ও ল্যাব ভবন, বিএনসিসি ভবন, হলসমূহ, প্রভোস্ট কোয়াটার, শিক্ষক—কর্মকর্তাকর্মচারী কোয়াটার, মেডিকেল সেন্টার, মসজিদ এবং ত্রিধর্মী উপাসনালয় নির্মাণ ও সম্প্রসারণ কাজ সম্পাদিত হয়েছে। শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুম, সেমিনাররুম, রিডিং রুম, ইন্টারনেট ও পরিবহন সুবিধা, নেট ফ্যাসিলিটি বৃদ্ধিসহ নানা উন্নয়নমুখী কর্মকান্ড চলমান রয়েছে। নির্মানাধীন ১০তলা বিশিষ্ট তৃতীয় একাডেমিক ভবনের কাজ যদি সম্পন্ন হয় তাহলে কোন সমস্যা থাকবে না। ১০তলা একাডেমিক ভবনটি সম্পন্ন হলে এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় একাডেমিক ভবন হতো। নির্মানাধীন ভবনটিতে বিগত ০৬ বছরে ০২ তলার ছাদ হওয়ার পর দীর্ঘদিন নির্মাণ কাজ বন্ধ ছিল, যা নানাবিধ জটিলতার অবসান ঘটিয়ে আবার পুনরায় নির্মাণ কাজ শুরু করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তবে এ মূহুর্তে কাজ বন্ধ আছে। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো—ভিসি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আব্দুল বাকী কে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি প্রকল্প সমূহের কার্যক্রম দ্রুততা ও সচ্ছতার সহিত এগিয়ে নেয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। অবকাঠামোগত উন্নয়নে ভবিষ্যত কর্মসূচি প্রস্তাবিত ‘শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক সমুদ্র ও সামুদ্রিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা গবেষণা ইনস্টিটিউট’ এবং ‘ইনস্টিটিউট ফর ওশানোগ্রাফি এন্ড মেরিন রিসোর্সেস ম্যানেজমেন্ট” শীর্ষক প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে যা সরকারের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয়ের ব্লু ইকোনমি সেল এর সাথে সমন্বয় করে কাজ করছে।

বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমা : বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আপনার স্বপ্ন কী? বিশ্ববিদ্যালয়কে কোন উচ্চতায় দেখতে চান?
প্রফেসর ড. মো: দিদার উল আলম: ১৬ জুন ২০১৯ আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়টির পঞ্চম উপাচার্য হিসেবে
দায়িত্বভার গ্রহণ করি। বিগত দিনের জরাজীর্ণতা পেছনে ফেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকে আমি একটাই স্বপ্ন দেখি তা হলো মেধাবী শিক্ষকদের পদচারনায় নোবিপ্রবি হবে একাডেমিক উৎকর্ষতায় দেশের অন্যতম গবেষণাধর্মী বিশ্বমানের আধুনিক সুযোগ সম্বলিত বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের এগিয়ে যাওয়া শুধু প্রচলিত পাঠদানে সীমাবদ্ধ নয় বরং শিক্ষক—শিক্ষার্থীদের মাঝে নতুন জ্ঞানের সঞ্চার ও গবেষণার উন্নয়নের মাধ্যমে একটি উন্নত জাতি ও আত্মমর্যাদাশীল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন পূরণ করা যায়।

অপরাজনীতি এ বিশ্ববিদ্যালয়কে এমন জায়গায় নিয়ে গিয়েছিল, পারস্পরিক সম্পর্ক আস্থার সংকটে অচল বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হবার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল। সেখান থেকে উত্তরনের এ পর্যায়ে নিয়ে আসার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। দেশের উন্নয়নে দক্ষ মানব সম্পদ গঠনে দেশের প্রতি এ বিশ্বদ্যিালয়ের দায়বদ্ধতা অনেক বেশি। আমরা যদি আরেকটু সুযোগ পাই, একটু পরিবেশ পাই, অপরাজনীতিমুক্ত হতে পারি, তাহলে আমি অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসের সাথে বলতে পারি, এ বিশ্ববিদ্যালয় হবে বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়। সেই লক্ষ্য সামনে রেখে এ বিশ্ববিদ্যালয় এগোচ্ছে এবং এ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ও গবেষণাগারসমূহ সমৃদ্ধ হচ্ছে তা নিয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। আর এ লক্ষ্য
অর্জনের জন্য নোবিপ্রবি পরিবারের সকল শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা এবং কর্মচারিগণ নিরলসভাবে প্ররিশ্রম করে যাচ্ছে যা অত্যন্ত প্রশংসার দাবিদার।