Home আন্তর্জাতিক বিশ্বজুড়ে মন্দার শঙ্কা : ডেভিড সলোমোন

বিশ্বজুড়ে মন্দার শঙ্কা : ডেভিড সলোমোন


♦ গত মাসে ইউরোজোন অঞ্চলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ব্যাপকভাবে কমেছে ♦ জার্মানির রপ্তানি অর্ডার ও ভোক্তা ব্যয় কমেছে ♦ শিল্পোৎপাদন কমছে চীন, কোরিয়া ও জাপানেও ♦ এ বছর চারবার সুদের হার বাড়িয়ে মন্দা অবশ্যম্ভাবী করে তুলছে যুক্তরাষ্ট্র

বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমা:বিশ্বজুড়ে একটি মন্দা অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠেছে বলে মনে করেন আমেরিকার অন্যতম বৃহৎ ব্যাংক গোল্ডম্যান স্যাকসের সিইও ডেভিড সলোমোন। তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন বলেন, মূল্যস্ফীতি দীর্ঘ মেয়াদে ভোগাবে মানুষকে। একই সঙ্গে একটি মন্দার শঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে। সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ডেভিড সলোমন আরো বলেন, ‘উচ্চ মূল্যস্ফীতির একটি পরিস্থিতির জন্য মানুষের প্রস্তুত থাকা উচিত। যদিও আমরা মূল্যস্ফীতির সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছব না এমন আশা এখনো আছে, তবু বাস্তবতা হচ্ছে এই মূল্যস্ফীতি স্বল্পকালীন নয়, ক্রমান্বয়ে উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে রূপ নিতে পারে। তিনি বলেন, বিশ্বজুড়ে একটি মন্দার সম্ভাবনা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি। বিশেষ করে যখন ফেডারেল রিজার্ভ এ বছরেই চারবার সুদের হার বাড়িয়েছে। আরো বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘যদি আপনি উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্য দিয়ে যান এবং কঠোর মুদ্রানীতি অনুসরণ করেন তবে অর্থনীতি শ্লথ হবেই। সুতরাং আমি মনে করছি, একটি মন্দার শঙ্কা অনেক বেশি। একটি মন্দার ভয় এরই মধ্যে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদেরও মধ্যে ঢুকে গেছে। ইথেল বেকিং কম্পানির মালিক জিল বমারিতো বলেন, ‘আমরা একটি দেশের মেরুদণ্ড, মন্দায় প্রথম আমাদেরই ভুগতে হবে। আমিসহ আমার মতো অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোও মূল্যস্ফীতির চাপে রয়েছে, শ্রমশক্তির চাপে এবং একটি সম্ভাব্য মন্দার ঝুঁকিতে রয়েছে। উন্নত দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো মূল্যস্ফীতি মোকাবেলায় সবচেয়ে অব্যর্থ অস্ত্র প্রয়োগ করেছে, সেটা হলো নীতি সুদহার বৃদ্ধি; কিন্তু এতে অর্থনীতির প্রাণ, অর্থাৎ চাহিদাই ব্যাহত হচ্ছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের উন্নত ও উদীয়মান বেশির ভাগ দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক শুধু জুলাই মাসেই প্রায় এক হাজার ২০০ বেসিস পয়েন্ট সুদের হার বাড়িয়েছে।যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ সম্প্রতি আরেক দফা নীতি সুদহার বাড়িয়েছে। সর্বশেষ ৭৫ বেসিস পয়েন্ট সুদহার বাড়াল ফেড। এতে এই বছরের মার্চ থেকে চার দফা সুদহার বাড়ানো হলো। ফলে বছরের শুরুতে যে নীতি সুদহার ছিল শূন্য শতাংশ, তা এখন বেড়ে হয়েছে ২.২৫ থেকে ২.৫০ শতাংশ। ১৯৮০ সালের পর এই প্রথম এত দ্রুত সুদের হার বাড়াল যুক্তরাষ্ট্র।অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা, সুদের হার বাড়িয়ে সুবিধা করা যাবে না, অর্থনৈতিক মন্দার দিকে এগোচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকও চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের বিষয়ে সতর্ক করে বলেছে, বিশ্বের অনেক বড় অর্থনীতির দেশে মন্দা দেখা দিতে পারে।বিশ্লেষকরা বলছেন, ইতিহাস থেকে যদি শিক্ষা নিতে হয়, তাহলে মূল্যস্ফীতির এই ধারা থেকে এটা স্পষ্ট, বিশ্ব অর্থনীতি আবারও সংকোচনের দিকে এগোচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে দেখা গেছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যতবার মন্দা হয়েছে, তার মধ্যে একবার ছাড়া প্রতিবারই মন্দার আগে মূল্যস্ফীতি ফুলে-ফেঁপে উঠেছে।বহুজাতিক আর্থিক পরিষেবা প্রতিষ্ঠান চার্লস শোয়াবের ইউকে এমডি রিচার্ড ফ্লিন বলেন, ‘ফেড যেভাবে আগ্রাসী সুদের হার বাড়াচ্ছে তাতে অর্থনীতিতে মন্দার ঝুঁকি বাড়ছে। প্রথম প্রান্তিকে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল নেতিবাচক, দ্বিতীয় প্রান্তিকেও দুর্বল হবে মনে হচ্ছে। প্রবৃদ্ধির সূচকগুলো যেমন আবাসন কর্মকাণ্ড, নতুন ব্যাবসায়িক অর্ডার এবং ভোক্তা ব্যয় এ সবই কমে গেছে গত কয়েক মাসে। কঠোর মুদ্রানীতির ফলে প্রবৃদ্ধি মন্থর হয়ে যাচ্ছে। যুদ্ধ ও মূল্যস্ফীতির মাঝে দাঁড়িয়ে যেভাবে কঠোর মুদ্রানীতি অনুসরণ করা হচ্ছে তাতে বাজার আরো অস্থির হয়ে উঠবে এবং দ্বিতীয় প্রান্তিকে অর্থনীতি সংকুচিত হওয়ার ভয় করছি। মূল্যস্ফীতির চাপে ধুঁকছে ইউরোপও। কঠোর মুদ্রানীতির ফলে ইউরোপজুড়েই শিল্পোৎপাদন কমছে এবং অর্থনৈতিক স্থবিরতা নেমে আসছে। সম্প্রতি প্রকাশিত এক জরিপে দেখা গেছে, গত জুলাই মাসে ইউরোজোন অঞ্চলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ব্যাপকভাবে কমেছে। একই সঙ্গে করোনা-পরবর্তী ভোক্তা ব্যয় বাড়ার যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, তা-ও থমকে গেছে। এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল পরিচালিত মাসিক পারচেজ ম্যানেজার্স সূচক (পিএমআই) জুন মাসের ৫২.০ পয়েন্ট থেকে কমে জুলাইতে হয়েছে ৪৯.৪ পয়েন্ট, যা ৫০ পয়েন্টের নিচে। এই জরিপে শিল্পোৎপাদনের সূচক যদি ৫০ পয়েন্টের ওপরে হয় তবে প্রবৃদ্ধি ধরে নেওয়া হয়, আর নিচে হলে নেতিবাচক ধরা হয়।শিল্পোৎপাদন কমছে চীন, কোরিয়া ও জাপানেও। গত দুই বছরের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার কারখানার উৎপাদন এই প্রথম কমেছে। জাপানের উৎপাদন ১০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।